সকলকে বিজয়া দশমী ও দুশেরার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন(My Warmth and best complements of Vijaya Dashami and Dusshera Wishes to All of You) জানাই। মূলত একই অনুষ্ঠানে ভিন্ন নাম। সারা ভারতবর্ষজুড়ে বিভিন্ন নামের সাথে অনুষ্ঠানের আয়োজন ও ব্যাখ্যা। ভিন্ন ভিন্ন নাম ও অনুষ্ঠানগুলি উদযাপনের ভিন্ন ধরনের হলেও তা দুর্গাপূজার সঙ্গে জড়িত। পশ্চিমবঙ্গে দূর্গা পূজার আয়োজন যেভাবে জাঁকজমকের সাথে অনুষ্ঠিত হয়, অন্যান্য রাজ্যে সেভাবে না হলেও দুর্গাপূজার রীতিকে অস্বীকার করা যায় না।
মূলত চারদিন ধরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এর সূচনা হয় মহালয়ার দিন। অর্থাৎ অমাবস্যা ও প্রতিপদের সংযোগ সময়ে দেবীপক্ষের সূচনা। এর ছয়দিন পর মহাষষ্ঠীতে দুর্গার আরাধনা, নবপত্রিকা বোধন এবং সপ্তমীতে আগমন। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী মূলত এই চারদিনের জাঁকজমকেই গুরুত্বসহকারে উদযাপন করা হয়। শেষ দিন অর্থাৎ বিজয়া দশমীতে আগমনী পুনরায় শ্বশুর বাড়ীর দিকে যাত্রা করেন।
Dusshera-
অন্যদিকে প্রচলিত আছে দশমীর দিন রাম রাবণকে যুদ্ধে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করেন। পৌরাণিক কাহিনীর বশবর্তী হয়ে সারা উত্তর ও দক্ষিন ভারত জুড়ে পালিত হয় দশেরা বা দুশেরা(Dashera or Dussehra)। দশেরা উৎসব পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও পালিত হলেও উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল, পশ্চিম বিহারের মত এত জাঁকজমকপূর্ণ হয় না। অন্যদিকে দুর্গাপূজার জাঁকজমক পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তেমন হয়না। অঞ্চল থেকে উৎসব অনুষ্ঠানের গুরুত্ব পালন এবং আড়ম্বরের পার্থক্য হলো ভারতবর্ষের বৈচিত্র্য।
পশ্চিমবঙ্গের দশেরা উৎসব কে স্থানীয় ভাষায় রাবণ বধ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। কেননা দশেরা উৎসবের আচার বা পালনীয় রীতিতে রাবণ বধের মধ্যেই নিহিত আছে। রাম রাবণের যুদ্ধ নয় রাত দশ দিন ধরে চলেছিল। তাই নয় দশ সংখ্যা গুলির গুরুত্ব দেওয়া হয়। নয়-এর সাথে দুর্গাপুজোর মিলিত আধার হিসেবে ধরে নবরাত্রি পালিত হয় গুজরাটে।
নয় রাত দশ দিনব্যাপী রাম রাবণের যুদ্ধ, অন্যদিকে দশমী তিথি একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই হয়তো দুশেরা নামটির উদ্ভব ও প্রচলন।
দশেরা বা দুশেরার মূল অনুষ্ঠান । Main program of Dashera or Dussehra-
অশুভ শক্তির পরাজয় সূচনা মহালয়ার দিন থেকে শুরু এবং তার অন্তিম দিন দশমী। রাম রাবণকে যুদ্ধে পরাজিত ও বধ করেন দশমীতে। রাবণকে হিন্দু মতে অশুভ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার পরাজয়কে স্মরন করে উদযাপন হয়ে দশেরা।
রাবণ দেখতে কেমন তা মানববন্ধনে যে ছবি অথবা ফুটে ওঠে তাকে আধার করে রাবণের এক বিরাট কাঠামো তৈরি হয়। লম্বা লম্বা হাত পা ও বিশাল কাঠামোযুক্ত রাবণকে সাজানো হয় যোদ্ধার বেসে। বাঁশ, ঘর, কাগজ, কাপড় দিয়ে তৈরি কাঠামোর ভেতর থাকে আতশবাজি।
অন্যদিকে রাম, লক্ষণ, হনুমান সুগ্ৰীব সাজেন সশরীরে মানুষজন। শোভাযাত্রা চলে সারা শহর বা গ্রামজুড়ে। শোভাযাত্রার অন্তিম লগ্নে রাত্রিবেলা রাম তীর-ধনুক সহকারে রাবণকে বধ করার সাথে সাথে বিশাল আকার রাবণের কাঠামো জ্বলে ওঠে। ফুটতে থাকে আতশবাজি। মানুষজন আনন্দে আত্মহারা হয়ে হৈ হৈ করে ওঠে অশুভ শক্তির নিধনে।
Dusshera Wishes-
এর সাথে সাথে শুরু হয় দুশেরার প্রীতি, শুভেচ্ছা(Dusshera Wishes and Complements to each other) জানানোর প্রক্রিয়া। আলিংগ্নের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি উষ্ণ প্রেম, ভালোবাসা ও ভাবের আদান প্রদান। অশুভ শক্তির দমন ও শুভকামনায় পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের অটুট বন্ধন রচিত হয়।
Dusshera Images-
দুশেরার ছবি Download করুন বিনামূল্যে।
ভারতে উল্লেখযোগ্য দুশেরা উৎসব ও বিজয় দশমী-
পশ্চিমবঙ্গের বিজয় দশমী-
পশ্চিমবঙ্গের বিজয়া দশমী সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের নতুন করে বলার কিছু নেই। বিবাহিত মহিলাদের সিঁদুরখেলা এক অন্যতম রীতি। বর্তমানে অবিবাহিত মেয়েদেরও এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। সিঁদুর খেলা মূলত শহরাঞ্চলে বিশেষভাবে প্রতিপালিত হয়। তবে গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা প্রচলন গত দু’দশক ধরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার নিজের দেখা ও অভিজ্ঞতায় প্রত্যন্ত গ্রামে এই খেলা দু’দশক পূর্বে তেমন হবে দেখা যেত না।
দোলা ও নবপত্রিকা বিসর্জন বিজয়া দশমীর আবশ্যিক রীতি। মা এসেছিলেন আবার তাকে দোলার মাধ্যমে নদীতে বিসর্জন দেওয়ার নিয়ম। যেখানে দলের বিসর্জন দেওয়া হয় সেখানকার মাটি সংগ্রহ করে আনা হয় মূল মন্দিরে। তখনও কিন্তু প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়নি।
কখনো কখনো দোলা বিসর্জনের পর পরই দিনের বেলাতেই অথবা সন্ধ্যাবেলায় অপরাজিতা গাছের বালা তৈরি করে হাতে পরিধান করে নদী থেকে আনা মাটির ঢেলা বানানো হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য চারটি করে ছোট ছোট ছিল। ব্রাহ্মণের মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ দিকে মাটির ঢিলগুলি ছুঁড়তে বলেন।
যাত্রার টাকা স্নান-
বিজয় দশমীর দিন থেকে নতুন করে পথচলা শুরু। কয়েকদিনের অবসর অনুষ্ঠান শেষে যাতে আগামী দিনগুলি ভালভাবে কাটে তার জন্য শুভ সূচনা। আমাদের এলাকায় প্রত্যেক বাড়িতে একটি করে রূপোর এক টাকার কয়েন আছে (জানিনা এই ‘যাত্রায় শুরু’ অন্যান্য স্থানে কিভাবে পালন করা হয়)। সেটাকে পুকুর বা নদীতে স্নান করিয়ে সিঁদুর মাখানো হয়। সিঁদুর মাখানো টাকাটি দুর্গামন্দিরে দিয়ে পুজো করানো হয় এবং শুভ যাত্রার সূচনা করা হয়।
এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিজয় দশমীর প্রীতি, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, প্রেম-ভালোবাসা নিবেদন। বড়দের প্রণাম, ছোটদের স্নেহাশীষ আদর জানানো রীতি ও ঐতিহ্য চির বহমান আজো।
বর্তমানে সশরীরে সরাসরি প্রণাম, নমস্কার, প্রীতি, শুভেচ্ছার ধারাবাহিকতা যেন সামান্য ভাঁটা পড়েছে। এই ভাঁটা অবশ্য পূরণ হচ্ছে ভার্চুয়ালি। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম ইত্যাদি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সমাজ মাধ্যমে ছবিসহ গ্রিটিংস বিনিময়ে। সামাজিক মাধ্যমের নিজস্ব ওয়ালে অথবা স্টোরিতে বিজয় দশমীর বিভিন্ন ছবি রেখে শুভেচ্ছা বিনিময়ও চলে। যাকে আমরা DP বলি। সুন্দর সুন্দর ছবি আছে। সুন্দর করে সাজানো বর্ণমালা ঝলমলিয়া ওঠে।
Download Vijaya Dashami Images-
আমিও কিছু DP তৈরি করে রেখেছি বন্ধু পরিচিত জনদের পাঠাবো বলে। আপনারা Download button এ ক্লিক করে Vijaya Dashami Images ডাউনলোড করে আপনাদের আপনজনদের পরিচিতদের পাঠাতে পারবেন। কোন অসুবিধা নেই। সম্পূর্ণ ফ্রি এবং কপিরাইটের কোন ঝামেলা নেই।
আরো পড়ুন-
- চাঁদা তোলার ভালো-মন্দ।
- একান্নবর্তী পরিবার ও অনু পরিবার এবং সমাজ।
- সভ্য ভারতীয় সমাজে কিছু অনভিপ্রেত আচরণ।
- সংসদীয় গণতন্ত্র- সুখ শান্তি।
দিল্লি-
দিল্লির রামলীলা ময়দানে দশেরা উৎসব সম্পর্কে জানেনা এমন কোন লোক নেই। সারা ভারতজুড়ে এর প্রভাব চোখে পড়ার মতো। আমরাও তাকিয়ে থাকি টিভির পর্দায় এই মধুর সমারোহ অনুষ্ঠানের দিকে। রাবণ, মেঘনাদ, কুম্ভকর্ণ বিশালাকার মূর্তি পড়ানো এবং আতশ বাজির খেলা সাড়া ভারতকে মুগ্ধ করে।
মহীশূর-
কর্ণাটকের মহীশুরের দশেরা উৎসব আমাদেরকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। মহীশূর প্যালেসকে সুন্দর ভাবে লক্ষ্য লক্ষ্য আলো দিয়ে সাজানো হয়। লোকনৃত্য, শোভাযাত্রার মাধ্যমে উৎসব পালনের রীতি আজও রহমান।
তামিলনাড়ু-
মুথারনম মন্দিরের দশেরা উৎসব দেখার মত। সঙ সেজে নৃত্য পরিবেশনের বিশেষ রীতি প্রচলিত। এখানে সালংকারা দেবীমূর্তিকে মানুষের মাঝে আনা হয়। মানষজন উৎসব আনন্দে মেতে ওঠেন।
নবরাত্রি ২০২১ | Navratri 2021-
পূর্বেই বলা হয়েছে নবরাত্রি হল গুজরাটের এক বিশেষ ঐতিহ্যপূর্ণ উৎসব, রীতি এবং প্রথা। বিজয় দশমী ও দশেরা উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবরাত্রি। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী মানুষ এক বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করেন। বিশেষ করে মহিলাদের এক ঐতিহ্যবাহী পোশাক লক্ষ্য করা যায়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ‘গরবা’ নৃত্যে মেতে ওঠেন। গরবা নৃত্য গুজরাটের এক অদ্বিতীয় ঐতিহ্যপূর্ণ লোকনৃত্য যা অন্যান্য রাজ্য থেকে গুজরাটকে পৃথকভাবে বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
ধন্যবাদ। শুভ বিজয়া দশমী ও দুশেরার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।