মানব সম্পদ কাকে বলে?: মানব সম্পদ(Human Resource) হ’ল একটি দেশ, একটি অঞ্চল অথবা একটি সংস্থার মধ্যে একক ব্যক্তি বা কর্মচারী মিলিত সামগ্রিক কর্মী বা কর্মী বাহিনীর অংশ।
মানব সম্পদ কাকে বলে- এই সম্পর্কে সাধারণ ধারনা পাওয়ার জন্য আপনি নিজে অথবা আপনার এলাকার লোকজন কে কী কাজ করছে, তাতে কার কী লাভ হচ্ছে জানতে পারলে বুঝতে সুবিধা হবে।
মানব সম্পদ কাকে বলে অথবা মানব সম্পদ বলতে কি বুঝায়?
হিউম্যান রিসোর্স(Human Resource) হ’ল একজন ব্যক্তি যা দেশের সামগ্রিক কর্মশক্তির মধ্যে তার ভূমিকা অন্তর্নিহিত থাকে। প্রতিটি ব্যক্তি তার দক্ষতা এবং প্রতিভা দেশের সাফল্যে সহায়তা করার জন্য শ্রম দিয়ে থাকে। দেশের উন্নতির প্রয়াসে যে কোনও ব্যক্তি তাদের শ্রম, জ্ঞান দিয়ে বা ক্ষতিপূরণের জন্য প্রস্তুত থাকে। তারা কে কোন ধরনের কাজ করছে তা বিবেচ্য ন্য, বরং কাজ করছে সেটাই বিবেচ্য হয়।
সে সমস্ত কর্মীরা দেশের যে কোন সংস্থায় কাজ করতে পারেন। সেটা সরকারী, বেসরকারী বা স্বনির্ভরশীলও হতে পারে। যে কোন সংস্থায় কাজ করলেও মুলত সামগ্রিক উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। একদিকে সেই ব্যক্তি তার পারিশ্রমিক পায়, অন্যদিকে কর্ম সচলতার সৃষ্টি হয়।
কর্মীদের নিয়োগ, সন্তুষ্ট, অনুপ্রাণিত, বিকাশ এবং ধরে রাখতে হবে। প্রতিটি দেশের একটি মানব সম্পদ উন্নয়ন(Human Resource Department) বিভাগ থাকে। যা মানব সম্পদ দপ্তর পরিচালনা করে। মানুষের অন্যান্য সংস্থান এবং পৃথক পদ্ধতির চেয়ে সামগ্রিক পরিচালনার প্রয়োজন হয়, এজন্যই তাদের পুরো বিভাগটি নিবেদিত করা হয় একটি কার্যকর দপ্তর হিসাবে। যার সংক্ষিপ্ত নাম হল- HRD(Human Resource Development)
কেন মানুষকে সম্পদ বলবো? Why human being is Resource?
অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ হল সেই দ্রব্য যার উপযোগিতা আছে, সমস্যা সমাধান করে, মানুষের অভাব মোচন করে। সম্পদ আপনা আপনি সৃষ্টি হয় না, তাকে সৃষ্টি করতে হয়। প্রকৃতির মধ্যে পড়ে থাকা নিরপেক্ষ বস্তু সম্পদ নয়। সম্পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন তিনটি বিষয়ের। যথা- প্রকৃতি, মানুষ এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি/ জ্ঞান।
ধরাযাক প্রকৃতিতে কয়লা পড়ে আছে, কিন্তু মানুষ নেই। তাহলে সম্পদ সৃষ্টি হবে না। আবার প্রকৃতি আছে, মানুষ আছে, কিন্তু মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বা প্রযুক্তি নেই। তখনও সেই বস্তু সম্পদে পরিণত হবে না। তিনটি বিষয়ের মিলিত প্রয়াস হল সম্পদ। সে হিসাবেই মানুষকে সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়।
আজ কেন মানব সম্পদ নিয়ে আলোচনা? Why Discuss about Human Resource today?
পৃথিবীর অন্নান্য দিনগুলোকে বিশেষ দিন হিসাবে মান্যতা দেওয়ার রীতি আছে। সাধারণত UNO তারিখ হিসাবে বিশেষ দিন পুর্ব থেকে নির্ধারন করে রাখে। সারা পৃথিবী সেটা মেনে নেয়। যেমন- শ্রমদিবস, মাতৃদিবস, পরিবেশ দিবস, ভাষাদিবস ইত্যাদি। সে রকম 20 মে মানব সম্পদ দিবস।
মানব সম্পদের কার্যপ্রনালী(Work Procedure of Human Resource-
মানব সম্পদ দপ্তরের লক্ষ্য হ’ল সেই দেসের লোককে সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা। যেমন: লাভ-লোকসান, বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী নিয়োগ, কর্মক্ষমতা ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ, দেশ অ সংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধন এবং দেশ বা সেই সংস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন।
কোন অঞ্চলের বা দেশের প্রতিটি কর্মীর সন্তুষ্টি এবং কর্মক্ষমতার অবদান দিয়েই উন্নয়ন সম্ভব। বিভিন্ন উদ্দেশ্যগুলিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে, মানব সম্পদ একটি উচ্চ-কার্যকরী এবং কার্যকর কর্মশক্তি নিশ্চিত করতে পারে, যার ফলে দেশ ও সংস্থাগুলি আরও কার্যকরভাবে তার লক্ষ্য এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা পায়।
Labor Law in Human Resource-
মানব সম্পদ বিভাগও(Human Resource Department) নিশ্চিত করে যে দেশ বা সংস্থা শ্রম বিধি মেনে চলেছে এবং পরিবেশকে সুস্থিত ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাকে দূরে হটিয়ে শক্তিশালী মানব সম্পদ কর্মী তৈরি করতে সমর্থ হচ্ছে।
মানবসম্পদ কর্মীরা কর্মস্থলের নীতি তৈরি করতে এবং প্রয়োগ করতে সহায়তা করে। যেমন- কাজ করার সময় ও ছুটির নীতি ইত্যাদি। Human Resource দপ্তর কর্মী নিয়োগের দিকে নজর দেবার সাথে সাথে কর্মীদের কর্ম নিশ্চ্যতার দিকেও লক্ষ্য রাখে।
কোন একজন কর্মী তার সুবিধা অসুবিধার কথা নথিভুক্ত করার পর মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে জানাবেন এবং সেই দপ্তর উপযুলত ব্যাবস্থা গ্রহন করবে। এ বিষয়ে অন্য কোনও কর্মচারী বা পরিচালকের দ্বন্দ্ব থাকলে, মানবসম্পদ বিভাগ সমাধান সমাধানে সহায়তা করতে পারে। এবং বিভাগটি নিশ্চিত করে একক অথবা তার দলের অন্যান্য সদস্যরা যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এবং তারা দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
মানব সম্পদ সমালোচনা-
কিছু লোক কর্মচারীদের বিষয়ে “সম্পদ” হিসাবে বিবেচনা করে। তাদের দৃষ্টিতে কর্মীদের মানব সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা তাদেরকে দ্রব্য বা সামগ্রী করে তোলে। অর্থাৎ অন্নান্য জড় দ্রব্য যেগুলো কেনা বেচা করা যায়, মানুষকে সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করলে মানুষও দ্রব্যে পরিণত হয়। রাষ্ট্র নিজের সুবিধার্থে মানুষকে সম্পদ বলে গণ্য করে বলে অনেকের ধারনা।
আরও পড়ুন- সমাজে নারীর ভূমিকা।
মানব সম্পদের বিকল্প
মানব সম্পদের অনেকগুলি কাজ কিছু ক্ষেত্রে অ-মানব সম্পদ দ্বারা সম্পাদিত হতে পারে। অন্য কথায়, রোবট বা কম্পিউটারগুলি কখনও কখনও মানব কর্মীদের প্রতিস্থাপন করে, বিশেষত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের জন্য। এটিকে অটোমেশন বলা হয় এবং এটি দক্ষতার ব্যাপক উন্নতি করতে পারে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা এটি সম্ভব হয়।
কিন্তু প্রশ্ন রোবোট সৃষ্টিও কিন্তু মানুষের দ্বারা। অতেব এখানেও মানুষের প্রয়োজন। তাছাড়া রোবোটগুলি খারাপ বা মেন্টেনেন্সের জন্য মানুশেরই প্রয়োজন।
তাই বলা যায় মানুষই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষ কম্পিউটার সৃষ্টি করেছে, কম্পিউটার মানুষ নয়। প্রকৃতিতে যায় থাক কেন মানুষ না থাকলে সম্পদ সৃষ্টি অস্মভব। একটি দেশের উন্নয়ন যেমন প্রকৃতি প্রযুক্তির উপ্র নির্ভর করে, কিন্তু মানুষ না থাকলে তার উদ্ভব এবং ব্যাবহারও অনিশ্চিৎ।
মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা
কোনো একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এই দেশের উন্নয়নের পরিকাঠামো মজবুত করে। তার সাথে জড়িয়ে আছে নাগরিকদের জীবনযাপন প্রণালী। সামাজিক সচলতাও তার নির্দিষ্ট চলার পথকে মসৃণ করে। নাগরিকগণ কাজ করার মানসিকতার সাথে নৈতিকতার বিষয়টিকেও উপেক্ষা করে না।
প্রাথমিক, গৌণ, প্রগৌন, কোয়াটারনারি এবং কুইনারী- এই পাঁচটি অর্থনৈতিক বিভাগের কর্মীগণ পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী হয়। কিন্তু শ্রমিক বা কর্মীদের অজ্ঞতা, অদক্ষতা থাকলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তা বোঝা স্বরূপ। তাই প্রয়োজন শিক্ষা। যে দেশ শিক্ষার উপর যত জোর দেবে সে দেশের বিকাশকে রোধ করার ক্ষমতা কর থাকে না।
শিক্ষার মানোন্নয়ন না ঘটিয়ে অন্য দেশের কর্মীদের উপর নির্ভরশীল হলে, উন্নয়নের মানোন্নয়ে যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, তেমনি নাগরিক জীবন দাসত্বে পরিণত হতে পারে। তাই প্রাথমিক থেকেই উচ্চস্তরের শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যক্ষ নিবেশ প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীরাই বর্তমানের মানব সম্পদের সাথে সাথে আগামীর উন্নততর মান সম্পদে পরিণত হবে। প্রশিক্ষণ, কারিগরী শিক্ষার সঙ্গে বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ শিক্ষার গুরুত্বকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই নিশ্চিত বলা যায়- মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা’কে অবহেলা করা মূর্খামী’র আরেক নাম।