শিশুর মনস্তত্ত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে তার প্রতি মানসিক নির্যাতনের(Without giving importance of Child Psychology, Mental Torture to a Child may cause a dangerous future of the child as well as the whole Society) ফলে নষ্ট হতে পারে শিশুর ভবিষ্যৎ। শুধু ব্যক্তিগত স্তরেই নয়, ব্যাপকভাবে তা দেশের ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারে নিয়ে যেতে সময় নেবে না।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনা, ক্যারিয়ার এবং তাৎক্ষণিক ফল পাবার আশায় অভিভাবকগণ অজান্তেই শিশুর প্রতি মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলেন- শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এগুলো প্রয়োজন। আর প্রয়োজন ঔ প্রয়োজনীয়তার দ্বন্দ্বে সমস্ত সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ বলেন শিশু আপন খেয়ালে যা শিখেছে তাই তার ভবিষ্যৎ জীবনের কার্যকরী ভূমিকা নেবে। অন্যদিকে পাড়া-প্রতিবেশী বাচ্চারা পড়াশোনা, গান-বাজনা, অঙ্কন, ক্যারাটে, নাচ গান এবং আরো বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার শিশু পিছিয়ে পড়ছে। শুরু হচ্ছে মা-বাবার মধ্যে মানসিক চাপ এবং সেই চাপ ক্রমান্বয়ে শিশুর উপর আছড়ে পড়ছে নির্দ্বিধায়।
মা-বাবা মানসিক চাপ স্থানান্তরিত হয়ে কেবল শিশুর উপর পড়ছে তাই নয়, বরং প্রসারিত হচ্ছে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে। ক্রমান্বয়ে তা ঘনীভূত হয়ে সুখ-শান্তি বিনষ্ট করছে। তার সাথে প্রত্যেক ব্যক্তি মানসিক রোগীতে পরিণত হতে সময় নিচ্ছে না।
বাচ্চাদের মানসিক নির্যাতন কী? | What is Mental Torture?
আমাদের মন অন্যদের সমস্ত ধরণের চিন্তা ভাবনাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে না। প্রস্তুত থেকে সাদরে গ্রহণ করলে মনের উপর তা চাপ পড়ে না। তবে অনিচ্ছাকৃত গ্রহণ মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। শিশুর প্রতি মা বাবার ইচ্ছা অনিচ্ছা অবৈজ্ঞানিক ভাবে বর্তালে শিশুর উপর চাপ সৃষ্টি হয়। তবে সমস্ত শিশুর উপর একই রকম প্রভাব পড়ে না। যদিও আমাদের সমাজে পূর্বসূরীদের ইচ্ছা অনিচ্ছা সন্তানদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু কৌশলগত পদ্ধতিতে প্রয়োগ শিশুকে মানসিক নিপীড়ন থেকে মুক্ত রাখতে পারে। শিশু মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে যারা ওয়াকিভাল তারা এ ব্যাপারে সতর্কতার সাথে শিশুর শিক্ষার প্রতি ধণাত্মক প্রভাব পড়ে। অন্যথায় হিতে বিপরীত।
এ ক্ষেত্র অভিভাবকরা অজান্তেই বাচ্চাদের আবেগ, অনুভূতিকে আঘাত করে। এটি বাচ্চার মূল্যবোধের ক্ষতি করে এবং তাদের মানসিক বিকাশের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। বাচ্চাদের সমালোচনা করা, কথায় কথায় ধমক দেওয়া, অপমানিত করলে তারা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করবে। এই মানসিক নির্যাতন আবার শারীরিক বা যৌন শোষণের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। অনেক সময় সামান্য মানসিক নির্যাতন ধরা না-পড়লেও তা বাচ্চার মনস্তত্ত্বে গভীর প্রভাব ফেলে থাকবে।
শিশু মনস্তত্ত্ব বুঝতেই হবে | Must Understand Child Psychology-
মা-বাবারা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন শিশুর শিক্ষা নিয়ে। সরকারি শিক্ষার প্রতি অনাস্থা এবং অনাস্থা থেকে উদাসীনতা মনের মধ্যে গেঁথে বসে আছে। সরকারি বিদ্যালয় অর্থেই প্রথমে অভিভাকদের মনে যেটা আসে, সেটা হল সেখানে পড়াশোনা কিছুই হয় না। কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। মিড ডে মিলের প্রতিষঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়। পাশাপাশি চকচকে বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং ইংরেজী ভাষার প্রতি মানুষের দুর্বলতা এবং ঝোঁক গভীরভাবে চিন্তায় ফেলে দেয়।
সেই সূত্র ধরেই সন্তান লালন-পালনের তাঁদের সুশিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে অভিভাবকরা নানান পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু এখানেই যত গণ্ডগোল শুরু হয়। শিশু মনস্তত্ত্ব(Child Psychology) না বুঝে বা তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অজান্তেই মা-বাবারা এমন কিছু ব্যবহার করে বসেন যা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। সন্তান লালনের সময় মা-বাবারা নিজের অজান্তেই বাচ্চাদের ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে থাকেন। সন্তানের সঙ্গে নেতিবাচক ব্যবহারকে মানসিক নির্যাতন বা ইমোশনাল অ্যাবিইউস(mental torture or emotional abuse) বলা হয়। এটি বাচ্চাদের বেড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে।
শিক্ষা ও মানসিক নির্যাতন | Education and Mental Torture-
প্রত্যেক অভিভাবকেরই এক গভীরতর আকাঙ্ক্ষা কেবলমাত্র শুধু শুধু শিক্ষা নয়, সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে হবে। সুশিক্ষা দেওয়ার জন্য অবশ্যই ভালো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হবে। এককথায় বর্তমানে ভালো বিদ্যালয় বলতে গেলে বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে অনেকেই পছন্দ করেন। আর এখানেই সুশিক্ষা এবং উত্তম বিদ্যালয়ের সঙ্গে কুশিক্ষা এবং অধম বিদ্যালয় পাশাপাশি বসে থাকে। অর্থাৎ তারা ধরেই নেন বেসরকারি বিদ্যালয় অর্থেই সেখানে কুশিক্ষা এবং সবচেয়ে জঘন্যতম বিদ্যালয়। এখানে কেবলমাত্র গরিব ভিখারি বাড়ির ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে।
আমাদের মনে এই এক অযৌক্তিক এবং অশিক্ষা মানসিকতার পরিচয়কেই বহন করে থাকি। প্রশ্ন জাগে বর্তমান প্রজন্মের বাবা-মায়েরা কি সত্যি সত্যি কোন বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন? তারা তো এই সরকারি বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং তারা অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠিত বলেই বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানো সামর্থ্য তৈরি হয়েছে। অবশ্য এটা তাদের স্বাধীন চিন্তাভাবনা। এ নিয়ে অন্যের মতামত দেওয়া কোন যুক্তি নেই। কিন্তু প্রশ্ন জাগে এখানেই তো, এই প্রতিযোগিতায় নামার পর শিশুদের কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভের আশায় যে ধরনের পিরন সৃষ্টি হয়, তা কেবল শিশুর প্রতি নয়, সারা সমাজ এবং দেশের ওপর বিরূপ ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। যেটা আমাদের সমাজকে কেবল দুর্বলই করবে না, সমগ্র দেশের স্বাস্থ্য স্থবিরতায় দাড়িয়ে পরবে।
বাচ্চাদের মানসিক নির্যাতনের ইঙ্গিত কী ভাবে পাবেন?
মানসিক নির্যাতনের শিকার বাচ্চাদের মধ্যে এর ক্ষতিকর ও দীর্ঘকালীন প্রভাব দেখা দেয়।
মানসিক নির্যাতন শিশুর ব্যবহার এবং আচার দেখেই সনাক্ত করা যেতে পারে। যে সময় শিশুরা খেলাধূলা চঞ্চলতা নিয়ে থাকার কথা, সেই সময় যদি তাদের চঞ্চলতা না থাকে, খেলাধুলার প্রতি অনাগ্রহ, খাবারের প্রতি অনিচ্ছা, দীর্ঘ সময় ধরে না ঘুমানো, অসংলগ্ন কথাবার্তা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। সেখান থেকেই অনুমান করা যেতে পারে বাচ্চার মনের মধ্যে কোন এক টানাপোড়েন চলছে। এক রিপোর্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বের প্রায় লক্ষাধিক বাচ্চার মধ্যে মানসিক নির্যাতনের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। বাচ্চাদের স্বভাবে আকস্মিক পরিবর্তনে মা-বাবাদের সতর্ক হওয়া জরুরী।
বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক নির্যাতনের লক্ষন-
- ১. কোন বিশেষ ঘটনা বা ব্যক্তির নাম শুনে বাচ্চার কোনো আকস্মিক পরিবর্তন হচ্ছে কি’না। অর্থাৎ বাচ্চা বেশি আনন্দিত হচ্ছে, না বেশি ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে মা-বাবার নাম শুনে ভয় পেয়ে যাওয়া।
- ২. এরই ফলস্বরূপ যেটা পাওয়া যায় সেটি হল পড়াশোনার গুণমান কমে যাওয়া অথবা বৃদ্ধি পাওয়া।
- ৩. কম বয়সেই ডিপ্রেশানের শিকার হওয়া। নিজের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা।
- ৪. অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলো না-করা এবং মেলামেশা না-করা।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নিচের পন্থাগুলি গ্রহণ করতে পারেন-
প্রথমে প্রত্যেকের একটা কথা মাথায় রাখা উচিত যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই আত্মসম্মানবোধ থাকে। শিশু-কিশোর-তরুণ যুবক-বৃদ্ধ-ধনী-গরিব-ভিখারি, সমাজের প্রতিটি স্তরে নানা মানুষের নানান স্ট্যাটাসে অবস্থান করলেও, প্রত্যেকের আত্মসম্মান সমান। অর্থাৎ কোন কথা বললে কে আঘাত পাবে, সেটা আমাদের সম্পূর্ণ না হলেও, সামান্যতম মনে রাখা জরুরী।
সেই সূত্র ধরেই শিশুর আত্মসম্মানবোধের উপর গুরুত্ব দিয়েই তাদের এমন কিছু কথা না বলা, যাতে সেই আঘাতেই তার সারা জীবন তছনছ হয়ে যায়। যদি সে রকম কোনো কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিজের ভুল স্বীকার করে শিশুকে সহজ-সরল এবং স্বাভাবিক করে দেওয়া খুবই জরুরী। বাচ্চাদের প্রতি সম্মানের যেন কোন অভাব না থাকে। আপনি বড় বলে আপনার ভুলে ভুল স্বীকার করবেন না, এই বদ্ধ ধারণা থেকে সরে আসতে না পারলে, সেই শিশু বড় হয়ে আপনার প্রতি কোনরূপ সম্মান প্রদান করবে না। এটা অবশ্যম্ভাবী ঘটনা হয়ে দাঁড়াবেই।
বাচ্চাদের সঙ্গে কখনোই কঠোর ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। এর অর্থ এই নয় যে বাচ্চারা ফোন করলে তার ভুল শুধরে দেবেন না। ভুল করলে যেমন ভুল শুধরে দিতে হয়, সেরকম ভাল কোন কাজ করলেও তাকে প্রশংসা করুন। তবে মনে রাখা দরকার, ভুল শোধরানো এবং প্রশংসা যেন তার সীমা অতিক্রম না করে।
তাদের কথাবার্তায় গুরুত্ব দিন। গুরুত্ব সহকারে তাদের সমস্ত ধরনের কথা শুনতে থাকুন। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাদের কোন ঘটনা বর্ণনা করা অথবা গল্প বলা ঠিকমতো উপস্থাপিত হয় না। বড়রা এই ধরনের কথা বার্তার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব প্রদান উদাসীন থাকেন। কিন্তু উদাসীনতার বিপরীতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিলে বাচ্চাদের মনের উপর এক ধনাত্মক প্রভাব পড়ে। এবং নিজেকে ধন্য বলে মনে করে। এই আচরণ শিশুদের ভবিষ্যতে বক্তব্য রাখার কর্মকে উৎসাহিত করে।
তাদের প্রয়োজনীয়তার প্রতি উদাসীন না থেকে গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। হয়তো তার প্রয়োজনীয়তা সেইসময় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তার প্রয়োজনীতাকে গুরুত্ব না দিলে শিশুর মনের উপর পীড়ন সৃষ্টি হয়। যদি প্রয়োজন সেই মুহূর্তে মেটানো না যায়, গল্পের ছলে ভালোবেসে আপনার সমস্যা বলুন এবং ভবিষ্যতে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা অবশ্যই উচিত।
শিশুর সামনে কখনোই শিশুর শিক্ষকদের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করা উচিত নয়। এতে শিশু মনের মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং সে দোটানায় পড়ে যায় একদিকে মা-বাবা অভিভাবক অন্যদিকে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার পক্ষে কোনটা হিতকর সে বুঝতে পারে না। এই বয়সে এই ধরনের দ্বন্দ্ব যে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে তার ফলস্বরূপ কোন মানুষের প্রতি বিশ্বাস ভক্তি শ্রদ্ধা সম্মান অবলুপ্তি হতে পারে।
শিশুর সামনে শিশুকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ দেওয়া এবং শিশুর সামনে নিজেদের মধ্যেও অসভ্য ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। (যদিও অসভ্য ভাষায় কথা বলা শিশুর য়সামনে হোক বা অজান্তেই হোক কখনোই কাম্য নয়।)
মানসিক নিপীড়ন এবং শিশু মনস্তত্ত্ব | Effects of mental torture and Child Psychology-
মানসিক নির্যাতনের শিকার বাচ্চাদের মধ্যে এর গভীর প্রভাব পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এলে বাচ্চাদের মধ্যে নানান সমস্যা দেখা দেয়। একটি অধ্যয়ন অনুযায়ী মানসিক নির্যাতনের শিকার বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা, উন্নতির অভাব তো দেখা দেয়ই, পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো গভীর রোগের ঝুঁকিও থেকে যায়। নির্যাতিত বাচ্চারা আবার অবসাদের কারণে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
মা-বাবা অথবা অন্য কেউ বাচ্চাদের ওপর মানসিক নির্যাতন চালালে, ভীত-সন্ত্রস্ত বাচ্চারা কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না এবং কাউকে নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চার মধ্যে আকস্মিক পরিবর্তন দেখেই জানা যায়। তাই সন্তান লালনের ক্ষেত্রে মা-বাবাকে অধিক সতর্ক হতে হবে। আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতির কারণে মা-বাবারা তাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে বসেন।
তবে প্রত্যেক মা-বাবার এটি জেনে রাখা উচিত যে, এর ফলে বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্য ও বিকাশ গভীর ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
মস্তিষ্কে রাসায়নিক পদার্থের অসামঞ্জস্য-
মানুষের মস্তিষ্কে কয়েকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যেগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং অবনতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাসায়নিক পদার্থ হল- dopamine, serotonin, oxytocin and endorphins। এই রাসায়নিক গুলির নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রত্যেকের সঙ্গে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে অবস্থান করে। একটির পরিমাণ কম বেশি হলেই ঘটতে থাকে নানা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন। এবং তার প্রভাবে আমাদের আচরণ পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আনন্দ, দুঃখ-বেদনা বিষাদ সব প্রতিক্রিয়াগুলি এই চারটি রাসায়নিক পদার্থের খেলায় সংঘটিত হয়।
কখনো ঘুম বেশি, কখনো ঘুম কম। আনন্দ হলে যেমন শরীর উৎফুল্ল হয় এবং তার প্রভাব মানব শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফল লাভ করে। উল্টোদিকে দুঃখ-বেদনা মানসিক পীড়ন আমাদের ঘুমকে প্রভাবিত করে, ফলস্বরূপ গ্যাস, অম্বল, মাথাব্যথা, খাবারের প্রতি অনীহা, দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। এবং ধীরে ধীরে ক্রনিক পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সেখান থেকে মানসিক এবং শারীরিক সুস্বাস্থ্যে ফিরে আসা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
শিশুর শৈশবকাল থেকেই তার উপর মানসিক নির্যাতন, স্ট্রেস পরলে, তার কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত আচার আচরণ আশা করলে শিশুর প্রতি সাংঘাতিক মানসিক টানাপোড়েন শুরু হয়। কালক্রমে সেই মানসিক নির্যাতনের ফল তাৎক্ষণিকভাবে না ঘটলেও কিশোর, তারুণ্য, যৌবন যেকোনো বয়সেই ঘটতে ঘটতে পারে সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া। সেই মানুষটি যে বয়সে যে কাজ করা উচিত সে বয়সে সেকাজ তার কাছ থেকে পাওয়া যায় না। অনাকাঙ্ক্ষিত একটি পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে সেটি সমাজ থেকে বৃহত্তর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।