ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন ও ছাত্রদের শক্তি(Students Strengths) যেমন মানুষের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ত্রাতার ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। তেমনি ছাত্রদের শক্তি নিংড়ে তাদের দুর্বল করে দিয়ে সমাজকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকেও মিথ্যা ব্লা যাবে না। সমস্যার সমাধানে মানুষের ক্ষেত্রগুলি মূলত অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ও সামাজিক নানান বিষয়গুলি প্রভাবিত হয়। ইতিহাস থেকে আমাদের এ ঘটনাগুলি দেখে এসেছি। প্রাক স্বাধীনতার সময় স্বাধীনতার জন্য লড়াই ও স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন ও আন্দোলনে সেই ভূমিকা গ্রহণ করে এসেছে এতকাল।
ছাত্র সংগঠন ও আন্দোলন-
কিন্তু বর্তমান সমসাময়িক ছাত্র সংগঠন ও আন্দোলন এবং তাদের ভূমিকায় আমাদের সামনে এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন এনে দিচ্ছে। প্রশ্নচিহ্ন গত কয়েক দশক ধরে ক্ষুদ্র আকারে সামনে এলেও তার কলেবর বেশ বুদ্ধি পাচ্ছে। সত্যি কি বর্তমান ছাত্র সংগঠন রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা গ্রহণ করছে? সমস্যা সমাধানে তাদের উপর কি ভরসা রাখা যায়? মানুষের কথা তো বাদই দিলাম। ছাত্র আন্দোলনের কান্ডারী বা সেনানিদের কি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত ও সুরক্ষিত থাকছে? বিশেষ করে যারা কেবলই কর্মী হিসেবে সংগঠন টিকিয়ে রাখার কাজটি করছেন?
আজ এই লেখার মাধ্যমে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনায় সম্যক ইচ্ছা প্রকাশ করছি। তবে কেন এই আলোচনার উপস্থাপন সে বিষয়েও কিছু বলা প্রয়োজন। এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রথমে জেনে নেওয়া আবশ্যক। একটি ঘটনা আমাকে এই প্রশ্নগুলোর সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। আমার মনে হয়েছে সেগুলি বেশ ভয়ঙ্কর বিষয়, যার কার্যকারিতা এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামীতে তা ভয়ংকর থেকে ভয়ঙ্করতর হতে পারে।
এই ঘটনা কেবল একটি রাজনৈতিক দলের জন্যই নয়, দেশে যত রাজনৈতিক দল আছে তাদের ছত্রছায়ায় যত ছাত্র সংগঠন রয়েছে সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। একটা ট্রেন্ড চলছে সারা দেশ জুড়ে। কি কেন্দ্র কি রাজ্য, ক্ষমতায় যে দল আসীন হয় এবং যে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ছাত্র আন্দোলন পরিচালিত হয় তাদের ঔদ্ধত্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
কেন এই প্রসঙ্গ উত্থাপন?-
গত ২৮/০৮/২০২২ সময় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আটটা। স্থান- শহীদ এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরা। বোলপুর থেকে কামারকুণ্ড পর্যন্ত যে সময়টুকুতে আমি একটি জেনারেল কামরায় উপস্থিত ছিলাম, সেই কামরা সহ আশেপাশের কামরাগুলিতে ছিল একটি ছাত্রসংগঠনের বিশাল সংখ্যক সেনানি। সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য সাধারণ যাত্রী।
সমস্যা কিন্তু ছাত্র সংগঠন বা ছাত্রদের নিয়ে নয়। সমস্যা হলো তাদের আচরণ নিয়ে। সারা কামরা জুড়ে হইচই, চিৎকার, চেঁচামেচি। কম্পাঙ্ক কত ডেসিবল ছিল বলা মুশকিল। তাছাড়া তারা কোন এক জায়গায় স্থির নয়, প্রতি পাঁচ মিনিট দশ মিনিট অন্তর অন্তর এই কামরা থেকে সে কামরা বা কামরার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত অদম্য চিৎকারে যাওয়া আসা করছে।
কখনো বা কামরার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া। গানের নামে এমন ভয়ঙ্কর চিৎকার হয় জানা ছিল না। সুর তাল লয় তো ছিলই না। যা থাকে তা হল শুধু চিৎকার। গান নয় মনে হলো প্রতিটি যাত্রীকে অসুস্থ করে দেওয়ার পরিকল্পিত শব্দ দূষণ।
বিড়ি, সিগারেট তো বাদই দেওয়া গেল, কামরা জুড়ে শুধু গাঁজার ধোঁয়া আর গন্ধ। যাত্রীদের মধ্যে ১০০ শতাংশ সুস্থ আছেন বলা যায় না। আরও অস্বস্তি আর অসুস্থতার দিকে এগিয়ে গেলেও কামরায় যাত্রীদের অদ্ভুত নীরবতা। চলন্ত ট্রেন। ছাত্রদের সংখ্যা অসংখ্য। প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়া ভয়ঙ্কর হতেও পারে ভাবলে আঁতকে উঠতে হয়। আমিও ডান হাতটা বাঁ বুকে চেপে ধরে মন্ত্র জপ করলাম all is well, all is well।
এই সমস্ত ঘটনাগুলো দেখে পূর্বের প্রশ্নগুলো মনে এসেছে এবং এর উত্তর কি হতে পারে তার কিছু আভাস আপনাদের সামনে রাখার চেষ্টা করব এবং আপনাদের কাছ থেকেও জানার চেষ্টায় আছি। তাছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের অর্থাৎ সমাধানের কিছু রাস্তা আছে কি’না জানার চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায়?
তার আগে বলি- ওই মুহূর্তে প্রতিবাদ নয় কেন?
এর উত্তরের প্রশ্নে আবারও এক প্রশ্ন- কাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ? উত্তর হল- ছাত্রদের বিরুদ্ধে। দেখলে দেখা যাবে ছাত্ররা কিন্তু আমাদেরই আত্মীয় পরিজন বন্ধুদের সন্তান আত্মীয়। তারা আমাদেরই অংশ। তাহলে প্রতিবাদটা আমাদের বিরুদ্ধেই হওয়া উচিত। প্রতিবাদটা প্রতিটি অভিভাবক প্রতিটি অভিভাবককে করা উচিৎ। আপনাদের ছেলেরাই বর্তমান ওই ছাত্র সংগঠনের কিয়দংশে উপস্থিত।
সেই মুহূর্তের প্রতিবাদের ফলাফল- হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবকেই সুদূরপ্রসারী করে। প্রথমত তারা এক উত্তেজনায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্যের মত হয়ে আছে। কি ন্যায়, কি অন্যায়, কি বেআইনি তা সাময়িক উত্তেজনায় তাদেরকে অনেক দূরে নিয়ে এসেছে। প্রতিবাদ’ই হোক বা তাদেরকে বোঝানো হোক কোনকিছুই সেই মুহূর্তে তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং প্রতিবাদী অপদস্ত তো হবেই। আরো ভয়ংকর পরিণতি ঘটতে পারে।
সমস্যাটা কিন্তু প্রতিবাদ নয়। ধরে নিলাম প্রতিবাদে বা হিতজ্ঞান প্রদানে ওই দলটি বুঝল। কিন্তু আরো অন্যান্য কোন স্থানে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। কেননা তারপর দিন ছিল ছাত্রসংগঠনটির প্রতিষ্ঠা দিবসের মিটিং। সকল ট্রেনেই সংগঠনের ছাত্রছাত্রী থাকবেই ধরে নেওয়া যায়। কত অংশকে এইভাবে জ্ঞানবাক্য, উপদেশ দিয়ে এই অত্যাচার থেকে নিরসন করা যাবে? প্রয়োজন- তাদের জন্য জনগণের সার্বিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এই বার্তা সার্বিকভাবে সংগঠনের উর্ধতন নেতা নেত্রীর কাছে পৌঁছানো এবং সাধারণ মানুষকে পীড়ায় ফেলে সেরকম পরিস্থিতি যাতে আগামীতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করা।
Students Strengths and Weakness –
এতদূর পর্যন্ত পড়ে পাঠকগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন না, যে সমগ্র ছাত্র-ছাত্রীকেই বা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সেনানীদের একই গোত্রে ফেলা হচ্ছে। সমাজ সংস্কার ও গঠনে ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র ছাত্রীদের ভূমিকা কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কিছু অংশ তাদের অজ্ঞানতার জন্যই হোক বা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে আন্দোলনের অভিমুখকে পরিবর্তন করছে বা করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই বার্তা সকলের সামনে তুলে ধরাই হলো এই লেখার উদ্দেশ্য।
ঐ অবভ্য আচরণের ক্ষতির দিক- ক্ষতির ক্ষেত্রগুলিকে মূলত তিনটি বিভাগে বিভক্ত করলে সুবিধা হবে। যথা-
১. ছাত্রছাত্রীদের নিজের ক্ষতি | Students Strengths and Weakness–
এটি ব্যক্তিগত ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত। বিগত ছাত্র আন্দোলনের ধারায় বদল বর্তমান ছাত্রদের মূল্যবোধের অবমূল্যায়ন স্বীকার্য। নিজেদের উদ্দাম আনন্দ অপরকেও আনন্দ না দিলেও পীড়া দিতে পারে এসব অবকাশই না রাখা এক প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালিদাস ডালে বসেছিলেন সেই ডাল কেটেছিলেন। পরে তিনি মহাজ্ঞানী, মহাকবি হয়েছিলেন। এই ঘটনা সূত্রাকারে বর্তমান সংগঠনের ছাত্ররা মেনে নিচ্ছে। নিজের বসা ডাল কাটতে শুরু করেছে। ভাবছে মহাজ্ঞানী হবে।
এটাও বলা যেতে পারে তাদেরকে ডালটিকে কেউ কাটতে বলছে কি’না দেখা প্রয়োজন। ছাত্র সংগঠন থেকে পরবর্তী পর্যায়ে মূল রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য কর্মী বা ক্যাডার প্রয়োজন। সেই ক্যাডার তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে দিকে ছাত্র সংগঠনের সেনানী এবং দু-একজন বাদ দিলে বাকি সকলেই যে ক্যাডার’ই থেকে যাবে এ ধারণা ছাত্রদের মধ্যে নেই। দুমুঠো পাওয়ার অভিলাসে বিশ্বাসী এ ধরনের ছাত্ররা বড় কিছু যে পেতে পারতো সে ভাবনার অবকাশ দেওয়া হয় না বা দিতে দেওয়া হয় না উচ্চ শ্রেণীর নেতাদের দ্বারা। তারা জানেই না হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ঝাঁপ দিতে যায় আগুনে।
ছাত্রদের দ্বারা ছোট ছোট অপরাধ মূলক কাজের হাতে খড়ি দেওয়া হচ্ছে। ছাত্ররা বুঝতেই পারছেন না। আজ ট্রেনের কামরায় দৌড়াত্ব, সিগারেট, গাঁজা সেবন দিয়ে শুরু আগামীতে এর থেকে অনেক বেশি অপরাধ অন্যায় করানো হবে। ছাত্ররা কি জানেন? অন্যায় অপরাধে অপরাধী সাবস্ত হলে কেউ তে পাশে দাঁড়াবে না, বর্তমান বিভিন্ন দোষে অভিযুক্ত রাজনৈতিক লোকদের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। যে কোন দলই বলে তারা অপরাধীদের স্থান নেয় না। কিন্তু যা কিছু অপরাধ তাকে দিয়ে করিয়ে নেয়। নিংড়ে নেয় সেই কর্মীর রক্ত রস। তারপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যই একথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন।
মা-বাবা দাদা দিদি ভাই বোনদের মুখ সামনে রেখে ন্যায় অন্যায় কাজকে সনাক্ত করে তারপর এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। নিজে তো অন্যায় করবে না, অপরেও অন্যায়ের কাছ থেকে নিরস্ত করা প্রয়োজন। ক্ষতি কোন রাজনৈতিক দলের তুলনায় নিজের ব্যক্তিগত পারিবারিক। রাজনৈতিক দল ক্ষতি পুষিয়ে নেয় সে কোনভাবে। কিন্তু ব্যক্তিগত পারিবারিক ক্ষতির ক্ষত কেউ পূরণ করবে না। রাজনৈতিক দলগুলি তোমার প্রয়োজনে বা জনগণের প্রয়োজন তোমাদের ব্যবহার করেনা। তারা ছাত্রদের ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনে। তাদের কাছে ছাত্রদের প্রয়োজন ফুরোলে ছিবড়ে হয়ে পড়ে থাকে। আর সে সময়ে ওই একক একাকী ছাত্রের বদনাম বা দুর্নাম সারা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। সমাজও তাকে সুনজরে দেখেনা। সমাজে স্থান হবে না।
২. রাজনৈতিক দলেরও ক্ষতি–
যে মূল রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ছাত্রসংগঠনের কিয়দংশ অভব্য আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে সাধারণ হিসেবে আমি যেমন পীড়িত সেরকম অন্যান জনগণও যে আনন্দিত তা বলা যায় কি? তারা নীরব বা চুপ ছিল বলেই মেনে নিয়েছেন, এমন হতে পারে না। একটি অংশের ওই আচরণের জন্য তার প্রভাব সমগ্র ছাত্র সংগঠন এবং তার সাথে মূল্য রাজনৈতিক দলটির উপর পড়ছে। মানুষ বীতশ্রদ্ধ, শঙ্কিত। যদি এরা দেশের কান্ডারী হয় তাহলে ছোট অনীতি অনিয়ম অপরাধের বহর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবলে শিহরিত হতে হয়। অনেকেই জানেন এবং মানেন যে ছাত্রছাত্রীরা শিকার হচ্ছে।
উর্ধতন কর্তৃপক্ষ মোটিভেশনের নামে ভুল পথে চালিত করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের। ছাত্র-ছাত্রীরা সাময়িক উত্তেজনায় সাময়িক লাভের আশায় ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে নিক্ষেত করছে। এ কারণে জনগণ ভেতরে ভেতরে মূল রাজনৈতিক দলের প্রতি অনাস্থা আনছে। তাই সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আবেদন নিচু স্তরে যদি ছাত্র বা দলের কর্মীদের দ্বারা এ ধরনের আচরণ যা সাধারণ মানুষকে বিব্রত করে, বিরক্ত করে, অত্যাচার করে তা নজর রাখা অআবশ্যক। নইলে দলগুলির ভবিষ্যৎ সংকট কেউ আটকাতে পারবেনা।
৩. সার্বিক ক্ষতি | e.g- Student Protest Against Offline Exam
অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার দুর্নীতি ধীরে ধীরে গ্রাস করছে সমাজকে। সমাজ থেকে পুরো রাজ্য ও দেশ। এই অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে ছাত্র স্বার্থ সমাজ ও দেশের স্বার্থের জন্য ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও জন্ম। আজ তার অর্থ পাল্টে দিয়েছে। অন্যায় দুর্নীতির প্রতিবাদ নিচু তলা থেকে উপর মহলে গিয়ে অবসান হতো। আজ অন্যায় দুর্নীতি উপরমহল থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যার ফলাফল ছাত্র সংগঠনের মধ্য দেখতে পাচ্ছি। অন্যায় ভাবে অফলাইন পরীক্ষার বিরুদ্ধে অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে আন্দোলনে(student protest against offline exam and in favour of online examination) শামিল হওয়াও আরেক উদাহরণ।
নেতাদের অন্যায় কাজ ও দুর্নীতিতে ওপর তলার সাফাই এবং ট্রেন্ড যেভাবে আমাদের গ্রাস করছে তাতে পাড়া প্রতিবেশী রাজনৈতিক ছোট দাদা দিদিদের অন্যায় দুর্নীতির অত্যাচারের প্রতিবাদে কিছু কাজ হবে বলে মনে হয় না। জোর যার মুলুক তার সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এ ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে, আগামীতে ঘটবে ব্যাপকভাবে একে অপরের প্রতি ঘৃণা, সেখান থেকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ঝগড়া মারামারি অরাজকতা বৃদ্ধি পাওয়া অমূলক নয়।
মুক্তির উপায়- প্রথমে জানা প্রয়োজন কে কি চাইছেন। রাজনৈতিক নেতা ও দলের কর্মীরা কি চান মোটামুটি সেটা জানা গেল। তবুও বলি সমস্যা তৈরি করা ও জিইয়ে রাখা তাদের একমাত্র প্রধান উদ্দেশ্য। এখন আপনি যদি তাদের মতাদর্শ মেনে চলেন তাহলে আপনি অবশ্যই নিজে এবং আপনার পরিবার এবং ছেলে মেয়েদের সেভাবেই পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন। এমন পরিবার থাকতে পারে। তবে সংখ্যায় কম।
সার্বিকভাবে বেশিরভাগ মানুষজন অন্যায় করেন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না, দুর্নীতি করেন না, দুর্নীতি প্রশ্রয় দেন না। আবার এটাও ঠিক আমাদের দিয়ে ছোট ছোট অন্যায় ও দুর্নীতি করিয়ে নেন কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রীরা। আমরা বুঝতে পারি না। অথবা সাময়িক ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য আমরা মেনে নিতে বাধ্য হই। সেই ক্ষুদ্র স্বার্থকে এগিয়ে গেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম সেটা ভাবনাতেই আসেনা।
সম্পূর্ণ না জানলেও ন্যূনতম রাজনৈতিক অভিসন্ধি সম্পর্কে একটু সজাগ থাকা প্রয়োজন। অনেকেই বলেন আমি রাজনীতি করি না, রাজনীতি বুঝিনা। কিন্তু ভোট দিতে যান, যা রাজনীতিরই অংশ বিশেষ। আর না জানা বা ন্যূনতম রাজনৈতিক অজ্ঞানতাই রাজনৈতিক দলগুলি লাভের অংক মোটা করছে। আপনি আপনারই মাত্র এক আনা পাচ্ছেন আর বাকি পনেরো আনা নিচ্ছে তারা। এই অজ্ঞানতার দূর করার জন্য যাকে প্রয়োজন তাহলে আপনার ছেলে মেয়ে। তারা বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী। তারাই পারবে তার এবং আপনার অর্থাৎ পরিবারের লাভ লোকসানের হিসাব ঠিকমতো কষতে। তারাই সচেতন হয়ে এই অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে উজ্জ্বল আলোর স্বর্গরাজ্যে।
কিন্তু সেই ছাত্রছাত্রীরা যদি স্বীকার হন ভুল রাজনীতিতে, তাহলে তাকে সামলাবে কে? এখানে আসে আপনার ভূমিকা। আপনি হয়তো রাজনীতিতে নেই, তার অর্থ এই নয় যে আপনি অন্যায়কে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন। নিজে যেমন অন্যায় দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না, তেমনি আপনার সন্তানও যেন সমাজে অহিতকর কাজকর্মকে প্রশ্রয় না দেয় বা তার থেকে দূরে থাকে তার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে।
সুস্থ সুস্থিত সুশীল মানসিকতার চারা পরিবারের রোপন হওয়ার সাথে সাথে আছে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের স্তর এবং তার সাথে শিক্ষকদের ভূমিকা। ভালো মন্দের বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার প্রকৃত কোন সূত্রাবলী নেই। কিন্তু সাময়িক সুদূরপ্রসারী লাভ ক্ষতির হিসাবটি একটু সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করলে অনায়াসে উত্তর পাওয়া যায়।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে-
আপনার সন্তানদের উপর বসে নজর রাখুন। তারা ছাত্র আন্দোলন করুক। ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিক। কিন্তু প্রকৃতভাবেই সেই আন্দোলনের উদ্দেশ্যকে যাচাই করুন এবং সে উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তাদের আচরণকেও সনাক্ত করুন। প্রকৃতই সেই আচরণ সমগ্র জনসমাজের সার্বিকভাবে কোন হিত হচ্ছে? না’কি কেবল বিরক্তিকর অভব্য আচরণে জনসাধারণ প্রকৃতই বিরক্ত এবং অসুস্থ বোধ করছে। সন্তানদের অবিশ্বাস মোটেই সুখকর নয়। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসও হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনাকে প্রসারিত করে।
আর ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে-
যদি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে জ্ঞানত ও অন্যায়ভাবে বিরক্ত অপদস্ত করে থাকো, তাহলে বলব ওই ব্যক্তিবর্গের জায়গায় নিজের মা বাবা আত্মীয়-স্বজনকে বসাও। তাহলে বুঝতে পারবে তোমাদের কাজটি সঠিক, না বেঠিক। সময় পেরিয়ে যায়নি। লাভ তোমাদেরই হবে।
মন্তব্যের আশায় রইলাম। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন-
কাজের সময়সীমা ও শ্রমিক অধিকার।