অনলাইন পরীক্ষার দাবি’তে(Meritorious and Studious Students should Support Online Examination Movement 2022) মেধাবী ও পরিশ্রমী পরীক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষাকে সমর্থন করা উচিৎ। শিরোনাম দেখেই গালি দিয়ে শুরু করলেন। তা করুন। তবে লেখাটা পড়ে নিয়ে গালি দিলে ভালো হয়। থ্রি ইডিয়টস এর প্রিয়ার প্রেমিক সেই গাধাটার কথা মনে আছে? যে অসংখ্য ডিগ্রী নিয়ে অবশেষে ব্যাংকের চাকুরে।
অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিকতায় ভরসা রাখা মানুষদের চোখে যারা ইডিয়েটস প্রকৃতপক্ষে তারা সৃজনশীল। দুটি পক্ষ- একদিকে সাধারণ সহজ-সরল পন্থা অবলম্বনকারী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ভরসা রাখা মানুষজন, কিন্তু অত্যন্ত ধীর হইচই হট্টগোল। অন্যদিকে এরই বিপরীতে অদ্বিতীয় মানুষজন, সৃজনশীল, তুলনায় ভিড়ভাট্টা কম। কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চিরকাল- কারা গেইনার আর কারা লুজার এই নিয়ে।
Online Examination Movement 2022 | অনলাইন পরীক্ষার দাবি
সেইরকমই সমসাময়িক এক আন্দোলন- কলেজ পরীক্ষার অনলাইন অফলাইন মোড নিয়ে। অনলাইন অফলাইন যাই হোক না কেন, প্রত্যেকেই প্রাতিষ্ঠানিকতায় বিশ্বাসী, সে অনলাইন পরীক্ষাকে সমর্থন করুন আর নাই করুন।
কে বা কারা অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে? সকলেই এক কথায় উত্তর দেবেন যারা পড়াশোনা করে না বা করেনি। আন্দোলনকারীদের অনলাইন পরীক্ষা হওয়ার পেছনে যুক্তি কি? দু-বছর লকডাউন ছিল সরাসরি সশরীরে অফলাইন ক্লাস হয়নি। অনলাইন ক্লাস হয়েছে তাই অনলাইন পরীক্ষা। অন্যদিকে হোস্টেল বন্ধ ছিল। কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীরা হোস্টেলে ঢুকতে পারেনি। বাড়ি থেকে অনলাইন পরীক্ষা হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। হোস্টেল খোলার পর আর সে যৌক্তিকতা কতটা গ্রহণযোগ্যতা পায় জানা নেই।
Supporters of Online Examination Movement 2022
আর একদল কিন্তু অনলাইন পরীক্ষাকে স্বাগত জানাতে পারেন। তারা কে? এরা কিন্তু কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত হতে পারে। যেমন ধরুন সচেতন গার্জেন। প্রশ্ন হতে পারে সচেতন গার্জেন কেন অনলাইন পরীক্ষা চাইবে? গার্জেনরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন এবং এরা অতি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ। কি রকম? এরা তার ছেলে মেয়েদের প্রতি যথেষ্ট নজর রাখেন। তাদের পড়াশোনার প্রতি ওয়াকিবহাল। তারা এই লকডাউন আর শিক্ষায় নম্বর পাইয়ে পাস করিয়ে দেওয়ার বাজার সম্বন্ধে সচেতন। যারা নম্বর পাচ্ছে ওপাশ করছে তারা কিন্তু সেরকম পড়াশোনা করছে না বা একেবারেই করছে না। টোকাটুকিতে ব্যস্ত।
কিন্তু সচেতনতার খাতিরে নিজের ছেলেমেয়েদের কখনোই পড়াশোনায় অবহেলা করতে দেননি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও ক্লাস না হলেও বাড়িতে পড়াশোনা প্রতি অবহেলার কোনরকম একেবারেই বরদাশ্ত করা যাবেনা। তারা জানেন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকতে হলে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থায়, তা সরকারি-বেসরকারি যাই হোক না কেন, প্রতিযোগিতায় নামতে হলে সেই প্রতিষ্ঠান যে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করবে না, এটা নিশ্চিত। সেখানে ইন্টারভিউ গ্রুপ ডিসকাশন পার্সোনালিটি টেস্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে তবেই সেটা হাসিল করা যাবে।
Gainer of Online Examination Movement 2022
ঠিক এখানেই তারা গেইনার হবে এবং প্রতিযোগীর সংখ্যা কমে যাবে। কেন প্রতিযোগী সংখ্যা কমে যাবে? যুক্তি হল- যারা দু’বছর পড়াশোনা না করে অনলাইন পরীক্ষা দিতে চাইছে তারা বেশিরভাগই দেখে দেখে পরীক্ষা দেবে ও পাশ করে যাবে। পড়াশোনা না করার মানসিকতা ও অভ্যাস তৈরি হওয়ার ফলে বেশির ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য কিভাবে, কতটা এবং কেমন প্রস্তুতি নেবে বা নিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কেননা গত দু’বছর না পড়াশোনা করার যে অভ্যাস মানসিকতা ও শৈলী তৈরি হয়েছে তাকে পুনরায় ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
আপনারা বলতে পারেন মেধাবী পরিশ্রমী ও সচেতন পরিবারের ছেলেমেয়েরা কি দেখে লিখবে না? সময়মতো পেপার সাবমিট করতে হবে বলে দেখে লিখবে কিন্তু প্রথমেই বলেছি সচেতনতার খাতিরে তারা পড়াশোনা করবেই। অতএব বলা যায় পরীক্ষা কোন মোডে হবে তা নিয়ে মেধাবী পরিশ্রমী সচেতন ছেলেমেয়েদের মাথা ব্যথা করার কোন কারণ নেই। বরং আগামীতে প্রতিযোগিতা কম হবে ধরে নিয়ে অনলাইন পরীক্ষাকে সমর্থন করাই তাদের জন্য শ্রেয়।
Leaders are Supporters of Online Examination Movement 2022
আরেক শ্রেণীর মানুষ অনলাইন পরীক্ষাকে সমর্থন জানাতে পারেন। অনলাইন পরীক্ষার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে রাজনৈতিক মদতে হতে পারে অথবা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা এই আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দিতে পারেন। কেন নেতা-মন্ত্রীরা সমর্থন করবে? আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকের নেতা হবার বাসনা থাকতে পারে। এই আন্দোলনের পক্ষ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একত্রিত করছে এবং উপর মহলের কাছে নিজেকে নেতা হবার বা শো অফ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে।
Children of Leaders not Study in Such Colleges
আরেকটি প্রশ্ন আসে যারা আন্দোলন করছে তারা কোন বাড়ির ছেলে মেয়ে? তারা কি নেতা-মন্ত্রীদের ছেলে? মোটেই নয়। বরং এই আন্দোলনে নেতা-মন্ত্রী আখেরে লাভ। তাদের ছেলে-মেয়েরা যেকোন উপায়ে দেশে বিদেশে ভাল প্রতিষ্ঠান পড়াশোনা করে। যে কোনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে ধরে নেওয়া যায়। অতএব সাধারণ বাড়ির ছেলে মেয়েরা অনলাইন পরীক্ষার জন্য আন্দোলন করবে, জয়ী হবে, অন্ধকারে ডুবে যাবে এবং এটাকে সমর্থন না করে তারা কি করে।
Evaluation of Online Examination
এখন একটা আশঙ্কা আসছে নিশ্চয়ই- অনলাইন পরীক্ষায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মুড়ি-মুড়কি এক হয়ে যাবে। যাবে কিন্তু তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। স্বল্পমেয়াদী ক্ষেত্রে হয়তো মুড়ি মুড়কি এক হয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী সূত্রে পুনরায় বলা যেতে পারে মেধাবী পরিশ্রমী ও সচেতনতার জুড়ি মেলা ভার। তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিকতায় আশ্বাসী বিশ্বাসীদের কথায় পড়াশোনার মূল্য পাবেই।
Creative Persons on Online Examination
পক্ষে-বিপক্ষের বাইরে যে পক্ষ প্রাতিষ্ঠানিকতার বিশ্বাসী মানুষদের চোখে যারা ইলিয়ট নামে অভিহিত, সৃজনশীল কুশীলবরা, তাদেরও কিন্তু কিছু যায় আসেনা অনলাইন অফলাইন যাই হোক না কেন। অদ্বিতীয় সৃজনে অনলাইন কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে না। কেননা সৃজনশীলতার জন্য যেকোনো সৃষ্টির পেছনে সরাসরি সকলের উপস্থিতি এবং ক্রিয়াকর্ম অবশ্যম্ভাবী।
Meritorious and Studious Students should Support Online Examination Movement 2022, Why?
যে যুক্তিতে যারা এই মুহূর্তে অনলাইন পরীক্ষার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছেন ও যুক্তি দিচ্ছেন তথাকথিত ভালো মেধাবী পরিশ্রমী ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, তাদের উচিত অনলাইন পরীক্ষাকে সমর্থন করা।
Online Examination Movement 2022 at Visva-Bharati | অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ বিশ্বভারতীতে
এবার অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ বিশ্বভারতীতে। ছাত্রদের চাপে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করল। তাই দেখে বিশ্বভারতীর ছাত্রছারীরাও আন্দোলন শুরু করে দিল অনলাইনের দাবীতে। পশ্চিমবঙ্গের কলেজ থেকে বিশ্বভারতীর পার্থক্যটা মুছে গেল। বিশ্বভারতীর ছাত্ররা কবে আন্দোলন শুরু করল? যেদিন পরীক্ষা শুরু হবে সেদিন। তার আগে নয়। এর আগে আন্দোলন করেছি- হোস্টেল খোলার দাবী নিয়ে, ছাত্র বহিষ্কারের বিরুদ্ধে। ওটা ছিল এক সঙ্গত আন্দোলন। অনলাইন পরীক্ষার দাবীও ছিল। ছাত্রদের দাবী মেনে সময় দিয়েছিল কতৃপক্ষ পড়াশুনা করার জন্য, পরীক্ষা পিছিয়ে ছিল। সেই সময়কে কিছু ছাত্র-ছাত্রী কাজেই লাগায় নি। ঘুরেছে, বেড়িয়েছে, আড্ডা মেরেছে। পড়াশুনা থেকে সরিয়ে নিয়েছিল নিজেকে।
Online Examination Movement 2022 On the date of Examination?
ঠিক পরীক্ষা শুরুর দিন আবার তালা লাগানো, পরীক্ষা বাতিলের দাবী, অনলাইন পরীক্ষার দাবী। কোনো অসুবিধা নেই পূর্বেই বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক ছাত্র ছাত্রীর তো পরীক্ষার পরে একাটা সিডিউল ছিল, কারো ডাক্তার এখানো, কারো ট্রেনিং, কারো ইন্টারভিউ, কারো বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। সময় নষ্ট, টাকা নষ্ট- এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এর আগেই কংক্রিট আন্দোলন হত অনলাইন পরীক্ষার জন্য, যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কলেজ ছাত্ররা করেছিল এবং তারা একপ্রকার সাময়িক জয়ীও হল, সেভাবে আন্দোলন হলে সময়মত পরীক্ষা শুরু হত, শেষ হত। সবার আশা পূরণ হত।
আন্দোলনকারীদের মতি বোঝা ভার-
আগামীতে অনলাইন পরীক্ষা যদি হয়েও থাকে এবং এই আন্দোলনকারীরা যদি কম নাম্বার পায়, তাহলে কি আবার বেশি নাম্বারের দবীতে আন্দোলনে বসবে কি’না বঝা মুশকিল। ফার্স্ট ক্লাস চাই, নইলে নানান পন্থা অবলম্বন করা হবে।
এ অবশ্য ভবিষ্যৎ বলবে। তবে ছাত্র আন্দোলনের ধারা যেভাবে বদল হচ্ছে, ন্যায় অন্যায়, যুক্তি, নীতির অবমূল্যায়ন হচ্ছে তাতে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরী হতে সময় নেবে না। ক্ষতি যে নিজেদেরই হচ্ছে সেটা সেই ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারছে না। নিজের ক্ষতি নিজে করলে কিছু যায় আসে না, কিন্তু অন্যের ক্ষতি হলে তারাও বা মেনে নেবে কেন?
সবই চোথা-
মাথার মধ্যে চোথা ভরে পরীক্ষা দেওইয়া যা, আর অনলাইনে দেখে দেখে বা চোথা করে পরীক্ষা দেওয়ার মধ্যে তফাৎ খুব এক্তা নেই ব্লে অনেকে মনে করেন। তবুও মাথার চোথাকেই সর্বভারতীয় স্তরে মান্যতা দিয়েছে।
কোন বিষয়ের উপর আন্দোলন হওয়া উচিৎ-
তবুও মাথার চোথা আর টুকলি চোথা যদি একই হয়, ছাত্রদের এই দুই চোথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিৎ। পরীক্ষা পদ্ধতির নতুন ভাবনা আনার জন্য আন্দোলন হওয়া উচিৎ। প্রয়োগমূলক পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য আন্দোলন হওয়া উচিৎ। তা না করে চিরাচরিত একটা চোথা পদ্ধতিকে আরো আসততার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অন্যায় আন্দোলন করছে ছাত্ররা।
Online Examination Movement 2022-এর পক্ষে ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের প্রতি-
আর অনলাইন পরীক্ষা সমর্থন যারা করছেন, ভাই-বোন বন্ধু অভিভাবকরা চিন্তা করুন কি করছেন, কেন করছেন? অন্তরের চোখ দিয়ে দূরে তাকিয়ে দেখুন, কি ঘটতে চলেছে? ভবিষ্যৎ কি দেখতে পাচ্ছেন? আপনারা তো বর্তমানটাই দেখতে পাচ্ছেন না। যে ডালে বসে আছেন সে ডালটাই কাটছেন। কি ভাবছেন? মহাকবি কালিদাস হবেন? তাই হোন। শুভকামনা রইল।