‘সংগৃহীত’ শব্দটি ফেসবুকে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। সংগৃহীত পোস্ট ও নৈতিকতা’য় এভাবেই তৈরি হয় এক পরস্পর বিরোধী দ্বন্দ্ব। কপি-পেস্ট(Copy paste) করা লেখার যেমন রমরমা বাজার তেমনি স্বত্ব সংরক্ষণের উপর দায় এড়ানো কর্তব্য এক বিরক্তিকর প্রকাশ। সেখানে না থাকে সেখানে প্রকৃত লেখকের কোন নাম, না থাকে উৎস(Source link বা attribution)। মনে রাখা প্রয়োজন যেখানে লিংক শেয়ার করা হয় সেখানে ‘সংগৃহীত’ শব্দটির প্রয়োজনীয়তা ফুরায় এবং তা দেবার প্রয়োজন পড়ে না। বলতে চাইছি সম্পূর্ণরূপে কপি পেস্ট করা লেখার ক্ষেত্রে ‘সংগৃহীত’ শব্দটি দিলেই কি নৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? যদি না লেখক কপি পেস্ট করার অনুমতি দিয়ে থাকেন।
যারা নিজেরা লেখালেখি করেন না, তারা যেমন কপি পেস্ট করেন ও ‘সংগৃহীত’ শব্দটি ব্যবহার করেন, তেমনি যারা নিজেরা লেখালেখি করেন তারাও কদাচিৎ লেখার শুরুতে ‘সংগৃহীত’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেখাটির সবার শেষে হাজির হয় ‘সংগৃহীত’।
পরিচিত বন্ধুদের সুন্দর মনোগ্রাহী চাঞ্চল্যকর উত্তেজক একটি লেখা পড়ছি। ডুবে যাচ্ছি গভীর থেকে গভীরে।শেষের দিকে এলাম, শেষ হলো হঠাৎ হাজির ‘সংগৃহীত’। খিদের টানে গরম আলু সিদ্ধ নুন, গরম ভাতের গ্রাসে বালি কিরকির করলে যেমন হয় সেরকম আরকি। আমার এরকম মনে হয় বলে আপনাদের এরকম হতে হবে তা নয়। কেননা সোশ্যাল মিডিয়ার স্বত্ত্ব সংরক্ষণ আইন সেরকম কাজ করে না। তাই অনেকেই এড়িয়ে যান।
আবার এটাও ঠিক অন্যের যেকোনো সৃষ্টি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে যতক্ষণ না সে সৃষ্টি থেকে বাণিজ্যিক লাভ-লোকসান অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তাই এ বিষয়গুলি বেশিরভাগ মানুষ এড়িয়ে যান। এবং কপি পেস্ট করে ‘সংগৃহীত’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন।
সংগৃহীত পোস্ট ও নৈতিকতা(Collected Post and Morality)- একটি দ্বন্দ্ব
ধরুন আপনারই কোন সৃষ্টি, লেখা বা ভিডিও বা কোন ছবি আপনি পরিচিত বা অপরিচিত কোন ব্যক্তির ওয়ালে বা পেজে দেখলেন। তৎক্ষণাৎ আপনি বুঝতে পারলেন সৃষ্টিটি আপনার এবং সেখানে আপনার নাম খুঁজে পেলেন না। সবার শেষে দেখলেন ‘সংগৃহীত’। আপনার কেমন লাগবে জানাবেন? এতে ভালো লাগা বা ভালো না লাগা মানুষের মিশ্রণ থাকবে। কেননা কেউ কেউ প্রচার বিমুখ থাকতে পারেন। নিজেকে আড়ালে রাখাই তার বৈশিষ্ট্য। তবে নিজের ক্রেডিট পাওয়া মানুষের সংখ্যাটাও নেহাতই কম নয়। তাদের অবশ্যই ভালো লাগবে না ‘সংগৃহীত’ শব্দটি দেখে, যদি সেখানে তার নাম উল্লেখ না থাকে।
কপিরাইট বা স্বত্ত্ব সংরক্ষণ কী | What is Copyright?
কপিরাইট বা স্বত্ত্ব সংরক্ষণ বিষয়ে অনেকেই অবগত। কপিরাইট কি? কপিরাইট কতদিন থাকে? কপিরাইট বিঘ্নিত হলে কি করনীয়? তার ফলাফল কি হতে পারে? ইত্যাদি ইত্যাদি। এ বিষয়ে এখানে আলোচনা করছি না।
আবারো বলছি যারা লেখালেখি করেন না তাদের নিজের সৃষ্টি যেমন নেই তেমনি কপিরাইট থাকার প্রশ্ন নেই। তেমনি অন্যের কপি সৃষ্টির কপিরাইট নিয়ে মাথা ব্যথা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা নিজের সৃষ্টির নিরাপত্তা যেমন দেখেন, তেমনি অন্যের সৃষ্টিকেও নিরাপত্তা দেবেন, গুরুত্ব দেবেন এবং শ্রদ্ধা করবেন, তাচ্ছিল্য করবেন না- এই আশা করা কি অন্যায় আবদার?
যারা সোশ্যাল মিডিয়া নিজস্ব সৃষ্টি প্রকাশ করে থাকেন, বিশেষ করে ফেসবুকে, তাদের প্রতি ছোট্ট পরামর্শ। নিজের সৃষ্টিকে নিরাপদে রেখে প্রকাশ করার দিকে নজর রাখুন। যদি মনে করেন আপনার সৃষ্টির গুরুত্ব রয়েছে, যদি মনে করেন সেটি আপনার সন্তান, যদি মনে করেন তার রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন আছে, যদি মনে করেন আপনার সৃষ্টিকে নিয়ে অন্য কেউ ছিনিমিনি খেলছে, তাহলে অবশ্যই প্লাটফর্ম পরিবর্তন করুন। ভাবছেন তাহলে তো দর্শক পাঠক সংখ্যা কমে যাবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সবই আপনার থাকবে। আপনার দর্শক, পাঠক, পরামর্শদাতা, মন্তব্যকারী সবই থাকবে। কেবল কন্টেন্টের নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ সবকিছু আপনার দখলে থাকবে। সঙ্গে আপনার স্বত্ত্বও।
চিরাচরিত পদ্ধতি হলো- আপনি আপনার লেখাগুলি নিয়ে কোন প্রকাশনায় যাবেন বই ছাপাবার জন্য। অথবা কোন পত্রপত্রিকায় পাঠাবেন। তা করতেই পারেন। কোন প্রকাশক আপনার লেখা ছাপতেও পারে, আবার নাও পারে। পত্রপত্রিকায় আপনার লেখা হয়তো ছাপছে। কিন্তু যারা নতুন লেখক তাদেরকে তো সকলে সমানভাবে গুরুত্ব দেবে না। তবে তারা কি করবেন? আমি বলতে চাইছি ফেসবুকে যারা নিজেদের কন্টেন্টগুলো প্রকাশ করে থাকেন, বিশেষ করে তাদের কথা। যাদের প্রকাশক, পত্র-পত্রিকা রয়েছে তাদের কথা এখানে আলোচনার বিষয় নয়। তারা তো প্রতিষ্ঠিত, স্বনামধন্য, পরিচিত ব্যক্তি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা প্রকাশ করে থাকেন তাদের কনটেন্টের স্বত্ত্ব সংরক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ কিভাবে থাকবে? তারা ব্লগ সাইট তৈরির মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের সৃষ্টি প্রকাশ করতে পারেন। ঝামেলা আছে- পরিশ্রম আছে। সামান্য টেকনিক্যাল দক্ষতার প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে ব্লগ তৈরির জন্য সময় দিতে হবে। পরবর্তীতে অভ্যাস হলে, সময় তেমন খরচ হবে না। কন্টেন্ট গুলিতে সরাসরি দর্শক পাঠক যেমন আসবে অর্গানিকালি গুগল সার্চ এর মাধ্যমে। তেমনি কন্টেন্ট লিংকগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এর দর্শক পাঠককেও আপনার ব্লগে আনতে পারবেন। রথ দেখা কলা বেচা, নিরাপত্তা, স্বত্ত্ব সংরক্ষণ সবই বজায় থাকবে।
বলে রাখা ভালো ইন্টারনেট ডিজিটাল যুগে সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ কোন কনটেন্টকে নিরাপত্তায় রাখা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তবে ব্লগের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় আপনার কনটেন্ট নিরাপদে থাকবে তা অনেকটাই নিশ্চয়তা দেয়। শর্তাবলীর মাধ্যমে আপনার পাঠক বা ব্যবহারকারীকে আপনার কনটেন্ট কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে তা অবশ্যই উল্লেখ করে দেবেন। অথবা কপি পেস্ট করে যদি কেউ আপনার কনটেন্ট কোথাও ব্যবহার করে তাহলেও তার প্রকৃত মালিক যে আপনি সেটা প্রমাণ করা অনেকটাই সহজ হবে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে কপিরাইট স্ট্রাইক আনতে পারেন।
কিভাবে ব্লগ তৈরি করবেন?
ব্লগ তৈরির জন্য নানান প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। কোনোটা বিনামূল্যে বা কোনোটিতে খরচ লাগে। তবে প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে যাওয়াই ভালো। এর জন্য গুগল, টাম্বলার, উইক্স, ওয়ার্ডপ্রেস রয়েছে। তবে গুগলকে বেছে নিতে পারেন। www.blogger.com থেকে অতি সহজে আপনার ছবি, লেখা ইত্যাদি পোস্ট করতে পারেন। সেগুলো পরের বিষয়। আমার বক্তব্য হল আমি যেমন অন্যের কনটেন্টকে কেবলমাত্র ‘সংগৃহীত’ বলে দায়সাড়া নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কপি পেস্ট করে পোস্ট করব না, তেমনি আমার কনটেন্টও যাতে অন্য কেউ অবহেলা করে পোস্ট না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখবো।
তাহলে কি দু চার লাইনের লেখাও facebook এ পোস্ট করব না বা ছবি আপলোড করবো না? অবশ্যই করবেন। সবকিছুই আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ব্লগ পোষ্টে করতে হবে এমন কোন কথা নেই। কনটেন্টের দৈর্ঘ্য, গুরুত্বের উপর নির্ভর করছে কোনটি কোন মাধ্যমে প্রকাশ করবেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত, মতাদর্শ, নৈতিকতা আপনার উপর নির্ভর করছে।
এই লেখাটির উপর আপনার মতামত ভীষণভাবে আশা করছি। মন্তব্য করার জন্য ব্লগ সাইটের মন্তব্য বক্সে মন্তব্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন- লটারি সংস্কৃতি।