Free of cost এর দ্রব্যের প্রতি আমরা প্রবলভাবে আকর্ষিত। সে আকর্ষণ সৌরজগতের মহাজাগতিক আকর্ষণ বলকেও হার মানায়। সূর্য তার চারিদিকে গ্রহ গ্রহাণুপুঞ্জকে যেভাবে পরিক্রমণ করায়, Free of Cost দ্রব্যাদি এবং পরিষেবার বিজ্ঞাপন বারবার আমাদের সে দিকে নিয়ে যায়। অর্জিত দ্রব্যাদি যে সুখানুভুতি প্রদান করে, প্রতিযোগী বন্ধুর সাথে প্রেমিক-প্রেমিকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেয়ে কম কিছু নয়।
একটার সাথে একটা ফ্রি’তে আসে তৃপ্তিদায়ক ঢেকুর। শুধু ফ্রিতে পাওয়া দ্রব্যাদি পাওয়ার আশায় দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করাটা চুটকি মেরে কার্যসিদ্ধি সমান হয়ে পরে। দীর্ঘ লাইনে সময় অতিবাহনের বিরক্তিকর ঘর্মাক্ত শরীর, মানসিক অবসাদ সবই সেখানে তুচ্ছ। যেহেতু বিনা পয়সায় অতএব সব কাজকর্ম বন্ধ করে সে দ্রব্যাদি হাসিল করতে হবে। মাউন্ট এভারেস্টে এডমন্ড হিলারির সে সুখের চেয়ে কম কিছু নয়।
From where We get Free of Cost(বিনামূল্য দ্রব্যাদি) commodities?-
এখন দেখি কোন কোন স্থান থেকে Free of Cost- এ জিনিসপত্র পেয়ে থাকি। প্রথমেই আমরা Free of Cost- এর উৎসকে দু’ভাগে ভাগ করে আলোচনা করি। যথা-
1. Non Government Commercial company-
বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সেল বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে ফ্রি অফ কস্টের কিছু দ্রব্যাদি রাখে। হতে পারে সেই কোম্পানি বাজারে নতুন এসেছে। উদ্বোধনের দিন কাস্টমারদের ফ্রী অফ কস্টে কিছু সেবা বা দ্রব্যাদি দিতে পারে। হাজার হাজার লোক লাইন দিয়েছে দ্রব্যাদি নেওয়ার জন্য।
আবার কখনও কখনও দ্রব্যটি মূল দামের চেয়ে অনেকটা ছাড় দেয় অর্থাৎ অফার দিয়ে কাস্টমার টানার চেষ্টা করে। যেহেতু মূল দামের তুলনায় কম দামে দেয় তাই সেটাকে কিছুটা ফ্রী অফ কস্ট বলতে দ্বিধা নেই। সেখানেও খদ্দেরদের চোখে পড়ার মতো। তা সে অফলাইন হোক বা অনলাইন স্টোর থেকেই হোক।
আবার কখনো কখনো দেখা যায় একটার সাথে একটা ফ্রি। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দ্রব্যটি, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে কিনলে তার সাথে উপহার স্বরূপ অন্য একটি দ্রব্য ফ্রী অফ কস্টৈ দিয়ে দেওয়া হয়। যেমন 1000 টাকার দ্রব্য কিনলে তার সাথে 200 টাকা অন্য একটি দ্রব্য ফ্রী অফ কস্ট দিয়ে দেওয়া হয়। নতুবা 5000 টাকার দ্রব্য কেনার পর তার সাথে অতিরিক্ত অন্য কোন 1000 টাকার দ্রব্য দেওয়া হবে। যদি তার জন্য মাত্র 500 টাকা খরচ করেন।
এখানে আমরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা থেকে বিভিন্ন সময়ে সুফল গুলি ভোগ করি বা ভোগ করার চেষ্টা করি।
2. Government Services or Product free of cost-
সরকারিভাবেও বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন দ্রব্য বা সেবার ফ্রি অফ কস্টে নিয়ে থাকি। সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়, জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে সমস্ত রকম সেবা কার্যাদি সহ সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সিস্টেম চালনা করে তাই সরকার দায়বদ্ধ থাকে বিভিন্ন পরিষেবা বিনামূল্যে প্রদান করার। যেমন-স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিষেবা। এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী সরকারিভাবে পরিচালিত সংস্থার জন্য নির্দিষ্ট হিসাব খাত রয়েছে, যা জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে গঠিত।
অন্যদিকে আছে এমার্জেন্সি ফান্ড। সেখান থেকেও এমার্জেন্সি সৃষ্টি হলে সেই খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ ও খরচ করা হয়। তা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমন ঝড়-বৃষ্টি ভূমিকম্পের মতো ন্যাচারাল ক্যালামিটি অথবা ডিজাস্টারের ঘটনা ঘটলে। এর জন্য সরকার জনগণকে আবেদন করে এমার্জেন্সি রিলিফ ফান্ডে অর্থ প্রদানের জন্য।
এ ধরনের আরো অনেক পরিষেবা আছে যেগুলো সরকারিভাবে ফ্রী অফ কষ্ট দেওয়া বাঞ্ছনীয়। যেমন- বর্তমানে টিকাকরণ। কোভিড পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে সুনিশ্চিত খাদ্য প্রকল্পের মাধ্যমে চাল, ডাল ইত্যাদি সরবরাহ এর আওতায় পড়ে।
Free of cost এর দ্রব্যাদি ও পরিষেবা দেবার উদ্দেশ্য-
প্রিয়বন্ধুরা Free of Cost- এ পরিষেবা দেওয়া কেও উৎস অনুযায়ী আমরা দুটি ভাগে ভাগ করব। যথা-
- 1 বেসরকারি বা নন-গভমেন্ট অর্গানাইজেশন বা কোম্পানি,
- 2 গভমেন্ট–
1 Non Government Commercial Organization or Company-
এই সমস্ত সংস্থাগুলির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা বৃদ্ধি। মুনাফা বৃদ্ধি কিভাবে হবে? যত বেশি বিক্রি ততো বেশি মুনাফা। বিক্রির জন্য চায় খরিদ্দার বা কাস্টমার। কাস্টমারের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে বিক্রি তত বেশি হবে। বিক্রি বেশি হলে মুনাফাও অধিক হবে। এ সোজা হিসাব।
কাস্টমার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকম পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- দ্রব্যাদি বা পরিষেবার গুণগতমান। তার সঙ্গে মূল্যের সামঞ্জস্য অথবা স্বল্পমূল্যের দ্রব্যাদি।
অবশ্য বিক্রির পরিমাণ চাহিদার উপরেও নির্ভর করে। চাহিদা যতই বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে বিক্রি সেভাবে বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া খদ্দের বা কাস্টমারদের মানসিক প্রবৃত্তি বা পছন্দের উপরও বিক্রির বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় এবং তাদের হাতে গচ্ছিত অর্থ দ্রব্যাদি কেনার আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে অথবা কমিয়ে দেয়।
ঠিক এই মুহূর্তেই যদি কম মূল্যের অথবা ফ্রী অফ কষ্টের কোন দ্রব্য কিংবা পরিষেবা বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সমস্ত ধরনের খদ্দেরের মানসিক প্রবৃত্তি বা ইচ্ছা সৃষ্টি হবে। পরবর্তীকালে সে দ্রব্যাদি অথবা পরিষেবার প্রতি মানুষের আসক্তি সৃষ্টি হলে ভবিষ্যতে দ্রব্যাদি বা পরিষেবা নিয়মমাফিক কিনতেই থাকবে। সে দিক দিয়ে কোম্পানিগুলি ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে মুনাফা বৃদ্ধির আশায় ফ্রী অফ কস্ট যে কোন দ্রব্য বা পরিষেবা বিক্রি করার উদ্দেশ্য বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে।
2. Government এর উদ্দেশ্য-
পূর্বেই বলেছি সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয় সেহেতু সরকারের দায়িত্ব থাকে জনগণকে পরিষেবা এবং দ্রব্যাদি Free of Cost-এ সরবরাহ করা।
অন্যদিকে এর পেছনের উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। সরকার যে কোন দল থেকেই সৃষ্টি হতে পারে। একটি অথবা দুটি দল জনগণের আস্থা অর্জন করে নির্বাচনে জয়ী হয় এবং তারা সবসময় চেষ্টা করে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে ওই সরকারকে টিকিয়ে রাখার। এবং এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পরিষেবাগুলি ফ্রী অফ কস্টে দিয়ে থাকে বা দেবার চেষ্টা করে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ইত্যাদির মত অতি প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি ফ্রী অফ কস্টে দেবার চেষ্টায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
অন্যদিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এর সাথে অন্যান্য কিছু পরিসেবা দ্রব্যাদি বিনামূল্যে দেবার চেষ্টা করে অথবা স্বল্পমূল্যে বিতরনের ব্যবস্থা করে। জনগণ খুশি হলে পরবর্তী নির্বাচনে ওই দলকেই সরকারের গদিতে বসাবে। রাজনৈতিক দলগুলির এই আশা থাকে।
Free of Cost- এর ভালোর দিক-
ভারতবর্ষ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী বেশিরভাগ জনগণই গরিব থেকে অতি গরিব। আর্থিকভাবে যেহেতু শক্ত নয় সেহেতু সামাজিক মর্যাদা তাদের মধ্যে কম। এ ধরনের জনসংখ্যা পরিমাণ খুব একটা কম নয়। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি কর্মহীন। বিশাল অংশের সমাজ বিভিন্ন দ্রব্য এবং পরিষেবা ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারের উদ্দেশ্য থাকে সেই সমস্ত স্তরের মানুষদেরকে অতি স্বল্প মূল্যে অথবা Free of Cost-এ বিভিন্ন দ্রব্যাদি ও পরিষেবা দেবার। কেননা এই সমস্ত দরিদ্র জনগণ সরকার গঠনের জন্য এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
তাছাড়া সামাজিক স্তরের ওই দরিদ্র মানুষ গুলির পক্ষে এমন কিছু দ্রব্যাদি বা পরিসেবা রয়েছে মা অর্থ জমিয়ে সে দ্রব্যাদি বা পরিসেবা গ্রহণ করার ক্ষমতা নেই। তাই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্যের মত পরিষেবাগুলি সরকার কখনো কখনো স্বল্পমূল্যে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এতে ওই শ্রেণীর জনগণ বেশ উপকৃত হয়।।
অন্য একটি উদাহরণ দিই। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার পৃথক ভাবে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করেছে। তাতে দরিদ্র পরিবারগুলিও বেশ উপকৃত হয়েছে। কেননা বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে তাদের পক্ষে কখনোই পাকা বাড়ি করা সম্ভব হতো না। যদিও এই প্রকল্পের মধ্যে অনেক পরিবার যাদের পাকা বাড়ি করার সামর্থ্য আছে তথাপি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তারা এই প্রকল্পের সুবিধা নিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক গরিব পরিবার বঞ্চিত হয়েছেন।
বেসরকারিভাবে Free of Cost অথবা স্বল্পমূল্যের দ্রব্যাদি পরিষেবা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এলে তারা অল্প সময়ের জন্য হলেও দ্রব্যাদি বা পরিষেবা ভোগ করার সুযোগ পেয়ে থাকে।
Free of Cost মন্দের দিক-
Free of Cost-এর ভালোর দিক যেরকম আছে মন্দের তালিকাও খুব একটা কম নয়।
Free of Cost প্রথমেই যেটা হয় তা হল মানসিকতার রদবদল-
মানুষের মনের মধ্যে এমন এক পরিবর্তন সূচিত হয়, মানুষ কাজ করার প্রতি অনীহা হয়ে পড়ে। অর্থাৎ যেখানে Free of Cost-এ জিনিসপত্র পাচ্ছে সেখানে অর্থের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই কাজের প্রতি মানুষের আকর্ষন কমে যায়। পরিশ্রম করতে ভুলে যায়। মানুষকে অর্থ দিয়ে কাজ করাতে চাইলেও সে কাজে অনীহা প্রকাশ করে। যেখানে প্রাথমিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের কত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিনামূল্যে পেয়ে যাচ্ছে, সেখানে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা কি? তাছাড়া রয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতিও সরকারের আশ্বাস।
অলস মস্তিষ্কের সম্প্রসারণ-
Free of Cost দ্রব্যাদি সহজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজন নেই অর্থের। তাই প্রয়োজন নেই কর্মের। অবিরাম বিশ্রাম সীমাহীন অবসর। স্বভাবতই শরীর এবং মন অলসতায় যাপন। এখান থেকেই উঠে আসে পরনিন্দা পরচর্চা এবং বিভিন্ন হিংসার মনোবৃত্তি। সমাজ একটি অলস যান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে হতে অবশেষে স্থবির হয়ে যায়।
দাসত্বে পরিণত-
Free of Cost প্রকল্পগুলি সরকারের। কিন্তু আমাদের সমাজে এক রাজনৈতিক ভূমিকা প্রকট হয়ে ওঠে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে। তারা প্রায়শই বলে এই পরিষেবা বা দ্রব্যাদি গুলি আমরাই দিচ্ছি। তাই আমরা যা বলব তুমি তাই করবে। অগত্যা পরিষেবা পাচ্ছে, মানুষকে সেই রাজনৈতিক নেতাদের কথাবার্তায় উঠা বসা করতে বাধ্য হয়।
আমাদের রাজ্য সরকার বিভিন্ন ক্লাব এবং পুজো গোষ্ঠীগুলোকে বাৎসরিক অর্থ বরাদ্দ করে। যদিও সরকার এর পেছনের উদ্দেশ্যে বলে যে ক্লাবগুলির খেলাধুলা, শরীরচর্চা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় ক্লাবের মধ্যে এই অযাচিত অর্থ প্রবেশের ফলে, ক্লাবের সদস্যরা কতটা এর সদ্ব্যবহার করে। আমরা এটাও জানি এই অর্থের সাহায্যে নেশা উদযাপন, মোচ্ছব বেশ জাকিয়ে হয়। রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে ক্লাব এবং পুজো কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি-
ফ্রী অফ কস্ট বিভিন্ন দ্রব্যাদি পরিষেবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত থাকলে অথবা অন্যান্য বিভিন্ন প্রকল্প, সে ক্লাবগুলোকে হোক বা পুজো মণ্ডপ গুলিকে হোক অথবা ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল মোবাইল, ট্যাব দেওয়ার মতো মহৎ উদ্দেশ্য হোক। এগুলি সরবরাহ করার জন্য অর্থের যোগান, সেগুলো আসে কোথা থেকে? এক বাক্যে সকলকে বলতে হবে এগুলো কিন্তু জনগণের টাকা। জনগণের এই টাকাগুলি সরকার কিভাবে আদায় করে?
আদায়ের একমাত্র মাধ্যম হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরিষেবা এবং দ্রব্যাদি যেগুলি আমরা বাজার থেকে কিনে অথবা সরকারি ভাবে কেনা যায় সেগুলোর উপর সরকার পরোক্ষভাবে ট্যাক্স নেয়। ট্যাক্স নেওয়ার ফলে যে কোন দ্রব্য বা সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেমন পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সমস্ত দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির সাথে এক সরাসরি সম্পর্ক আছে। জমি বাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ফিজ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই অর্থে জনগণকে ফ্রী অফ কস্ট পরিষেবা দেবার জন্য ব্যবহার করে থাকতে পারে। তাছাড়া বাজারের অন্যান্য যে কোন দ্রব্যের অথবা পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধিও ফ্রী অফ কস্টে পরিষেবা দ্রব্যাদি বিতরণ করার জন্যই হয়ে থাকে।
পরিষেবা দ্রব্যের প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পায়-
আমরা Jio-র কথা বলতে পারি। রিলায়েন্স কোম্পানি প্রথম যখন বাজারে আসে বিনামূল্যেই সিম এবং পরিষেবা দিয়েছিল। লক্ষ্য লক্ষ্য কোটি কোটি মানুষ এই পরিষেবা গ্রহণ করেছে বিনামূল্যে। মানুষের মনে আসক্তি সৃষ্টি হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনযাপনের পরবর্তীকালে জিও সেই পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়া বন্ধ করে এবং ওই পরিষেবাগূলি উপরে বিভিন্ন হারে মূল্য নির্ধারণ করে। এই মূল্য নির্ধারণের পর কতজন মানুষ এই পরিসেবা গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে?
তার সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু মূল্য দিয়ে জিওর পরিশেবা গ্রহণ করেছে এবং এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করে চলেছে। রিলায়েন্স কোম্পানির উদ্দেশ্যই ছিল বিনামূল্যে পরিষেবা দেবার অছিলায় মানুষকে জিও ফোরজি-র প্রতি আসক্তি গড়ে তোলা। এর জন্য যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তার তুলনায় এই কয়েক বছরে কয়েক গুণ অর্থ ওই কোম্পানি লাভের ঝুলিতে প্রবেশ করেছে। অতি সহজ সরল হিসাব।
Free of Cost-এর দ্রব্যাদির গুণগতমান-
যে কোন দ্রব্য ফ্রী অফ কস্ট অর্থে তার গুণগতমান খারাপ হবার সম্ভাবনা থাকে। এবং হয়ও। যেকোনো পরিষেবা দ্রব্যাদি ফ্রী অফ কস্ট এবং উইথ কষ্ট পাশাপাশি তুলনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা। সরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে মানুষ কি সত্যিই সন্তুষ্ট? এ প্রশ্নের উত্তর আপনিই দিতে পারবেন। যেখানে বেসরকারি হাস্পাতালগুলি মুঠো মুঠো টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরও ভালো পরিষেবা পাওয়া যায় না, সেখানে বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেমন, সেটা আর বলার নয়। শিক্ষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সরকারি শিক্ষার প্রতি মানুষের আস্থা একেবারে তলানিতে সেখানে একটু সচ্ছলতা এলেই ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করানোর প্রবল ইচ্ছা।
চাল-ডালের গুণগত মান-
বাজার থেকে মূল্য দিয়ে চাল-ডালের গুণগত মান এবং সরকারি প্রকল্পে বিনামূল্যে চাল-ডালের গুণগতমান। বলার কিছু নেই। এখন এই নিয়ে কথা বলা মানেই হয় তুমি বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোক, না হয় মাওবাদী আখ্যা। এ এক ভয়ঙ্কর সংকটময় মুহূর্তের মধ্যে আমরা দাঁড়িয়ে। সরকার নিজের বিভিন্ন দুর্বল জায়গা গুলিকে ঢাকার জন্য জনগণের সামনে এরকম কিছু প্রকল্প বা সমস্যা নিয়ে হাজির হয়, যাতে এই প্রকল্প সমস্যাগুলো নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ আলোচনায় ব্যস্ত থাকে। এবং এই ব্যস্ততার আড়ালে সরকার তার নিজের দুর্বল স্থান গুলিকে সবসময় ঢাকার চেষ্টা করে। মানুষ এসব বোঝে না তাও না, কিন্তু এক অদৃশ্য যাঁতাকলে পিষে মরতে হচ্ছে। ঘন জালে বন্দি হয়ে মাছের মতোই জীবন ধারণের জন্য ছটফট করছে।
যাই হোক বিনামূল্য দ্রব্যাদি অর্থেই সবকিছুই যে অমঙ্গল বা ক্ষতির দিক তাও নয়। আবার ফ্রী অফ কস্ট মানেই যে সোনায় সোহাগা সেটা ভেবে থাকাও বোকার মত কাজ হবে। তবে আমাদের এই বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। সত্যিই ফ্রী অফ কস্টের অর্থ কি? সেটা ফ্রী অফ কস্ট না এর পরোক্ষে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি। ফ্রী অফ কস্ট তুলনায় তা আরো ভয়ঙ্কর ক্ষতির দিক। ভেবে দেখা উচিত। ধন্যবাদ।