লজ্জাজনক কিছু সামাজিক আচরণ(Social Behavior and Social Evil in India at public place)- সভ্য জাতিকে সাংঘাতিকভাবে বিব্রত করে। জনবহুল স্থানের চিত্রগুলি(Public Place Images) লজ্জাজনক ও কু-আচরণ(shaming Social Behavior Social Evil in India) সত্যিই ভীষণ বিব্রত করে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে খুবই সাধারণ আচরণ। কিন্তু গভীরে বিশ্লেষণ করলে সহজে বোঝা যায়, জাতির পক্ষে, মানবিকতার ক্ষেত্রে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিভাবে তার প্রভাব ফেলে। ভদ্র সভ্য শালীন আচরন পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ জাতির শিরোপা অর্জন করতে পারে।
আসুন দেখা যাক কি সেই আচরণ বা ব্যবহার(Social Behavior and Social Evil) যা অনভিপ্রেত। আচরনগুলোর পরিবর্তে আমরা আশা করব ভিন্ন এক বিপরীত আচরণ। সামাজিক মানবজাতিকে অন্য এক ভিন্ন ধরনের মাত্রা দেবে।
১. ট্রাফিক সিগনালে হর্ন বাজানো(Social Behavior before the Traffic Signal)-
আপনারা অনেকেই লক্ষ্য করেছেন ট্রাফিক সিগন্যাল লাল হয়ে আছে। গাড়ির পর গাড়িি, দীর্ঘ লম্বা লাইন। ভীষণ গরম। শরীরে প্রচন্ড ঘাম। লালবাতি। সবুজতো দূরের কথা, হলুদই হচ্ছে না। বিরক্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে সকলেই যাপন করছে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এই মুহূর্তে পেছনের গাড়ির লোক দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। আপনি তার আগে আছেন। পেছনে আরো অনেক গাড়ি। জ্ঞানশুন্য হয়ে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানহীন মানুষ জন।
আপনারা ভাবছেন ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে লাল বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। রেল ক্রসিংয়ের ট্রাফিকম্যান ইচ্ছাকৃতভাবেই রাস্তা অবরোধ করে আছে। হতে পারে এগুলো সবই সত্যি। যদি এরকম কিছু হয় তাহলে কতক্ষণ বাজানো উচিত বলে আপনার মনে হয়?
আপনি হয়তো রোগী নিয়ে যাচ্ছেন। এম্বুলেন্স পেছনে সমস্ত গাড়ির হর্ন একসাথে বেজে উঠল। রোগীর অবস্থা কেমন হবে চিন্তা করুন।
যে রেলক্রসিংয়ে প্রতিদিন সকল সময়ই প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করে। অন্যদিকে রেলগাড়ি সংখ্যাও খুব। তাহলে আপনাদের প্রশ্ন- এই হর্ন বাজানো আচরণের পরিবর্তে ফ্লাইওভার করার জন্য আন্দোলনের ঢেউ তোলা উচিত নয় কি?
তাছাড়া যেখানে কোন ট্রাফিক নেই। উৎসব অনুষ্ঠানের ভীড়ে জন্য হয়তো বাজারে একটু যানজট তৈরি হয়েছে। দেখবেন আপনার সামনে গাড়ির লাইন পেছনেও গাজীর সারি। ওর মধ্যেও আপনার পিছনের জন আপনার পিছনে অযথা হর্ন বাজিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। পেছনে হর্ন দিচ্ছে। তবুও অযাচিত বিরক্তি আর বিরামহীন ভাবে বেজে চলেছে।
আসলে এগুলো তো সামাজিক আচরণের(Social Behavior) মধ্যে পরেই না, বরং বদ আচরণ বা অভদ্র আচরণ(Social Evil) বললে কম বলা হবে। একটা জাতির সভ্যতার উন্নতির পেছনে একটা বিরাট বাধা। এ আচরণ অসভ্য ইতর জাতির তালিকায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার পক্ষে এটাই যথেষ্ট।
২. পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া(Another Un- Social Behavior is Smoking in Public Place) –
চলন্ত বাস বা ট্রেন বা স্টেশনে খোলা জায়গায় এখন আর সিগারেট পান করতে খুব একটা কাউকে দেখা যায় না। কিন্তু ট্রেনের টয়লেটে ধূমপান এখনও চলছে। উনি দেখিয়ে পান করছেন না ঠিকই। কিন্তু পানের পর আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না বলা যায় কি?
বাসে ধুম্রপান কমেছে এটাও বলা যায়। কিন্তু 100% বন্ধ হয়েছে বলা যায় না। এখনো বিভিন্ন রুটের বাসে কিছু বিবেকহীন, জ্ঞানহীন মানুষজন ধূমপানে নিষেধ করলে বলে- সে নিজের টাকায় পান করছে। কিন্তু প্রশ্নটা সেটা নয়। সে নিজের টাকায় পান করে ঠিকই। কিন্তু তার নিজের টাকায় অন্যরা কেন শরীরে বিষ পান করবেন?
যারা ধূমপান করেন তারা হয়তো আমার এই লেখার প্রতি বিরক্ত হবেন। কি বুঝবেন জানিনা। তবে ভাবুন আপনার আত্মীয়-স্বজন ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ জীবনযাপন নিয়ে। আপনার জাতি নিয়ে, আপনার সমাজ দেশ নিয়ে।
প্রশ্ন বাসে বা খোলা জায়গায় বিশেষ করে বাসের ভিতর ধূমপান করার প্রতিবাদে ধূমপায়ী বলে যে, নিজের গাড়িতে যাওয়া আসা করতে। আরে ভাই তুমি তো তোমার নিজস্ব গাড়িতে যাওয়া-আসা করতে পারো। নিজস্ব গাড়ি, নিজস্ব লোকজন, যতখুশি ধূমপান করতে পারো। সাধারণ মানুষকে কেন বিপদের মুখে ফেলছ?
এসমস্ত মানুষজনকে সভ্য জাতি হিসেবে গণ্য কে করবে? পোশাকে যাদের অতি ভদ্র সভ্য হিসাবের বাইরে থেকে চিহ্নিত করা হয়, দেখেছি তারা এই ইতর আচরণগুলো(social evil) করে থাকে সবচেয়ে বেশী। অপেক্ষারত নিরক্ষর বা নিম্ন অস্বচ্ছল পরিবারের মানুষজনকে বললেই তারা সঙ্গে সঙ্গে ধূমপানের আচরণ থেকে তৎক্ষণাৎ নিজেকে মুক্ত করে।
সমস্যা হলো হিরোইজম চরিত্রগুলোকে নিয়ে। ভেতরে ভেতরে বোঝে সে ভুল করছে, শুধু ভুল করছে নয় বরং অন্যায় করছে। তবুও হিরোইজম সোঅফ করার জন্য নিজেকে নিজের অন্যায় আচরণ থেকে কিছুতেই সরে আসার পক্ষপাতী নয়।
বন্ধুরা, মধুর আচরণ ব্যবহার জীবনযাপন শুধু আপনি নয়, আপনার জাতিকে এক শ্রেষ্ঠ স্থানে পৌঁছে দেবে। আগামীর উত্তরাধিকারীরা যাকে নিয়ে গর্ব করবে, ধন্য হবে।
ক্ষমা করবেন। আপনি যদি এরকম অন্যায় আচরণ করে থাকেন- ঠিক এই মুহূর্তে বিরত হোন।
৩. বাইরে থেকে বাসে ট্রেনে সিট রাখা(Social Behavior in keeping Seats in a bus or train)
বাসস্ট্যান্ডে বাস স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই কিছু কিছু ছাত্রী রুমাল বা ব্যাগ জানালা গলিয়ে সিট রাখেন। এ যেন জন্মগত যাত্রী অধিকার। এও এক ধরনের সামাজিক অপরাধ মূলক আচরণ(social evil)। বাস, ট্রেনের ভেতরে হয়তো অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছেন এমন যাত্রী, তিনি আর সিট পেলেন না। তাকে পুনরায় বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হল।
আচ্ছা যারা বাইরে থেকে এভাবে সিট রাখেন, তাদের মনে কোনো রকম নীতিবোধ জাগেনা? একবারও ভাবেন না যে এটা ভুল, অন্যায়। একবার অন্তত দীর্ঘক্ষন গাড়ির ভেতরে দীর্ঘ পথে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী হয়ে চিন্তা করুন। নিজেকে ওই যাত্রীর জায়গায় বসান, অন্তত একবারের জন্য।
তবে এই আচরন কিন্তু সব রুট বা স্থানের যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশেষ করে বর্তমানে দুর্গাপুর, আসানসোল, বর্ধমান কলকাতার ইত্যাদির মতো জায়গায় এক সিস্টেমে যাত্রী যাতায়াত করে। ওখানে কিন্তু ভুল বা অন্যায় আচরণ করলে তৎক্ষণাৎ অন্যান্য যাত্রীরা একজোট হয়ে ভুল বা অন্যায় কারী যাত্রীকে ভুল বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত করেন।
কিন্তু আমি দেখেছি বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমানের কিছু বাস স্ট্যান্ড, বা স্টেশন এখনো বাইরে থেকে সিট রাখা যাত্রীদের অতীত ঐতিহ্য। হ্যাঁ ফাঁকা বাস ট্রেন থাকলে আলাদা কথা। তবুও বলবো গাড়ীতে উঠে ফাঁকা জায়গা দেখে বসা উচিত।
৪. লাইনে না দাঁড়ানো(Not standing in a queue is really UN- Social behavior)-
অটো ধরার জন্য অটো স্ট্যান্ডের লাইনে দাঁড়ানো বাঞ্ছনীয়। আবার এটিএম এ টাকা তোলার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ভদ্রতা। সবসময় অটো বাসস্ট্যান্ডে বা এ টি এম-এ পুলিশ বা গার্ড থাকে না। তাই এই সভ্য কাঙ্খিত আচরণকে অনাকাঙ্ক্ষিত করার লক্ষ্যে কিছু কিছু যাত্রি বা গ্রাহক বেশ পারদর্শী। তারা অন্যান্য ভদ্র সুশীল মানুষদের মধ্যে নিজেকে বিপরীতমুখী যাত্রায় বেশ আনন্দিত ও তৃপ্ত পান বলে মনে হয়। এরা কখনোই অসভ্য সুশীল নাগরিক মানুষের স্থানে নিজেকে বসায় না বা বসাতে চায়ও না। মনে করে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তারা ভীতু কাপুরুষ।
ভাই এরকম ভাবার কোন কারণ নেই। ভদ্রতা সভ্যতা কিন্তু দুর্বলতা প্রকাশ নয়। জানো তোমার অসভ্য অভদ্র আচরণের জন্য আজ বাংলা তথা ভারত বর্ষ সারা পৃথিবীর কাছে এখন উন্নত নয়। তুমি নিজের কথা চিন্তা না করে গোটা সমাজের কথা চিন্তা করো। হ্যাঁ হয়তো বা তুমি রোগীর জন্য লাইনে বেশিক্ষণ জানাতে পারবে না। সেটা অন্য জরুরী বিষয়। তোমাকে শীঘ্র পরিষেবা দেবার জন্য সকলের সাহায্য করবে। কেননা বিবেকহীন মানুষের থেকে বিবেকি বিচক্ষণ মানুষের সংখ্যাই কিমি. নয়।
আর যারা সভ্য সুশীল হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের বলি কামড় না দিলেও হবে, অন্তত ফোঁস করুন।
রেসন লাইনে বা জলের লাইনেও এরকম অনেক মানুষ আছে। তাদের সময়ের দাম আছে। অন্যদের নেই। তাই তাদের লাইন ভেঙ্গে আগেই রেশন বা জল নিতে হবে।
বাধ্য হয়েই একটা অশান্তি, একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরী করে। অন্যান্য জাতির যেটা দেখে শুধু হাঁসাহাঁসি নয় বরং একটা অহিতকর করুণা তৈরি করে। আর সেটাই আমাদের উন্নতির পথে বিরাট পাথরের মতো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
৫.আপ-ডাউন লেন না মেনে গাড়ি চালানো(Driving on Wrong Lane)-
গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে দেখা যায়- আপ- ডাউন লেন ডিভাইডার দিয়ে আলাদা করা আছে। তাহলে নির্দিষ্ট লেন মেনেই গাড়ি চালানো উচিত। কিন্তু একটা অতি ভয়ানক প্রবৃত্তি হলো শর্টকাট করা। শর্টকাট করে সময় বাঁচিয়ে অতি তাড়াহুড়ো করে লক্ষ্যে পৌঁছানো। তাকে হয়তো 100-200 মিটার বা অনেক ক্ষেত্রে 500 মিটার ঘুরে যেতে হতে পারে তার নির্দিস্ট লেনে ওঠার জন্য। সে ওইটুকু রাস্তা আর নির্দিষ্ট লেনে না গিয়ে উল্টো দিকের লেনে গিয়ে নিজেকে তো বিপদে ফেলে। পক্ষান্তরে যিনি সঠিক লেন ধরে নির্দ্বিধায় যান তাকেও বিপদে ফেলে।
ভাই বন্ধুরা, সঠিক অনির্দিষ্টকাল ধরে গাড়ি চালান। নিজেকে বাঁচান, অন্যকে বাঁচতে দিন। সভ্য জাতির লোকেরা কখনোই এরকম আচরণ করে না। ট্রাফিক পুলিশ নেই বলেই আপনি আইন ভঙ্গ করে ভুল লেনে যাবেন তা তো নয়। আইন কেবল পুলিশ মানতে বাধ্য করাবে। সবকিছু পুলিশের উপর ছেড়ে দেবেন। নিজের আচরণ ব্যবহার ঠিক করলে এত আইন তৈরি করার প্রয়োজন কেন হবে? আপনি হয়তো বলবেন নেতা-মন্ত্রীরা আইন মানে? আমি বলব- ঠিক বলেছেন। তবে অন্যত্র এই নিয়ে আলোচনা করব। আজ আপনি নিজেকে শোধরান। নিজে ভালো হোন। আচরণ সভ্য করুন। আপনার আচরণই কিন্তু আপনার শিশুটি দেখছে। অনুসরণ করবে অনুকরণের মাধ্যমে।
সকলের কাছে আমার মিনতি- অন্য কেউ অন্যায় বা ভুল করছে বলে নিজেকে সে আচরণে অভ্যস্ত করবেন না। পারলে তা যে ভুল বা অন্যরা করছে, তাকে তার ভুলটা ধরিয়ে দিন। সহযাত্রী বন্ধুর মতো দেখুন- জাতির ভবিষ্যৎ পাল্টে যাবে।
আরো অনেক আচরণ আছে(Social Behavior or Social Evil)। আপনারাও এরকম আচরণ মন্তব্য বাক্সে লিখুন। যেগুলো একটা সভ্য সুশীল জনসমাজে থাকা মোটেই উচিত নয়, কাম্য নয। বিপরীতে বললে বোঝায় এই আচরণগুলো থাকলে একটা জনসমাজকে ভদ্র সুশীল বলতো কুণ্ঠা বোধ হয়।
আমার একান্ত অনুভূতি। আমার সাথে আপনাদের এই সংকটের সমাধানের পথে মতানৈক্য হতে পারে। কিন্তু কু-আচরণগুলো(social evil) কাম্য, কি কাম্য নয়, এ নিয়ে আলোচনা করাই যায়. মন্তব্য বাক্সে আপনাদের মন্তব্য কাম্য করছি। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন- বিশ্বপরিবেশ দিবস ২০২১ এর থিম।