ডাক্তারের পরামর্শ(Advice of Doctor) শুনে ভিমরি খাবার মত অবস্থা হয় অনেকেরই। সত্যি কি এতবড় প্যাথলজি টেস্ট লিস্ট দরকার ছিল? দ্বন্দ্বের উত্তর পাবেন এই নিবন্ধে। প্রথমে গল্প আকারে অভিজ্ঞতাগুলি শুনলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ(Advice of Doctor) শুনে ভিমরি খাবার মত অবস্থা হল তপন মন্ডলের। এত বড় প্যাথলজি টেস্ট লিস্ট Pathology Test List) ও তার এত খরচ? 5 বছর আগে রিক্সা চালাত। সেখান থেকে রোজকার, সংসার খরচ, দৈনন্দিন খরচ, ওষুধ-পত্র, জামাকাপড়, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ। এখন অনেক কষ্টে ঋণ করে টোটো কিনেছে। পরিশ্রম কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু রোজগার সেরকমভাবে বাড়েনি। যেখান থেকে সমস্ত রকম খরচ স্বচ্ছলভাবে করতে পারে এ প্রায় সবার স্বাভাবিক জীবনযাপন।
এর মধ্যে বয়স জনিত কারণে নিজের শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা কমে আসছে। তার সাথে বিভিন্ন রোগও যেন বাসা বাঁধছে। শরীর চলতে চাইছে না।
কেন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয় –
শারীরিক পরিশ্রম করা যাবে না। একেবারেই রেস্ট নিতে হবে। তার সাথে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা,(Examination of Pathology Lab) করাতে হবে। শহরের সবচেয়ে ভালো প্যাথলজি ল্যাব(Best Pathology Lab) ডাক্তার বলে দিলেন। ওখানে পরীক্ষা করাতে হবে। না হলে হবে না। ওটাই যেন বেস্ট প্যাথলজি ল্যাব ইন্ডিয়া(Best Pathology Lab in India)।
তপন মন্ডলের অজ্ঞান হবার মত হল সেখানে গিয়ে। সেখানে প্রায় 10 থেকে 12 হাজার টাকার পরীক্ষা। আর মনে হয় বাঁচা সম্ভব না।
গ্রামে ফিরে স্বস্তি পেল সে। পলাশকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন টা দেখালো তপন মন্ডল। শ্যামল বলল- কিছুই করানো দরকার নেই। তুমি বরং ডাক্তার B.K. Ghosh-কে দেখাও। উনি খুব কম পরীক্ষা করাতে বলেন।
পলাশ একটা ওষুধের দোকানে কাজ করে। ওদের ওষুধের দোকানে ডাক্তার B.K. Ghosh বসেন। তপন মন্ডল আগের তুলনায় একটু ভাল। তবে পুরোপুরি সুস্থ নয়। তপন মন্ডল এখন B.K. ঘোষের পার্মানেন্ট পেসেন্ট। ডাক্তারবাবু এখন বলছেন- আরো অনেক কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। তবে তার আসল সমস্যা জানা যাবে।
আরো প্যাথলজি পরীক্ষা করাতে হবে-
এবার তপন মন্ডল সত্যি ঘাবড়ে গেল। কেবল ঘাবড়ে যাওয়াই নয়, বরং ডাক্তারের প্রতি আস্থা, আশাভরসা উঠে যেতে শুরু করেছে। তার প্রশ্ন- সত্যিই কি তার শারীরিক অসুস্থতা আছে? না’কি সে পুরোপুরি ফিট? ডাক্তারের পাল্লায় পড়ে কেবল হয়রানি হচ্ছে। সেটাও জানা যাচ্ছে না। কারণ সে অনুভব করছে শারীরিক অসুস্থতা কিছু একটা আছে। না’হলে এমন কষ্ট হবে কেন? দুর্বলতা মাঝে মাঝে জ্বর, গ্যাস অম্বল মানসিক টানাপোড়েন। কাজ করার যেন কোন ইচ্ছাই নেই।
- অন্য একটি ঘটনা-
অন্যদিকে ভূবন একজন রংমিস্ত্রি। বাড়ি রং করা তার পেশা। লোকের নতুন বাড়িকে বাসযোগ্য করা যেমন রাজমিস্ত্রির কাজ, সেরকম পুরো বাড়িটাকে নববধূর মত রাঙিয়ে সে বাড়িতে প্রেম প্রীতিতে ভরিয়ে দেয়। অবশ্যই এর বিনিময়ে সে টাকা নেয়।
ভূবনের বয়স এখন চল্লিশের কোঠায়। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে শেষে বাড়ি রাঙানোর কাজটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিল। এখন সে পুরোপুরি দক্ষ পেশাদার। ভবন কিন্তু গত দু’বছর ধরে প্রতি বছর প্রায় 8 থেকে 10 হাজার টাকা খরচ করে নিজের শারীরিক পরীক্ষা করার জন্য। ডাক্তারের কাছে যায় এবং নিজেই বলে সুস্থ থাকার জন্য কি কি পরীক্ষা করা খুবই প্রয়োজন?
- প্রশ্ন হতে পারে-
১. ভুবন কি ভীতু? ২. মৃত্যু ভয় তার মনে গেঁথে আছে? ৩. ভূবন কি মানসিক রোগী? উত্তরঃ ‘হ্যাঁ’ হতে পারে। আবার ‘না’ হওয়া অসম্ভব নয়। তবে অন্যভাবে বলা যেতে পারে- সে স্বাস্থ্য সচেতন।
সত্যি ভূবন স্বাস্থ্য সচেতন এবং এই সচেতনতা ও রপ্ত করেছে দু’রকম উৎস থেকে। ১. বইপড়া- অবসর সময় বই, খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিন নিয়ে কাটায়। ২. স্ত্রী সুরভী। বছর 15 আগে সুরভী দের বাড়ি রাঙাতে রায় সে। সেখান থেকে সুরভীর সিঁথি রাঙ্গিয়ে নিয়ে এসেছিল। সে এক অন্য গল্প। সুরভী গ্রাজুয়েট। চাকরির অনেক পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু হয়রানি হয়ে অবশেষে গৃহকাজে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত। সুরভীর স্বাস্থ্যসচেতনতায় ভুবনের মনের থেকে সাড়া পরিবারে ছড়িয়েছে।
প্রশ্ন প্যাথলজি পরীক্ষা(Pathology Lab Examination) ও প্যাথলজি টেস্ট লিস্ট- এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে-
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে- সত্যিই সেগুলোর প্রয়োজন আছে, কি নেই?
এ নিয়ে দুটো শিবির তৈরি হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে কর্পোরেট জগতের প্রসারণ এবং আমাদেরকে গ্রাস করার সময় থেকেই।
একদল বলেন- ডাক্তার অযথা এগুলো দিয়ে থাকেন প্যাথলজি ল্যাব থেকে কমিশন খাওয়ার জন্য। এখনকার ডাক্তারদের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। রোগীদের উপর থেকে দেখে রোগ নির্ণয় করার। তারা অতীতের অনেক ডাক্তারের নাম উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসেন। ডাক্তারদের পরামর্শ(Advice of Doctor) বেদবাক্যের মতো কাজ করতো।
অন্যদল বলেন- পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে বলেই ডাক্তার এরকম পরীক্ষা করাতে বলেন। সঠিক রোগ নির্ণয় করার জন্য এটা অবশ্যই জরুরি।
আবার একদল আছেন ভুবনের মত। প্রয়োজন থাকুক আর নাই থাকুক নিজে থেকে কিছু পরীক্ষা করান সচেতনতার কারণে।
প্যাথলজি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। তা নাহলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেল কেন? রোগ নির্ণয় এবং রোগীকে রোগ থেকে মুক্ত করা বিজ্ঞানের কাজ, ওষুধের কাজ, ডাক্তারের কাজ। সঠিক রোগের সঠিক চিকিৎ জন্য রোগ নির্ণয় অবশ্যই জরুরি। তাই প্যাথলজি ল্যাব, টেস্টিং ক্লিনিকের প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু অযাচিত পরীক্ষা সাধারণকে কতটা সুবিধা বা অসুবিধা সৃষ্টি করে, প্রশ্ন সেখানে।
ডাক্তারের পরামর্শ শোনার পর সিদ্ধান্ত নিন-
সত্যিই প্রয়োজন আছে কি নেই সে বিষয়ে রোগী রোগীর আত্মীয় পরিজন, কাছের লোকজনদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে অন্যান্য আপনজন বন্ধু-বান্ধবদের অভিজ্ঞতারও মূল্য দেওয়া উচিত।
তবে রোগী বা তার পরিজনদের কোনভাবে মানসিক টানাপোড়েন বা অযথা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরামর্শ থেকে বিরত থাকুন।