Malala Day 2022 আগামী 12 ই জুলাই। অনেকেই জানেন এ দিনটির গুরুত্ব। আবার অনেকেই এই দিনটি তো দূরের কথা, মালালা নামটার সাথেই পরিচিত নয়। আজ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টায় আছি। পুরো বিষয়টা পড়ুন- অনুরোধ রইল। না জানি পড়ার পর আপনার মনে সামান্য হলেও মানসিকতা পরিবর্তন হতে পারে, সামান্য অনুপ্রেরণা জাগবে। আমারও পরিশ্রম সার্থক হবে বলে আশা রাখি।
Malala Day 2022 সম্বন্ধে সাধারণ কিছু অতীত ইতিহাস।
From Which year Malala Day?
Malal Day আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার ও উদযাপন শুরু হয় 2013 সালের 12 ই জুলাই থেকে। এ বছরও মালালা দিবস 2022পালিত হতে চলেছে 12 জুলাই। মালালা ইউসুফজাই 2013 সালে এক বক্তৃতায় মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে UNO তে এক বক্তব্য রাখে- শিক্ষাই হলো প্রকৃত নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি। তখন UNO র জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন বান কি মুন। 2013 সালে মালালার জন্ম দিনে মাত্র 16 বছর বয়সে সারা বিশ্ব তার বক্তৃতায় মুগ্ধ হলো। তার যুদ্ধ শিক্ষাবিরোধী ভয়ানক মানসিকতার বিরুদ্ধে। শুধু তার নিজের দেশের শিক্ষাবঞ্চিত কিশোরীদের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বালিকাদের এক সুনিবীড় শীতল আস্থার পরশ।
এ বিষয়ে তার বক্তৃতা সারা বিশ্বের পোড় খাওয়া শিক্ষাবিদ, নেতা-নেত্রীদের মনের অনুপ্রেরণা। এক সাহসী অবলম্বন হয়ে উঠলো।
মালালা কে? কেন তার কথা আমরা চর্চা করব? Who is Malala?-
মেয়েটির নাম মালালা ইউসুফজায়। বাবার নাম জিয়াউদ্দিন ইউসুফযায়। মায়ের নাম তুর পিকাই ইউসুফজায়। মালালার জন্ম পাকিস্তানের মিনগোরা নামক স্থানে, যেটি পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকায় অবস্থিত। জন্ম 12 জুলাই 1997। সে হিসেবে বর্তমান বয়স 26 বছর।
সোয়াট ভ্যালি পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমানার কাছাকাছি একটি উপত্যকা, যে অঞ্চলটি তালিবানি শাসকদের প্রভাবে আতঙ্কিত। তালিবানরা খোলা আকাশের নিচে খোলাখুলি তাদের অত্যাচার, শাসন চালানোতে কোন দ্বিধা করে না। তালিবানদের নিষেধাজ্ঞার অন্যতম বিষয় নারীশিক্ষা বিরোধিতা। মহিলারা যাতে কোনরকম ভাবে শিক্ষা না পায়, স্কুল-কলেজ যেতে না পারে, সাধারণ শিক্ষা না পায়, তার জন্য যারপরনাই শাসন, অত্যাচার করতে কোনরকম দ্বিধা করে না। মালালা ইউসুফজায়ের মা কিন্তু নিরক্ষর ছিলেন। মালালা তার মাকে সাক্ষর করে। বর্তমানে তার মা পড়তে লিখতে এবং ইংরেজিতে সামান্য কথা বলতেও পারেন। এ সবই মালালার কারনে সম্ভব হয়েছে।
মালালার শিক্ষা | Education of Malala Yousafzai-
মালালা স্থানীয় বিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিল। বাড়ির পরিবেশ থেকে হোক বা সামাজিক পরিবেশের গভীরতম স্থান থেকে হোক বালিকা শিক্ষার প্রতি তার মানসিকতা জন্ম হতে থাকে। তালেবানি শাসন শিক্ষা থেকে সেই অঞ্চলকে ক্রমশ দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সকলেই স্বচক্ষে দেখতে পায়। অনুভব করে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
মালালার কণ্ঠ গর্জে ওঠে | Malala Raised her Voice
মালালা 2009 সাল থেকে ব্লগিং করতে শুরু করে (জানুন ব্লগ কাকে বলে)। তখন তার বয়স মাত্র 11 বছর। বিবিসির মতো বিখ্যাত জনপ্রিয় সাইটে ব্লগ লিখছে মালালা। আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না।
আরো আশ্চর্যের কথা। তার ব্লগিং এর বিষয়ে তালিবানিদের বিরুদ্ধে। তালিবানরা কেন মহিলাদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে তাদের বঞ্চিত করছে। শুধু তাই নয়, তালিবানি শাসনের যত রকম অন্ধকার দিক যা সাধারণ মানুষদের উন্নয়নের পথে বাধা স্বরূপ, তার সবকিছুই ছিল মালালার লেখার বিষয়। ওই বয়সেই মালালার হাতে উঠে এসেছিল ক্ষুরধার লেখনি। একজন পরিনত মানুষের পক্ষেও যে লেখা পরিণতি দিতে পারে না, তা মাত্র 11 বছর বয়সী একজন বালিকা, তাও আবার তালিবানি শাসন এর বিরুদ্ধাচরণ।
এক সাংঘাতিক সচেতনতা মালালা ওই বয়সেই অর্জন করেছিল। এ ব্যাপারে অবশ্যই তার পরিবার বিশেষ করে তার বাবা সবসময় তার সাথী হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা জরুরি প্রাথমিকভাবে মালালা বিবিসিতে ব্লগিং করত ছদ্ম নামে। তার ছদ্মনাম ছিল গুল মাকাই।
ধীরে ধীরে তার লেখার কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে। ক্রমশ তালিবানদের কাছেও পৌঁছে গেল তার লেখনী অস্ত্রের কথা। তাদের আর চুপ করে বসে থাকার কথা নয়। এলো সেই কালো ক্ষণ।
Militant Attacked at Malala-
মালালা তখন 15 বছরের কিশোরী। 9 অক্টোবর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা। বাসে তার বান্ধবীদের সাথে। বেশ আনন্দেই গল্প-গুজব করে চলেছে। হঠাৎ বন্দুকবাজ উঠেপড়ে বাসে। খোঁজ হচ্ছে মালালার। সনাক্তকরণ হওয়ার পরই চলে গুলি। মালালার কানের কাছে মাথায় লাগে গুলি। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ল সে। তার এক বান্ধবী আহত হলো। তবে মালালার মত এত জোরে তার সাংঘাতিক আঘাত লাগেনি।
মালালা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পেশোয়ারের এক মিলিটারি হাসপাতালে। সেখানে তার চিকিৎসা খুব একটা সুরাহা হয় না। মাথার খুলিতে আঘাত। কোমা অবস্থাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এক হাসপাতালে।
সেখানে অনেকগুলি সার্জারি করা হয় তার। ফেসিয়াল সার্জারিও চলে। ধীরে ধীরে মালালা সুস্থ হয়ে ওঠে। মালালা সেই মুহূর্তে সারা বিশ্বের কাছে এক কিংবদন্তি হয়ে ওঠে। সারা বিশ্বে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ভার্চুয়ালি মালালার আন্দোলন, তার মানসিকতা, সাহসিকতা, সিদ্ধান্তের পাশে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ দাঁড়ায়।
মালালা বার্মিংহামে 2013 সালের মার্চে একটি স্কুলে ভর্তি হয়। চলতে থাকে পড়াশোনা। ঠিক চার মাস পর অর্থাৎ জুলাই এ ডাক পড়ে ইউ. এন. ও.- তে। মালালা ইউ.এন.ও’র মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পায়। গোটা পৃথিবী আশ্চর্য হয়ে শুনলো সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত একেবারে অন্তরের বাসনা। তার উদ্দেশ্য কি? কিভাবে কাজ করতে চায়? কাদের জন্য কাজ করতে চায়? প্রকৃত শিক্ষা আসবে কোথা থেকে? মহিলা বালিকারা কেন বঞ্চিত? কিভাবে তাদের জন্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া যায়্? কোথায় ভয়? আদতে ভয় বলে কোন বিষয় আছে কিনা? ইত্যাদি। পৃথিবী তার সেই বক্তৃতা এখনো অবাক বিস্ময়ে অনেকেই শোনে।
Malala won various Prizes | মালালা যে সমস্ত পুরস্কারে ভূষিত-
মালালার প্রথম পুরস্কার 2011 সালে ইন্টার্নেশনাল children’s Peace. 2013 তে Shakharav price for freedom and thought in acknowledgement তার কাজের জন্য।
Malala won the Nobel Prize for peace | নোবেলজয়ী মালালা-
2014 সালে মাত্র 17 বছর বয়সে মালালা বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলো শান্তির জন্য।যৌথ নোবেল পুরস্কার অর্জন- অন্য একজন ব্যক্তি হলেন কৈলাস সত্যার্থী। কৈলাস সত্যার্থী একজন ভারতীয়। তিনি বাচ্চাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছেন ভারতসহ নানান দেশে। একজন অভিজ্ঞ কিংবদন্তি ব্যক্তি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন। ভারত গর্বিত। আমরা গর্বিত হলাম। সেই অর্থে মালালা ইউসুফজায় পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ। মাত্র 17 বছর বয়সে। আশ্চর্য তো হতেই হয়। শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। সাবাস মালালা সাবাস।
সমাজসেবী মালালা | Malala works for Society-
মালালা কাজ করে চলেছে। বিশ্রাম নেই। শুধু পাকিস্তান ও ভারতে আঞ্চলিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা পৃথিবীর কিশোরীরা তার দৃষ্টিতে। তাদের সামনে সে মসীহা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অসহায় শিক্ষাহীন অত্যাচারীতদের সমাজে নব সূর্যের আলো দেখাবে।
মালালা তহবিল | Malala Fund-
মালালা এজন্য 2013 সালে একটি ফান্ড তৈরি করে Malala Dund নামে। এত বড় আদর্শ সামনে রেখে কর্ম বাস্তবায়িত করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। কেবল সরকার বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপর সরাসরি মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে ভরসা পাওয়া যায় না। সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক বাস্তবে রূপ দিতে গেলে যে কোন উৎস থেকে অর্থ যোগার করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি, সাধারণ মানুষজন ফাণ্ডে সামর্থ্য অনুযায়ী অনুদানে মালালাকে সমর্থন জানালো তার আদর্শ, ভাবনাকে।
মালালা তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য | Main Objectives of Malala Fund-
মালালা ফান্ড তৈরীর প্রধান উদ্দেশ্য হলো 12 বছর বয়সি কিশোরীদের বিনা খরচে গুণগত, নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করা। অর্থাৎ কিশোরি ও তরুনীরা হলো মালালার প্রধান লক্ষ্য। যাদের মানসিক শিক্ষাগত সফলতার উন্নয়নের মহীরুহ রোপন করা মামলার অন্যতম উদ্দেশ্য।
2015 তে তৈরী হলো বিদ্যালয়, সে বিদ্যালয় তৈরি হলো সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের 14 থেকে 18 বছর বয়সী বালিকাদের জন্য। নিছক আঞ্চলিক বিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা নয়। এটি হলো গ্লোবাল স্কুল। পরবর্তীতে যে কোন দেশের কিশোরীরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারে।
বাড়ি ফেরা | Return to own Home in 2018-
2012 সালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দেশ ছাড়া, বাড়িছাড়া মালালা ইউসুফজায় 2018- তে সুযোগ হলো পাকিস্তানের ফেরার। নিজের দেশ, নিজের মাটি, নিজের বাড়ি। সকল মানুষের মনের মধ্যে স্বদেশের প্রতি থাকে এক আবেগি চান। মালালাও তার ব্যতিক্রম নয়। 29/3/2018 তারিখে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখার মুহূর্ত। মালালা বলেছে- সে দেশে অবশ্যই ফিরতে চায়। দেশকে সে খুবই ভালোবাসে।
Books written by Malala | মালালার লেখা বই-
এরইমধ্যে মালালা বেশ কিছু বই লিখে ফেলেছে। সারাবিশ্বে বইগুলির চাহিদাও রয়েছে। বিক্রিও প্রচুর। ঐটুকু মেয়ের লেখা বই, পাঠক মহলে কৌতুহল থাকে। তার লেখা কয়েকটি বই হল- ‘I am Malala'(2013), ‘Malala Magic Pencil'(2017), ‘We are Displaced'(2018)
বর্তমানে মালালা | Malala at Present-
মালালা 2017 সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় উচ্চ শিক্ষার জন্য। 2020তে দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ডিগ্ৰী শেষ করেছে। মালালা নিজস্ব টুইটাররে তা ব্যাখ্যাও করেছে 19/ 6/2020। মার্চ 2021, বর্তমানে মালালা অ্যাপেল সংস্থার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অ্যাপল টিভি+ এ বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য। অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো- নাটক, কমেডি, ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন, শিশুদের জন্য সিরিজ এবং অঙ্কন। যেগুলি সারা বিশ্বে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের প্রেরণা যোগাচ্ছে।
তাইতো মালালা ডে 2022 | That is why Malala Day-
ঠিক সেই কারনেই 12 জুলাই মালালা ডে 2022
মালালার কথা এটুকু লেখার মধ্যে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়। সে একজন শান্তশিষ্ট, স্থিতধী, বিনয়ী অথচ সাহসী অগ্নিকন্যা। তার কর্ম আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতায় আটকে নেই। সারা বিশ্ব আলোকে আলোকিত। তাইতো 2017 সালে ইউ.এন.ও’র জেনারেল সেক্রেটারি António Guterres মালালাকে ‘Event Messenger of Peace to Promote Girls Education নামে এক সম্মান প্রদান করে। দু’বছর মেয়াদের জন্য তাকে ঐ পদে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কানাডা সরকার তাকে সম্মানীয় কানাডার নাগরিকত্ব প্রদান করেছে।
তাছাড়া মালালাকে নিয়ে ‘He named me Malala’ নামে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি হয়েছে। তৈরি করেছেন পরিচালক Davis Guggenheim.
আরো পড়ুন- মহিলাদের প্রতি প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি।
আমরা দেখলাম মালালার কর্ম জগত, তার কর্ম করণ নিছক কোন সাধারণ কিশোরীর নয়। এ সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবে ও আস্থা রাখবে। আস্থা রাখতে বাধ্য হবে। তাইতো 2013 সালের 12 জুলাই সারা বিশ্বে মালালা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এই অগ্নিকন্যার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, নমস্কার এবং Malala Day 2022এর শুভকামনা। ধন্যবাদ।