Casteism in India তথা জাতিভেদ ও সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিক্ষা, চাকরি থেকে নির্বাচন সমস্ত স্থানে আসন সংরক্ষণ জনমানসে শুধু বিতর্ক নয় কখনো কখনো তা ঝগড়া মারামারি পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখান থেকে বন্ধুর মুখ দেখাদেখি বন্ধ। বন্ধু থেকে পরিবার এবং জনগোষ্ঠী গুলি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। কারো কাছে এই ঘটনা অতি সাধারন, কোথাও বা অসাধারণ।
Caste in India
আর্য সমাজে সৃষ্ট চতুঃবর্ণ(There are four Caste in India.)- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সামাজিক পরিচয় থেকে সামাজিক পরিষেবার বন্টন এবং ভোগ থেকে উঠে আসা তথাকথিত গণতন্ত্র কারো কাছে অভিশাপ আবার কারো কাছে আশীর্বাদ। স্বাভাবিকভাবে কেউ সুবিধা ভোগ দখল করে ও কেউ বঞ্চিত হয়। আর এ সামাজিক প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির জন্যই শুরু হয় বিতণ্ডা।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এই চার বর্ণতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর মধ্যে এদের আবার অনেক উপবিভাগ আছে। সেই উপবিভাগের অধীনে জাতিগুলিও নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডায় জড়ায়। যেমন ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিভিন্ন উপবিভাগ ব্যানার্জি, চ্যাটার্জী, গাঙ্গুলী, অধিকারী, মজুমদার পদবিধারী। এদের মধ্যে কেউ কুলীন কেউ অগ্রদানী একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি। সেরকম ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রদের ক্ষেত্রেও তাই। শুদ্রদের উপবিভাগ তা বলে শেষ করা যাবে না। এদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে তপশিলি জাতি ও তপশিলী উপজাতি ইত্যাদি।
Why Casteism in India-
আর্য সমাজে কর্মভিত্তিক বর্ণ বিভেদ সৃষ্টির ইতিহাস সকলেরই জানা। সেখান থেকে সামাজিক কার্যাদি পরিচালনা ও অংশগ্রহণ। তার মধ্যেই বিধিনিষেধ, রীতিনীতি, আইন। সুবিধার দখলদারি শ্রেণী ও বঞ্চনা থেকে উঠে আসে কোটা সিস্টেম। ভারতবর্ষের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র পর্যন্ত সামাজিক সুবিধা, পরিচালনা ও অংশগ্রহণ ক্রমহ্রাসমান। আমরা সকলেই জানি সুযোগ সুবিধা ও বন্টন আজ থেকে 500 বছর আগে যেরকম ছিল আজ আবার তার রদবদল হয়েছে। সামাজিক সুযোগ-সুবিধা স্বাধীনতার ঠিক পূর্বে ও পরে যেরকম ছিল বর্তমানেও তার চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পাল্টানোর পেছনে যে কারণগুলি সামনে আসে তা হল অর্থ। অর্থ অর্থে সচ্ছলতা, সামাজিক সচলতা(social mobility)।
From When Quota System or Reservation Started in Caste-
ব্রিটিশ ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে স্বাধীনতা অর্জনের আগে নির্দিষ্ট বর্ণ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের পক্ষে কোটা ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। বিভিন্ন ধরণের ইতিবাচক বৈষম্যের দাবি করা হয়েছিল, উদাহরণস্বরূপ, 1882 এবং 1891 সালে কোলাপুর রাজপরিবারের(Princely State) মহারাজা শাহু অ-ব্রাহ্মণ ও পশ্চাৎপদ শ্রেণীর পক্ষে সংরক্ষণের প্রবর্তন করেছিলেন, যার বেশিরভাগই 1902 সালে কার্যকর হয়েছিল। তিনি সকলকে নিখরচায় শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং তাদের প্রাপ্তি আরও সহজ করার জন্য কয়েকটি ছাত্রাবাস চালু করেছিলেন। তিনি শিক্ষিত লোকদের উপযুক্তভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তিনি শ্রেণি-মুক্ত ভারত এবং অস্পৃশ্যতা বিলোপের জন্য চেষ্টায় ছিলেন।
তৎকালীন সরকার 1902 এ পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের জন্য 50 শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। 1921 সালের 1লা সেপ্টেম্বর Justice Party প্রথম সাম্প্রদায়িক পার্টি আদেশ নামা পাস করে। তারপরে আইন প্রণয়নের জন্য ভারতীয় আইনসভার ইতিহাসে প্রথম নির্বাচনে রিজার্ভেশন সিস্টেম চালু হয়, যা তখন থেকে সারা দেশে আদর্শ হয়ে উঠেছে।
ব্রিটিশ রাজ 1909-এর ভারত সরকার আইনে সংরক্ষণের উপাদানগুলি প্রবর্তন করে এবং স্বাধীনতার পূর্বে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। 1932 সালের জুনের গোল টেবিল সম্মেলন থেকে একটি উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটেছিল, যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক পুরষ্কারের প্রস্তাব করেন, যার অনুসারে মুসলমান, শিখ, ভারতীয় খ্রিস্টান, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের পৃথক প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল। মোটামুটিভাবে এসটি এবং এসসি-র সাথে সম্পর্কিত হতাশাগ্রস্ত শ্রেণিগুলিকে নির্বাচনী আসনে নির্বাচন করার জন্য বেশ কয়েকটি আসন অর্পণ করা হয়েছিল যেখানে কেবল তারা ভোট দিতে পারে।
প্রস্তাবটি বিতর্কিত ছিল: মহাত্মা গান্ধী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উপবাস করেছিলেন। তবে বি আর আম্বেদকর সহ হতাশাগ্রস্থ শ্রেণীর মধ্যে অনেকেই এর পক্ষে ছিলেন। আলোচনার পরে, গান্ধী একক হিন্দু ভোটার রাখার জন্য আম্বেদকারের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন এবং দলিতদের মধ্যে এর মধ্যে আসন সংরক্ষিত ছিল। ইসলাম ও শিখ ধর্মের মতো অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে পৃথক পৃথক ভোটার রয়েছে। এটি ‘পুনা চুক্তি’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।[Source-Wikipedia]
ভারতে বর্ণ ধারাবাহিকতা | Episodic System of Caste in India-
এরপর তা ধারাবাহিক ভাবে ভারতের মধ্যে নানা সময়ে নানাভাবে পথ পরিবর্তন করে বর্তমানে নানান শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত।
জনগোষ্ঠী থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া এবং সেখান থেকে সামাজিক-রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানিক স্তরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা ক্রমশ ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে আবারো কোন না কোন গোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানেও আছে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র- দের মিশ্রন।
কেন সকল বর্ণই বঞ্চিতদের মধ্যে রয়েছে?
সরকারিভাবে শিক্ষা চাকরি থেকে রাজনৈতিক স্তরের কোটা সিস্টেমের যে শ্রেণি গুলি আছে সেগুলি হল- Unreserved(41%),SC(15%), ST(7%), OBC( 27%)। এবং EWS(10%), যা SC, ST, OBC দের বাদ দিয়ে UNRESERVED/GENERAL দের মধ্য থেকেই সংগৃহীত হবে। রাজ্য ভিত্তিক এর শতাংশের বিভাজন ভিন্ন হতে পারে।
এখন Unreservedদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সকলেই আছে। কিন্তু এস সি এস টি দের জন্য শুধু শূদ্র। আবার ওবিসি দের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বাদ দিয়ে বাকি সকল বর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কিছু বিশেষ শ্রেণীও ওবিসিদের মধ্যে অবস্থান করছে। আপাতত 2026 পর্যন্ত এই শতাংশ হিসাব চলতে থাকবে।
রিজার্ভেশনের পূর্বে দু’টি গোষ্ঠী ছিল সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ দখলের ভিত্তিতে। একটি হলো- বঞ্চিত ও অন্যটি হলো সুবিধাভোগী। বর্তমানে সংরক্ষণের ফলে দুটি গোষ্ঠীর নাম একই আছে। অর্থাৎ বঞ্চিত এবং সুবিধাভোগী। পালাবদল ঘটেছে শুধু এর ছত্রছায়ায় আশা বর্ণ শ্রেণিগুলির। শিক্ষা ও কর্ম নিযুক্তির ক্ষেত্রে বংশপরম্পরায় এর পদ্ধতিগত সুযোগ-সুবিধার ধারাবাহিকতা কখনো সরলরেখায় বা কখনো চক্রাকারে। এই নিয়েই বিতর্ক ঝগড়া, মারামারি।
Women Reservation-
এরপরও আছে মহিলা সংরক্ষণ। এ নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। যেখানে মহিলা পুরুষ সমানভাবেই সমাজের সকল কিছুর অধিকারী- এই যুক্তিতে অনেকে মহিলা সংরক্ষণের বিরোধী। আবার কেঊ কেউ মহিলা এই সংরক্ষণের পক্ষে ভিন্ন যুক্তি দেন। এখানেও দুই পক্ষ। সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত ত্রূটি ও সমস্যা সর্বস্তরে বিরাজমান। তাই তো শুধু ভেদাভেদ আর একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ। সে যাইহোক এ বিষয়ে অন্য সময় আলোচনা হবে।
- আরো পড়ুন- সমাজে মহিলাদের প্রকৃত অবস্থান।
- ভারতের শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব এক অদ্ভুৎ সমস্যা।
- ভারতের বিভিন্ন সানাজিক সমস্যা।
- নন ডিজিটাল গৃহহীনদের কিভাবে টীকাকরণ?
- নেপোটিজম এর বাংলা অর্থ এবং এর ভয়াবহতা।
- 21 শতকে জীবন সংগ্রাম ।
Reservation-এর ভালো-মন্দ দু’ই আছে। ভারতবর্ষের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের ভূমিকা এবং কার্যকরিতাকে আপনি সমর্থন করেন, কি করেন না। একটি শিক্ষামূলক সার্ভের জন্য নিচের পোলিং সিস্টেমে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’- তে উত্তর দিন।