মোবাইলে বিপদ- সাইবার বুলিং কী ও করণীয় পদক্ষেপ

সাইবার বুলিং কী: আপনারা অনেকেই সাইবারবুলিং কথাটির অর্থের সাথে অল্পবিস্তর পরিচিত(We hope you are known the meaning of Cyberbullying a little bit.)। যেহেতু আপনি অবশ্যই মোবাইল, ইন্টারনেট, সোশাল মিডিয়ায় দিন ও রাতের অনেক সময় খরচ করেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাইবার বুলিং সম্বন্ধে জানতে হবে। না জানলেই ঘটতে পারে সাংঘাতিক বিপদ। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে পরিচিত অপরিচিত যেকোন ব্যক্তি ব্ল্যাকমেল করতে পারে। আপনি যদি অভিভাবক হন আপনার ছেলেমেয়ের জন্যও সতর্ক থাকুন ও ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাবেন।

Meaning of Cyberbullying

দিনবদলের সাথে সাথে অপরাধের ধরন পরিবর্তন এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সেই পরিবর্তনের হাত ধরে সাইবার বুলিংও(Cyberbullying) বর্তমান যুগে এক অপরাধমূলক কাজ। সভ্যতার সূচনায় যাযাবর বৃত্তি থেকে দল বা গোষ্ঠীতে পরিণত হওয়া, স্থায়ীভাবে বসবাস। তারপর এক গোষ্ঠীর সঙ্গে এক গোষ্ঠীর দ্বন্দ, সেখান থেকে তর্ক-বিতর্ক যুদ্ধ। ব্যক্তিবিশেষের মধ্যেও অসাম্য ব্যক্তিবিশেষের আকাঙ্ক্ষার পার্থক্য সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজের সূত্রপাত। বর্তমানে ইন্টারনেট যুগে তার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। পরিবর্তন হয়েছে কেবলমাত্র বৈশিষ্ট্যের।

অপরাধমূলক কাজ কর্মের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা সবসময়ই সুযোগ খোঁজে। মানুষ গণহারে কোন দ্রব্যের প্রতি আকর্ষিত। কোন দ্রব্য বা পরিষেবা সবচেয়ে বেশি মানুষ ব্যবহার করছে। এর অর্থ এই নয় যে, সমস্ত অপরাধ’ই গণপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। ব্যক্তিবিশেষের বিভিন্ন ধরনের কারণবশত ব্যক্তি বিশেষকে আক্রমণ এবং প্রতিশোধস্পৃহাও অপরাধ জগতের দিকে পাল্লা ভারি করে।

সাইবার বুলিং কী? | Meaning of Cyberbullying-

আমাদের আজকের বিষয় সাইবার বুলিং কী(Cyberbullying)। সাইবার বুলিং শব্দটির মধ্যে সাইবার এবং বুলিং এই দুটি পৃথক শব্দের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। এখন এই দুটি শব্দকে পৃথক ভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সাইবার অর্থে ইন্টারনেট জগতের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো কার্যাবলী ও সংশ্লিষ্ট সবকিছুকেই বোঝায়। যে ইন্টারনেট পরিষেবা আমরা ব্যবহার করি তা হয় মোবাইল অথবা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি। বর্তমানে মোবাইলের ব্যবহারই বহুল প্রচলিত। কোনো একটি অঞ্চল ভেদে নয় সারা পৃথিবী জুড়ে এর ব্যবহার গত 10 বছরে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে। সাধারণ মানুষ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্র গুলিও সুদূরপ্রসারী। ইন্টারনেট জগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো পদ্ধতি কার্যাবলী ও হার্ডওয়ার সাইবার-এর অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে পুলিং কথাটির অর্থ হলো কোন একজনকে কোনকিছুর মাধ্যমে পিছু করা। কোনকিছু মাধ্যম বলতে টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদিকে বোঝায়। ফলো করার পর সেই ব্যক্তির দুর্বল জায়গায় আঘাত করে, প্রকাশ্যে অন্যের কাছে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা। তাকে লজ্জায় ফেলে দেওয়া এবং তার ব্যক্তিগত তথ্যাদি নির্লজ্জ প্রকাশ। বলা যেতে পারে সাইবার বুলিং কথাটি ইন্টারনেট মোবাইল কম্পিউটারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন পরিষেবা নেওয়ার সাথে সাথে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্যাদি হস্তক্ষেপ করে সেই ব্যক্তিকে ইন্টারনেট জগতের মধ্যেই তার পরিচিত, অপরিচিত সকল ব্যক্তির সামনে বিভিন্ন ধরনের নোংরা তথ্যাদি তুলে ধরে সেই ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা। 

যে মোবাইল সাধারণভাবে কেবলমাত্র কল করা এবং কল রিসিভ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বর্তমানে এর সীমাবদ্ধতা এই গন্ডির মধ্যে আটকে নেই। পরিধির বিস্তার বলে বোঝাবার অপেক্ষা রাখে না। দৈনন্দিন জীবনে খাওয়া-দাওয়া জামাকাপড় ব্যবহার বাসস্থানের নানান সামগ্রিক প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিনোদন জগৎ সাংঘাতিক ভাবে পরিবর্তন হয়ে হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এসেছে। আর এই বিনোদনের ঝোঁকও নেশাগ্রস্ততা তৈরি করেছে অন্যের কাছে ধরা দেওয়ার এক অন্যতম পন্থা হিসেবে।

নেট ব্যাঙ্কিং, ই-কমার্স স্টোর থেকে জিনিসপত্র কেনা, ট্রেন প্লেনের টিকিট কাটা ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় মোবাইলের ব্যবহার যেমন মানুষকে অনেক সুবিধা দিয়েছে, তেমনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিনোদন ও মানুষের জীবন-জাপান প্রণালীকে পাল্টে দিয়েছে।

কিন্তু কতজন মানুষ অতি সচেতনভাবে ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহার করেন? যারা অতি সতর্কতার সঙ্গে এই বিষয়গুলি ব্যবহার করেন, তারা অনেকটা নিরাপদে থাকেন। তবে এটাও ঠিক 100% নিরাপত্তা পাওয়া ইন্টারনেট মোবাইলের যুগে পাওয়া অসম্ভব। তবে অসতর্কতা ডেকে আনে এক অন্ধকার অধ্যায়, যা জীবনকে কেবলমাত্র দুর্বিষহ করে না, জীবনযাপনের প্রণালীকে বদলে ফেলতে পারে।

সাইবার বুলিং কিভাবে হয় | Fields of Cyberbullying-

প্রথমেই বলা হয়েছে ইন্টারনেট জগতের সঙ্গে যুক্ত যা কিছু কার্যাবলী যেখান থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, মানুষের দুর্বল জায়গাগুলি চিহ্নিত করে জনমানষে সেগুলি প্রকাশ করে ব্ল্যাকমেইল করা। তাই এর ক্ষেত্র বা সীমা-পরিসীমার নির্দিষ্ট কোনো গন্ডি নেই। তবে নিম্ন লিখিতভাবে ক্ষেত্রগুলির একটি সাধারণ পরিচয় দেওয়া যেতে পারে।

  • সোশ্যাল মিডিয়া | Social Media-
    বর্তমানে কম বয়সী ছেলে মেয়ে থেকে বয়স্ক মানুষজন কোন ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয় বলা খুব মুশকিল। যারা যুক্ত নন তাদেরকেই সাধারণভাবে অনেক ব্যক্তি ব্যাকডেটেড বা আউটডেটেড বলে অভিহিত করে থাকেন। ব্যাকডেটেড শিরোপা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অনেক মানুষ অনিচ্ছাকৃতভাবেও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন।
    জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায় গুলি হল- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, পিণ্টারেস্ট, ইউটিউব টিকটক, শেয়ারচ্যাট ইত্যাদি ইত্যাদি নানান প্লাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে অংশগ্রহণ করতে হলে অবশ্যই নিজের ফোন নাম্বার অথবা ইমেইল আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়। একাউন্টে প্রোফাইল আপডেট দেওয়ার জন্য নাম, ছবি, জন্মতারিখ ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্যাদি আপলোড করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তার সঙ্গে আছে নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপন প্রণালীর স্ট্যাটাস।
    স্ট্যাটাসগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরা এবং নিজেকে ধন্য মনে করা। প্রত্যেক ব্যক্তি আশা করেন তাঁর এই তথ্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধু অথবা যে কোন পাবলিকের কাছ থেকে লাইক এবং কমেন্ট। আর কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা এই সমস্ত তথ্যাদির অপেক্ষাতেই বসে থাকেন। তথ্যগুলি হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই ব্ল্যাকমেইল করার প্রবল প্রবৃত্তি শুরু হয়ে যায়। ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করা |
  • Bank Account Hacked-
    এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে দুষ্টু ব্যক্তি কখনো আধার তথ্য আপডেট করে দেওয়া অথবা ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে বা পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। যদিও এই ধরনের অপরাধ মূলক কাজকর্মকে সাইবার বুলিং এর আওতায় আনা হয় না। কিন্তু এই ধরনের সাইবার অপরাধ মূলক কাজকর্ম সারা পৃথিবী জুড়েই চলছে। প্রতিটি দেশ এই অপরাধ চক্রকে ধরার পরিকল্পনা ও নকশা প্রস্তুত করে। কখনো কখনো ধরেও ফেলে। কিন্তু এই অপরাধের এখনো পর্যন্ত কোনভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। সাইবার বুলিং কারা করে?
  • Who are the Culprits involved in Cyberbullying-
    সাইবার বুলিং মূলত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, মানসিক রোগী এবং প্রতিশোধ স্পৃহার আসক্তি ও কখনো কখনো বিশ্বাসী চেনা পরিচিত মানুষজনই করে থাকে। বেশিরভাগ অপরাধী সচেতনভাবেই সাইবার বুলিং এর সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে কিছু কিছু মানুষ ভাবাবেগে বশীভূত হয়ে অজান্তেই সাইবার বুলিং এর মতো অপরাধ করে থাকেন। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। মূলত জেনে-বুঝে সজ্ঞানে সাইবার বুলিং-এ অংশগ্রহণকারী অপরাধের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সাইবার বুলিং কী
Image by un-perfekt from Pixabay

সাইবার বুলিং এর উদ্দেশ্য | Objectives of Cyberbullying–

যেহেতু অপরাধের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই, তাই সাইবার বুলিং এর উদ্দেশ্যগুলি বহুবিধ হতে পারে। অপরাধী মানসিকতার উপর নির্ভর করে সে কোন ধরনের প্রতিশোধ স্পৃহা, উদ্দেশ্য গুলি সাধন করার জন্য সাইবার বুলিং করছে‌। তবে মোটামুটি নিন্মলিখিতভাবে এর উদ্দেশ্য গুলি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে-

  • বিপুল অর্থ পাওয়ার অভিলাষ | Expectation to Snatch a huge Money- প্রতিটি মানুষেরই অর্থের প্রতি এক বিশেষ মোহ আছে। জীবনে প্রচুর পরিমাণে অর্থ রোজগার করতে হবে। সাধারন মানুষরা পরিশ্রম করেই অর্থ উপার্জনে বিশ্বাসী। অন্যদিকে অপরাধজগতের মানুষজন অর্থ উপার্জনের রাস্তা হিসেবে অপরাধমূলক কাজকর্মকে বেশি প্রাধান্য দেবে।
    উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যক্তিবিশেষের তথ্যাদি নিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে, তার চাহিদা মতো অর্থ না দিলে সেই তথ্যের বিকৃতরূপ প্রকাশ করার হুমকি বা ভয় দেখাতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই তথ্য চুরি যাওয়া ব্যক্তি, বিশেষ করে মহিলারা যারপরনাই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকেন। এই বুঝি তার বিকৃত তথ্যাদি তার পরিচিত মানুষজনের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো। পরিচিত মানুষজন বলতে নিজের পরিবারের কেউ, বন্ধু মহলের অথবা আত্মীয় স্বজন মানুষজনরাও হতে পারেন।
    বিকৃত তথ্য প্রকাশ পেলে পরিচিতদের মুখ দেখানো দায় হবে। সাইবার বুলিং অপরাধীদের অস্ত্র হলো সাইবার বুলিং এর শিকার মানুষদের মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে তার মনোবলকে ভেঙে দেওয়া। এবং এর বিনিময়ে অপরাধী সাইবার বুলিংএ শিকার ব্যক্তির কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে প্রচুর পরিমাণে অর্থ দাবী করতে পারে।
  • প্রেমে আঘাত থেকে প্রতিশোধ | Hurt in Love- প্রেমিক-প্রেমিকা যেকোনো মানুষ জনই সাইবার বুলিং এ অপরাধী হতে পারেন। প্রেমিক-প্রেমিকার যেকোনো একজন ব্যক্তি অপরের কাছ থেকে প্রেমে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বা আঘাত পাওয়াটা অমূলক কিছু নয়। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অচেনা, অজানা বন্ধুদের মধ্যে প্রেমের পরিসর সৃষ্টি হলে পরবর্তীকালে সম্পর্ক ভাঙবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যাই হোক সম্পর্ক ভাঙনের প্রক্রিয়া যে কোন স্তর থেকেই সৃষ্টি হতে পারে এবং এদের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করে। সম্পর্ক ভালো থাকা কালিন কোন অন্তরঙ্গ তথ্যাদি অথবা ছবি কথাবার্তা অপরাধীর কাছে সঞ্চিত থাকলে, প্রতিশোধ স্পৃহা সেই তথ্যাদি প্রকাশ করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। এবং সেই তথ্যাদি হাতে রেখেই ব্ল্যাকমেল করা শুরু হতে পারে।
  • সাইবার বুলিং এর উদাহরণ | Victims of Cyberbullying- এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে যেকোনো মানুষজনই সাইবার বুলিং এর শিকার হতে পারেন। তবে লক্ষ্য করা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি অ্যাক্টিভ মানুষজন, যারা অসচেতনভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেন তাদেরই সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনা গুলি না জানলেই এই ধরনের অপরাধের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়।

বিশেষ করে কমবয়সী ছেলে মেয়ে এবং বয়স্ক ব্যক্তিবর্গ সাইবার বুলিং এর শিকার হতে পারেন। আবার এটাও ঠিক প্রযুক্তিগত অজ্ঞতায় সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে। ইন্টারনেট মোবাইল ব্যবহার করা ভালো-মন্দ উভয় দিকই যাচাই করা খুবই প্রয়োজন। আর ভাল মন্দের ভারসাম্য বজায় না রেখে আবেগের বশবর্তি হয়ে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা বিপদ ডেকে আনতে বেশি সময় নেবে না।

সাইবার বুলিং কী
Image by Sammy-Sander from Pixabay

গত দু’বছর লকডাউনে সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার দরুন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পড়াশুনার কাজকর্ম চলছে। সেই হিসেবে গত দু’বছরে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী কম বয়সী ছেলে মেয়েদের সংখ্যা সাংঘাতিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইনে ক্লাস করছে আবার এরই ফাঁকফোকরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা এক সাধারণ কার্যক্রম।

কম বয়সী ছেলেমেয়েদের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ওই বয়সে নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি এক সাংঘাতিক আকর্ষণ। যে কাজগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের করার জন্যই নির্দিষ্ট করা আছে, ওই কাজগুলোই কম বয়সী ছেলেমেয়েদের সাংঘাতিকভাবে আকর্ষণ করে এবং এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ না থাকলেই এক সাংঘাতিক বিপদের সম্মুখীন হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। অভিভাবদের এই বাচ্চাদের এই মানসিকতার প্রতি ওয়াকিবহাল থাকা জরুরী। আমার বলার অর্থ এই নয় যে, আপনি আপনার ছেলে মেয়েদের প্রতি অবিশ্বাস করবেন, বিশ্বাস রাখবেন না। বলার উদ্দেশ্য সচেতন থাকা।

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় | Ways to get rid of cyber bullying-

বর্তমান ইন্টারনেটে ভার্সন ওয়েব 2.0 চলছে(ব্যাপকভাবে ২০০৩-০৪ সাল থেকে)। ইন্টারনেটের এই ভার্শনের যুগে কোন মানুষই নিরাপদ নন। সোশ্যাল মিডিয়া সহ যে কোন ধরনের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনার নিজের কিছু তথ্যাদি সেখানে আপলোড করতে হয়। যেমন ইমেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার, নিজের নাম ইত্যাদি ইত্যাদি। ইন্টারনেটের প্রথম যুগে ভার্শন 1.0- এর সময় কেবলমাত্র স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট থেকেই আমরা তথ্যাদি জানতে পারতাম। আমাদের নিজস্ব মতামত বা নিজের তথ্যাদি জানাবার কোনো উপায় ছিল না।

কিন্তু ইন্টারনেট ভার্শন 2.0 ক্ষেত্রে উভমুখী প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেরকম আমরা তথ্যাদি জানতে পারছি, আমাদের তথ্যাদিও আমরা তাদেরকে জানাচ্ছি। যদিও প্রাইভেসী পলিসি এর মধ্যে বলা থাকে যে, আপনার সমস্ত তথ্যাদি তাদের সার্ভারে গোপনীয় থাকবে‌। এই তথ্যাদি কোনভাবেই কাউকে হস্তান্তর করা হয় না। কিন্তু এই প্রাইভেসি পলিসি সম্পূর্ণভাবে আপনার সমস্ত তথ্যাদি ওই সমস্ত কোম্পানিগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডেটা সাইন্সের মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে আরেকটি কোম্পানির মধ্যে হস্তান্তরিত হচ্ছে।

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক- ধরুন আপনি কোন ব্রাউজারে অথবা কোন ই-কমার্স অ্যাপ থেকে কোন কিছু তথ্য বা কোন বস্তু সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। এবং সেই ব্রাউজারটি বা অ্যাপটি আপনি বন্ধ করে দিলেন। দিনের অন্য কোন একটা সময়ে আপনি হয়তো ইনস্টাগ্রাম অথবা ফেসবুক খুলেছেন। দেখলেন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে যে তথ্যাদি আপনি সকালে জানতে চেয়েছিলেন, সেই বস্তু আপনার সামনে বিজ্ঞাপনের ভেসে উঠেছে। ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের কাছে কিভাবে তথ্য গেল? কারন আপনি কোন একটি ব্রাউজারে ওই নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তুটিকে সার্চ করেছিলেন।

আরো পড়ুন

মহিলাদের প্রতি প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি
সমাজে টি ভি সিরিয়ালের প্রভাব
বয়স্ক মা-বাবাকে অবহেলা- ভয়ানক অপরাধ
একান্নবর্তী পরিবার ও অনু পরিবার এবং সমাজ
ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান
আঁতুড়ঘরে 1 মাস
বিধবা বিবাহ
ভারতের বিস্ময় কন্যা জাহ্নবী পানোয়ার

এসবই ডাটা সাইন্সের কাজ। কে কোন ডিভাইস থেকে কখন কোন সাইট অথবা কোন বস্তু বা তথ্য জানতে চাইছেন, সবকিছুই বিভিন্ন কোম্পানির ডাটা সাইন্টিস্ট সেগুলো সংগ্রহ করে, একে অপরের সঙ্গে আদান-প্রদান করেই চলেছে। আপনার তথ্য আদান প্রদানের বিনিময়ে তারা প্রচুর প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার আপাতত কোনো উপায় নেই। তবে সাইবার বুলিং থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কতগুলি পন্থা অবলম্বন করলে কিছুটা নিরাপদে থাকা যায়। যেমন-

  • প্রথমেই পার্সোনাল প্রোফাইল আর প্রফেশনাল প্রোফাইল পৃথক করুন।
  • আপনার প্রয়োজন নেই এমন কোনো সাইট অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের একাউন্ট খুলবেন না।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের নাম সহ সঠিক তথ্য দিয়ে একাউন্ট করুন। প্রোফাইলের কিছু কিছু অংশ প্রাইভেট করে, পাবলিকলি লক করে রাখুন।
  • সোসাল মিডিয়া একাউন্ট টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অন করে রাখুন।
  • অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক অ্যাকাউন্ট খোলার পক্ষপাতি। কেউ আবার ফেক নাম দিয়ে একাউন্ট খুলতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদি তাই হয় তাহলে আপনিও কিন্তু সাইবার অপরাধে অপরাধী হবেন। কেননা একজন সাইবার বুলিং কর্মকর্তা যেভাবে নিজের ফেক নাম দিয়ে ফেক অ্যাকাউন্ট খোলেন, ঠিক সেভাবে সেই কাজটি সাপোর্ট করার জন্য বা প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য আপনিও ফেক নাম দিয়ে একাউন্ট খুলছেন।
  • অযাচিত অজানা কোন লিংকে কখনোই ক্লিক করবেন না। সেটা এসএমএসের মাধ্যমে হতে পারে, ইমেইলের মাধ্যমে হতে পারে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হতে পারে।
  • নিজের প্রকৃত নাম দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলবেন ঠিকই, কিন্তু নিজের ছবি আপলোড না করে যতটা পারবেন এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন।
  • প্রতিমুহূর্তের প্রতিদিনের স্ট্যাটাস সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। যদিও ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার উপরে বিষয়গুলি নির্ভর করে, তথাপি সতর্ক থাকার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।
  • অপরিচিত কোন ফোন কল প্রথম মুহূর্তের কথাবার্তাতেই বুঝতে পারলে কেটে দিন। পারলে ওই নাম্বারটি ব্লক করে দিন।
  • অপরিচিত ব্যক্তি বিশেষের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন না বা কোন অপরিচিত ব্যক্তিকে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন না।
  • কোন লেখার ওপর কমেন্ট বা কমেন্টের উপর কমেন্ট না দেওয়াযই বুদ্ধিমানের কাজ।
  • নিজে সাইবার বুলিং এ শিকার হয়ে গেছেন বুঝতে পারলে, অবশ্যই আপনার নিকট আত্মীয় মা-বাবা, অভিভাবক বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে একজনকে অবশ্যই জানিয়ে রাখবেন। পারলে কাছের লোকদের সঙ্গে নিয়ে লোকাল থানায় সমস্ত ঘটনাবলি জানিয়ে অন্তত একটি জিডি করে আসুন।
সাইবার বুলিং আইন কি বলছে । Cyber Law-
  • Cyberbullying Act Indian IT Act- 2000তে 65 থেকে 71 পর্যন্ত ধারায় উল্লিখিত রয়েছে। এই আইন আই টি আইনের প্রাথমিক আইন হিসাবে উল্লিখিত। এই আইন UNCTAD এর E-commerce-এর মডেল আইন-1996-এর উপর আধারিত। তৎকালীন আই টি মন্ত্রী প্রমোদ মহাজন এই আইনের বিশেষ কর্মকর্তা ছিলেন। এই আইনের নানান ব্যাখ্যা আছে, তার মধ্যে
  • 66D তে রয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারোর সাথে চিটিং করা অপরাধমূলক কাজ।
  • 66E-এর মধ্যে রয়েছে অন্যের ছবি সেই ব্যক্তির ইচ্ছা ব্যতিরেকে প্রকাশ ও ব্যবহারও অপরাধ।
  • 67 ধারা অনুযায়ী ইলেক্ট্রনিক ফর্ম আকারে কোন তথ্যাদি প্রকাশ করাও অপরাধ।
  • 67A অনুযায়ী সেক্সচুয়াল এক্টিভিটি সংক্রান্ত কোন ছবি, তথ্যাদি নিয়ে প্রকাশ বা ব্ল্যাকমেইল করা সাংঘাতিক অপরাধ।
  • 67B তে রয়েছে চাইল্ড পর্ণ ও নাবালিকার উপর কোন যৌন নির্যাতন বা সেই জাতীয় কোন কার্য অনলাইন মাধ্যমে ব্যবহার অপরাধ্মূলক কাজের মধ্যে পড়ে।
  • এখানে অনেক ধারা রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন প্রকার সাইবার ক্রাইমের অন্তর্গত, যা অন্যান্য বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে বিশ্লেষণ করে, আমাদের এই লেখার বিষয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত নয়।

আশা করি ‘সাইবার বুলিং কী’ নিবন্ধটি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে এসেছে। মনে রাখবেন আপনার কোন লেখা বা ছবি বা কোন তথ্যের সমালোচনা সাইবার ক্রাইম বা সাইবারবুলিং -এর মধ্যে পড়ে না। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় কেউ আপনার লেখা নিয়ে বলল- লেখাটি আরো ভালো হত বা তথ্যে ভুল আছে ইত্যাদি। ভালো থাকুন। সতর্ক থাকুন। ধন্যবাদ।

Help Your Family and Friends:

Leave a Comment