পরিব্রাজন কাকে বলে? পরিযায়ী শ্রমিক কিন্তু পরিযায়ী নেতা নয় কেন?

পরিব্রাজন কাকে বলে(Migrant Workers Meaning in Bengali): আমরা ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের পরিযায়ী শ্রমিক বলতে দ্বিধা করি না। কিন্তু ভিন রাজ্য থেকে আসা রাজনৈতিক নেতাদের পরিযায়ী নেতা বলবো না কেন(Why only Migrant Workers, Why not Migrant Leaders)? শ্রমিকরা যদি পরিযায়ী হতে পারে, ওই ধরনের নেতারাও পরিযায়ী নেতা হবে না কেন?

পরিব্রাজন কাকে বলে

আর এখানেই যত ঝামেলা। নেতা-মন্ত্রীদের পরিযায়ী তকমা লাগানো অর্থে তাদের অপমান করা, অসম্মান করা। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, তাদের নামের আগে পরিযায়ী এ এক ঘোরতর অপমানজনক তকমা। শ্রমিকদের পরিযায়ী বলো- তাতে কোন অসুবিধা নেই। তারা তো গরিব। অর্থ নেই, মান-সম্মান নেই, তাই তাদের আত্মমর্যাদা নেই। অতএব পরিযায়ী বলাটাও অযৌক্তিক নয়।

পরিব্রাজন কাকে বলে | Let’s Know the Meaning of Migrant-

সংক্ষেপে পরিযায়ী শব্দটির অর্থ জেনে নিন। পরিযায়ী ইংরেজি নাম হল- Migrant. সমাজবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং জনসংখ্যা ভূগোলের বিষয়। এটি সমাজবিজ্ঞানেরও অংশ। অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণকারী মানুষজনকে শ্রেণীগত বিভাজনে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে পরিযায়ী শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে জনসংখ্যাকেও সুনির্দিষ্টভাবে বিভাজন ও চিহ্নিত করার প্রয়োজনে পরিযায়ী কথাটি ব্যবহার হয়ে থাকে।

বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা প্রায় 760 কোটি হয়ে থাকলে ওই জনসংখ্যার 90% বাস করে স্থলভাগের মাত্র 10% অঞ্চলে। আর মাত্র 10% বাস করে স্থলভাগের 90% অঞ্চলে। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে জনসংখ্যা বন্টনে  পরিব্রাজনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

বহু প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষ প্রতিনিয়ত খাদ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাচ্ছন্দ, আনন্দ ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সবসময়ই বিচরণ করছে। পরিব্রাজন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তবে এই পরিব্রাজন পরিবর্তনশীলতা প্রাচীন যুগের যাযাবর ভিত্তিক জীবন যাপনের সঙ্গে কখনোই সমান নয় বা সমতুল্য নয়।

পরিব্রাজনের সংজ্ঞা শ্রেণী-

পরিব্রাজন কাকে বলে- এর উত্তরে আমরা চার ধরনের পরিব্রাজনের সংজ্ঞা সম্পর্কে জানব।

  • 1- সাধারণ সংজ্ঞা-

এক স্থানের মানুষ অন্য স্থানে বহু দিনের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাস করার উদ্দেশ্যে গমন করলে তাকে পরিব্রাজন বা মাইগ্রেশন বলা হয়ে থাকে।

কোন ব্যক্তি অথবা জনগোষ্ঠী স্থায়ীভাবে অথবা প্রায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য স্থান পরিবর্তন করলে তাকে পরিব্রাজন বলে।

ভূগোলবিদ এভারেট লি বলেন যাত্রাপথের দূরত্বকে বিচার না করে মানুষ যখন স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে তখন সেই প্রক্রিয়াকে পরিব্রাজন বলে।

  • 4- সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা-

পরিব্রাজন হলো স্থায়ীভাবে অন্যত্র বসবাসের উদ্দেশ্যে প্রচলিত বাসস্থানের পরিবর্তন।

অবশ্য পরিযায়ী শব্দটি আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। লকডাউনের আগে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের কাছে শ্রমিকদের আগে পরিযায়ী কথাটি বসে এটা হয়তো জানা ছিল না। কিন্তু ‘পরিযায়ী পাখি(Migrant Bird) আমাদের সকলেরই জানা। শীতকালের সাইবেরিয়া থেকে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আমাদের এলাকায় ঝিল, পুকুরে আসে। হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির সমাবেশে আমাদের এলাকার আবদ্ধ জলভাগ কলরবে মুখরিত। নয়নাভিরাম দৃশ্য আমরা উপভোগ করি। কিন্তু কেন শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমন তা অবশ্য অনেকের অজানা।

অন্য কোন ঋতুতে তাদের দেখা যায় না কেন? কারণ উত্তর গোলার্ধে শীতকালে আমাদের এলাকা ভারতবর্ষে যে পরিমাণ শীত পড়ে, তার তুলনায় সাইবেরিয়া তাপমাত্রা আমাদের এই অঞ্চলের তুলনায় অনেক কমে যায়। 0° বা কারো তার চেয়েও কম। ফলস্বরূপ ওখানকার বিস্তীর্ণ জলভাগ বরফে পরিণত হয়। পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র গুলি স্তব্ধ হয়ে হয়ে। বন্ধ হয় খাবার সংগ্রহ এবং সরবরাহ। স্বভাবতই পাখিরা বাধ্য হয় বিচরণ আর আহারের জন্য সুদূর দেশে পাড়ি দিতে।

শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও তাই। কাজের অভাবের তাড়নায় অর্থের প্রয়োজনে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়। শ্রমিকদের এক বিশেষ শ্রেণীকরণ পরিযায়ী শ্রমিক। সাধারণের বোঝার সুবিধার্থে পরিযায়ী নামকরণের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। ঠিক সেরকম বোঝা বা বোঝানোর প্রয়োজনে নেতাদের পরিযায়ী আখ্যা দেওয়ার অযৌক্তিকতা কোথায়?

পরিব্রাজন কাকে বলে

বিষয়গুলি আরো পরিচ্ছন্ন ভাবে বোঝার জন্য দেখি পরিযায়ীর শ্রেণীবিভাগ গুলি-

পরিব্রাজন’এর শ্রেণীবিভাগ-

পরিব্রাজনকে মূলত চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়-

রিব্রাজন উপবিভাগ উদ্দেশ্য/কারণ
প্রেরণার বিচারেক. অর্থনৈতিক পরিব্রাজন
খ. সামাজিক পরিব্রাজন
ক. চাকরি বা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে,
খ. বিবাহ, ধর্মীয় স্বাধীনতার অভাব, সরকারি দমননীতি ইত্যাদির কারণে
স্থায়িত্বের বিচারেক . স্থায়ী পরিব্রাজন

খ.অস্থায়ী পরিব্রাজন
ক. দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা ভারতে
স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এ দেশে আসেন
খ. চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা লাভের জন্য
কোন স্থানে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করা
দূরত্বের বিচারে
ক. স্বল্প দূরত্বের পরিব্রাজন

খ. মধ্যম দূরত্বের পরিব্রাজন

গ. অধিক দূরত্বের পরিব্রাজন
ক. জেলার মধ্যে প্রতিবেশীর জেলার মধ্যে গ্রাম এবং
শহরের মানুষদের মধ্যে স্বল্প দূরত্বের পরিব্রাজন।
এখানে চাকরি, হাট বাজারের ব্যবসার কারণও থাকতে পারে

খ. প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন কারণে পরিব্রাজন


গ. এক প্রান্তের রাজ্য থেকে অন্য প্রান্তে
পরিব্রাজন অথবা এক দেশ থেকে অন্য দেশের মধ্যে পরিব্রাজন
রাষ্ট্র সীমার বিচারেক. অভ্যন্তরীণ পরিব্রাজন

খ. আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন
ক. রাষ্ট্র সীমার মধ্যে অর্থাৎ ভারতবর্ষের এক
প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তে স্থায়ী বা
অস্থায়ী ভাবে যেকোন কারণের জন্য বসবাস করলে।
খ. আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে প্রভাবে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করা।

এবার আসি শ্রমিক’এর সংজ্ঞায়। শ্রমিক কারা? কাদের আমরা শ্রমিক বলবো-

সাধারণের দৃষ্টিতে মাঠে-ঘাটে, রাজমিস্ত্রির সঙ্গে, দোকানে কাপ প্লেট ধোয়া, রাস্তায় কাজ করা ইত্যাদি সাধারণ কিছু নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত সাধারণকে আমরা শ্রমিক আখ্যা দিয়ে থাকি। কিন্তু ধারণাটা সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ। এই ধারণা নিয়েই আমরা চলতে থাকি। ভুলের বেসাতি করে দুর্বলের উপর শাসন করতে থাকি।

চলুন শ্রমিক কাদের বলবো একবার দেখে নি। এক কথায় যে শ্রম করে তারাই শ্রমিক। সে শ্রম শারীরিক এবং মানসিক দুই’ই হতে পারে। আক্ষরিক অর্থ তাই বলে। প্রকৃতপক্ষে অর্থনীতির উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকে দু’পক্ষ- মালিক ও শ্রমিক। মালিকের কাজ হল মূলধন লাগানো এবং উদ্দেশ্য মুনাফা। উৎপাদনের কাজকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার মধ্যে শ্রমিক হলো অন্যতম।

আমরা এখানে মালিক-শ্রমিক বিভাজন বা উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করছি না। কেবল পরিযায়ী শ্রমিক বিষয়টি বোঝার জন্য সমগ্র শ্রমিকশ্রেণীকে শ্রেণীগত বিভাজনের জন্য যেটুকু প্রয়োজন তাই আলোচনায় আনব।

আমার বক্তব্য হল কেবল মাঠে-ঘাটে, রাস্তায়, রেস্টুরেন্টে বা রেললাইনে কাজ করা মানুষগুলো শ্রমিক নয়- তাছাড়াও এক বৃহত্তর জগতের মধ্যে শ্রমিক রয়েছে। সেটা বোঝানোর জন্য শ্রমিকের শ্রেণীবিভাজন প্রয়োজন। হয়তো আপনি, আপনার পরিবারের কেউ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলেই এমনকি আমিও একজন শ্রমিক। আসুন আমরা নিজেরাই শ্রমিকের কোন শ্রেণীতে পড়ছি দেখে নি। তারপর আমরা নিজেরা জানবো আমরা পরিযায়ী কি’না।

শ্রমিকের শ্রেণীবিভাজন-

  • রেড কলার ওয়ার্কার(Red Collar)- যারা অর্থনীতির প্রাথমিক স্তরে অর্থাৎ খাদ্য সংগ্রহ, জীবজন্তু শিকার, পশুপালন, মৎস্যচাষ, চাষাবাদ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তারা হল রেড কলার ওয়ার্কার্স বা রেড কলার লেবার।
  • বুলু কলার ওয়ার্কার বা লেবার(Blue Collar)- শিল্প, গৃহ, নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন নির্মাণ, তাপবিদ্যুৎ কারখানা, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদিতে কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত যে সমস্ত মানুষজন তাদের ব্লু কলার ওয়ার্কার বা লেবার বলা হয়। সাধারণত শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা এই শ্রেণীতে পড়ছে।
  • পিংক কলার ওয়ার্কার্স বা লবার(pink Collar)- কৃষি কাজ এবং শিল্পোৎপাদনকে কেন্দ্র করে উৎপাদিত দ্রব্য প্রেরণ, বিক্রয় ইত্যাদি কাজের সঙ্গে যুক্ত অথবা পরোক্ষভাবে যুক্ত অর্থনীতির ক্ষেত্রে তৃতীয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের পিংক কলার ওয়ার্কার্স বা লেবার বলা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিবহন, শিক্ষাদান, আইনি পরামর্শ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যাংক-বীমা ও অন্যান্য আর্থিক ব্যবস্থা, পণ্য মজুদ, সংরক্ষণ ইত্যাদি এ ধরনের কাজ তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ এর মধ্যে পড়ে।
  • হোয়াইট কলার ওয়ার্কার্স বা লেবার(White Collar)- উন্নত মেধা এবং দক্ষতার সাহায্যে আধুনিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ গড়ে তোলে যে কার্যাবলী তাকে নব্য কার্যাবলী বা চতুর্থ স্তরের কার্যাবলী রূপে আখ্যা দেওয়া হয়। ইংরেজিতে নাম হল কোয়াটারনারি সার্ভিসেস এবং এই ধরমের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের হোয়াইট কলার ওয়ার্কার বা লেবার বলা হয়। মূলত উচ্চপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে বড় শহর, ব্যবসা কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে নতুন বাজার সৃষ্টি গড়ে উঠলে সেই ধরনের কার্যাবলী চতুর্থ স্তরের কার্যাবলী মধ্যে পড়ে। তথ্য, সংবাদ পরিবেশন, সরকারি আমলা, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মী গোষ্ঠী এই পর্যায়ের অন্তর্গত।
  • গোল্ড কলার ওয়ার্কার বা লেবার(Gold Collar)- এটি হলো পঞ্চম স্তরের অর্থনৈতিক কার্যাবলি। এর ইংরেজি নাম কুইনারি এক্টিভিটিস। এটি অর্থনৈতিক কার্যাবলীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্থান পেয়েছে। স্বচ্ছ মেধাসম্পন্ন, বিশেষ মানসিক দক্ষতা নির্ভর কার্যাবলী। অতি উচ্চ পর্যায়ের ম্যানেজার, নির্বাহি আধিকারিক(CEO), বৈজ্ঞানিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপগ্রহ পরিষেবা, রিমোট সেনসিং জিআইএস ইত্যাদি কর্মগুলি এই পর্যায়ের অন্তর্গত। এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত শ্রমিকদের গোল্ড কলার ওয়ার্কার বলা হয়।

শ্রমিকের সংজ্ঞা এবং শ্রেণীবিভাজন থেকে অবশ্যই বুঝতে পারছেন আমরা প্রত্যেকেই শ্রমিক। কে কোন পর্যায়ে রয়েছে তা কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য এবং ধরন অনুযায়ী শ্রেণীতে ফেলতে হবে। নেতা-মন্ত্রীরা ও কিন্তু এক ধরনের পর্যায়ে পড়ছে। তারা মূলত পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা বিতর্ক আছে- নেতা-মন্ত্রীদের কোন পারিশ্রমিক আছে কি’না এই নিয়ে। যদি তারা সত্যি সত্যি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন তাহলে তারা শ্রমিকের পর্যায়ে পড়বেন। আর যদি পারিশ্রমিক ব্যতীত ভাতার পেয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু শ্রমিক পর্যায়ে পড়ছেন না।

Migrant Workers Meaning in Bengali-

আবার পরিযায়ী শব্দটাও কেবলমাত্র শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য নয়, যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রেই পরিযায়ী শব্দটা প্রয়োগ হতে পারে। যদি সেই মানুষের স্থান পরিবর্তনের কোন কারণ বা বিষয় থাকে।

পরিব্রাজন কাকে বলে

আপনি নেতা-মন্ত্রী, তাই সহজেই ভিন্ন রাজ্য থেকে আসা, রাজমিস্ত্রির জোগাড় হয়ে খাটতে আসা শ্রমিক ভাইকে পরিযায়ী শ্রমিক বলে সম্বোধন করলেন, বললেন এতে তাদের অপমান করা নয়, অসম্মান নয় বরং একটা শ্রেণীতে ফেলা হয়। যাতে সনাক্ত করতে সুবিধা হয় এবং বিশেষ কোন পরিষেবা দেবার জন্য তাদের শ্রেণীকরণের প্রয়োজন আছে- মেনে নিলাম।

কিন্তু পরিযান এর সংজ্ঞা ও শ্রেণী বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে শুধু রাজমিস্ত্রি, জোগাড়ে নয়, শুধু রাস্তা তৈরির শ্রমিকরাই নয়, আরো কত শ্রমিক আছে। যেমন একজন জেলাশাসক থেকে শুরু করে এসডিও, বিডিও, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক সেনাবাহিনীর লোকজন, এয়ার ফোর্স নেভিতে কাজ করা অফিসার বা সৈনিকরা, ভিন রাজ্যে কাজ করতে আসা ডাক্তাররাও পরিযায়ী। এতে কিন্তু অপমান বা মানহানির কোন ব্যাপার থাকার কথা নয়।

শ্রমিকের শ্রেণী বিভাজনের কোনো একটা শ্রেণীতে এ ধরনের কর্মে নিযুক্ত মানুষজনও শ্রমিক। আর যেহেতু এরা নিজেদের এলাকায় বা নিজের রাজ্যে কর্মে নিযুক্ত নয়, তাই এরাও পরিযায়ী শ্রমিক। অনেকেই মানি কিন্তু অনেকেই নিজেদের কৌলিন্য ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেদের শ্রমিক ভাবেনই না। তার ওপর আবার পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে? অসম্ভব। সুন্দরলাল পিচাইও একজন আন্তর্জাতিক পরিযায়ী শ্রমিক।

Read More- পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা
গরিবী হঠাও স্লোগান

কখনো কখনো ভারতীয় নেতারও পরিযায়ী-

ঠিক এরকম ভাবেই যে সমস্ত নেতারা নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোন ভিন্ন রাজ্য বা ভিন্ন লোকসভা, বিধানসভা এলাকাতে ভোটে লড়ার জন্য নমিনেশন ফাইল করেন, যেতেন, মন্ত্রী হন। তার ওপরই এই নেতা পরিযায়ী আখ্যায় ভূষিত হওয়া উচিত। এতে অপমানিত বা অসম্মানিত হওয়ার কথা নয়।

সারাদেশেই নেতাদের ক্ষেত্রে পরিযায়ী আখ্যায় ভূষিত হওয়া প্রয়োজন আছে। অন্য এলাকার নেতাদেরও বিভিন্ন এলাকায় ভোটে নমিনেশন ফাইল করলেই পরিযায়ী শব্দটি তাদের নামের পূর্বে বসানোর ব্যাপারে ভাবার প্রয়োজন আছে।

Help Your Family and Friends:

Leave a Comment