পশ্চিমবঙ্গের সমাজে পরতে পরতে লটারি লটবহরের সাংঘাতিক ভাবে প্রভাব(Effects of Lottery in Society)। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয় সারা ভারতের সমাজে ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব অস্বীকার করার মত ধৃষ্টতা বা সাহস কোনটাই কোন মানুষের নেই(Lottery Effects in Society of India)। লটারি ব্যবসা কতখানি আইনি এবং কতখানি অনৈতিক সেটা আমার জানা নেই। আমরা জানাচেষ্টায় আছি আপনাদের মাধ্যমে। জানি নেট দুনিয়ার মাধ্যমে তা হাতের কাছে পাওয়া যাবে। কিন্তু বিষয়টা আপনাদের কাছ থেকে জানার ইচ্ছা রইলো। প্রাথমিকভাবে জেনেছি ভারতবর্ষের মোট 13 টি রাজ্য আইনিভাবে লটারি খেলা ব্যবসাকে বৈধতা দিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলিতে লটারি খেলা ও বিক্রি নিষিদ্ধ।
আজ আমরা লটারির ভালো-মন্দ দুটো দিকই আলোচনায় রাখবো। লটারি যেমন কোনো ব্যক্তিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে পারে, পারে বলতে কাজে লাগানোর দক্ষতা ও পারদর্শিতা উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে সংসারকে কেমনভাবে ছারখার করে দেয়। তার উদাহরণও ভুরি ভুরি আছে। দেখুন হয়তো আপনার পাড়াতেই পেয়ে যাবেন।
অর্থাৎ ভালো-মন্দ সামাজিক প্রভাব কতখানি উপকার করে, আমাদের প্রেরনা যোগায়, অথবা জেতার আশায় আশায় রাতের ঘুমে স্বপ্ন, শুধু স্বপ্নই থেকে যায়।
Business of Lottery in 13 States of India is Legal-
ভারতের 29 টি রাজ্যের মধ্যে 13 টি রাজ্য লটারি খেলা ও ব্যবসাকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে।(অর্থাৎ Business of Lottery in 13 States of India is Legal)। 13 টি রাজ্য হল-
- অরুণাচল প্রদেশ
- আসাম
- গোয়া
- কেরালা
- মধ্যপ্রদেশ
- মহারাষ্ট্র
- মনিপুর
- মেঘালয়
- মিজোরাম
- নাগাল্যান্ড
- পাঞ্জাব
- সিকিম এবং
- পশ্চিমবঙ্গ।
দেখা যাচ্ছে উত্তর-পূর্বের প্রায় সব রাজ্যই লটারি খেলা ব্যবসাকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণের কেবল কেরালা, পশ্চিমের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, গোয়া এবং মধ্যভারতের কেবল মধ্যপ্রদেশ। বাকি রাজ্যগুলিতে একেবারে বিষয়টিকে প্রশ্রয় দেয় না। যে রাজ্য আইন স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানকার সমাজকে লটারিও বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ সমাজ ও প্রভাবিত হয় (Effects of Lottery in Society of those Particular Region are Seen)।
অন্যান্য রাজ্যগুলি যারা লটারি খেলা ও ব্যবসাকে (lottery business) বৈধতা দেয় না অর্থে কিছু মন্দের দিক অবশ্যই আছে। সার্বজনীন সুপ্রভাব পড়লে অবশ্যই সারা ভারত বর্ষ জুড়েই এই ব্যবসা রমরমিয়ে চলতো। তার অর্থ এই নয় যে অর্থনীতিতে এর প্রভাব গুলো মানুষ ভোগ করে না।
লটারী টিকিটের প্রভাব-
লটারী টিকিটের সঙ্গে ভালো-মন্দ সবরকমের প্রভাবই রয়েছে। তবে তাৎক্ষনিক ভালোর থেকে সুদূর প্রসারী ক্ষতির প্রভাবটাই বেশি লক্ষণীয়।
এখন প্রথমে দেখা যাক এর সুপ্রভাব গুলি। অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে কে কিভাবে লটারি খেলা ও ব্যবসা থেকে লাভবান হয়।
Good Effects of Lottery in Society-
সমাজের উপর লটারির সুপ্রভাব(Good effects of lottery in society) প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমরা সরকারি লাভ ও ব্যক্তি মানুষের লাভ- এই দুটি বিষয়কে সামনে আনার চেষ্টা করব।
Direct Effects of Lottery in Society of State Government-
যে 13 টি রাজ্য লটারি খেলা ও ব্যবসাকে আইনি স্বীকৃতি বা বৈধতা দিয়েছে, তাদের অবশ্যই কোন উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্য কি? এক কথায় বলা যায় সরকারি কোষাগার বুদ্ধি। লটারি এজেন্সি খরিদ্দারদের কাছ থেকে কর(tax) আদায় করে সরকারি তহবিল বৃদ্ধি করা। সে টাকা দিয়ে সমাজকল্যাণমূলক কাজ কর্ম পরিচালনা করা।
দু’ভাবে কর(Tax) আসে।
1- লটারি টিকিট কেনার সময়-
কোন ব্যক্তি লটারি কিনলেই 12% থেকে 18% জিএসটি দিতে হবে। এখন কোথায় কিভাবে 12% এবং 18% জিএসটি? দেখা যাক।
রাজ্যের মধ্যে লটারি (Intra State Lottery)-
এ ধরনের লটারি কেবল সেই রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজ্য সরকার সরাসরি নিজের লটারি খেলা পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে লটারি টিকিট কেনার জন্য প্রথমেই এজেন্সিকে জিএসটি দিতে হয়। এক্ষেত্রে জিএসটি 12%। বড় এজেন্সি কোন সাব এজেন্সিকে এজেন্টকে লটারি টিকিট বিক্রি করলে তাদের আর কোন জিএসটি দিতে হবে না। কিন্তু খুচরো খদ্দেরকে মে জিএসটি দিতে হয় তা বোঝার মত মানসিক শক্তি সেই খদ্দেরের থাকে না।
যদি একটি টিকিট 5 টাকা দাম হয়, তাহলে তাকে 12% হারে প্রায় .55 টাকা অর্থাৎ 55 পয়সার মতো জিএসটি দিতে হয়।
এবার সারাদিনে কত লক্ষ লক্ষ লটারি সেই রাজ্যের মধ্যে বিক্রি হয়, তার হিসাব পাওয়া গেলে প্রতিদিন সরকার কত টাকা জিএসটি পায়, তার হিসাব পাওয়া যাবে।
ভিন্ন রাজ্য লটারি(Inter State Lottery)-
ভিন্ন রাজ্য লটারি খেলা হয় কোন এজেন্সির মাধ্যমে অর্থাৎ মিজোরাম লটারি আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি করে অথবা পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে লটারি এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যে বিক্রি করে। এখানে জিএসটি 18%। সরকার থেকে এজেন্সি, এজেন্সি থেকে বড় ডিস্ট্রিবিউটার, সেখান থেকে ছোট ডিস্ট্রিবিউটার এবং সর্বশেষে খদ্দেরের হাতে। উপরের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ITC প্রযোজ্য। যদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই জিএসটি ফোল্ডার থাকে তবেই ITC প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ B2B লটারি সেল হবে।
এগুলো একটু জটিল বিষয়। কিন্তু সোজা কথা একজন সাধারণ খদ্দের যখন একটি লটারি টিকিট কেনেন তখন 18% জিএসটি দিতে হয় এবং 5 টাকা টিকিটের দাম হলে তাকে .76 টাকা অর্থাৎ 76 পয়সা দিতে হয়। আপনাদের দেখে মনে হবে মাত্র 76 পয়সা, কিন্তু একজন সাধারন মানুষ সারাদিনে কত টাকার লটারি টিকিট কেনেন- এনে একটু খোঁজ নিন। কত জিএসটি তাকে দিতে হয় তার ধারণাও পেয়ে যাবেন। এভাবে সারা রাজ্যে কত টাকার লটারি প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে এবং প্রতিমাসে বিক্রি হয়, তার তথ্য থাকলে সরকারের রোজগারের ধারণা পাওয়া খুব মুশকিল হবে না।
2- ইনকাম ট্যাক্স(Income Tax)-
উপরের দুটি বিষয় গেল কেবলমাত্র লটারি টিকিট বিক্রি করে সরকারের ট্যাক্স আদায়। এবার আসা যাক লটারিতে টাকা জিতলে সরকার কি পায়? লটারিতে টাকা জিতলে বিজয়ীকে জিএসটি নয়, ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। প্রায় 31. 2% হারে। যদি কোন ব্যক্তি 10000 টাকা জেতেন, তাহলে তাকে প্রথমেই 3140 টাকা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে।
কোন একজন ব্যক্তি 5 লক্ষ টাকার লটারি জিতলে অথবা 5 লক্ষ টাকার গাড়ি জিতলে তাকে 1 লাখ 57 হাজার টাকা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা ইনকাম স্ল্যাবে। এতে 89C/80D তে কোন ছাড় নেই। মনে রাখতে হবে যে কোন ব্যক্তিকেই এ ট্যাক্স দিতে হয়। তিনি ইনকাম ট্যাক্স এর আওতায় পড়ূন কিংবা না পড়ুন তাতে কিছু যায় আসে না। আর ট্যাক্স প্রথমে সেন্ট্রাল গভমেন্ট পাবে। সেন্ট্রাল গভমেন্ট রাজ্যকে পরে টাকা দেবে। যে ভাবে ইনকাম ট্যাক্সের টাকা রাজ্যগুলি পেয়ে থাকে।
অর্থাৎ আমরা দেখলাম কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই লটারি টিকিট বিক্রি করে ও লটারি টাকা বিজয়ীদের কাছ থেকে রেভিনিউ তুলছে, যা দেশ ও রাজ্যের উন্নয়ন মূলক কাজ কর্মে লাগানো হচ্ছে। দেশের সেবা করা অর্থ কিছুটা হলেও লটারি খেলা ও ব্যবসার মাধ্যমে আসছে।
এবার আমরা দেখি লটারি কেনার মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে মানুষ কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
Lottery Effects in Society in respect of Individual Profit-
লটারি হল একটি প্রতিযোগিতা মূলক খেলা। অনেকে এই খেলায় লগ্নি করে ভাগ্য নির্ধারণ করেন। সে যাই হোক, ব্যবসা গত দিক দিয়ে ও ব্যক্তিগত খুচরো ক্রেতা হিসেবে কার কি লাভ দেখি-
লটারি ব্যবসায় মুনাফা-
যদি লটারি খেলাকে ব্যবসা হিসেবে ধরি তাহলে যত এজেন্সি, বড় ডিলার, ছোট ডিলার প্রচুর খুচরো বিক্রেতা আছে, তারা মুনাফা অর্জন করছে। অন্যান্য ব্যবসার মতো তারাও লাভ লাভবান হচ্ছে। সেই অর্থে তাদের সংসার চলছে বা কেউ কেউ পরোক্ষ রোজগার হিসেবে লটারি বিক্রির ব্যবসা করছেন।
ব্যক্তিবিশেষের লাভ-
ব্যক্তিবিশেষ বলতে একেবারে তৃণমূল স্তরে যারা খুচরো লটারি কেনন। 200, 500 টাকা দিয়ে টিকিট কিনে বিজয়ী হলে তবেই লাভ। কতবার কানে আসে পাঁচ লাখ, কেউ পঞ্চাশ হাজার, কেউবা 40 লাখ ইত্যাদি বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দিচ্ছে। খুব ভালো কথা। সেই টাকায় তার আর্থিক সুরাহা হচ্ছে। এর চেয়ে কম অংকের টাকা পেয়েও খুশি হন। সাংসারিক আর্থিক সংকট মোচনের দূর হবার সম্ভাবনা থাকে।
অনেক সময় এজেন্টরা বা খুচরা বিক্রিয়কারীরাও অবিক্রিত টিকিটের পুরস্কার জিতে থাকেন। এক্ষেত্রে ওই বিক্রেতার সোনায় সোহাগা। কখনো কখনো অর্থের পরিমাণ বেশি হলে সেই ব্যক্তির পক্ষে ব্যবসা বা অন্য কোন বড় অর্থে সাংসারিক কাজ উদ্ধার হয়ে যায়।
সে যাই হোক, এবার দেখি ক্ষতির দিক। সমাজের লটারি খেলা ও ব্যবসা শুধু কি লাভ বা সাফল্য আনছে ? না এর কোন সাংঘাতিক লোকসানের ক্ষেত্রও রয়েছে?
Bad Effects of Lottery in Society-
শুধু শুধু লাভের অংক ঘরে আসেনা। শুধু ব্যবসা আপনাকে সাফল্য দেবোনা। সঙ্গে চায় সময়ের সদ্ব্যবহার। মূলধন বিনিয়োগ, ধৈর্য, দক্ষতা, পারদর্শিতার মত মুর্ত অভি মুহূর্ত বিষয়গুলি। কিন্তু লটারির ক্ষেত্রে দক্ষতা ও পারদর্শিতা কোন মূল্য নেই। প্রয়োজন কেবল দিনদিন লটারি কেনার পর্যাপ্ত অর্থ। হবে তার ভাগ্য ফল দেবে এই আশা নিয়ে চাষার চাষ করতে বের হয় রোজ সকাল এবং সন্ধ্যায়।
নেশাগ্রস্ততা-
অর্থ নেশা অন্যান্য মাদকদ্রব্য নেশার চেয়ে কম কিছু না। একদিন কিছু টাকা পেয়েছে, পরে আরো পাবো এই আশা নিয়ে প্রতিদিন টিকিট কাটার আকাঙ্ক্ষা ক্রমান্বয়ে নেশাগ্রস্ত করে তুলবে। এই মানসিক মেলবন্ধন একই রুচিসম্পন্ন মানুষ জনকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। লটারি টিকিট কাটা লোকজনের মধ্যে একটি শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্য আছে। তারা একে অপরের খোঁজখবর, অর্থ জেতার খবরা খবর গুলি আদান-প্রদান করে। ভিন্ন অঞ্চলের লটারি ক্রেতা মানুষের প্রতিও খবরা-খবর নেওয়া এবং লাভ-লোকসানের খবরগুলি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কারো লটারি জেতার খবর অন্যের টিকিট কেনার প্রতি আকর্ষণকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। কেউ 100 টাকার টিকিট কিনলে, অন্যের লটারি জেতার খবরে হয়তো 500 টাকা টিকিট কেনে।
এই স্বাভাবিকতা ক্রমান্বয়ে নেশায় পরিণত হয়।
কর্মবিমুখতা-
ব্যবসায় বিনিয়োগ প্রয়োজন। তারপরে যেটা প্রয়োজন তা হল অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, পারদর্শিতা, নিষ্ঠা, সততা ইত্যাদি বিষয়গুলো। লটারির ক্ষেত্রে কেবল বিনিয়োগ। বাকি অন্যান্য জিনিসগূলো অপ্রয়োজনীয়। কেন তার জন্য এত খাটাখাটনি করা?
আজ লটারি জিতবো বলে অনিশ্চয়তার প্রতি বৃথা আশায় বসে থেকে কাজকর্মের প্রতি দিনদিন বিমুখ হয়ে পড়ছে এক বিশাল অংশের মানুষ।
আপনার বাড়িতে কোন কাজের জন্য মিস্ত্রি, মজুরের প্রয়োজন হলে অনেক সময় পাওয়া যায় না। কয়িক পরিশ্রম না করে সামান্য কিছু টাকার টিকিট কিনে লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার সুখটা উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হতে অনেকেই চান না।
আপৎকালীন সমস্যা-.
বর্তমানে এমন অনেক লটারি টিকিট ক্রেতা আছেন যারা প্রতিদিনের রোজগারের সংসারে সামান্য খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকার সমস্তটাই টিকিট ক্রয় করেন। নৈমিত্তিক সংসার খরচ বাদ দিয়েও অন্যান্য খরচ ও আপৎকালীন সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। সেজন্য প্রতিদিনকার রোজকার থেকে কিছু অর্থ জমা রাখতে হয়, সেদিকে তার খেয়াল থাকেনা। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, রোগ ব্যাধির জন্য নূন্যতম সঞ্চয় করার মত হিসাব থাকে না।
সাংসারিক অশান্তি-
এই নিয়েই হয়তো স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবার সাথে নৈমিত্তিক সাংসারিক অশান্তি অমূলক নয়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাংলায় লটারি ক্রেতা বাড়ির এ এক সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অশান্তি ক্রমশ বয়ষ্ক সদস্য থেকে নবীন প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এ এক সাংঘাতিক সামাজিক সমস্যার উৎস ও ভবিষ্যত আধারের সূচনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
নবীন প্রজন্মের সামনে অশনি সংকেত-
লকেট লটারি টিকিটের অর্থ জেতার ঘটনাগুলো নবীন প্রজন্মকে উত্তেজিত করে তুলছে। একদিকে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই অর্থ আগমন, অন্যদিকে অর্থ জেতার পরিমাণ আশাতীত হয়ে পড়লে, কাজ করার প্রয়োজন হবে কেন? নবীন প্রজন্মের যুবসমাজ লটারি টিকিট কেনা অথবা নিজেই অন্যান্ন সমস্ত কাজকর্ম বা ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে লটারি কাউন্টার খুলে বসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লটারি টিকিটের প্রভাবে(effects of lottery in society)সমাজে প্রয়োজনীয় কাজকর্মের জন্য সাংস্কৃতিক রুচিসম্পন্ন, নতুন চিন্তা ভাবনা ও সমজিক চর্চায় যুবসমাজের আত্মনিয়োগে, অল্প হলেও হ্রাস পাচ্ছে।
এক বিশেষ অর্থনৈতিক শ্রেণী পঙ্গুত্বের দিকে যাচ্ছে-
অপেক্ষাকৃত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে লটারি কেনার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। আমি কেবলমাত্র আমাদের এলাকা ধরে এটাকে বিশ্লেষণ করতে পারি- যত মানুষ লটারি কেনেন তাদের দৈনন্দিন রোজকার গড়ে 300 টাকার মধ্যে বা কখনো কখনো তারও কম। বলতে গেলে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের মধ্যেই লটারি প্রভাব সবচেয়ে বেশী পড়ে। তার মানে এই নয় যে উচ্চ-মধ্যবিত্ত লোকেরা লটারি টিকিট কেনেন না। অবশ্যই কিনেন। কিন্তু সংখ্যায় অনেকটাই কম বা উচ্চ মধ্যবিত্ত সেই অর্থ তাদের সাংসারিক বা ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত বা একেবারে নিম্ন বিত্ত মানুষদের সামান্য রোজগারের টাকায় লটারি টিকিট কেনার জন্য খরচ হয়ে গেলে সংসারের অন্যান্য সমস্ত খরচের উপর তার প্রভাব পড়বে।
নিম্নমধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত সমাজে যাদের শিক্ষা, চেতনা এবং বোধের বিষয়গত ধারণা যথেষ্ট কম, লটারি কেনার নেশাগ্রস্ততা থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে লটারি টিকিট না কিনে কিভাবে অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ রোজগার করা যায়, একটু সঞ্চয় করার প্রবণতা তৈরি হয়, সেদিকে তাদের নজর থাকে না।
এই সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের একটি অংশ ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে পৌঁছে যাচ্ছে বা আগামী দিনে যাবে না, তার কোন সদুত্তর পাওয়া যাবে না।
লটারি টিকিটের জেতা অর্থের সদ্ব্যবহার-
পরিশ্রমের পরে রোজগারের অর্থের উপর যে পরিমান ভালোবাসা প্রেম বা গুরুত্ব তৈরি হয়, বিনা পরিশ্রমে থেকে জেতা অর্থের প্রতি ততটা গুরুত্ব থাকেনা। অনেক সময় জেতা অর্থের অনেকটা অংশ দিয়ে পুনরায় আবার লটারি টিকিট কেনা হয়। একটা উদাহরণ দিই আমাদের একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে আজ থেকে 4-5 বছর আগে লটারি টিকিট থেকে 50 লক্ষ টাকা জিতেছিল। এত পরিমান টাকা জেতার পরে ব্যবসা শুরু করল। এই কয়েক বছরেই সে এখন নিঃস্ব। তার সেই ব্যবসাও নেই আর তার হাতে সে অর্থও নেই। অর্থাৎ ঐ পরিমান টাকা কিভাবে, কোথায়, কত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করবে সে বিষয়ে তার কোন পরিণত মস্তিষ্ক ছিলনা। ফলস্বরূপ তার অপরিণামদর্শিতা বশতঃ কয়েক বছরের মধ্যে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া।
Conclusion-
বলা যেতে পারে অর্থের সদ্ব্যাবহারের জন্য অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, পারদর্শিতা, স্বচ্ছতা, সততা অবশ্যই শিক্ষা ও ধৈর্যের প্রয়োজন যা সমস্ত মানুষের মধ্যে থাকে না। হঠাৎ স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর অর্থ আগমন ঘটলে অন্যের অভিজ্ঞতা ও সৎ পরামর্শও বিষাক্ত বলে মনে হয়। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে পতনও অবশ্যম্ভাবী।
লটারি টিকিট কাটবেন, কি কাটবেন না তা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কাটলে রোজগারের কতটা অংশ দিয়ে কাটবেন এবং তার সীমা কত দূর হওয়া উচিত? অবশ্যই নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে তা বিশ্লেষণ করুন। বিজয়ী হলে সেই অর্থ কোন খাতে নিয়োগ করবেন, তাও সম্পূর্ণ আপনার বিষয়। প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেবেন। তবে অবশ্যই সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। তা না হলে আমদের সমাজে এর প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ব্লা মুশকিল(It is very impossible to say that where the destination of Lottery Effects in Society.)
Read More- শ্রমিক পরিযায়ী হলে নেতা পরিযায়ী হবে না কেন?
Disclaimer– এ লেখার মাধ্যমে কখনোই কোন ব্যক্তিকে লটারি কেনা বা না কেনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেনা। লটারি টিকিট কেনা, না কেনা সম্পূর্ণ সেই ব্যক্তির স্বাধীন ও ব্যক্তিগত বিষয়। ধন্যবাদ।
I haven, t run into that much trouble
Jainuddin Ahmed desi kisi janme ki bolbo
Bhalo jante