সুন্দর, সৌন্দর্য, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং দ্বন্দ্ব

সুন্দর, সৌন্দর্য, রাষ্ট্রীয় স্তরে নেতা নির্বাচন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং দ্বন্দ্বমূলক নিবন্ধের মাধ্যমে সাধারণ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের মননের গভীরে সুখ দু:খের পাশাপাশি বসবাস। উভয়ের মিলনেই প্রকৃত জীবনের আস্বাদ। কাকে বেশি ভালবাসি কাকে কম- জীবন সেদিকে নজর দেয় না, চলে আপন খেয়ালে। কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন আমাদের জটিলতাকে কিছুটা সরল করে কেবলমাত্র।

সুন্দর বলতে কি বুঝায়?

সুন্দর ও সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ প্রকৃতিগত। কিন্তু সুন্দর বলতে কি বুঝায় বা সুন্দর নির্বাচনের ভ্রমকে অস্বীকার করা যায় না। ব্যক্তিবিশেষে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নিরূপণ এখানে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে সেই আপেক্ষিকতাবাদ অগ্রাধিকার পায়। তাই ভিন্ন সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ, নির্বাচন ও আত্তীকরণে মানুষকে সাধুবাদ বা দোষারোপ কোন কিছুই স্থায়ী ভাবে করা যায় না‌। এই নির্বাচন তার ব্যক্তিগত বিষয়ের উপর ছেড়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত।

আবার এটাও ঠিক সার্বজনীন সাধারণ সৌন্দর্যকে গ্রহণ করতে হয়। উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন- ফুল। ফুলের সৌন্দর্য সকল মানুষই গ্রহণ ও উপভোগ করে। তেমনি ঝর্ণা, নদী, পাহাড় ও সাগরের সৌন্দর্য চির প্রবহমান। কেউ পাহাড় বা কেউ সাগর ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষী। কিন্তু সকল ভ্রমণকারীকেই উভয়ের সৌন্দর্যকে অস্বীকার করতে দেখা যায় না। পাহাড়ি খাতের বা সমুদ্রের বীভৎস ঢেউয়ের সৌন্দর্য কারো চোখ এড়ায় না।

সুন্দর

অন্যদিকে বর্ণ, কাঠামো ও অবয়ব সৌন্দর্য মনুষ্য ভেদে ভিন্ন। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন ও জটিল সৌন্দর্য চয়ন, দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক সৃষ্টি হয় মানব সৌন্দর্য নির্বাচনে। মনুষ্য সৌন্দর্য চয়ন, নির্বাচন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বহিরঙ্গ প্রাধান্য পায়। বহিরঙ্গ সৌন্দর্য ও অন্তরঙ্গ সৌন্দর্য যদি খাপে খাপে মিলে যায় তাহলে সোনায় সোহাগা।

প্রেম ভালোবাসা ও সুন্দর-সৌন্দর্য

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বহিরঙ্গের সঙ্গে অন্তরঙ্গের পার্থক্য বিপদে ফেলে। শান্তি ও তৃপ্তি ব্যাহত হয়। এবং ভবিষ্যত জীবন যাপনকে সাংঘাতিক ভাবে প্রভাবিত করে। বন্ধু, প্রেম-ভালোবাসা, এমনকি নেতা-নেত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে নির্বাচক ও নির্বাচিত মানুষগুলির সম্পর্কের স্বল্প-দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের পরিধি উপর প্রভাবিত মানুষদের সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি সরাসরি প্রভাবিত।

সুন্দর
Photo by Helena Lopes

যেমন কুৎসিত বন্ধু নির্বাচনে প্রভাবিত পরিধীর তুলনায়, দুষ্ট নেতা-নেতৃ নির্বাচনে প্রভাবিত পরিধির বহর অনেকগুণ বেশি। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী নির্বাচনে প্রেম-ভালোবাসা সরাসরি প্রভাবিত। প্রকৃত সুন্দর মানুষের ভুল নির্বাচনে প্রেম ভালোবাসা থাকে না। সুন্দর মানুষ নেই, তাই প্রেম-ভালোবাসাও নেই। প্রেম-ভালোবাসায় সৌন্দর্য সর্বজনীন ও সর্বজনগ্রাহ্য। কেননা প্রেম-ভালোবাসায় কুৎসিত বিষয়ের কোন স্থান নেই।

মা তুমি সুন্দর

পূর্বেই বলেছি মনুষ্য জীবনযাপনের সৌন্দর্য নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে বহিরঙ্গ প্রাধান্য পায়। এ মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। যদিও মনুষ্য চরিত্র কোন একক আচরণ বিশিষ্ট ধর্মের উপর আবদ্ধ নেই। এক মানুষের স্থান-কাল-পাত্রভেদে বহুরূপীতা আছে। সন্তানের কাছে তার বাবা-মা চিরকালীন নায়ক-নায়িকার মতোই বিবেচিত। কিন্তু সেই মা-বাবা বহির্জগতের কাছে ভিলেন হতেই পারেন। কিন্তু সমস্যা হলো মানুষের কাছে মা-বাবা নির্বাচনের কোনো পন্থা-পদ্ধতি নেই। বলতে চাইছি, মা-বাবাকে জৈবিকভাবে বর্জন করে নায়ক-নায়িকা বাবা-মা নির্বাচন কেমন যেন পাগল পাগল ব্যাপার।

কিছু কিছু মানুষ আছেন তারা প্রকৃত মানুষের অন্তরের সৌন্দর্য সন্ধানে লিপ্ত থাকেন ও নির্বাচন করেন। কিন্তু সমস্যা হল এ ধরনের সৌন্দর্য সন্ধানী মানুষের সংখ্যা এতই কম যে, সহজে তা সমগ্র সমাজকে প্রভাবিত করতে পারে না। কিন্তু তাদের সৌন্দর্য সন্ধানে অনুসন্ধিৎসু মানসিকতাকে সম্মান না জানিয়ে পারা যায় না। আবার সমাজ এ সমস্ত মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হলেও সমাজের সকল মানুষ সেই সৌন্দর্যকে জীবনের সঙ্গে ধারণ করে নিয়ে চলতে পারে না। বলতে চাইছি মহাপুরুষদের জীবনচরিত, সামাজিক কাজকর্ম আমরা পড়ি, শুনি, আলোচনা করি। কিন্তু জীবনে ধারণ করে চলি না। চললে সারা পৃথিবীবাসী এক অপরূপ সৌন্দর্যের শিখরে অবস্থান করতো।

বাহ্যিক সৌন্দর্য

অন্যদিকে সংখ্যায় ভারী মানুষদের মধ্যেই বাহ্যিক সৌন্দর্য সন্ধানী সত্তার অস্তিত্ব রয়েছে। পূর্বেই বলেছি বাহ্যিক সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হলে মর্তেই স্বর্গলোক সৃষ্টি হয়। আর অমিলের মধ্যে জীবন-যাপনের প্রবাহকে সাগর সঙ্গমে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নির্বাচনকে যা করতে হয়, তা হলো সমঝোতা। ইংরেজিতে যাকে আমরা এডজাস্টমেন্ট বলি। এই এডজাস্টমেন্ট কেবল ব্যক্তিগত জীবন যাপনেই নয়, পরিবার থেকে শুরু করে বৃহত্তর সমাজ ও রাষ্ট্রীয় স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত।

কিন্তু সকলের পক্ষে সমগ্র ক্ষেত্রেই এডজাস্ট করার মানসিকতা থাকে না। বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং শুরু হয় দ্বন্দ্ব, বিরোধ, সংঘর্ষ এবং অবশেষে জয় পরাজয়। এখানে কে জয়ী কে পরাজয়ী তা আমরা আগাম বলতে পারি না। অর্থাৎ সৌন্দর্য ও কুৎসিত যে কেউই জয়ী হতে পারে।

জয়-পরাজয়ের মধ্যে সকল মানুষেরই জয়ী হওয়ার স্বাভাবিক বাসনা থাকে। এবং সেখান থেকে সুখ, শান্তি ও তৃপ্তি পাওয়ার অনির্বচনীয় অনুভূতিতে অবগাহন করতে চায়। সুখ, শান্তি ও তৃপ্তি পাওয়ার জন্যই সৌন্দর্য নির্বাচন এক অন্যতম পন্থা। আবার প্রকৃতির বীভৎস সৌন্দর্যের মতো সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আনন্দ, সুখ, শান্তি ও তৃপ্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই সৌন্দর্য্যকে বীভৎসতার মধ্যেই খুঁজে বেড়ায়। সাধারণ মানুষের কাছে সেই বীভৎসতা সবসময়ই অগ্রাহ্য হয়ে আসছে। অন্যদিকে পরিবেশ হন্তা মানুষই ঘটা করে পরিবেশ দিবস পালনের মাধ্যমে তার কুত্সিত রূপকে ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় সৌন্দর্য

উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রনায়ক ও নেতা-নেত্রীরা আনন্দ, সুখ ও তৃপ্তি পাওয়ার জন্যই জনসমাজে যে শোষণ, শাসন ও অত্যাচার চালায়, তাদের কাছে আরাধ্য হলেও সাধারণ জনসমাজে তা কুৎসিত আচরণ বলে চিহ্নিত‌। অত্যাচারী মানুষজন সাময়িক আনন্দ পাওয়ার জন্যই তাদের কাছে অত্যাচারী কাজকর্ম ও শয়তান মানুষজনই আদর্শ সৌন্দর্য বলে বিবেচিত। দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যকে তারা সবসময়ই অগ্রাহ্য করে। দীর্ঘস্থায়ী আতঙ্কের সঙ্গে সহবাস করে প্রহরী বেষ্টিত বদ্ধ জীবনযাপনকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

সুন্দর

লক্ষ্য যদি দীর্ঘস্থায়ী সুখ, সচ্ছলতা, আনন্দ, তৃপ্তি ও শান্তি হয় তাহলে প্রকৃত সৌন্দর্য শনাক্ত, নির্বাচন এবং অবশেষে সহবাস করা প্রয়োজন। বজ্রপাত, ঝড়-বৃষ্টি, খরা, বন্যা, করোণাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং সম্মান করা প্রয়োজন। সবই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি বীভৎস সৌন্দর্য। সমস্যা হল মনুষ্য সৌন্দর্য সনাক্ত ও নির্বাচনের গোলক ধাঁধায় জড়িয়ে সহবাস ও আত্তীকরণের তৃপ্তি ও শান্তিময় জীবন যাপন করা। ধন্যবাদ।

Help Your Family and Friends:

Leave a Comment