Right Age For Nursery in India: বাড়ির বাচ্চা ছেলেমেয়েদের নার্সারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করার বয়স(Right Age For Nursery in India) কেমন হওয়া উচিত? কেমন ধরনের স্কুল নির্বাচন করবেন? ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং সুনিশ্চিত করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তগুলি সঠিক কি’না এ বিষয়ে আজকের এই নিবন্ধে আপনাদের সামনে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাইছি। সেইসঙ্গে জানবো শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা কাকে বলে, এই শিক্ষার বৈশিষ্ট্য, শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে।
ছেলে মেয়েদের শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ গড়ার মানসিক চাপ বর্তমান পিতা-মাতাদের মধ্যে তীব্রতর হয়েছে অনেকদিন পূর্বেই। এই সমস্যায় উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাত্রি জাগরণ সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে স্বামী স্ত্রী অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্য। বিদ্যালয়ে ভর্তি করার বয়স এবং তার সঙ্গে বিদ্যালয় নির্বাচনের ব্যাপারে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে পরিবার গুলির মধ্যে যন্ত্রণা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা কি প্রকৃতই সমস্যা? না’কি অন্যদের দেখে এক প্রতিযোগিতার মধ্যে নেমে, নিজেদের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের উপর এক মানসিক চাপ সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার পরিবর্তে, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া?
শিক্ষা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে বিদ্যালয় খোঁজা এবং তার সঙ্গে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের কোন সময়ে ভারতীয় নার্সারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করা উচিৎ(What should be the Right Age For Nursery in India), তা প্রায় সকল পিতা মাতাদের এক নিত্য নৈমিত্তিক কাজের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Right Age For Nursery in India-
টাইমস ওফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী- শহরের কিছু স্কুল প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতি (NEP), 2020 অনুসরণ করছে। কিন্ডারগার্টেনারের অভিভাবকরা কোন মানদণ্ড অনুসরণ করবেন- প্রন না’কী নতুন, তা নিয়ে বিভ্রান্ত।
NEP অনুযায়ী নার্সারি ক্লাসের জন্য বাচ্চাদের ভর্তির বয়স তিন বছর, LKG-এর জন্য চার বছর এবং UKG-এর জন্য পাঁচ বছর।
Age Limit For Admission in Class 1
এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে- শিশুকে ছয় বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে প্রবেশের আগে তিন বছরের ভিত্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বেশিরভাগ শহরের স্কুল, বিশেষ করে প্রাক-বিদ্যালয়গুলি এখনও পুরানো মানদণ্ড অনুসরণ করছে। সেখানে তারা নার্সারি ক্লাসে ভর্তির বয়স 2.5 বছর স্থির রেখেছে।
ঐ খবর অনুযায়ী- প্রি-স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং প্রাক শৈশব অ্যাসোসিয়েশনের টেরিটরি প্রধান আমানপ্রীত সিং অরোরা বলেছেন, “শহরের কয়েকটি স্কুল মানদণ্ড পরিবর্তন করেছে। দুটি স্বনামধন্য স্কুল নার্সারি ক্লাসের জন্য 2.5 বছর বয়সী বাচ্চাদের ভর্তির জন্য বিবেচনা করছে না। তারা 3-4 বছর বয়সী বাচ্চাদের খুঁজছে।
প্রি-স্কুলের জন্য ভর্তির মানদণ্ড হল নার্সারির জন্য 1.5-2.5 বছর, LKG-এর জন্য 3.5-4.5 বছর এবং UKG-এর জন্য 4.5-5.5 বছর। এই বয়স ভিত্তি জন্য উপযুক্ত বলে অনেকে মনে করেন।
অন্যদিকে খবর অনুযায়ী- জাতীয় শিক্ষা নীতি 2020 এখনো সেরকম কোনও নির্দেশিকা নেই এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো এখনও আউট হয়নি৷ একবার NEP বের হয়ে গেলে, তবেই এটি অনুসরণ করতে হবে তৃণমূল স্তর থেকে। তাই বেশিরভাগ স্কুলই নার্সারিতে 2.5 বছর বয়সে ভর্তির ধারা অনুসরণ করছে। এবং পূর্ব থেকে প্রতম শ্রেণীতে ভর্তির বয়স 6 বছর(age limit for admission in class 1 ) আছে।
নিজের অসম্পূর্ণতা বাচ্চার উপর চাপানো-
বাচ্চাদের একেবারে ছোট বয়স থেকে প্লে স্কুল হোক বা নার্সারি, ভর্তি করানোর প্রতিযোগিতা ভয়ংকর রূপ সত্যি কি বাচ্চাদের ভাল কিছু হচ্ছে না’কী হবে? এ নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কেন তর্ক? তর্ক এই কারণে যে সমস্ত বাচ্চার মানসিক অবস্থা এক নয়। টাই শিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষমতায় এক হতে পারে না। কিন্তু মা বাবারা সকলেই প্রায় এক ধরনের স্কুলেই সকলকেই ভর্তি করাচ্ছেন। হতে পারে সেটা- পাড়ার কোন পরিবার বা অন্য বাবা ময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা নিজেদের অসম্পূর্ণ ইচ্ছাকে সন্তানদের মধ্যে থেকে নিষ্কাশন করা।
তাই হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। বলে প্লে স্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু ঐটুকু বাচ্চার মধ্যে প্রথম থেকেই অক্ষর পরিচয় বা অংক শেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দেখতে পাওয়া যায়। শুধু প্রি প্রাইমারি নয়, একাদশে কলা বিজ্ঞান বাণিজ্য বিভাগ নিয়েও দ্বন্দ্ব চলে। যে ছাত্রটির বিজ্ঞান বা বাণিজ্য নিয়ে পড়ার মানসিক পরিস্থিতি নেই, তাকে জোর করে বিজ্ঞান বা বাণিজ্যে ভর্তি করিয়ে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করাও যায়। পাশের বাড়ির কোনো তুতো ভাই বা বোন বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছে তাকেও মা বাবা বিজ্ঞানে ভর্তি করিয়ে পুরো কেরিয়ারটাই জলাঞ্জলি।
তাই সকল ম বাবা, অভভাবকদের শিশুকেন্দ্রীক শিক্ষা কী তা জানা দরকার। আসুন এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা কাকে বলে?
শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা কাকে বলে: প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত শিক্ষা একটি আচরণ রূপান্তরমূলক যাত্রা। শিক্ষা শিশু থেকে তরুণ মনকে গঠন করে এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থেকে নিষ্কৃতি ও সুযোগের জন্য প্রস্তুত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার উপর ক্রমবর্ধমান জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাগত দর্শনে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনও হয়েছে। এই পদ্ধতিটি প্রতিটি শিশুর অনন্য চাহিদা, ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করে। লক্ষ্য হলো- সামগ্রিক বিকাশকে লালন করা। আসুন দেখা যাক- শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার সারমর্ম, নীতি, সুবিধা এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গঠনে এর প্রভাব অন্বেষণে কোন কোন পদক্ষেপগুলি স্মরণে রাখা একান্ত জরুরী।
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিশুকে শিখন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রাখা হয়। অনস্বীকার্য যে প্রতিটি শিক্ষার্থী অনন্য এবং তাদের নিজস্ব উপায়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এই পদ্ধতিটি ঐতিহ্যগত প্রচলিত শিক্ষক-কেন্দ্রিক নমুনা ও উদাহরণগুলির বিপরীতে রয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের একটি সমষ্টিগত গোষ্ঠীর কাছে বিষয়বস্তু সরবরাহের উপর জোর দেওয়া হয়। অন্যদিকে, শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিটি শিশুর ব্যক্তিগত চাহিদা, আগ্রহ এবং গতির জন্য শেখার অভিজ্ঞতাকে উপযোগী করে।
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মূলে রয়েছে–
Relevant Post- ভারতীয় শিক্ষা প্রকৃতই প্রাসঙ্গিক?
স্বতন্ত্র পার্থক্য চিহ্নিতকরণ–
শিশুরা বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ থেকে, শেখার শৈলী এবং ক্ষমতা নিয়ে শ্রেণীকক্ষে আসে। শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষা এই পার্থক্যগুলিকে স্বীকার করে চিহ্নিত করে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলে। সেখানে প্রতিটি শিশু মূল্যবান এবং উপলব্ধি অনুভব করে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলে।
সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতিতে, শিক্ষার্থীরা তথ্যের নিষ্ক্রিয় প্রাপক নয়। তারা তাদের নিজস্ব শিক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে, আলোচনা এবং সমালোচনামূলক চিন্তা অনুশীলনে জড়িত করার জন্য তৈরি করা হয়। এই শিক্ষা কৌতূহল এবং সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করে।
স্ব-নির্দেশিত শিক্ষার সম্প্রসার-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার যাত্রার মালিকানা নিতে সক্ষম করে তোলে। এটি স্ব-নির্দেশিত অন্বেষণ এবং অনুসন্ধানকে উত্সাহিত করে। এই শিক্ষা শিশুদের ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়গুলিতে গভীরভাবে প্রবেশ করতে এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরেও প্রসারিত শেখার প্রতি ভালবাসা তৈরি করতে সহায়তা করে।
একটি পুষ্টিকর পরিবেশের জন্ম দেয়-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার পরিবেশ মানসিক সুস্থতা এবং নিরাপত্তা বোধকে অগ্রাধিকার দেয়। শিশুরা যখন মানসিকভাবে সকলের সমর্থন পায়, তখন শেখার প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হওয়ার, স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রকাশ করার এবং শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পরীক্ষার বাইরে মূল্যায়ন-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় মূল্যায়ন পদ্ধতি গতানুগতিক পরীক্ষার বিপরীতে অবস্থান করে। যদিও একাডেমিক নম্বর বিবেচনা করা হয়, তথাপি একটি শিশুর সামগ্রিক বিকাশের মূল্যায়নের উপর দৃষ্টি দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে তাদের সামাজিক দক্ষতা, মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা।
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মূলনীতি-
স্বতন্ত্রীকরণ–
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র শিখন শৈলী এবং গতির সাথে মানানসই শিক্ষা পদ্ধতি এবং বিষয়বস্তু তৈরি করে। এই পদ্ধতিটি স্বীকার করে যে শিশুদের অনন্য শক্তি, দুর্বলতা এবং স্বতন্ত্র পছন্দ রয়েছে। এই পার্থক্যগুলিকে চিহ্নিত করে সমাধান করার চেষ্টা করে।
সামগ্রিক উন্নয়ন-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা একাডেমিক কৃতিত্বের বাইরে অবস্থান করে। একটি শিশুর সামগ্রিক বিকাশের উপর জোর দেয়। এতে সামাজিক দক্ষতা, মানসিক বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার ভিত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি জীবনের সাফল্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
কার্যকরী শিখন-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিখন একটি নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া নয়। ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে আলোচনা, হাতে কলমে শিখন ক্রিয়াকলাপ এবং সহযোগী প্রকল্পের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত থাকে। এই সক্রিয় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোধগম্যতা এবং ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
নমনীয়তা
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার নমনীয় এবং অভিযোজনযোগ্য আছে। এটি শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে শিক্ষণ পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের সেতু তৈরি করে। এই নমনীয়তা শিক্ষকদের মধ্যেও একটি শ্রেণীকক্ষের পরিবর্তনশীল গতিশীলতার প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম করে।
কৌতূহল উত্সাহিত করা-
কৌতূহল হল শিক্ষার মূল ভিত্তি। শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে কৌতূহলকে উৎসাহিত করে যে সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতুহলী প্রশ্নগুলিকে স্বাগত জানানো হয় এবং শিক্ষার্থীরা নিজেরাই অন্বেষণ করতে এবং উত্তরগুলি অনুসন্ধান করতে অনুপ্রাণিত হয়।
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার সুবিধা
স্বতন্ত্র শিক্ষা-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা নিশ্চিত করে যে প্রতিটি শিশু যেন ব্যক্তিগতভাবে মনোযোগী হয় এবং সমর্থন পায়। শিক্ষার এই স্বতন্ত্র পদ্ধতিটি শেখার শূন্যস্থান, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে উৎসাহিত করে।
বর্ধিত প্রেরণা-
শিক্ষার্থীরা যখনই যা শিখছে, তাতে প্রাসঙ্গিকতা এবং অর্থ খুঁজে পেলে, অনুপ্রেরণা স্বাভাবিকভাবেই অনুসরণ ও অবস্থান করে। শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে শিক্ষামূলক বিষয়বস্তুকে সারিবদ্ধ করে তাদের অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণার মধ্যে সংযুক্ত করে।
সমালোচনামূলক চিন্তাধারার দক্ষতা অর্জন–
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা সমালোচনামূলক চিন্তা, দক্ষতার বিকাশকে অগ্রাধিকার দেয়। আলোচনা, সমস্যা সমাধানের রাস্তা বের করা এবং হাতে কলমে শিক্ষায় জড়িত থাকার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা বাস্তব-বিশ্বের পরিস্থিতিতে জ্ঞান আহরণ ও বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এবং প্রয়োগ করতে শেখে।
শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি-
সক্রিয় অংশগ্রহণ, স্ব-নির্দেশিত শিক্ষা, এবং একটি সহায়ক পরিবেশের উপর জোর দেওয়া শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে। শিশুরা শেখার বিষয়ে আরও উৎসাহী হয় যখন তারা অনুভব করে যে তাদের মতামত এবং অবদান অন্যরা মূল্য দিচ্ছে।
সামাজিক এবং মানসিক বিকাশ-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা সামাজিক ও মানসিক বিকাশের গুরুত্ব স্বীকার করে। ইতিবাচক সম্পর্ক, সহানুভূতি এবং আত্ম-সচেতনতা প্রচার করে। এই পদ্ধতি একটি ইতিবাচক লালন-পালন পরিবেশ তৈরি করে, শিশুরা কার্যকর যোগাযোগ এবং সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক দক্ষতার বিকাশ করতে সচেষ্ট হয়।
আজীবন শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে, যা শ্রেণিকক্ষের বাইরের জগতের মধ্যেও বিস্তৃত। শিক্ষার্থীরা আজীবন শেখার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং মানসিকতা দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং সারা জীবন জ্ঞান অর্জনের জন্য তাদের প্রস্তুত করে।
শিক্ষকদের উপর প্রভাব–
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাও শিক্ষকদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। তাই শিক্ষক শ্রেণীর মধ্যেও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
শিক্ষকরা সুবিধাদাতার ভূমিকায়-
শিশু-কেন্দ্রিক মডেলে শিক্ষকরা প্রাথমিকভাবে জ্ঞান প্রদানকারী থেকে শিখন সুবিধা প্রদানকারীতে রূপান্তরিত হয়। তারা শিক্ষার্থীদের গাইড এবং সহায়তা করে। তারা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে কৌতূহল এবং অন্বেষণকে উৎসাহিত করা হয়।
পেশাদারিত্ব উন্নয়ন–
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষাবিদদের ক্রমাগত পেশাদার উন্নয়ের উপর জোর দেয়। এটি তাদের উদ্ভাবনী শিক্ষার পদ্ধতি, শিক্ষাগত গবেষণা এবং তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আপডেট থাকতে উৎসাহিত করে।
অভিযোজন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে অভিযোজনযোগ্যতা এবং নমনীয়তা বিকাশ করে। তারা তাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদার প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল এবং নতুন কৌশল অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উন্মুক্ত যা শেখার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে।
সম্পর্ক সৃষ্টি ও লালন–
শিক্ষার্থীদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শিক্ষাবিদরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা বোঝার উপর গউরঊত্ত্ব দিয়ে একটি সহায়ক এবং বিশ্বাসযোগ্য শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক তৈরি করেন।
শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার সমস্যা–
যদিও শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা অনেক সুবিধা প্রদান করে, তথাপি সম্ভাব্য সমস্যাগুলি স্বীকার করা এবং মোকাবেলা করা অপরিহার্য।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন শিক্ষার উপকরণ এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো সহ অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন। ভারতের মতো দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা ব্যাপকভাবে এই শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
মানসম্মত পরীক্ষার চাপ-
শিক্ষা ব্যবস্থায় যেগুলি চিরাচরিত পুরনো পরীক্ষার উপর খুব বেশি নির্ভর করে। কিন্তু শিশুকেন্দ্রিক পদ্ধতিতে এই পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারে। সামগ্রিক উন্নয়নের উপর জোর, মানসম্মত মূল্যায়নের সংকীর্ণ পদ্ধতির সাথে এক সূত্রে গাঁথা নাও হতে পারে।
শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি-
শিশু-কেন্দ্রিক অনুশীলনগুলি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং পেশাদারিত্ব উন্নয়নের সুযোগের প্রয়োজন হতে পারে। এই শিক্ষাগত পদ্ধতির সাফল্যের জন্য শিক্ষকদের ভালভাবে প্রস্তুত করা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিতামাতার প্রত্যাশা-
পিতামাতারা, শিক্ষার ঐতিহ্যগত মডেলের সাথে অভ্যস্ত। তাদের সন্তানের শিখন অভিজ্ঞতার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রত্যাশা থাকতে পারে। উদ্বেগ মোকাবেলা করতে এবং বোঝাপড়া তৈরি করতে শিক্ষক এবং পিতামাতার মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার-
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা একটি পরিবর্তনমূলক পদ্ধতি যা শিশুকে শেখার অভিজ্ঞতার অগ্রভাগে রাখে। শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র পার্থক্য স্বীকার করে এবং উদযাপন করে। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে এবং সামগ্রিক উন্নয়নের প্রচার করে। শিক্ষাগত দর্শন শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র একাডেমিক সাফল্যের জন্যই নয়, আগ্ৰহ অন্বেষণ এবং বৃদ্ধির জীবনব্যাপী যাত্রার জন্য প্রস্তুত করে।