আপনি, আপনার মোবাইল, এমনকি দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে অবশ্যই পেগাসাস স্পাইওয়্যার স্ক্যাম সম্বন্ধে জানতে হবে(To protect you, your mobile and your mother land you should know- What is Pegasus Spyware Scam)। তাছাড়া বিপদে পড়তে সময় নেবে না। 2016 সালের আবিষ্কার, তবে 2017 থেকে 2021 এর মধ্যে পেগাসাস স্পাইওয়্যার স্ক্যামের(Pegasus Spyware Scam in 2021) মত এত বড় স্ক্যাম সারা পৃথিবীতে জুড়ি মেলা ভার। এ এক ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকারক স্ক্যাম। বিশ্বের মানুষ ভয়ঙ্করভাবে বিচলিত ও চিন্তিত- কিভাবে নিরাপদে থাকবে তাদের মোবাইল, ডাটা সহ, ব্যক্তিগত তথ্য সামগ্রী।
সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলেও পৃথিবীর বিখ্যাত পরিচিত ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা। আপনি কি বিখ্যাত ব্যক্তি? জনসমাজে বিশেষভাবে পরিচিত? স্টার? ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ? সতর্ক থাকুন পেগাসাস স্পাইওয়্যার(Pegasus spyware Software) থেকে।
বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট Emmanuel Macron-এর কথা। Pegasus লিস্টে তার নাম আসার সাথে সাথে তিনি তার মোবাইল ফোন বদলে ফেলেছেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত শুরু হয়েছে এই ক্ষতিকারক স্পাইওয়্যার নিয়ে। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে ভারতের অবস্থা ঠিক এর উল্টো। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জনগণকে দেখানোর চেষ্টা করছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার(Pegasus spyware Software) কিছুই নয়। বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাই এ ধরনের খবর প্রচার করারও কিছু নেই। অবশ্য এও ঠিক যে, কোন বিষয়ের প্রতি আতঙ্কিত বা অতিরিক্ত ভীতি থাকা উচিত নয়। বরং তাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সঠিক মোকাবেলার রাস্তা খোঁজা শ্রেয়।
পেগাসাস কী? | What is Pegasus?
পেগাসাস(Pegasus) কথাটি এসেছে গ্রিক পুরাণ থেকে। গ্রিক পুরাণে এক ধরনের সাদা ঘোড়ার কথা উল্লেখ আছে। যার দুটি ডানা আছে। অনেকটা পঙ্খিরাজের ঘোড়ার মত।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার কী? | What is Pegasus Spyware Software?
কিন্তু বর্তমান আধুনিক ডিজিটাল ইন্টারনেটের যুগে পেগাসাস হলো একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক সফটওয়্যার, যা কোন মোবাইল ফোন অথবা আইফোনে নিজের অজান্তেই প্রবেশ করতে পারে। প্রবেশ করেই সেই ডিভাইসের যেকোন তথ্য, ছবি, ভিডিও চুরি করে অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে দিতে পারে। ডিভাইসের যাবতীয় তথ্য বলতে সমস্ত কিছু তথ্যকেই বোঝায়। ছবি, লেখা, তথ্য, বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্যাদি সহ অন্যান্য গোপনীয় তথ্য। যেহেতু স্পাইওয়্যার তাই তার কাজই হলো ডিভাইসে প্রবেশ করে গুপ্তচরের মত কাজ করা। ফোন কল, কাকে ফোন করছেন, কী কথাবার্তা বলছেন, কার সাথে চ্যাট করছেন, কতক্ষণ চ্যাট করছেন, কি বলছেন, কি ধরনের ছবি, ভিডিও শেয়ার করছেন ইত্যাদি। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভিটিস, কোন কিছুই গোপন থাকছে না।
Pegasus Meaning in Hindi-
पेगासस शब्द ग्रीक पौराणिक कथाओं से आया है। ग्रीक पौराणिक कथाओं में एक प्रकार के सफेद घोड़े का उल्लेख मिलता है। जिसके दो पंख होते हैं। बिल्कुल पंखीराज के घोड़े की तरह।
लेकिन आज के डिजिटल इंटरनेट के युग में, Pegasus एक घातक दुर्भावनापूर्ण सॉफ़्टवेयर है, जो अनजाने में किसी भी मोबाइल फ़ोन या iPhone में प्रवेश कर सकता है। प्रवेश करने पर, डिवाइस किसी भी जानकारी, फ़ोटो, वीडियो को चुरा सकता है और किसी अन्य तृतीय पक्ष को दे सकता है। डिवाइस की सभी जानकारी का अर्थ है- सभी जानकारी- चित्र, लेखन, सूचना, विभिन्न बैंकों की जानकारी और अन्य गोपनीय जानकारी।
स्पाइवेयर के रूप में, इसका काम डिवाइस में घुसना और जासूस की तरह काम करना है। फ़ोन कॉल, आप किसे कॉल कर रहे हैं, आप किस बारे में बात कर रहे हैं, आप किसके साथ चैट कर रहे हैं, आप कितनी देर चैट कर रहे हैं, आप क्या कह रहे हैं, आप किस तरह की तस्वीरें, वीडियो साझा कर रहे हैं, आदि। आपके सोशल मीडिया पर गतिविधियां, कुछ भी गुप्त नहीं है।
কিভাবে পেগাসাস মোবাইলে প্রবেশ করে? | How Pegasus enters Phones and How Pegasus Works-
হ্যাকিংয়ের প্রচলিত একটি পদ্ধতি ছিল- কোন ফোনে এসএমএস পাঠানো। এসএমএসে একটি লিংক থাকতো। এসএমএস, মেল বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ হতে পারে। মোটকথা সেখানে একটি লিঙ্ক থাকবে। লিংকে ক্লিক করলে আপনার ফোন/ডিভাইস হ্যাক হয়ে যেতো বা হবার সম্ভাবনা থাকতো।
পেগাসাস-এ কিন্তু সেরকম কোন পদ্ধতি ব্যবহার হয় না। পেগাসাস-এর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহারকারীর পক্ষে বোঝার কোন সুযোগ নেই। পেগাসাস কিভাবে ফোনে প্রবেশ করে ভেবে(It is to be surprised how Pegasus enters phones)। মোবাইল নাম্বার জানা থাকলেই অজান্তেই কোন লিংক ছাড়াই পেগাসাস ডিভাইসে প্রবেশ করে(If Pegasus Spyware agent knows the mobile number, he can unknowingly install Pegasus in to the Device without any link. এবং সেখানে আপনার কল রেকর্ড, কথাবার্তা, ভিডিও, ছবি, জিপিএস লোকেশন যাবতীয় তথ্যাদি নিমেষে তাদের হাতে পৌঁছে যায়। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন সমস্ত ডিভাইসেই এটি ধারণাতীতভাবে কাজ করে।
ডিভাইসের গোপনীয় যাবতীয় ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ডও পেগাসাসের হাতে। অর্থাৎ সমস্ত নিয়ন্ত্রণ আর ইউজারের হাতে থাকছে না। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ডিভাইসের ব্যবহার যা আপনার অজান্তেই ঘটবে। সুতরাং ডিভাইসকে কোনো নিষিদ্ধ কাজকর্মে ব্যবহার করার জন্য মুশকিল হবে না। ইউজারের ভয়ঙ্কর অপরাধের শিকার হতে পারে এবং সেই দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তিও পেতে পারেন।
পেগাসাস তৈরি করল কে? | Who discovered Pegasus?
পেগাসাস ইজরায়েলের একটি গ্রূপ তৈরি করেছে। যার নাম NSO– এর ফুল ফর্ম হলো Niv Cormi, Shalev Hulio, Omri Lavie এই তিনজন ব্যক্তির নামের প্রথম বর্ণ অনুসারে।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার তৈরি করার পেছনে | Behind the Discover of Pegasus?-
উপরের লেখাটা পড়ে আপনাদের মনে অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে কেন এই ভয়ঙ্কর স্পাইওয়্যার তৈরি করা হলো। এন এস ও এর দাবি- সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা, ইন্টেলিজেন্স সংস্থাকে সাহায্য করার জন্য। কেন সাহায্য? সারা বিশ্বজুড়ে সমস্ত দেশের নিরাপত্তাল জন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করা হবে।
শুধু জঙ্গি গোষ্ঠী নয়, যেকোনো অপরাধ মূলক কার্যকলাপ যা দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে বা করছে, তাদের চিহ্নিত করণ হলো পেগাসাসের উদ্দেশ্য। ব্যক্তিগত অপরাধ মূলক কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ সরকারিভাবে কোনো রাষ্ট্র এই পেগাসাস স্পাইডার ব্যবহার করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- মেক্সিকো সরকার পেগাসাস ব্যবহার করেছে মেক্সিকো ড্রাগ লোর্ড ElChapo কে ধরার জন্য।
বাহ খুব সুন্দর। এতদূর পড়ার পর হয়তো আপনি স্বস্তি পেলেন যে সারা বিশ্বে হয়তো আর অপরাধ থাকবেনা। অপরাধ জগতের ধ্বংসলীলা অবশ্যম্ভাবী। অবশ্যম্ভাবী না হলেও যে অপরাধ খোলা আকাশের নীচে স্বস্তিতে নিশ্চিন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছিল, অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিল, তারা জেলে ঢুকবেই।
What is Pegasus Spyware Scam?
কিন্তু এই ঘটনার এখানেই একটা টুইস্ট আছে। সেটা কি? মেক্সিকো গভমেন্ট পেগাসাস স্পাইওয়ের নিয়ে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চরবৃত্তি করতে থাকে। কেন তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির? ধারণা সেই সাংবাদিক মেক্সিকান গভর্মেন্টের কিছু করাপশন সম্বন্ধে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেছিল এবং তাঁরই বিরুদ্ধাচরণে মেক্সিকান গভমেন্টের গুপ্তচরবৃত্তি। পরে সেই সাংবাদিক হঠাৎই অজান্তেই অজ্ঞাত পরিচয়ের হাতে নিহত হন(Source News)। সারা বিশ্ব চমকে ওঠে এই সংবাদ শুনে।
এছাড়াও ওয়াশিংটন পোস্টের জামাল খাসোগী নামে এক জার্নালিস্টকে সৌদি আরব সরকারের দ্বারা খুন হতে হয়। খবর পাওয়া যায়ে যে পেগাসাস স্পাইওয়্যার জার্নালিস্ট জামালের স্ত্রীর ফোনে কিছুদিন পূর্বে ইনস্টল করা হয়েছিল।
সৌদি আরবের আরো একটি খবর সারা বিশ্বকে চমকে দেয়। আরবিয়ান রাজপুত্র অ্যামাজনের চিফ জেফ বেজোস এর ফোন হ্যাক করে। এই খবরের সাথে সাথে এন এস ও এর নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে।
এর পরপরই ফ্রান্সের একটি এনজিও ফরবিডেন স্টোরি প্রকাশ করে যে, তারা Amesty ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা থেকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিয়েছে। তারা 50000 এর মত একটি ফোন নাম্বারের লিস্ট তৈরী করেছে। তাদের বক্তব্য যে হয়তো এই নাম্বারগুলো পেগাসাস স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার(Pegasus Spyware Software) ইনস্টল আছে অথবা আগামীতে ইনস্টল করা হতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছে 80-র বেশি সাংবাদিক, 17 টি মিডিয়া অর্গানাইজেশন, 10 টি ভিন্ন ভিন্ন দেশে যারা ছড়িয়ে আছে। তারা এক ছাতার তলায় এসে পেগাসাস স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার(Pegasus Spyware Software) এক্সপোজ নিয়ে দাড়িয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে রয়টার্স, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট, Suddeutsche Zeitung(Jarmany), লিমোনডে(ফ্রান্স), হেরিটেজ(ঈশ্রায়েল), প্রসেসো(মেক্সিকো), ডাইরেকত36(হাঙ্গেরি)।
অ্যামেস্টি ইন্টার্নেশনাল পেগাসাস কি এবং এর টেকনোলজিক্যাল বিষয় গুলির ব্যাখ্যা করেছে। এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন যদি আপনাদের টেকনোলজির জ্ঞান থাকে তবে তা বুঝতে পারবেন।
তাছাড়াও ব্যক্তিগত স্তর থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কানাডার দা সিটিজেন ল্যাব দ্বারা। তারা বলেছে যে পেগাসাস ভাইরাসকে খুজে বের করার জন্য যে পদ্ধতি তারা ব্যবহার করেছে তা সঠিক পদ্ধতি। তবে নন টেকনোলজি ব্যক্তিদের পক্ষে সেই ব্যাখ্যা বোঝা বেশ কঠিন।
ফরবিডেন স্টোরিজ ব্যক্ত করেছে যে 11 টি দেশে NSO-র রয়েছে। বন্ধনীর মধ্যে দেশগুলির গণতান্ত্রিক ইন্ডেক্স দেওয়া হয়েছে। দেশ গুলি হল- সৌদি আরবিয়া(156), টোগো(114), রুয়ান্ডা(130), মরক্কো(196), বাহারিন(150), u.a.e.(145), আজারবাইজান(146), কাজাখস্তান(128), মেক্সিকো(72), হাঙ্গেরি(55), ভারত(53)। লক্ষ্য করার বিষয় ভারতের গণতান্ত্রিক ইন্ডেক্স অন্যান্য দেশের থেকে সবার শীর্ষে রয়েছে।
50000 ফোনের মধ্যে 1000 ফোনকে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে স্পাইওয়্যার শনাক্ত করার জন্য। কেউ কেউ ফোন পাঠাতে রাজি হয়েছেন। আবার অনেকেই মানতে নারাজ তাদের ফোনে পেগাসাস আছে।
পেগাসাস থেকে কিভাবে বাঁচা সম্ভব?
সত্যি কথা বলতে কি পেগাসাস প্রাইভেট থেকে বাঁচার রাস্তা ব্যক্তিগত স্থর থেকে একেবারে সীমিত। যদি আপনার ফোন নাম্বার কোন অপরিচিত ব্যাক্তিকে দেন তাহলে তার এখান থেকে পেগাসাস এজেন্টের কাছে গেলে, তারা যদি মনে করে আপনার মোবাইলের পেগাসাস প্রবেশ করাবে, তাহলে তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
তাহলে উপায়?
যতটা পারেন মোবাইল নাম্বার ব্যক্তিগত স্তরে পরিচিতদের দিন। তাদেরকে বলুন সে নাম্বার অন্য কোনো অপরিচিত ব্যক্তিদের না দিতে। আপনি আপনার পরিচিতদের মোবাইল নাম্বার কাউকে দেবেন না।
ফোন নাম্বার ছাড়া এই মুহূর্তে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কোনমতেই আপনার মোবাইলে ইন্সটল করা অসম্ভব। কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে সাধারণ মানুষদের নিরাপদে থাকাটাও জরুরি। কেননা আপনার অমূল্য ব্যক্তিগত তথ্যাদি অন্যের হাতে পৌঁছে গেলে জীবন-যাপনে তার সংঘাতিক বিপর্যয় আনতে পারে। এই মুহুর্তে সামান্য কিছু নিরাপদে থাকার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। কিছু ভিপিএন আছে দাম দিয়ে কিনতে হয়। আর কিছু ভিপিএন আছে বিনামূল্যের। পারলে পেইড সার্ভিসে রান। না পারলে অন্তত ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করুন। ভিপিএন লোকেশন হাইড করার জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে।
আর কোন কোন ব্যক্তি 50000 ফোন লিস্টে আছে?
সবার নাম জানা সম্ভব নয়। তবে দাউদ ইব্রাহিম, নিরব মোদী, বিজয়মাল্য, হাফিজ সাঈদ এই লিস্টে আছে? না নেই। আপনারা ভাববেন এরা তো দেশের ক্ষতিকারক অণুজীব। জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এরাতো দাগি আসামি। সরকার এদের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারতো। কিন্তু না, সে গুড়ে বোল্ডার। এ হবার নয়। তাই মন খারাপ না করে পরের লাইনগুলো পড়তে থাকুন।
বেশিরভাগ নামই কিন্তু সাংবাদিক, আরবিয়ান রাজপরিবারের সদস্য, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী, ব্যবসাদার, মানবাধিকার কমিশনের কর্মীগণ, ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নাম আছে। তাছাড়া কিছু দেশের সরকারি শীর্ষ কর্তারা আছেন। যেমন জার্মানির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রনের কথা পূর্বেই বলেছি।
ভারতের পেগাসাস স্পাইওয়্যার | Pegasus Spyware Software in India-
ভারতের 300 ব্যক্তিবর্গের নাম আছে, যাদের মধ্যে 2017 থেকে 2019 এর মধ্যে তাদের ফোনে চরবৃত্তি করা হয়েছিল। 2017 থেকে 2019 এইসময় বৃত্তকে মনে রাখা জরুরী, কেননা এই সময়ের মধ্যে রাজনীতির চর্চা সারাদেশ জুড়ে চলছিল লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে।
1ম নাম- প্রথমেই আসে রাহুল গান্ধী এবং তার দুই রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ও সহযোগীর নাম। 2019 লোকসভা ভোটের সমসাময়িক রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি কি হওয়া উচিত তার আলোচনার জন্য তারা সবসময় ব্যস্ত। সেই মুহূর্তে রাহুল গান্ধী ও তার দুই সহযোগীর মোবাইলে প্রবেশ করানো হয় পেগাসাস স্পাইওয়্যার। রাহুল গান্ধীর দাবী, তার ফোন হ্যাক করা হয়েছে এবং পেগাসাস ভাইরাস পাওয়া গেছে।
2য় নাম- দ্বিতীয় নাম হল প্রশান্ত কিশোর। তিনি বলেছিলেন 2018-2019 লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে আর কাজ করবেন না। তিনি বলেছিলেন- তাঁর ফোন হ্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে এবং সেজন্য তিনি পাঁচবার ফোন পরিবর্তন করেছেন।
3য় নাম- তৃতীয় ব্যক্তি হলেন অভিষেক ব্যানার্জি। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির ভাইপো। 4র্থ নাম- চতুর্থ ব্যক্তি রাজস্থানের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের পার্সোনাল সেক্রেটারি।
5ম নাম- পূর্বতন VHP প্রধান প্রবীণ তোগাড়িয়া। তিনি 2018 তে VHP ছেড়ে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বিজেপির বিরুদ্ধে জনসম্মুক্ষে নানান বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন।
আরো অসংখ্য নাম 50000 লিস্টে আছে-
এছাড়া অন্যান্য নাম গুলির মধ্যে কিছু ইউনিয়ন মিনিস্টার, আছেন। যেমন আই.টি মিনিস্টার অশ্বিনী বৈষ্ণব।
রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে কিছু আমলাদের নামও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
6ষ্ঠ নাম- কিছুদিন পূর্বে সিবিআই ভার্সেস সিবিআই এর একটি নাটকীয় বিরুদ্ধাচরণ ঘটনা চলছিল। সেই সূত্র ধরে পূর্বতন সিবিআই প্রধান অলক বর্মার নামও এই তালিকায় রয়েছে। এবং 7ম নাম- সিনিয়র সিবিআই অফিসার রাকেশ আস্থানার নামও আছে। পূর্বতন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসার নাম আছে। তিনি 2019 লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নির্বাচনী প্রচারে নিয়ম ভঙ্গের কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন।
জার্নালিস্টদের মধ্যে-
8ম নাম- রোহিনি সিংয়ের নাম আছে। তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার রিপোর্টার। জয় শা’র কোম্পানি কিভাবে 16 হাজার গুণ বৃদ্ধি করেছিল তারই রিপোর্ট করেছিলেন। তার এক বছরের মধ্যে 50000 লিস্টে তার নাম চলে আসে।
9ম নাম- তাছাড়া স্বাতী চতুর্বেদী, যিনি বিজেপির আইটি সেল নিয়ে বই লিখেছিলেন।
10ম নাম- পূর্বতন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এডিটর সুশান্ত সিংহ এবং ইন্ডিয়া টুডে জার্নালিস্ট সন্দ্বীপ, যারা রাফাল কন্ট্রোভার্সি নিয়ে খবরা-খবর করেছিলেন।
11শ নাম- আরেকজন দ্য হিন্দুর জার্নালিস্ট বিজয়ীরা সিং, তিনি 2017 তে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েটে বাজেট এক বছরের মধ্যে কেন 10 গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল তা নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। পূর্বের বছর(2016-17) সরকার 33 কোটি টাকা বাজেট ধার্য করে ছিল, কিন্তু তা 2017-18 সালে 333 কোটি টাকা ধার্য করে। অর্থাৎ 300 কোটি টাকা বাজেট ন্যাশনাল সিকিউরিটি সেক্রেটারিয়েটে বৃদ্ধি হল।
12শ নাম- সিনিয়র এডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ একটি অভিযোগ করেন যে 2017-18 অর্থবর্ষে 300 কোটি টাকা ন্যাশনাল সিকিউরিটি সেক্রেটারিয়েটে যে বাজেট বৃদ্ধি হয়েছে, তা পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনার জন্য সরকার খরচ করেছে। পরের বছর অর্থাৎ 2018-19 সালে তা 800 কোটি টাকাতে গিয়ে পৌঁছেছিল। সরকার এই এলিগেশনের সঠিক জবাবও দেয়নি।
13শ নাম- তবে আরেকজনের নাম না বলে পারছি না। তিনি হলেন সুপ্রিম কোর্টের একজন স্টাফ মেম্বার, যিনি রঞ্জন গগৈ এর উপর সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ করেন।
কিভাবে বোঝা সম্ভব পেগাসাস স্পাইওয়্যার অ্যাটাক করেছে | How do we understand that Pegasus Spyware Software Attacked-
সাধারণভাবে বোঝা খুবই মুশকিল। তবে ফোনের কার্যকারিতা ও সক্রিয়তার গতিবিধি দেখে কিছুটা বোঝা বা অনুমান করা যেতে পারে। জেফ বেজোসের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন- স্বাভাবিক ভাবে ফোনে ডাটা খরচের তুলনায় স্পাইওয়্যার অ্যাটাক হলে ডাটা অনেক বেশি ডাটা খরচ হয়। এটি একটি সাধারণ অনুমান মাত্র। প্রশান্ত কিশোরও সেই একই দাবি তুলে বলেছিলেন তার ফোন কেউ হ্যাক করার চেষ্টা করছে।
পেগাসাস স্পাইয়েরের খরচ-
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনার জন্য খরচ হয় 4 কোটি টাকা। আর দশটি ফোনের জন্য তা খরচ হয় পাঁচ কোটি টাকা।
পেগাসাস ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যাহত-
পেগাসাস সম্বন্ধে NSO-র বক্তব্য ছিল অপরাধ জগতকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তার প্রতিরোধে ব্যবহার করা। সমস্ত ব্যবহারকারী দেশ গুলি তাকে সমর্থন করেই ব্যবহার করেছিল। কিন্তু বর্তমানে উদ্দেশ্য কতখানি সার্থক হচ্ছে? বরং তা ব্যবহৃত হচ্ছে সাধারণ সমাজে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিপক্ষ দলের রাজনৈতিক কর্মী, আমলাদের উপর। একেই কি বলে গণতন্ত্র?
এই বিতর্কে সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি পক্ষ থেকে নানান মন্তব্য উঠে আসে। যেমন কংগ্রেসের প্রধান স্পোক পারসন অভিযোগ করেন- মোদি সরকার কর্নাটকের কিছু কংগ্রেস এমএলএ- এর মোবাইলে চরবৃত্তি করছে। কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারকে ভেঙে দেওয়ার জন্য।
RJD নেতা তেজস্বী যাদব বলেন- ‘ওয়েলকাম টু দ্য অরওয়েলিয়ান ইন্ডিয়া।’ আম আদমি পার্টির এমএলএ সঞ্জয় সিংহ 2017 থেকে 2019 এর সময়সীমাকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করেছেন। 2019 এপ্রিলে এক মহিলা রঞ্জন গগৈ এর উপর সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের এলিগেশন আনেন। সেই মহিলা বলেন যে, তার ফোন হ্যাক হয়েছে। আর 2019 এ নভেম্বরে রঞ্জন গোগোই চিফ জাস্টিস হিসাবে সরকারকে রাফাল কেসের ক্লিনচিট দেয়। এ ঘটনার ব্যাখ্যা বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে দিয়ে থাকেন।
প্রেসক্লাব বলে যে, সরকার জার্নালিস্টদের উপর নজর রাখার জন্য পেগাসাস দিয়ে ফোন হ্যাক করছে। প্রেসক্লাব আরো বলেছে- গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ- জুডিশিয়ারি, পার্লামেন্ট, মেডিয়া, এক্সিকিউটিভ হ্যান্ড মিনিস্টাররা হ্যাক্ট হচ্ছেন।
দৈনিক ভাস্কর পেগাসাস নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়। তার কিছুদিন পরে এই পত্রিকার দপ্তরে ইনকাম ট্যাক্সের রেড পরে। এ কি কেবল কাকতালীয় ঘটনা?
বেশিরভাগ অপজিশন আর স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমগুলি কেবল বলছে যে এর জন্য তদন্ত হওয়া জরুরি। তবে সরকার দ্বারা নয় বরং সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা তদন্ত হোক।
ফ্রান্স, আলজেরিয়া, হাঙ্গেরি, এমনকি ইজরায়েল এই স্ক্যান্ডাল নিয়ে কমিশন গঠন করেছেন।
কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে Pegasus Spyware Software নিয়ে কি হচ্ছে-
ভারত সরকারের বক্তব্য- পেগাসাস স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার বলে কিছু নেই। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকারের বিরুদ্ধে এটি একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। ভারতের বিকাশকে বাধা দেওয়ার এক বিশাল ষড়যন্ত্র। ভারতের বিকাশে অন্যান্য দেশ খুব একটা খুশি নয়। তাই এই ধরনের চক্রান্ত চলছে সারা পৃথিবী জুড়ে। এ ধরনের বক্তব্য সমর্থন করেছে কেবলমাত্র মোদি এবং বিজেপির ভক্তরা।
কিন্তু সত্যি কি তাই? সারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেখানে এই স্ক্যান্ডালের জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন, তদন্ত করার জন্য আতঙ্কিত হয়ে আছে, সেখানে ভারত সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কি সত্যি সত্যি একজন বোকা মানুষ? তিনি ফোন বদলে ফেলেছেন পেগাসাস আতঙ্কে। আই টি মিনিস্টার বলেছেন- যদি কারো মোবাইল নাম্বার এই 50000 লিস্টে চলে আসে, তার অর্থ এই নয় যে, তার ফোনে স্পাইওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে বা ভবিষ্যতে প্রবেশ করানো হতে পারে। যুক্তিসংগত দেখলে দেখা যাবে উনার বক্তব্যের ধনাত্মক দিক রয়েছে। এ কিন্তু জনগণের অভিযোগের সদুত্তর নযনয়।
Amesty বলছে যে, কিছু মোবাইলে চরবৃত্তি করা হয়েছে, কিছু পোটেনশিয়াল লিস্টে আছে, ভবিষ্যতের সেই নম্বরে চরবৃত্তি করা হতে পারে বা করার সম্ভাবনা আছে। আর কিছু মোবাইলে চরবৃত্তি করার জন্য এটেম্পট করা হয়েছে।
ঠিক এই বার্তাটি মোদি সরকার মিডিয়ার সামনে বলার চেষ্টা করছি যে, Amesty যেটা বলছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়, অনুমান মাত্র। অতএব আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে একথাও ঠিক 50 হাজার চেকলিস্ট যে পুরোপুরি মিথ্যা, সেটা কিন্তু কোনভাবেই নিশ্চিত করে কেউ বলছে না।
এত কথাবার্তা বিতর্ক সত্ত্বেও একটা প্রশ্ন আসছে যে, কোন কিছু ভুল বা ঠিক বিচার করার জন্য নিরপেক্ষভাবে তদন্ত শুরু হচ্ছে না কেন? নিজেদের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য তদন্ত কমিশন গঠন ও তদন্ত শুরু করা প্রয়োজন। জনগণ আপনা-আপনি সরকার এবং পার্টির ওপর ভরসা করবে। যেখানে অন্যান্য দেশগুলো তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে, সেখানে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের কেন বিশেষভাবে প্রযুক্তিবিদ ভাবছেন। জনগণ মোদীজি বা তার পাটি কি ভেবে বসে আছেন যে, জনগণ অন্ধ ভক্তের মতো তাদের বিশ্বাস করছে বা ভবিষ্যতেও করে যাবে।
জনগণের কাছে অনুরোধ-
জনগণ ও পাঠকদের কাছে আমাদের বক্তব্য ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করুন-পেগাসাস ইস্যু কিন্তু কোনো বিরোধী পার্টির ওপর নজরদারি করার মত সাধারন কিছু গুপ্তচরবৃত্তি নয়, এটি সারাদেশে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক। অন্ধ ভক্তের মতো মোদিজীর মধুর বাক্যবাণে মজে থাকলে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারার মতো কাজ হবে। দেশকে যদি ভালবেসে থাকেন, অবশ্যই এই স্ক্যান্ডালের সত্য উদঘাটনের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য, জনগণের মঙ্গলের জন্য তদন্ত হোক। জয় হিন্দ। জয় ভারত। ধন্যবাদ।