Private school এর চাকচিক্য আমাদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। যেহেতু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার বিষয়, সেহেতু কোনো সমঝোতা নয়। স্বাধীনতার সাল তারিখ পিছনের দিকে সরে চলে, আমাদের স্বাধীনতার বয়স বাড়ছে, পরিণত হচ্ছে। ততোই সরকারি দ্রব্যের প্রতি আস্থা কমছে। আবার কখনও কখনও সরকারি পরিষেবা বেসরকারিকরণের ভার্চুয়াল প্রতিবাদ করছি। কখনো সরকারি পরিষেবার পক্ষে আবার কখনো সরকারি পরিষেবা থেকে বাইপাস করে বেসরকারিকরণের দিকে আমাদের দৃষ্টি।
শিক্ষার ক্ষেত্রে পারিবারিক সচ্ছলতা প্রাইভেট স্কুলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি অনেকটাই সহায়ক। Private School Portal খুলে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা তার ভালো-মন্দ গুলি লিপিবদ্ধ করি। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি মোহ ও প্রতিযোগিতার বাজারের দিকে ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা। প্রশ্ন জাগে কার প্রতি অবিশ্বাস? কার প্রতি ভরসা নেই? কোথায় আস্থার নির্ভরযোগ্য কঠোরতা? আমাদের জানা নেই।
But Why Private School | কেন বেসরকারি বিদ্যালয়?-
শিক্ষা নামক বিমুর্ত আচরণ পরিবর্তনকারী পদ্ধতির মধ্যে ছেলে মেয়েদের নিমজ্জন। সেখান থেকে মূল্যবান সামাজিক-রাজনৈতিক দর্শনগত ইত্যাদি ভাবধারা মণিরত্ন আহরণের জন্য সারা পৃথিবীর মধ্যে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি শিক্ষা। অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি আমাদের সেরকম কোন আগ্রহ থাকে না, যতনা প্রতিষ্ঠানগত শিক্ষার প্রতি আছে। আমরা সারাজীবনই পরিবেশ থেকে কিছু না কিছু শিখি। জীবনের অভিজ্ঞতা জীবনকে সাজায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে বয়সটা পেরিয়ে গেলে তারপরে শিক্ষা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় অর্থহীন। তাইতো খুঁজি উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
3 বছর বয়সের শিশুর জন্য মা-বাবার চিন্তার অন্ত থাকে না। কোথায় হবে ভর্তি? সেটা কি প্রাইভেট স্কুল?, না’কি গভমেন্ট?, বাড়ির কাছাকাছি? না বাড়ি থেকে দূরে? এরকম হাজারো প্রশ্ন।
Position in Mind of Government School | সরকারি স্কুলের অবস্থা-
ভারতের মতো দেশের বর্তমান নাগরিকদের কাছ থেকে গভমেন্ট স্কুল অর্থেই মিড-ডে-মিল স্কুল। এর কোন বিকল্প নেই। পড়াশোনা হয়? সবই খিচুড়ি আর ডাল তরকারি ছোড়াছুড়ি। এর বেশি বিশ্লেষণ আছে। কিন্তু প্রকাশ করা মুশকিল।
মানুষের ধারণা সরকারি স্কুলে পড়াশোনা হয় না। শিক্ষকরা পড়ান না। যেহেতু গভমেন্ট শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা বিস্তর, পড়াশোনা পড়ানো না পড়ানোতে কিছু যায় আসে না। মাসের শেষে মাইনে ঠিক ব্যাংকে ঢুকে যায়।
Medium of Government School | সরকারি বিদ্যালয়ের পড়ানোর মাধ্যম-
গ্রামবাংলা ও মফস্বলের স্কুল গুলির বেশিরভাগই স্থানীয় মাতৃভাষায় পড়াশোনা হয়। যেখানে সারা দেশে সরকারি কাজকর্ম ইংরেজিতে, সেখানে সরকারি স্কুলে পড়াশোনা ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের পথে। স্বভাবতই সচ্ছল অভিভাবকরা কখনোই গভমেন্ট স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে চান না।
তাছাড়া ইংরেজি ভাষার মধ্যে কেমন যেন একটা চমক আছে। বেশি স্মার্ট ভাষা। তাই ছেলেমেয়েরাও স্মার্ট হবে বলে অবিভাবকদের ধারণা।
Syllabus of Government School | সরকারি বিদ্যালয় পাঠক্রম-
গভমেন্ট স্কুলের সিলেবাস সময় উপযোগী নয় বলে অনেকেই মনে করেন। এই সিলেবাসে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার অসুবিধায় পড়তে পারে। তাই আগে থেকেই Private School এর শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন। যদিও প্রাইভেট স্কুল গুলোকে গভমেন্টের নির্দিষ্ট করে দেওয়া একই সিলেবাস অনুযায়ী চলতে হয়। যেমন NPE- 2020 তে যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে তা সকলকেই মেনে চলতে হবে।
Free of Cost Education | অবৈতনিক শিক্ষা-
বিনামূল্যে পরিষেবার প্রতি অনেক মানুষের আস্থা নেই- বিশেষ করে অবৈতনিক শিক্ষার প্রতি। তাদের ধারণা ফ্রী অফ কস্ট অর্থে শুধুই নিচু মানের পরিষেবা হতে বাধ্য। যে দ্রব্য ফ্রিতে পাওয়া যায় তার গুণগতমান খুবই নিম্নমানের। ঠিক এ কারণেই সরকারি উচ্চ শিক্ষায় প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। যেহেতু উচ্চশিক্ষায় অর্থ প্রদান করতে হয়, সেহেতু সে শিক্ষার মর্যাদা বেশি। যেমন ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্য কোনো সরকারি পেশাদার কোর্স।
অর্থাৎ বলা যেতে পারে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রতি বিরূপ মনোভাব আছে যেটা উচ্চশিক্ষায় সরকারি উচ্চ শিক্ষায় নেই।
Government School for the Poor Children | সরকারি বিদ্যালয় অর্থেই গরিবদের জন্য-
বিনামূল্যে শিক্ষা এবং সার্বজনীন শিক্ষা সরকারি নীতির এক বিশেষ অঙ্গ। সরকারি বিদ্যালয় অর্থেই বিনামূল্যে শিক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার সকলকে আহ্বান করে। বিশেষ করে যে সমস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা অন্য কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা পাওয়ার কোন সূর্য গ্রহন করতে পারেনা। সরকারি বিদ্যালয়ে তাদের জন্য অবারিত দ্বার। ভারতের 70 শতাংশ মানুষ অর্থনীতির যে অবস্থায় রয়েছে তাতে তাদের পক্ষে শিক্ষার জন্য খরচ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। অথচ 70% জনগণ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সরকার গঠন করে। সরকারের দায়িত্ব নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় তাদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া। স্বভাবতই সচ্ছল উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা কখনোই সরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী নয়। তাদের মনে একটাই ধারণা বাসা বাঁধে সরকারি বিদ্যালয় অর্থেই তা গরীবদের বিদ্যালয়।
Leaders, Ministers, Government Employee and even Government School Teachers do not admit their Children in Government School | নেতা-মন্ত্রী থেকে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকরাও তাদের ছেলেমেয়েদের সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ান না-
এটা একেবারেই সত্য কথা- নেতা-মন্ত্রী সরকারি কর্মচারী রা তাদের ছেলেমেয়েদের বা নাতি-নাতনিদের সরকারি বিদ্যালয়ের ঘেঁষতে দেন না। কারণ হিসেবে বলা যায় এদেরও সরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি কোনো আস্থা নেই। এমনকি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারাও তাদের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয় পড়াশোনা করান না। এখানেও সেই আস্থা অনাস্থার প্রশ্ন এসে যায়। অর্থাৎ তারা নিজেরা কর্মে নিরাপত্তাসহ চাকরি করে যাবেন সেই প্রতিষ্ঠান, অথচ সেখানের সরকারি শিক্ষার প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই।
Others Cultural and Co-curricular Activity | অন্যান্য সামাজিক ও কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি-
অনেকের ধারণা সরকারি বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দিক গুলি সহ মানসিক সত্ত্বা গঠনের জন্য সরকারি বিদ্যালয় থেকে সেরকম কোনো শিক্ষা দেওয়া হয় না। তাছাড়া বিষয়গত শিক্ষা সহ কো কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির প্রতিও সেরকম গুরুত্ব প্রদান করা হয় না। তুলনায় বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে সময়োপযোগী যে ধরনের শিক্ষা পাওয়া উচিত তা সমস্তই কম বেশি পাওয়া যায়। তাই বেসরকারি বিদ্যালয় প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি।
Work Load of other Govt. works to the Teachers | সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষা প্রদানের তুলনায় অন্যান্য কাজকর্মের ভার-
সরকারি বিদ্যালয় শ্রেণীগত পঠন-পাঠন কো কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি এবং শরীরচর্চা কোন কিছুই সমানভাবে ক্রিয়াশীল নয়। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে উপকারী কাজকর্মগুলো ছাড়া সরকারি অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে শিক্ষকদের জড়িয়ে থাকতে হয়। বিশেষ করে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যাবলী, জনগণনা ইত্যাদি। তাছাড়া বিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রকল্প যেমন মিড-ডে-মিল, বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী প্রকল্পের কাজকর্মের চাপ বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষকদের বেশিরভাগ অংশই এ সমস্ত তথ্য আদান প্রদান সংক্রান্ত কর্মে নিযুক্ত থাকার কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য শিক্ষায় বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। তাই যাদের পক্ষে সম্ভব তারা তাদের ছেলেমেয়েদের কখনোই সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান না।
Local Politics | স্থানীয় রাজনীতি-
পশ্চিমবঙ্গের গভমেন্ট স্পনসর্ড, এডেড বিদ্যালয় বর্তমানে সরকার মনোনীত লোক জনরাই পরিচালন সমিতির অংশগ্রহণ করে। পরিচালন সমিতি সদস্য সভাপতি সরকার যে দলের সেই দলের হয়ে তাদের মনোভাব প্রকাশ করেন বলে অভিভাবকদের ধারণা। বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি রাজনৈতিক বাতাবরণে ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং সদস্যদের প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর পড়তে থাকে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের স্পনসর্ড, এডেড বিদ্যালয় পাঠানো বন্ধ করেন।
Lack of Disciplines | শৃঙ্খলার অভাব-
বর্তমানে স্পন্সরড, এডেড এবং অন্যান্য সরকারী বিদ্যালয়গুলো শৃঙ্খলাভাবে ছন্নছাড়া মত অবস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন একেবারেই বন্ধ। সত্যিই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর কোন ধরনের নির্যাতন করতে পারেন না। বিদ্যালয়ের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ অলিখিত পদ্ধতির প্রভাব বিস্তার করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও এই মানসিকতা পোষণ করে যে যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের শাসন করতে পারবেন না, তাদের মধ্যেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মানসিকতা জন্ম নেয়। এর থেকে মুক্তি পাবার জন্যই অন্যান্য অভিভাবকরা সরকারি বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করেন।
তাছাড়া অন্যান্য আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলো স্পনসর্ড এবং এডেড বিদ্যালয়গুলোকে মানের দিক দিয়ে অনেকটাই নিচে নামিয়ে এনেছে বলে অনেকে মনে করেন। বিপরীতে Private School গুলি যথেষ্ট সাবলীল এবং নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে মান উন্নয়নের চেষ্টা করে চলেছে।
Competition among Private Schools | বেসরকারি বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা-
সরকারি বিদ্যালয় গুলির মধ্যে সেরকম কোন শ্রেণীবিভাজন নেই। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি বিদ্যালয় গুলি মূলত চার ধরনের একটি হল পুরো সরকারি, দ্বিতীয়টি হলো স্পনসর্ড, তৃতীয়টি এডেড এবং চতুর্থটি হলো মহার্ঘ ভাতা প্রাপ্ত বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়গুলি সকলেই একই ছত্রছায়ায় অধিষ্ঠিত।
কিন্তু বেসরকারি বিদ্যালয় গুলি বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা দ্বারা পরিচালিত এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি কোম্পানির অধীনে থাকে। এজন্য তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিরাজ করে। প্রত্যেকেই চায় তাদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। যাতে তাদের বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। ফলস্বরূপ গুণগত মানোন্নয়নের ধারা প্রচলিত হয়ে থাকে। যেটা সরকারি বিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই সরকারি বিদ্যালয় তুলনায় বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি মানুষের ঝোঁক দিন দিন বেড়ে চলেছে।
বেসরকারি বিদ্যালয় শিক্ষা লাভ করলে বিশেষত স্কুল শিক্ষা, তাহলে উচ্চ শিক্ষার পক্ষে ওই ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকটাই সুবিধা হবে বলে অনেক অভিভাবক মনে করেন।
Symbol of Corporate | কর্পোরেট ছাপ-
সচ্ছল সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অভিভাবক, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট জগতের মানুষজন, নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে এক মানসিক প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। পাশাপাশি কোন প্রতিবেশী তার ছেলেমেয়েদের বেসরকারি বিদ্যালয় ভর্তি করলে তাদের মনেও এ ধারনা পোষন করে যে তাদের ছেলেমেয়ে হয়তো এগিয়ে যাবে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ছেলেমেয়েদেরও কর্পোরেট বিদ্যালয় ভর্তি করতে মনস্থ করেন। অগত্যা Private School।
মুঠো মূঠো টাকা, ঝা চকচকে শিক্ষা, স্কুল বিল্ডিং, ক্লাসরুম, চারপাশের পরিবেশ, শিক্ষক শিক্ষিকা, তাদের পোশাক, ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক, গায়ে রঙ, টিফিন বাক্স, খাবার- সবকিছুর মধ্যে কাচ লাগানো চকচকে কর্পোরেট ব্যাপার।
এবং সর্বোপরি শিক্ষাপদ্ধতি, টেকনিক, বইপত্র, খাতাপত্র আর অবশ্যই কনভারসেশন এবং মোড অফ এডুকেশন- অবশ্যই ইংরেজি। তবে কিছু কিছু প্রাইভেট স্কুল আছে, যাদের মিডিয়াম লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ। কিন্তু স্থানীয়রা মানেন সেখানের পড়াশোনা অন্তত সরকারি বিদ্যালয় থেকে ভালো। এ ধারনার প্রতি কোন অভিযোগ করা উচিত নয়। যে যার অভিজ্ঞতা থেকে বলে থাকেন।
Student Level User Private School Portal | বেসরকারি বিদ্যালয়ের পোর্টাল-
ডিজিটাল শিক্ষার কথা উঠলে অবশ্যই বেসরকারি বিদ্যালয় অনেকটাই অগ্রাধিকার পায়। যদিও সরকারি বিদ্যালয় গুলির অনেক পোর্টাল রয়েছে, কিন্তু সবগুলো এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। ছাত্রছাত্রীদের কাছ পর্যন্ত ইউজার লেবেল পৌঁছায়নি। আর এখনকার সময়ে মানুষের ডিজিটাল মাধ্যমের দিকে আকর্ষণ বেশি। যে কোন ধরনের তথ্য আদান প্রদানে ন্যূনতম ইমেল পরিসেবাও সরকারী বিদ্যালয় থেকে পাওয়া যায় না। যদিও ফোনের ব্যবহার হচ্ছে। তথাপি বেসরকারি বিদ্যাল্যগুলি পোর্টালের(Private School Portal) তাদের মাধ্যমে সমস্ত ধরনের সাধারণ যোগাযোগ করে থাকে।
Education During Lckdown | লকডাউন- এর পড়াশোনা-
লকডাউনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের পার্থক্য যথেষ্ট। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছেছেন। তাদের কাছে পৌঁছানোর বিভিন্ন মিডিয়া গুলো ছিল। বিশেষ করে প্রতিটি অভিভাবকের কাছেই অন্তত একটি করে মোবাইল ফোন। কারো কারো বাড়িতে আবার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপও রয়েছে। ন্যূনতম পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সেরকম গুরুতর কিছু অসুবিধা হয়নি।
পাশাপাশি গ্রাম এবং মফস্বলের সরকারি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া কোন মতেই সম্ভব ছিলনা। কোন কোন শিক্ষক শিক্ষিকা ব্যক্তিগত স্তর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌছাবার চেষ্টা করেছেন। যদিও প্রথম লকডাউনে(2020) লোকাল টিভি চ্যানেলে সামান্য হলেও পঠন পাঠনের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু 2021 এর লকডাউনে সেরকম সরকারি নির্দেশাবলীও নেই। আর ব্যক্তিগত স্তর থেকে উদ্দীপনাও যেন মন্থর হয়ে আসছে।
Government School is going to be PPP Model | সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষায় পি পি পি মডেল-
প্রথমে জানা যাক পি পি পি(PPP) সম্পূর্ণ নাম। পি পি পি(PPP) এর সম্পূর্ণ নাম হল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ(Public Private Partnership)। সম্পূর্ণ নাম দেখে একটা সাধারণ ধারণা করা যাচ্ছে। কোন একটি প্রতিষ্ঠান সরকারি এবং বেসরকারি সহায়তায় এবং লগ্নিকরণের মাধ্যমে গড়ে তোলা। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের শিক্ষায় পি পি পি মডেল অনুযায়ী একটি নির্দেশিকা ঘিরে পশ্চিমবঙ্গবাসীর মধ্যে শুরু হয়েছে মানসিক টানাপোড়েনের বাতাবরণ। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা কি সত্যি সত্যি বেসরকারিকরণ হয়ে যাচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা কি সত্যি সত্যি বেসরকারিকরণ হয়ে যাচ্ছে? সরকার এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে কঠোর মনোভাব নিয়ে পিপিপি মডেল চালু করার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভবিষ্যতে নেবে কি’না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। মাত্র একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সে দপ্তর থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে এর ভালমন্দের বিভিন্ন দিক গুলি খতিয়ে দেখে ভালো-মন্দের ফলাফল বিচার করে, অদূর ভবিষ্যতে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তার প্রাক-প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলা যেতে পারে।
সম্পূর্ণভাবে না হলেও শিক্ষায় পি পি পি মডেল অর্থাৎ বেসরকারি লগ্নির একটি ইঙ্গিত রয়েছে। সরকার বেসরকারি লগ্নিকারী সংস্থা এমনকি কোনো ব্যক্তিগত পর্যায়ের মানুষজন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষার জন্য লগ্নি করতে পারবেন। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে বেসরকারি বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের পদ্ধতিও। তবে সরকারি সমস্ত বিদ্যালয়ই এর আওতার মধ্যে আসবে না। কিছু কিছু বিদ্যালয়কে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামুলকভাবে পিপিপি মডেল- এর অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের মধ্যে রয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে আমরা তিন ধরনের বিদ্যালয় অস্তিত্ব দেখা যেতে পারে। যথা- 1. সম্পূর্ণ সরকারি, 2. সম্পূর্ণ বেসরকারী এবং 3. পি পি পি মডেল বিদ্যালয়।
যেহেতু বেসরকারি সংস্থা অথবা ব্যক্তিবর্গ বিদ্যালয়ে নিয়োগ করবেন স্বভাবতই তাদের একটাই লক্ষ্য থাকবে কিভাবে বিলগ্নির অর্থ সম্পূর্ণভাবে তাদের ভান্ডারে পুনরায় সঞ্চিত হয় এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ- এক মোটা অংকের নিয়মিত স্থায়ী লাভ। আর এখানেই আশঙ্কা। সরকারি বিদ্যালয় দেশের 90% ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা বিনা ব্যয়ে, কোথাও বা স্বল্প ব্যয়ে সরকারি শিক্ষার প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। সেই সমস্ত পরিবারগুলি সম্পূর্ণভাবে এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন। কেননা তাদের পক্ষে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ানোর সামর্থ্য একেবারেই নেই।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরাবরই কেন্দ্রের পি পি পি মডেল-এর বিরোধিতা করে এসেছে। অথচ দুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেই শিক্ষায় পি পি পি মডেল প্রয়োগ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পশ্চিমবঙ্গবাসীদের মধ্যে এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষায় পি পি পি মডেল- এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এবং রাজনৈতিক প্রতিবাদ মিটিং মিছিল শুরু হয়ে গেছে।
উপসংহার-
আমরা PPP Model ও NPE 2020-র দিকে চেয়ে রইলাম। আশা করি যে ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলনের চেষ্টা হচ্ছে, বিভিন্ন বিতর্ক থাকলেও আগামী দিনে সমস্ত স্তরের মানুষ সুফল পাবে কি, পাবে না তাই ভবিষ্যৎ বলবে। তবে এই মুহূর্তে আপনাদের মনের মধ্যে যে প্রশ্ন এবং ভালো-মন্দের মতামত তৈরি হয়েছে তা নিচের মন্তব্য বাক্সে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।