স্বজনপোষণেই আশার আলো | Nepotism Meaning in Bengali

Nepotism Meaning in Bengali: স্বজনপোষণের মধ্যেই রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আসার আলো। তবে তার আগে জেনেনি Nepotism meaning in Bengali অর্থাৎ বাংলায় নেপোটিজম এর অর্থ কি? Googleএ সার্চ করলেই বিভিন্ন সাইট থেকে আপনি দেখতে পাবেন স্বজনপোষণ বা আত্মীয় পোষন ইত্যাদির মতো নানান শব্দ। এ তো এর আক্ষরিক অর্থ। সকলের জানা। এ স্বজনপ্রীতির বাইরে আবরণ। কিন্তু এর ভেতরে যে অর্থ এবং তার প্রকাশ, ফলাফল কত যে ভয়ঙ্কর তা আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়।

সমাজের পরতে পরতে বিভিন্ন সেক্টরে নেপোটিজম কিভাবে ছড়িয়ে আছে এবং বিষবৃক্ষের সেই অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেভাবে ডালপালা ছড়িয়েছে, তাতে নেপোটিজম এর বাইরের সাধারণদের অবস্থা যেন ক্রীতদাসের মত। আসুন দেখা যাক কোথায় কীভাবে নেপোটিজম খেলা করছে অবলীলায়। এবং এর ভালো মন্দ- র দিকগুলো নিয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।

বাংলায় স্বজনপোষণ অর্থ | Nepotism meaning in Bengali-

At first we know the English meaning of nepotism- Nepotism is a system conducted by any dominant person in respect of engaging or pushing or establishing any field such as political, employment or business or any profitable sector.

Nepotism meaning in Bengali

নেপোটিজম এর আক্ষরিক বাংলা অর্থ হলো- স্বজনপোষণ, আত্মীয়-পোষন। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠান কোন রাজনৈতিক পদ বা সরকারি চাকরি বা ব্যবসা ইত্যাদি জন্য তার নিকটাত্মীয় বা পারিবারিক, বন্ধু স্থানীয় কোন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে কার্য সমাধান করলে তা আত্মীয় পোষন বা স্বজনপোষণ বলবো।

এখন Nepotism meaning in Bengali is not limited in those circles-

আত্মীয়প্রীতি কেবলমাত্র চাকরি, ব্যবসা, রাজনৈতিক পদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। এর ব্যাপকতা বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। এগুলো সবই বৃহত্তর ক্ষেত্র।  তাছাড়া বহূ ক্ষুদ্রতর ক্ষেত্রেও প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। সরকারি ছোট-বড় নানান কার্যসিদ্ধির জন্য কার্যকরী ভূমিকা নেয়‌ যেমন ধরা যাক কোন চাকরির পরীক্ষার জন্য সরকারি অফিস থেকে সার্টিফিকেট প্রয়োজন। অনেক প্রার্থী দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে থেকেই অনেক ব্যক্তি অফিসের পরিচিত ব্যক্তির সহায়তায় Head of the office এর কাছ থেকে সার্টিফিকেট বের করে নিয়ে আসেন।

কয়েক বছর আগে ডাবলু বি এস এস সি(WBCSSC) পরীক্ষার জন্য ব্যাংকের দীর্ঘ লাইন দিতে হত। তার মধ্য থেকে nepotism-এর জোরে কেউ কেউ ফর্ম বের করে নিয়ে আসতেন। আর বাকিরা সারাদিন রোদ-বৃষ্টিতে লাইন দেবার পর অনেকেই বিকালে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতেন। স্বজনপ্রীতির কারণে কতজন এভাবে হয়রান হতেন এবং এখনও হন।

নেপোটিজম এর ক্ষেত্র-

স্বজনপোষণের ক্ষেত্রগুলি আমরা অনেকেই অল্পবিস্তর জানি। দোকানে বাজারে রাস্তাঘাটে এ নিয়ে আলোচনা হয়। তবুও কয়েকটি ক্ষেত্রে নিয়ে এখানে সামান্য আলোকপাত করব।

রাজনৈতিক ক্ষেত্র-

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেপোটিজমের ভীষণভাবে কার্য ক্রিয়া-কলাপ চলে। আর সমালোচিত হয়। কিন্তু নেপোটিজম তার নিজস্ব জায়গা ধরে রাখার চেষ্টায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থির থাকে। ভারতবর্ষের সবচেয়ে সমালোচিত নেহেরু পরিবার। জাতীয় কংগ্রেস পরিচালনার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে নেহেরু পরিবারের সদস্যরা অগ্রাধিকার পায়। তবে এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। এতো পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়। আবার লোকসভায় কংগ্রেস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তাও পার্টির সিদ্ধান্ত কে মান্যতা দেওয়া হয়। বাইরে থেকে আমরা চিৎকার করি।  আত্মীয়পোষন তার স্থানে অটুট থাকে।

শুধু কংগ্রেস পার্টি নয়। যে কোন পার্টির ক্ষেত্রেই এই ধারা অব্যাহত থাকে। পশ্চিমবঙ্গের টিএমসি- রং ক্ষেত্রেও এক নীতি চলছে। ফলস্বরূপ দলীয় কোন্দল বা দল বিভাজন অসম্ভব নয়।

এজন্যই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবেশে পুরনো সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে পার্টি পরিচালনার কার্যকরী ভূমিকা নিলেও হঠাৎ করে বড় নেতা-নেত্রীর পারিবারিক কোনো সদস্য পার্টিতে নাম লেখানো মাত্রই বিশেষ পদে অভিষিক্ত করার ঘটনাও দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে পার্টির পুরনো নেতাকে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। পার্টি এবং নতুন সদস্য ভোটে জেতার পর মন্ত্রী অবশ্যম্ভাবী।

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে-

সরকারি সমস্ত ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ সরাসরি কাজ না করলেও ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এখানে উৎকোচের বিভিন্ন পন্থাও কাজ করে। আত্মীয়-স্বজন বা নিকট আত্মীয় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার রীতি বেশ চলে। এ অবশ্য স্বজনপ্রীতির অন্য একদিক।

তবে আত্মীয়-স্বজনকে পাইয়ে দেওয়ার মধ্যেই আত্মীয় প্রীতি সীমাবদ্ধতা নয়। জেলা রাজ্যভিত্তিক স্বজনপোষণ চলতে থাকে। যেমন লালুপ্রসাদ যাদব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, শোনা যায় তিনি না’কি বিহারের অনেক যুবক-যুবতীকে রেলের চাকরি করে দিয়েছিলেন। ঠিক সেরকম পশ্চিমবঙ্গ মহারাষ্ট্র অন্যান্য রাজ্যে প্রভাবশালী মন্ত্রী তার রাজ্যের মানুষের জন্য কিছু করবেন না স্বজনপোষণ  তা বলে না।

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প-

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ বর্তমানে বেশ রমরমিয়ে চলছে। আর এ কারণেই দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।

উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে- বিধবা ভাতা, বাধ্যর্ক্য ভাতার মত স্পর্শকাতর’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বেশ কাজ করে। রামের মা বৃদ্ধা। তার বার্ধক্য ভাতা সত্যিই প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায় রামের মা পাচ্ছে না। শ্যাম চাকরি করে অথবা তার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো। তার মা বাধ্যকতা পাচ্ছে। কারণ কি? শ্যাম রুলিং পার্টি সাথে উঠাবসা আছে। একে নেপোটিজম ছাড়া কি বলবো?

বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে বা ছোট শহর গুলোতে এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশ কাজ করে।

অবশ্য বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় গণ সুবিধাযুক্ত কিছু প্রকল্প আছে যেখানে নেপোটিজম কাজ করে না। যেমন কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী প্রকল্প সরকার যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে সেই নিয়মের মধ্যে প্রকল্পের কাজ স্মুথলি চলছে। কারণ হিসেবে বলা যায় বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় এই বিষয়টাকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। পার্টির নেতা এর সাথে যুক্ত থাকেন না।

Why nepotism is dangerous | স্বজনপোষণের ভয়াবহতা-

নেপোটিজম বা আত্মীয়পোষন এক সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি ধীরে ধীরে একটি জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অবশেষে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। কেননা-

যোগ্যতমের প্রতি অবিচার-

গণ পরিষেবা বা গণ সুবিধাযুক্ত প্রকল্প বা সেবার ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিরা বঞ্চিত হয়। নেপোলিয়ন এর জোরে অযোগ্য ব্যক্তির হাতে আসে কার্য পরিচালনার দায়িত্ব। পরবর্তীতে সমস্ত কাজকর্মের গতি শ্লথ হয়। অথবা সামগ্রিকভাবে সেই কার্য ভুল পথে পরিচালিত হয়। ফলে সমাজের পক্ষে আসন্ন অরাজকতার পরিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পরে।

ধনের অসম বন্টন-

ধন বা সম্পত্তির অসম বন্টন অবশ্যম্ভাবী। বংশপরম্পরায় সম্পত্তির বৃদ্ধি, অর্থ বৃদ্ধি স্বাভাবিক হলে, শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে বংশপরম্পরায় অভাব লেগেই থাকবে। তারাও আর মাথা তুলে দাঁড়াবার মত সাহস বা শক্তি কোনোভাবেই পাবেনা।

ধনের অসম বন্টন অর্থ সম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা স্থগিত সম্পদের মাথাপিছু পরিমাণ হ্রাস পাবে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক মান অবনমিত হবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় সে দেশ পিছিয়ে থাকতে বাধ্য।

দারিদ্রতা বৃদ্ধি-

যেহেতু এক শ্রেণীর মধ্যে বংশপরম্পরায় অর্থ কুক্ষিগত থাকছে। সেহেতু দারিদ্রতা বৃদ্ধিও স্বাভাবিক। তাদের যাদের হাতে অর্থ নেই, তারা ধ্বনি উচ্চবিত্তদের কাছে সাধারন মানের কাজের মধ্যে নিজেকে সঁপে দেবে। বিনিময়ে সামান্য পারিশ্রমিক পাবে। পারিশ্রমিক কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। হলে দারিদ্রতা বৃদ্ধি নিশ্চিত।

সামগ্রিক সাধারণ শিক্ষার অভাব-

বংশপরম্পরায় কর্মে নিযুক্ত রোজকার শিক্ষার অধিকারের ক্ষেত্রে একই পরিনাম সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ যাদের অর্থ থাকবে তারাই শিক্ষা নেবে। এবং বংশপরম্পরায় আগামীর দিকে এগিয়ে যাবে। নিরক্ষর, অশিক্ষার সাথে সাক্ষর ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত ব্যক্তিদের জয়জয়কার। এর হলেও আরেকটি অবস্থার সৃষ্টি হবে। তা হল-

সরকারি গনশিক্ষার বদলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি-

স্বাভাবিক ভাবে সরকার দ্বারা গণশিক্ষা ব্যবস্থার অবনতির শুরু হতে বাধ্য হবে। একদিকে শিক্ষা ও শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার সহাবস্থান, অন্যদিকে সরকারি শিক্ষা চালু রাখার জন্য, সরকারের শিক্ষা থেকে মানবসম্পদ আসার সম্ভাবনা, তাও বন্ধ হবে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে গণশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য উন্নতি বিধানের প্রতি নজর কম দেবে। একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ-

সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিও মুনাফার আশায় বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকবে। নেপোটিজম এর ফলে সমস্ত ক্ষেত্রে এক ধরনের আত্মীয়-স্বজন পুষ্ট কর্মীদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ একই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি চালনা করবে। স্বাভাবিকভাবে অধিক মুনাফার দিকে লক্ষ্য রেখে ধনবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হওয়া আশ্চর্য নয়। বাকি সব ধরনের কর্মীরা কেবলমাত্র কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা কম মজুরিতে মালিকপক্ষের ধন বৃদ্ধির সহায়ক দাসে পরিণত হবে।

সামন্ততন্ত্রের পুনরাবৃত্তি-

আত্মীয়পোষণের প্রভাবে এইভাবে আত্মীয়-স্বজন পোষন চলতে থাকলে আগামী দিনে পুনরায় সামন্ততন্ত্রের নবরুপ আসবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সামন্ততন্ত্রের পুনরাবর্তন হওয়ার সম্ভাবনার পথকে ত্বরান্বিত করবে।

আরো পড়ুন- জল অপচয়, আগামী পৃথিবীতে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আশার আলো-

নেপোটিজম যেহেতু অযোগ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও যোগ্যতমের সংখ্যা হ্রাস করছে, তাই অবিশ্বাস, শিক্ষার প্রতি অনাস্থা, খুন, রাহাজানি, নেশাগ্রস্ত সামাজিক পরিবেশ এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তাই গৃহযুদ্ধ সংগঠনের সম্ভাবনা অমূলক নয়।

তাই এই প্রতিকূল, অবাসযোগ্য পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবার জন্য শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের এক ছাতার তলায় আসার চেষ্টা করবে এবং মিলিত হবে। সম অধিকারের দাবিতে পথে নামা ও আন্দোলন এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন হবার রাস্তাও তৈরি হবে। আবার বিপ্লব এবং নতুন আর্থিক পরিকাঠামো সামাজিক, রাজনৈতিক স্তরে এর প্রচলন আমাদের সামনে আবার নতুন আশার আলো বর্ষিত হবে। তাই বলা যায় আত্মীয় প্রীতি এক নব স্বচ্ছ যুগের জন্মের শঙ্খ ধ্বনি শোনাবার মসিহা হয়ে হাজির হয়েছে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment