10 তম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস 2021 পালিত হতে চলেছে 11ই অক্টোবর(International Day of girl child 2021 is going to be celebrated on 11th October)। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের(International Day of Girl Child) বয়স অতি নবীন। মাত্র নয় বছর। একুশ শতকেই এর জন্ম। দিন যায়, বছর ঘোরে, প্রয়োজনীয়তার ওঠানামা হয়। সেই সূত্র ধরে কন্যা শিশু দিবস পালন এবং উদযাপন পৃথিবীজুড়ে গুরুত্ব পেতে থাকে।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস’- এর ইতিহাস | History of International Day of Girl Child-
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই অবগত। আবার অনেকের কাছেই অজানা। সুতরাং অজানা বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ধারণার প্রয়োজন আছে।
শিশু কন্যা দিবস জন্ম লাভের বিষয়ে যে সংস্থার কথা প্রথমেই বলতে হয় তা হল- প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের জন্ম হয় 1937-এ। এর জন্মদাতা হলেন জন ল্যাঙ্গডন ডেভিস। তিনি একজন বৃটিশ সাংবাদিক। এর সঙ্গে আর একজন যুক্ত ছিলেন- এরিক মুগেরিডচ নামে একজন রিফিউজি ওয়ার্কার। এদের উদ্দেশ্য ছিল যে সমস্ত শিশু স্প্যানিশ সিভিল যুদ্ধের ফলে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছিল, গৃহহীন অসহায় জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছিল, সেই শিশুদের খাদ্য, বাসস্থান এবং শিক্ষা সরবরাহ করা।
এই সংস্থার বর্তমানে চারটি রিজিয়ন রয়েছে। যেগুলোকে হাব নামে চিহ্নিত করা হয়। এর হেড অফিস ইউ কে’তে অবস্থিত। চারটি সাবের নাম ও দপ্তর নিম্নরূপ-
- ১. রিজিয়ন-১- আমেরিকার জন্য- এর দপ্তর পানামায় অবস্থিত,
- ২. রিজিয়ন-২- এশিয়া প্যাসিফিক- এর দপ্তর ব্যাংকক,
- ৩. রিজিয়ন-৩. মিল ইস্ট, ইস্টার্ন এন্ড সাউথ আফ্রিকা- এর দপ্তর নাইরোবি এবং
- ৪. রিজিয়ন-৪- ওয়েস্ট এণ্ড সেন্ট্রাল এশিয়া- এর দপ্তর সেনেগাল।
এই বেসরকারি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বিকজ আই এম এ গার্ল’ এই উক্তির মাধ্যমে এক প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত শিশু এবং নারীদের অধিকার ও বৈষম্য নিয়ে কাজকর্ম করার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়।
এরই হাত ধরে 1995 খ্রীষ্টাব্দে বেইজিং ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অফ ওম্যান এর মাধ্যমে প্রথম শিশু কন্যা দিবস পালনের বিষয়টি উত্থিত হয়। 1995 সালে গঠিত এই ধারণা ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর জন্য লেগে গেল আরো 15 থেকে 16 বছর। 2011 সালে ইউ এন ও শিশু কন্যা দিবস পালনের জন্য প্রথম প্রস্তাব আনা হয় এবং 11 ই অক্টোবরকে শিশু কন্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এবং পরের বছর অর্থাৎ 2012 সাল থেকে শিশু কন্যা দিবস সারা পৃথিবীব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
শিশু কন্যা দিবস’এর থিম । Theme of the International Day of Girl Child) –
প্রত্যেক বছরই কন্যা শিশু দিবস এর একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে। বিশেষ বিশেষ বিষয় অনুযায়ী সেই বছরের কার্যপ্রণালী সূচিত হয়। 2012 সাল থেকে 2020 সাল পর্যন্ত দিনগুলির নাম নিচে দেওয়া হল।
- 2012- Ending child marriage
- 2013- Innovating form girls
- 2014 – Empowering adolescent girls: Ending the cycle of violence
- 2015- The power of adolescent girl: Vision for 2030
- 2016- Girl Progress = Goals’ progress: What counts for girls
- 2017- Empower girls: Before, during and after crises
- 2018- With her: A skilled girl force
Theme of the international Day of Girl Child 2021 | আন্তর্জাতিক শিশু কন্যা দিবস 2021- এর থিম-
Theme of the international Day of Girl Child 2021 is Digital Generation Our Generation.
Why the Theme – Digital Generation Our Generation?
2021 সালে লিঙ্গ বৈষম্যের সমাধানের জন্য পাঁচ বছরের এক সাহসী প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। যেভেবে বিশ্বে COVID-19 মহামারীর দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করার সাথে সাথে।
COVID-19 মহামারী শিক্ষা, উপার্জন এবং সংযোগের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ত্বরান্বিত করেছ। এক্ষেত্রে 25 বছরের কম বয়সী প্রায় 2.2 বিলিয়ন লোকের এখনও বাড়িতে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস নেই।
মেয়েদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য লিঙ্গ ব্যবধান 2013 সালে 11 শতাংশ থেকে বেড়ে 2019 সালে 17 শতাংশ হয়েছে। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে এটি প্রায় 43 শতাংশ(Souce UNICEF)
কিন্তু লিঙ্গ বিভাজন ডিজিটাল সংযোগের চেয়ে বেশি। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় কম ডিভাইস ব্যবহাRER মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং প্রযুক্তি-সম্পর্কিত দক্ষতা এবং চাকরির সুযোগ পায়। ভৌগোলিক এবং প্রজন্মের মধ্যে যে বৈষম্য ও দূরত্ব এবং বর্জন রয়েছে তা দূর করার মাধ্যমেই আমরা সবার জন্য,সবার সাথে ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা করা যেতে পারে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই আন্তর্জাতিক শিশু কন্যা দিবস 2021 -এ – Digital Generation Our Generation শিরোনামে থিম উত্থাপিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস- এর উদ্দেশ্য | Objectives of international Day of girl child-
সারা পৃথিবী জুড়ে মহিলা পুরুষের লিঙ্গ ভেদ অনুযায়ী কাজ কর্ম, ক্ষেত্র বিভাজন বেশ লক্ষণীয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রবহমান ধারা আজও অব্যাহত। তবে স্থান বিশেষে কমবেশি প্রভাব রয়েছে। এই সামাজিক বৈষম্য সামনে রেখেই নারী দিবস, শিশু দিবস, শিশু কন্যা দিবস পালন, অনুষ্ঠান গুলি সূচনা। এর সাথে নিচের কার্যকারণ গুলি নিয়ে আলোকপাত করা যায়-
নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণ-
সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র সহ সমস্ত স্থানে নারী পুরুষের ভেদাভেদ দূরীকরণ হল কন্যা শিশু দিবস অন্যতম উদ্দেশ্য। গৃহ পরিবেশে এখনও একজন পুত্র সন্তানকে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে আদর-যত্নে লালন-পালন, শিক্ষার প্রতি যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেভাবেই একজন কন্যা শিশুর মানসিক নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত করাই হল কন্যা শিশু দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক পদে গুরুত্ব-
এখনো সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্রপরিচালনার সহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরুষের তুলনায় নারী সংখ্যাল্পতা চোখে পড়ার মতো। প্রতিষ্ঠান গত পদে ভারতের নারীদের অংশগ্রহণ খুব একটা চোখে পড়ে না। এর পেছনে নারী-পুরুষ উভয়েরই অনাগ্রহ ব্যাধি বিনাশ করার অস্ত্র তৈরি হয়নি। কন্যা শিশু দিবসের সূচনা ও পালন এই মানসিকতা পরিবর্তনের নিশান হতে পারে।
কন্যা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ-
যেখানে নারী নির্যাতন সম্পূর্ণ নিরাময় হয়নি সেখানে কন্যা শিশু নির্যাতন রোধ করা বেশ দুরূহ। সমাজের আনাচে-কানাচে বসে থাকা শয়তানদের প্রতি কঠোর বার্তা প্রেরণও কন্যা শিশু দিবসের অন্যতম লক্ষ্য। সারা পৃথিবীর সমস্ত কন্যাশিশুরা যে এক ছাতার তলায়, এক অনন্ত শক্তির মিলিত রূপ, তা উদ্ভাসিত করাই হল কন্যা শিশু দিবস’এর কাজ।
নারী শিক্ষা-
শিক্ষায় আগামীর পথ প্রদর্শনের আলো আনতে পারে এই ধারণাকে কার্যক্ষেত্রে বাস্তব দেওয়ার উদ্দেশ্যে কন্যা শিশু দিবসের অঙ্গীকার। সারা পৃথিবীর কন্যাশিশুরা তাদের নিজের এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষা নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব পাওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রও কন্যাশিশুদের শিক্ষা দিতে বাধ্য করানোও কন্যা শিশু দিবস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
পুষ্টির প্রতি গুরুত্ব-
পূর্বেই বলা হয়েছে একটি পরিবারে পুত্রসন্তানের প্রতি যেভাবে আদর-যত্ন তার খাওয়া-দাওয়ার প্রতি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়, একজন কন্যা শিশুর প্রতি গুরুত্ব ততটা থাকেনা বলাটা ভুল, একেবারেই থাকে না বলাটাই সমীচীন। একজন নারীকেও সমাজের প্রয়োজন আছে। সমাজের কাজে লাগবে, দেশ পরিচালনার কাজে লাগবে, সেই হিসাবে তার পুষ্টির প্রতি পরিবারের প্রত্যেককে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে বয়সন্ধির সময়ে তার শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে তার প্রতি গুরুত্ব বিশেষভাবে দেওয়া দরকার। এই সময় একজন কন্যা শিশুর পূর্ণ নারী হয়ে ওঠার সূচনা হয়।
আইনি সহায়তা-
কন্যা শিশুসহ নারীদের প্রতি অন্যায় আচরণ, দুর্ব্যবহার, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি সমস্ত অসামাজিক অত্যাচার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান তাকে আইনি পরামর্শ ও সাহায্য করবে তারই অঙ্গীকার কন্যা শিশু দিবসে গ্রহণ করা হয়।
বাল্যবিবাহ রোধ-
ভারতবর্ষের মত স্থানে এই ঘটনা এখনো পর্যন্ত ঘটেই চলেছে। একটি শিশু সম্পূর্ণ নারী হয়ে ওঠার জন্য শারীরিক ও মানসিক পূর্ণতার পাওয়ার পূর্বেই তার বিবাহ দিয়ে দেওয়া হয়। পিতামাতা এবং পরিবারের বোঝা হালকা হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এই কাজের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তার সাথে সাথে একটি শিশুর অথবা একজন নারী তার মানসিক ইচ্ছা-অনিচ্ছার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপমৃত্যু ঘটে। এর সঙ্গে বৃহত্তর সমাজ একজন আদর্শ মানুষকে হারিয়ে ফেলে। বাল্যবিবাহের মত গ্যাংগ্রিন এর ব্যাধি সমাজ থেকে দূর করার জন্যই কন্যা শিশু দিবস এর মত দিবসে কঠোর প্রতিজ্ঞা গ্রহণের অঙ্গীকার নেওয়া হয়।
বাংলা তথা ভারতের শিশুকন্যার স্থান-
এখনো সমাজের পরতে পরতে পুত্র সন্তানের প্রতি অগাধ আস্থা এবং ভরসা অটুট। যেখানে সেই পুত্রের কাছ থেকে বার্ধক্যে জোটে লাঠি, তিরস্কার এবং বহিষ্কারের মত অসহনীয় আচরণ। তবুও পুত্র সন্তানের আশায় দম্পতিরা হত্যে দেয় দেবতার পা’য়ে।
পুত্র সন্তান জন্মানোর পর তার পরিচর্যা, উৎকৃষ্ট মানের খাবার, শিক্ষার প্রতি যত্ন বেশ প্রকট ভাবে দেখা যায়।
প্রথম কন্যা সন্তান জন্মের পর দ্বিতীয় বার গর্ভধারণ হলে শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য ছোটে ক্লিনিকে। ক্লিনিকগুলো বড় বড় হরপে লিখে রাখে- ‘এখানে শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় না।’ লিখে রাখা সত্ত্বেও রমরমিয়ে চলে লিঙ্গ নির্ণয় পরীক্ষা। কন্যাভ্রূণ হলেই নিষ্ঠুর ভাবে তার হত্যা লীলা অবধারিত। কন্যা ভ্রুণ হত্যা সাংঘাতিক অপরাধমূলক কর্ম হলেও ভারতীয় সমাজে এ এক সাধারন ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে।
কিন্তু পরিবার ভেদে মানসিকতার উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে অনেক পরিবার, দম্পতি কন্যা সন্তানকে চরমতম ভালোবাসা, স্নেহ দিয়ে মানুষ করছেন। পুত্রকন্যার মধ্যে ভেদাভেদ রাখেন না। সমাজের এই ধরনের পরিবার বা দম্পতি কম থাকলেও তাদের অস্তিত্ব আশা জাগায় আগামীর নতুন সমাজকে।
নারী-পুরুষের সংখ্যার বৈষম্য যে সমাজে এক সাংঘাতিক লিঙ্গ অসাম্য তৈরি হয়ে অরাজগতা সৃষ্টি হবে এ কথা মাথায় রাখা দরকার। প্রত্যেক পরিবার ও দম্পতি যদি পুত্র সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জনৃই কন্যাভ্রূণ হত্যাকে প্রাধান্য দেন, সমাজে শুধু পুরুষের অস্থিত্বই প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে পৃথিবীর গতি যে বন্ধ হয়ে যাবে একথা সকলের মাথায় রাখা জরুরি। প্রতিটি গোষ্ঠীর মধ্যে সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অনুপাত 1:1 থাকা অত্যন্ত জরুরী। বংশরক্ষা, আর্থিক লাভ লোকসানের পুত্রসন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া সাংঘাতিক অবিবেচকের কাজ। আজও এমন মানসিকতা- বংশরক্ষা কেবল পুরুষরাই করে, এতে নারীর কোনো ভূমিকা নেই।’ এটা অজ্ঞতা নয় বরং পুরুষালী গর্জন, হুঙ্কার। শুধু পুরুষকেই দোষ দিলে হবে না, মা ঠাকুমাদের মনের মধ্যেও পুত্র সন্তান লাভে একমাত্র বংশরক্ষার কারিগরের ধারণা চিরস্থায়ীভাবে গেঁথে আছে।
শুধু পরিবার নয়, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, বাসে-ট্রেনে, কর্ম ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার প্রয়াস হলো আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালনের অদম্য উদ্দেশ্য।