Garibi Hatao Slogan from 1971 to 2022 | Remove Poverty

Garibi Hatao Slogan– ভারতের মতো দেশের পক্ষে বেশ আকর্ষণীয় ও স্পর্শ কাতর বিষয়। 1971-এ ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বে স্বাধীনতার পর এক যুগান্তকারী প্রকল্প। 1971- এর পরবর্তী সময়ে ভারত যাতে আত্মনির্ভরশীল, অনন্য দেশের গরিমায় উজ্জ্বল হতে পারে, তার নিমিত্তে Garibi Hatao Slogan সারাদেশব্যাপী আলোড়িত ঢেউ রূপে দেখা দিয়েছিল। শ্রীমতি গান্ধী গরিবদের কাছে মসিহা স্বরূপ পরিণত হয়েছিলেন।

কিন্তু Garibi Hatao Slogan কিছু মানুষের মনে এক বিপরীত স্রোত নিয়ে হাস্যকর মজাতে পরিণত হবার যোগার হয়েছিল। Garibi Hatao Slogan এর ক্রমশ যেন গরিব হটাও স্লোগান এ পরিণত হয়। মানুষের কর্মযোগান, পারিশ্রমিকের পরিবর্তে কর্মহীন, অন্ন-বস্ত্রহীন মানুষজন ধনীদের কাছে হাস্যরসে পরিণত হল। একরাশ ঘৃণা সহকারে অবমাননা আর জুলুম সহ গরিবরা ধীরে ধীরে বিতারণের পর্যায়ে চলে এলো।

Remove Poverty Slogan বর্তমানেও প্রাসঙ্গিক-

1971-এর পর  থেকে 2022 এর তৃতীয় দশকেও এর সুরাহার কোনো পথ নেই। গরীব যেখানে ছিল তার বংশধর সামান্যতম পরিবর্তনে সেখানেই বর্তমান। তবে একথাও ঠিক সামাজিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সামান্য আর্থিক রদবদল যে হয়নি তা নয়। কিন্তু তবুও ভিখারির সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি উদ্বাস্তু গৃহহীনের সংখ্যাও কম নয়। তাই বর্তমানে একাত্তরের Garibi Hatao Slogan ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ প্রাসঙ্গিক।

Garibi Hatao Slogan কোন মজাদার কৌতুক নয়-

পূর্বেই বলেছি গরিবি হটাও স্লোগান কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনমানসে মজাদার কৌতুকে পরিণত হয়েছিল। গরিবি দূর করার পরিবর্তে গরিবদের দেশ ছাড়া করার উপক্রম। আমরা দেশের সর্বেসর্বা হয়ে যা কিছু আছে ভোগ দখলের অধিকারী। বাকি সব দেশ থেকে বিতাড়িত হও।

এ কথা মাথায় রাখা জরুরি- যা কিছু শিল্প, স্থাপত্য, ইমারত, সৌধ, সৃষ্টির ইতিহাস, শ্রমের যোগান সবই যে গরিব সাধারণ শ্রমিকদের দান, আমরা ভুলে যাই। ভুলে যাই কৃতজ্ঞ হবার সাধারণ এক আচরণের কথা। যা কিছু নেবার সবই নেবো, বিনিময়ে দেব বেত্রাঘাত বা কখনো কখনো পদাঘাত।  কবির ভাষায় তাই বলতে ইচ্ছা জাগে- ‘দূর হও যত মিথ্যাবাদীর দল।’

মানবসত্তা ভালো-মন্দ সমাহারে সৃষ্টি। কি গরীব কি ধনী দোষগুণ সমন্বয়ে মানুষ। ভালোলাগা, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতা যত বিমুর্ত গুণাবলী ধনী-গরিব সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। দুঃখ-বেদনা, আত্মসম্মান, আত্ম অভিমানের গুরুত্ব কি কেবল ধনীদের অধিকার? আর্থিক বৈষম্যই এই বিমুর্ত মানবিক বৈশিষ্ট্য গুলিকেও শ্রেণিবিন্যাসে ভিন্ন করে দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে আর্থিক বৈষম্যের নিরিখে সীমাবদ্ধ আবেগীয় অনুভব। তুমি ধনী তোমার মধ্যে এই গুণাবলী প্রকাশ হবে। সে গরীব তার আবার দুঃখ-আনন্দ কিসের? তাদের দুঃখ আনন্দ বেদনা থাকতে নেই। তারা এক নির্জীব তাফিন সমাজের কীট।

এই ধারণা আমাদের সমাজকে শুধু পিছনে নয়, একেবারে মনুষ্যত্বহীন অন্ধকার কূপে নিক্ষেপ করছে। আমরা ভুলে গেছি আমাদের একমাত্র প্রধান পরিচয় আমরা সামাজিক জীব মানুষ। ধনী গরিবের বিচার বিশ্লেষণ আর্থিক মানদণ্ডে মাখতে মাখতে মনুষ্যত্ব বিবেক বর্জিত গরিব মানুষের পরিণত হয়েছি।

এখন এই মুহূর্তে Garibi Hatao Slogan মনুষ্যত্ব, বিবেকহীন গরীবদের জন্য প্রযোজ্য হলে কি হবে তাদের? কিন্তু এ আমার মজাদার কৌতুক নয়। এ প্রশ্নের উত্তর আপনাদের কাছ থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।

Garibi Hatao Slogan এর প্রয়োজনীয়তা-

গরীবদের প্রথমে দুটি ভাগে বিভক্ত করি।

  • একটি ভাগ হল- আর্থিকভাবে দুর্বলতর গরীব সমাজ ও
  • অন্যটি হলো বিবেক, মনুষত্ব-মানবতাহীন গরীব সমাজ।

আর্থিকভাবে দুর্বল গরীব সমাজ-

আর্থিকভাবে দুর্বল সমাজকে সাধারণভাবে গরিব বলে থাকি। আমরা সামাজিক জীব, আর্থিকভাবে নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠান প্রচলিত ধারা আমাদের সমাজের সর্বস্তরে বিরাজমান। স্বাভাবিকভাবে যা শেখানো হয় তাই শিখি। না শিখে উপায় নেই। না শিখলে, না বললে সমাজচ্যুত জাতিতে পরিণত হতে হবে।

ঠিক এ কারণেই ধনের অসম বন্টন ধনী-গরিবের জন্ম। আদিম সাম্যবাদী সমাজের মধ্যেই কখন যে এ ধরনের আবির্ভাব তার সাল তারিখ কোন ইতিহাস নেই। কিন্তু ধনের আবির্ভাবই যে এ মানুষের মধ্যে বিভেদ এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামার উদ্ভব তা অস্বীকার করার জো নেই।

সাম্যবাদী সমাজের পালাবদলেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। শুরু হলো যুদ্ধ, দাঙ্গা, জীবনহানি। সেই থেকে ইতিহাসের পটপরিবর্তনের অধ্যায়গুলি আমরা সমস্ত না হলেও কিছু কিছু জানি। তারই ধারাবাহিকতা রাজা-বাদশা থেকে উপনিবেশিক রাজত্ব ও বর্তমানের রাষ্ট্রপরিচালনার পদ্ধতি।

অর্থ এক শ্রেণি থেকে অনবরত শ্রেণীতে স্থানান্তরিত। কিন্তু বন্টনের সামঞ্জস্য নেই। ফলস্বরূপ এখানেও নানান দুর্ঘটনা। সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রয়োগ ও বদল। চলছে শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন, দাঙ্গা, লুটতরাজ ও যুদ্ধ। এবং ফলস্বরূপ প্রাণহানি। অযাচিত প্রাণ হরণের কিন্তু শ্রেণি নেই। কেউ বাদ যায়না। সেখানে ধনী-গরিব সকল পরিবারের মধ্যেই আসে শোকের ছায়া। মর্মস্পর্শী বুক ভরা বেদনা।

আর দুর্ঘটনার প্রথম ও প্রধান কারণ ধনের অসমতা। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে বেশিরভাগ অর্থ সম্পদের ভাণ্ডার। অর্থাৎ ওই শ্রেণীর মানুষের কাছে ধনের ঘনত্ব বেশি। ফলস্বরূপ সাধারন গরিবের মধ্যে এর ঘনত্ব হাওয়ার মতো। অধরা ধন হাতে আসে না। তা এলে ও আঙ্গুলের ফাঁক ফোকর দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সমতা বিধানে Garibi Hatao Slogan এর প্রাসঙ্গিকতা অপরিহার্য।

মনুষ্যত্ব-বিবেক-মানবতাহীন গরীব সমাজ-

সারা পৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভোগ্য বিষয় হলো অর্থ এবং ক্ষমতা। অর্থ মানুষকে ক্ষমতাশালী করে তোলে। ক্ষমতা অর্থে শারীরিক ক্ষমতা এখানে প্রযোজ্য নয়। যদি তাই হত তাহলে সারা পৃথিবীতে বাহুবলিরাই রাজত্ব করত। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতায় রাষ্ট্রীয় জীবনে সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলে। অর্থ থাকলে ক্ষমতা হাজির হয়। অন্যদিকে ক্ষমতার অধিকারীদের আশেপাশে মানুষজন ভিড় করে। লোকবল বাড়িয়ে তোলে।

শুরু হয় নানান ধরনের পীড়ন, অত্যাচার, শোষণ। আর এগুলো প্রযোজ্য হয় আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষের উপর। যাদের আমরা গরিব বলে অবহিত করি।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অত্যাচারী, ক্ষমতালোভী, শোষণকারী মানুষের দল যাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে মনুষ্যত্ব, বিবেক, মানবতা, ভালোবাসা, প্রেম নামক বিমূর্ত সৎ গুণাবলী। এরা এক ধরনের গরীব। গরীবি এদের ভাষায়, গরীবি এদের আচরণে, গরীবি ব্যবহারে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে সত্যি কি শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা অমানুষ, বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন, অমানবিক? উত্তর- ‘না।’ তাহলে?

বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যা-কিছু প্রাতিষ্ঠানিক চলমান পদ্ধতি পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের এক জটিল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে। আসমুদ্রহিমাচল কেউ বাদ যায় না। আর্থিকভাবে ধনী ও গরিব সকল শ্রেণী এর অধীনে ডাঙ্গার মাছের মত খাবি খাচ্ছে। আর এভাবেই সকলেই যান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত। শোক দুঃখের মতো মানবীয় দোষ ও গুনগুলি। প্রয়োজন এই ধরনের Garibi Hatao Slogan।

Garibi Hatao Slogan-এর আড়ালে যান্ত্রিকতা-

মনে আছে হেমা মালিনী একবার অ্যাক্সিডেন্টে ঘায়েল এক ব্যক্তিকে তার গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছানোর দায়িত্ব এড়িয়ে ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে কত রকম মন্তব্য- বিবেকহীন মানুষ, মনুষ্যত্বহীন, মানবতাহীন এক নারী। আসলে ওনার ইচ্ছা থাকলেও উনি যে সমাজে বসবাস করেন সে সমাজে এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করে। আর সে সমাজকেও নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রব্যবস্থার পুঁজিবাদ।

একদিকে এরকম একজন ভারতখ্যাত সেলিব্রিটি, অন্যদিকে অতিসাধারণ সমাজের মানুষজন। সেই মুহূর্তে তিনি যেটা ভেবেছিলেন, সেটা হলো নিরাপত্তা। নিজস্ব নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি সেখান থেকে নিজেকে মুক্ত করে হাঁফ ছেড়ে বেঁচে ছিলেন। সাধারণ জনসমাজ তো সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক নেতা, ক্রিকেটারের মতো স্বনামধন্য মানুষের শরণাপন্ন। এই ধরনের সেলিব্রিটিদের আদর্শ গরিবদের জীবন ধন্য করে বলে আজও ধারণা পোষণ করে। এক্ষেত্রে তারা সে রোগী রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে সেলিব্রিটিকে দেখার ভিড় জমাতো না, তা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারে না। এতেও অতি সাধারন সমাজকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ এর নিয়ন্ত্রণও রাষ্ট্রব্যবস্থার পুঁজিবাদী করে থাকে।

অনেকে বলবেন শিল্পপতিরা অনেকে অনেক কিছু দান করে- প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান, স্কলারশিপ দেয়, বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ কর্ম করে। এসবই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদী ফলাফল। কিরকম? ত্রাণ তহবিলে জমা, স্কলার্শিপ সমাজসেবামূলক কাজ কর্ম সবই রাষ্ট্রকর্তৃক আরোপিত কিছু নিয়ম। আমরা তাকে আইন বলে থাকি। এই সমস্ত কার্যক্রমের ফলস্বরূপ বাস্তবায়ন অর্থে সেই শিল্পপতিরা ইনকাম ট্যাক্স ছাড় পায়। তাছাড়া কিছু অসৎ লোক এ পদ্ধতির ফলে নোংরা টাকাগুলোকে পরিষ্কার করে। করতে বাধ্য হয়। এটা আইনের ফাঁকফোকর এর অবদান।

মূল কথায় আসা যাক-

Garibi Hatao Slogan-এর কোন প্রয়োজন হবে না, তার জন্য যেটা করনীয় সেটা হল- পদ্ধতির পরিবর্তন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের পর বিনোদন, অবসর, চাহিদা পূরণের সমস্যা সমাধানে জটিল কাণ্ডকারখানার অবসান ঘটবে। বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট অভাব, যোগানের ঘাটতি কমিয়ে পারস্পরিক অবিশ্বাসের অবসান ঘটবে। ক্ষমতা প্রয়োগের আস্ফালনের প্রয়োজনীয়তার মৃত্যু ঘটবে। সকল মানুষ সমানভাবে বিবেচিত হলে ক্ষমতা ও ভোগ দখলের সামঞ্জস্য এলে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব একই গণ্ডির মধ্যে বিরাজমান হবে।

আরো পড়ুন-

মনে রাখা উচিত- ধনের অসাম্যই বিভেদ সৃষ্টির কারণ। বিভেদ হলেই অভাব, অভাব থেকে সৃষ্টি হবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই, যুদ্ধ, হিংসা। অন্যদিকে আর্থিকভাবে সফল মানুষের ক্ষমতার প্রয়োগ। এখানেও অত্যাচার, লড়াই, যুদ্ধ। উভয়পক্ষই পরস্পরের প্রতি আক্রমণে মানবসমাজের মৃত্যু। মৃত নগরী রাজা অয়দিপাউস তখন কি করবে?

Help Your Family and Friends:

Leave a Comment