ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা কি প্রাসঙ্গিক?

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা: ভারতের শিক্ষা কি প্রাসঙ্গিক? অথবা ভারতে কেমন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে? এই শিক্ষা ব্যবস্থা কি একজন ছাত্রকে প্রকৃতই শিক্ষিত করে তোলে? অথবা একজন ছাত্রকে স্বনির্ভরতার আলোকিত পথ দেখায়? আসুন ভারতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে এই নিবন্ধে(Essay on Education System of India) আমরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। কোন কোন ক্ষেত্রগুলি বেশ উন্নত অথবা কোন ক্ষেত্রগুলিতে আরো নজর দেওয়া দরকার তাও জানব ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে এই নিবন্ধে।

Table of Contents

বর্তমান ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা(Institutional Education of India) যতটা মানুষ হয়ে ওঠার উদ্দেশ্য সাধন করে, তার তুলনায় কর্মে নিযুক্ত হবার বা চাকরিতে যোগ দেওয়ার(Engagement of Placement) প্রয়োজনীয়তাকে বেশি করে প্রাধান্য দেয়। মুখে আমরা যতই বলি- প্রকৃত শিক্ষার সাতকাহন। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার মূলসূত্রের বেশিরভাগটাই জড়িয়ে আছে অর্থনীতির সাথে। আবার না থেকে উপায় নেই। যাইহোক বর্তমান ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর বাজার অর্থনীতি(Market Economy) এবং ব্যাপক অর্থে বলতে হয় সাম্রাজ্যবাদী ধনতন্ত্র নীতি তথা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে।

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি-

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতি সম্পর্কে লেখাটি প্রবন্ধাকারে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হোল। লেখাটিকে আপনারা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যেই যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কোনভাবেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সাধিত হলে স্বত্ত্ব ভঙ্গের জটিলতায় পড়তে পারেন।

  • প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আত্মসুখ(Self Happiness in institutional Education of India):- 

আমি হলফ করে বলতে পারি- অভিবাবকরা যখন ছাত্রছাত্রীকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করে তখনই তাদের মনের কোণায় প্রজ্জ্বলিত হয়- ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনের সম্ভাবনার প্রস্তুতি। বলা যায় তখন থেকে সূচিত হয় এক স্বপ্ন। তাদের ছেলে মেয়ের স্বাবলম্বী হবে অর্থনৈতিকভাবে, তবেই স্বাধীন হতে পারবে। বস্তুগত চাহিদার সাথে ক্রমে ক্রমে মানসিকভাবে চাহিদা পূরণ ও পরিতৃপ্তির আত্মসুখে সমৃদ্ধ হবে। এই বাসনা সকল অভিভাবকদের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে প্রায় একই। এভাবেই এককের সমৃদ্ধির পথের সূচনা হয়। 

  • প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জাতীয় স্বার্থ(National Interest in Institutional Education)-

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে জড়িয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থ। এককের সমৃদ্ধির মিলিত প্রয়াস সংঘটিত হয় সমগ্র রাষ্ট্রপরিচালনার একটি তন্ত্র। ছোটখাটো নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আইএএস আইপিএস অফিসার। একটি প্রতিষ্ঠান একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ব্যক্তি এককের উদ্দেশ্য যদি রোজগার হয় তার সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক। প্রতিটি ব্যক্তির আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে এবং তারই আদান-প্রদানের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। আশা করি সকলেই এ কথা স্বীকার করবেন।

  • প্রকৃত শিক্ষা সে কথা বলে না-

প্রকৃত শিক্ষার অজস্র সংজ্ঞা শিক্ষাবিজ্ঞানের মধ্যে পাওয়া যায়। প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে দু-একটা সাধারণ কথা বলে যেতে পারে। শিক্ষা হলো মানুষের আচরণ পরিবর্তনকারী একটি পদ্ধতি। প্রকৃত শিক্ষা পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার আচরণ শেখায়। প্রকৃত শিক্ষা ভদ্রতা, বিনয়, মার্জিত, বন্ধুত্ব, সততা ইত্যাদির মত স্বাভাবিক আচরণ ব্যক্তির মধ্যে অধিষ্ঠিত করে।

রাজা রামমোহন রায়, ঋষি অরবিন্দ থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী প্রত্যেকের শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে পারস্পরিক সাধারণ কিছু পার্থক্য-বিতর্ক থাকলেও প্রকৃত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি সাধারণীকরণ বিশ্লেষণকে সকলেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কেউ আধ্যাত্বিক, কেউ পার্থিব, কেউ বুনিয়াদি গ্রামীণ শিল্পকলার উপর জোর দিয়েছেন। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই স্বাবলম্বনের বিষয়টি ন্যূনতম অর্থ স্বাধীনতার উপর প্রতিষ্ঠিত।

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজনঃ-

উদ্দেশ্য যদি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন হয়, তবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন সাধন প্রয়োজন। তবে কেবলমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়টা পরিসমাপ্তির পথে যাবে তাও নয়। প্রয়োজন বিভিন্ন চাকরি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতির। কি সরকারি ক্ষেত্রে কি বেসরকারি ক্ষেত্রে সকল ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়। নতুবা আমি যে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে তার কিন্তু বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা কর্মে নিয়োগের শিক্ষা যদি অন্যতম হয়, তাহলে আরেক অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো- বেশি সংখ্যক প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা। অন্যদিকে স্কুল ছুট বন্ধ করা।

প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনয়ন তাদের ধরে রাখা তথা স্কুল ছুট বন্ধ করার জন্য পাশ ফেল প্রথার বিলোপ সাধনের নিমিত্তে, পরীক্ষা নামক দানবটির চেহারা পরিবর্তন করে সার্বিক নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রচলন ও গ্রেডেশন ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়েছে।পদ্ধতিগুলির থেকে আশু সুফলের আশা না করেও, বলা যেতে পারে এবার এই পদ্ধতির মূল্যায়ন করার প্রয়োজন এসেছে।

  • প্রধান উদ্দেশ্য- শিক্ষা প্রদান এবং গ্রহণঃ-

প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় আনয়ন, তাদের ধরে রাখার উদ্দেশ্যে- এর অন্যতম প্রচেষ্টা হলো পাশ ফেল প্রথা বন্ধ করা, মধ্যাহ্ন আহার চালু, বিনামূল্যে পোশাক বিতরণ, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বন্ধের মতো নীতিগুলি প্রচলন করা- অন্যতম সহযোগী প্রচেষ্টা হিসেবে গণ্য হয়। সহযোগী বলার কারণ হলো আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য কিন্তু শিক্ষা প্রদান।

শিক্ষার্থীকে শিখতে হবে। আর শিক্ষকদের শেখাতে হবে। আর এটাই হল প্রধান উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য অন্যান্য নীতিগুলি প্রচলন আবশ্যক। অর্থাৎ অন্যান্য নীতিগুলি সহযোগী হিসেবে শিক্ষা নামক আচরণ পরিবর্তনকারী রূপটি বাস্তবায়িত করে।

  • বিদ্যালয়ের করুন ছবি-

এখন হয়েছে কি, প্রধান উদ্দেশ্য অর্থাৎ শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে সহযোগী তন্ত্র বিদ্যমান, সেগুলিকে পরিচর্যায় উপরমহল থেকে একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত এত ব্যস্ত যে প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় আসছে, কোন কোন দিন সারাদিন থাকছে, কোনদিন অর্ধদিবস। এভাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বছরে কাজের দিনের100 শতাংশ থেকে 10 শতাংশ উপস্থিতি বা কমবেশি 30%।

মধ্যবিত্ত বাড়ির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অর্ধদিবস বাড়ি পালানোটা উৎসব। কেন না, না গেলে টিউশন কামাই হবে। টিউশনে মাসে টাকা লাগে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষক মহাশয় কিন্তু বিদ্যালয় না থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করতে পারবেন না। কেননা কোনো ভাবে ভালোবেসে বললেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জবাব আসে- স্যার আপনাদের হাত-পা বাঁধা। আপনারা এখন ডোঁরা সাপ। কড়াভাবে বললে হয়তো আর আসবেই না। অথবা উত্তর আসে- স্যার মারা তো দূরের কথা, আপনারা এখন বকতেও পারবেন না। এগুলোই কিন্তু বর্তমান ঘটনা। এর বিপরীতে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত কিন্তু খুব কম। ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত কিন্তু সার্বিক ফল প্রকাশ করে না।

বছরে একদিন কিন্তু শ্রেণীতে উপস্থিতির সংখ্যা 98 থেকে 100%। সেদিনটা হলো পোশাক বা স্কলারশিপের জন্য টাকা বিতরণের দিন। এখন তো আবার ই সি এস এর মাধ্যমে স্কলার্শিপের টাকা প্রদান হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ে ভীড়টাও বড় কম।

এ কথাগুলো বলতে চাইছি না। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি। প্রথম প্রজন্ম কেন, নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা যদি আগে থেকেই পরীক্ষার ফলাফল জেনে যায়, তারা নিজের চাহিদার প্রয়োজন যদি না বোঝে, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা যদি না অনুভব করে, তাহলে সারা বছর কেনই বা পড়াশোনা করবে। আর বিদ্যালয়ে কেনই বা আসবে বা থাকবে। তারা তো বছরের শেষে উত্তীর্ণ প্রগতি পত্র পেয়ে যাচ্ছে।

এভাবে যে উচ্চপ্রাথমিক মাধ্যমিকে পাস করল সেই শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হল। অর্থাৎ ছোট নদী থেকে বড় নদীর উথাল পাথাল সময়। তার আগে তিন মাস পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে। বিষয় পছন্দ পাঠ্যসূচি বুঝতে বুঝতে আরো 3-4 মাস। একাদশ পরীক্ষার সম্মুখীন। এর মাঝে অনেক স্কুলছুট, অনেকে আবার বাবাকে কাজে সহায়তা করা, অনেকে ভোকেশনাল বা আইটিআই বা অন্য কিছু।

  • ছাত্র-ছাত্রীরা হারিয়ে যাচ্ছেঃ-

আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত পাশ ফেল তুলে দেওয়া। তারপর থেকে কিন্তু নয়। অর্থাৎ মাধ্যমিক’টা ভালো ভাবে পাশ করতে হবে। এখানেও কিন্তু পাশ মার্ক নেমে এসেছে 34 থেকে 25 এ এবং 25 যারা পাচ্ছে তাদেরকে অনেক সময় গ্রেস দিয়ে পাস করানো হয়। তাহলে বলতে পারি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে মাধ্যমিক পাশের সংখ্যা কিন্তু বেশ নগণ্য।

মাধ্যমিক পাশের পরিসংখ্যানগত হিসাব দেওয়া যেতে পারে এভাবে- প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস 100% ধরে নিলাম। এর মধ্যে কিন্তু প্রকৃত পাস করবে কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ- অর্থাৎ সমস্ত বিষয়ে পাশ। বিদ্যালয় তো প্রথম থেকে অষ্টম পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলেও অর্থাৎ ডি পেলেও প্রমোটেড আন্ডার কনসিডারেশন দেখে, লিখতে বাধ্য হয়।

এবার 70 থেকে 80 পার্সেন্ট মাধ্যমিকে বসলে তার 80% অর্থাৎ 56 থেকে 64 মাধ্যমিক পাশ করে। এর মধ্যে আবার গ্রেস পাওয়া শিক্ষার্থীও থাকে 10 শতাংশ। অর্থাৎ যাদের পাস নাম্বার 25 করে দেওয়া হয়। 56 থেকে 64 শতাংশ থেকে 10 শতাংশ বাদ যাবে। অর্থাৎ 46 থেকে 54 শতাংশ প্রকৃত মাধ্যমিক পাশ। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল 100 জন মাধ্যমিকে পাস করলো মাত্র 46 থেকে 54 জন। অর্থাৎ বাকি 54 থেকে 46 জন পরীক্ষার্থী কোথায় গেল? এরা কি কোন চাকরিতে যোগদান করতে পারবে, না তারা সেই যোগ্যতা মানে পৌঁছাতে পেরেছিল।

  • সময় নষ্ট কেন?:-

অনেক দিক দিয়েই কিন্তু লোকসান হলো। শিক্ষা কাজে নিযুক্ত সকল কর্মীর, প্রতিষ্ঠানের অনেক সময় নষ্ট হলো। সরকারি অর্থ নষ্ট হলো। ওই সমস্ত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একমাত্র কৃষক, মিস্ত্রি, মজুর ছাড়া অন্যান্য উৎপাদন মূলক কাজে অংশগ্রহণ আশা সম্ভব না। কৃষি ক্ষেত্রে শ্রমিক মজুরই যদি হবে তাহলে বছরের পর বছর কেবলমাত্র নাম সই আর ছোটখাটো যোগ বিয়োগ শেখার জন্য আট-আটটা বছরই বা বিদ্যালয় যাওয়াই কেন? এর জন্য মাত্র একটা বছর ব্যয় করা যথেষ্ট নয় কি? আট বছর কেন?

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা মূল উদ্দেশ্য/ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীতা(Necessity of Institutional Education of India):-

ভারতীয় শিক্ষা পদ্ধতি প্রসঙ্গে এই নিবন্ধে(Essay on Education System of India) ভারতীয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য/ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীতা নিয়ে নিচের বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনুরোধ রইলো।

আর এখানেই আছে শিক্ষার অন্যান্য উদ্দেশ্য। যেমন- ১। সামাজিক প্রতিষ্ঠান সাথে সংযুক্ত ও যোগাযোগ, ২। সামাজিক আদান-প্রদান মেলবন্ধন, ৩। সম্পর্ক স্থাপন ও তা বহন করার প্রয়োজনীয়তা, ৪। সংস্কৃতির আদান-প্রদান, ৫। সভ্যতার বিবর্তিত রূপ গুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, ৬। পরিবেশের শুভশ্রীর অনুভব করে অনুকরণের মাধ্যমে তার ধারাবাহিকতা মূল্যবোধের গুরুত্ব অনুধাবন ও তা বজায় রাখা ও ৭। আরো অনেক কিছু ইত্যাদি ইত্যাদি যাই বলি না কেন, বিদ্যালয়ের ৫ ঘণ্টা সময়টা কেবলমাত্র পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করারটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

বিদ্যালয়ে না আসা বা শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে মনোযোগী না হওয়ার এ হল সামান্য কিছু কারণ। এ আমার দীর্ঘ ১৪ বছরের অভিজ্ঞতার সামান্য কিছু নমুনা। যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন(Which to be Changed in Institutional Education)। ভারতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে এই নিবন্ধে(Essay on Education System of India) থাকছে তার উত্তর। :-

মাথায় নয়, গোড়ায় দি জল:-

পশ্চিমবঙ্গে পাশ ফেল নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে বিতর্ক। পঞ্চম এবং অষ্টমে পাশ ফেল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুরু হয়েছে গত শিক্ষাবর্ষ ২০২০সাল থেকে।

Essay on Education System of India
Image by Swastik Arora from Pixabay

পাশ ফেল নিয়ে এক নয় বরং একাধিক দল তৈরি হয়েছ- যুক্তিতর্কের মাধ্যমে। তাদের মতামত ব্যক্ত করছেন। পাশ ফেল প্রথা ভালো, না খারাপ আবার শুরু হয়েছে কে লাভবান হবে, কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইত্যাদি নানান বিষয় উঠে আসছে বিতর্কের মাধ্যমে।

 ‘মাথায় নয় গোড়ায় দি জল’- এর মূল কেন্দ্রে যে প্রতিষ্ঠান আছে তা হল- প্রাথমিক শিক্ষা। আর যারা এর সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয় তারা হলো আমাদের কচিকাঁচারা।

আমার মনে হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক এই দুই প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত অবহেলায় ভুগছে। আমি বলছি না মধ্য বা উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা অতি উন্নত পরিষেবা ঝলমল করছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে দেখতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার হাল অতি নিম্ন বলা ভুল হবে। একেবারে তলানিতে।

আর এই জন্যই অভিভাবক মন্ডলীর এক অংশ আস্থা হারাচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর থেকে। এ অবস্থা আজকের নয় দীর্ঘদিনের।

শিক্ষাব্যবস্থা চলে একটি তন্ত্রের মাধ্যমে। সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় পরিবেশ, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ সকলে জড়িত আছেন এর সঙ্গে। কিন্তু আমাদের আঙুল ওঠে শুধু সরকারের দিকে।

একটি পরিসংখ্যানঃ-

মানছি সরকার ও সরকারি নিয়মনীতি এ ব্যবস্থার মাথার উপরে আছে। যত রকম নিয়ম, আইন, পদ্ধতি উদ্ভাবন এখান থেকে নেমে আসে তৃণমূল স্তরে। যেমন হাজার ১৯৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইংরেজি তুলে দিয়েছিল এবং পুনরায় তা চালু করেছে ১৯৯৪ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রয়োগের মাধ্যমে।

প্রাথমিক থেকে ইংরাজী তোলার ফলভোগঃ-

ফলে মধ্যের তেরো বছরের একটি দীর্ঘ সময় এই সময়ের প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে ইংরেজি শিক্ষা থেকে। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ২০০৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে ইংরেজি শিক্ষা প্রাথমিকে ফিরে আসে। এই ধরনের সরকারি খামখেয়ালিপনা শিকার হয় সাধারণ জনগণের শিক্ষার্থীরা। তারা যেন গবেষণাগারে এক একটি গিনিপিগ।

তাহলে সাধারণ মানুষ তথা জনগণের বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কি কোন ভূমিকা নেই। সরকারি নিয়ম নীতি চালু করার ব্যাপারে আপাতত দৃষ্টিতে নেই। কেননা যে পদ্ধতিতে আমাদের সরকারি পদ্ধতি পরিকল্পনা প্রয়োগ হয় তাতে সাধারণ মানুষের, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, অভিভাবকদের যোগদানের কোন পথ নেই। সরকারের মাথায় যারা বসে আছেন তারা যাদের পাঠক্রম সিলেবাস তৈরীর জন্য নিয়োগ করেন কমিটিতে তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। আর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে থাকেন শিক্ষা দপ্তর এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী।

এ ব্যাপারে একটা কথা সকলেরই জানা। তবুও বলি শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সংবিধানের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় যৌথ তালিকাভুক্ত। তাই রাজ্য সরকার ও নিজের ইচ্ছামত পাঠক্রম, সিলেবাস যেমন তৈরি করতে পারে না, অন্যদিকে কেন্দ্র সরকার নিজের ইচ্ছামত পাঠক্রম, সিলেবাস রাজ্য গুলির উপর চাপিয়ে দিতে পারে না।

তবে কিছু কিছু কেন্দ্রীয় পদ্ধতি বা নিয়মাবলী রাজ্য সরকারকে অনুসরণ করতে হয়। যেমন আর.টি.ই- ২০০৯, সাক্ষরতা অভিযান, সর্বশিক্ষা অভিযান, সর্বশিক্ষা মিশন ইত্যাদি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাগুলি সারাদেশেই রাজ্যগুলির আঞ্চলিক পরিবেশ অনুসারে চালু করেছে।

ফিরে আসি ‘মাথায় নয় গোড়ায় দি জল’ প্রসঙ্গে। নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি উল্লেখ করছি- ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করতে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করলেই যথেষ্ট।’ আমি বলি একটি জাতিকে পঙ্গু করতে- প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের কথা বাদ’ই দিলাম। উন্নত দেশগুলি ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কারা যায়?

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে একবার ঘুরে এলে তা স্পষ্ট হবে। অতি সাধারণ বাড়ির সন্তানের সংখ্যা’ই এখানে বেশি। সামান্য পোক্ত আর্থিক পরিবারের ছেলেমেয়েরা কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখা মেলেনা। গোড়াটা একটু শক্ত করে তারপর পুনরায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আগমন। আর যাদের আর্থিক অবস্থা আর একটু উন্নত, তারাতো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সরকারি স্কুল মুখো নয়।

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা কোথায়?(Where is the Problem of Institutional Education Of India)-

১. অর্থনৈতিক অসাম্যঃ-

সারা বিশ্বে এ এক অন্যতম সমস্যা। ভারতবর্ষে অসাম্য যেন আষ্টেপৃষ্ঠে অক্টোপাসের মতো বেঁধে রেখেছে একসঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে কিছু কিছু সরকারি পরিকল্পনা হয়তো কোন নিম্ন, অতি সাধারণ মানুষের ছেলে মেয়েদের জন্য উপযুক্ত হয়েছে। যেমন- বিনামূল্যে শিক্ষা, পোশাক বা মধ্যাহ্নভোজ। এতে অতি নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিরছেলেমেয়েরা বিদ্যালয় মুখী হওয়ার সাথে সাথে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের সরকারি বিদ্যালয় বিমুখ একটা দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা।।

২. শিক্ষকদের অবহেলাঃ-

তাহলে সরকারি প্রাথমিক এ যারা পড়াশোনা করছে তাদের বেশিরভাগ অংশই কিন্তু নিম্ন এবং অতি নিম্ন অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা।

সরকারি মহল এবং শিক্ষকদের বেশিরভাগ অংশই কিন্তু এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। আর এখান থেকে আসে এমন মানসিকতা যে, এদেরকে আর কি পড়াবো? এরা দুটো পোশাক আর দুমুঠো খাবারের জন্য বিদ্যালয় আসে। অথবা পড়াশোনা করেই বা কি করবে? সুতরাং খরার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকসমাজ আমার প্রতি বিরূপ হলেও এ ঘটনাটি অনেকাংশে সত্য।

৩. শিক্ষক অপ্রতুলতাঃ-

প্রাথমিকের অন্যতম বৃহৎ সমস্যা। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত অত্যন্ত শোচনীয়। গত দু’দশক ধরে প্রাথমিকে যে সংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রী বেড়েছে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, শূন্য শিক্ষক পদে নিয়োগ, নতুন পদ সৃষ্টি হয়নি। যে পরিমাণ শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন প্রাথমিকের জন্য, সেই পরিমাণ অত্যন্ত অল্প।

৪. শিক্ষকদের পড়ানো ব্যাতীত অন্যান্য কাজঃ-

শিক্ষকদের দিয়ে পড়াশোনা ব্যতীত অন্যান্য কাজ করানোর সমস্যা কবে যে লুপ্ত হবে কে জানে। একেই ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতের এই হাল। তার উপর জনগণনা বা বি.এল.ও ওর মতো নানান কাজকর্ম। এই কাজগুলি কে করবে? না প্রাথমিক শিক্ষকরা। আর এ সমস্ত কাজের চাপ এমন থাকে, শিক্ষক মহাশয়দের পড়াশোনা করানোর মানসিকতাটাই মরে যায়।

৫. ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝোঁকঃ-

অভিভাবক মহলের এক বিরাট অংশ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য। মানুষ করার জন্য না ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার জন্য, না সত্যি সত্যি শিক্ষা প্রদানের জন্য, না কর্পোরেট দুনিয়ার সঙ্গে নিজের সন্তানকে প্রথম থেকেই একটি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য- তারাই বলতে পারবেন।

এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো অন্যান্য কারণ আছে। এখানে তা উত্থাপনে প্রতিবেদনটির কলেবর বৃদ্ধি করলে সমস্যা সমাধানের বদলে অযথা জটিলতা সৃষ্টি হবে। তবে বলতে পারি মহানগর থেকে নগর, নগর থেকে শহর, শহর থেকে শহরতলী এবং সেখান থেকেই প্রত্যন্ত গ্রামেও ধেয়ে এসেছে এই পরিস্থিতি।

আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা-

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যেটা প্রয়োজন তা হলো-

1. ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমাতে হবে।

ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ১০:১ হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টিকে অতি সরলীকরণ করে নিলেও হবে না।

ধরা যাক একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যন্ত ১০০জন ছাত্র-ছাত্রী আছে।

কিন্তু বাস্তবটা একটু বুঝি। ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যন্ত ভাগ করি। প্রতি ক্লাসে ২৫ জন করে ছাত্র-ছাত্রী থাক। তাহলে দেখুন প্রতি ক্লাসে ১০:১ অনুপাতে শিক্ষক নিযুক্ত হলে ৫ জন ছাত্রের জন্য একজন অতিরিক্ত শিক্ষক নিযুক্ত হওয়া দরকার। ওই বিদ্যালয়টিতে মোট ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। তবে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষকদের পাঠদান সম্ভব হবে।

2. একজন শিক্ষককে দিয়ে একটি ক্লাসের সমস্ত পিরিয়ড নেওয়া বন্ধ হওয়া উচিৎ।

অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখা যায় একজন শিক্ষকের হাতে একটি ক্লাসেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একটি ক্লাসের সমস্ত বিষয়গুলি পড়িয়ে যান। এতে শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীদের একঘেয়েমি বিরক্তিভাব এসে যায়।

বিষয় ভিত্তিক বিভিন্ন পিরিওডে বিভিন্ন শিক্ষক দ্বারা রুটিন এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান হলে উভয় পক্ষই এই একঘেয়েমি পীড়া পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে।

3. পিরিওডের সংখ্যা কমিয়ে পিরিওডের সময়সীমা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

আমার মতে প্রতিদিন তিনটি বিষয় এবং এ তিনটি বিষয়ের সময়সীমা এমন ভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে বাড়ির কাজ দেখার পরও শিক্ষক মহাশয় ছাত্রদের বাড়ীর কাজের ত্রূটি সংশোধনের পরও নতুন পড়ানোর প্রতি সময়টুকু পান।

4. প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রতি গুরুত্ব প্রদান।

এই বিদ্যালয়গুলিতে নিম্ন, অতি নিম্ন প্রথম প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি মাথায় রেখে পাঠদান ও তাদের প্রস্তুত করার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কেননা বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রীরা অভিভাবকদের কাছে নিজের পড়াশোনা করবে এটা ধরে নেওয়া অবিবেচকের মত কাজ হবে। (ব্যতিক্রম হতে পারে)।

আপনি বলবেন টিউশন আছে। আমি বলব যিনি টিউশনি পড়ান তিনি কিন্তু কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কর্মে নিযুক্ত হতে পারেন। কেননা যে অনুপাত আমি শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি তাতে প্রচুর শিক্ষকের প্রয়োজন। এরপরেও টিউশন প্রথার বিলুপ্তি নাও ঘটতে পারে। সেটা অন্য বিষয়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলি এখনো প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারলো না। স্বাধীনতার 75 বছর পেরিয়ে গেল। এখনো প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী দল। এ কি শুধুই অভিভাবকদের গাফিলতি? না, এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোন উদ্দেশ্য? 

5. স্বচ্ছল পরিবার ও দ্বিতীয় তৃতীয় ও তার পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরও আকৃষ্ট করা জরুরী-

শুধুমাত্র প্রথম প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নয় প্রয়োজনে উচ্চ মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও আকৃষ্ট করা। সমস্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীসহ অভিভাবকদের মনে সেই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলা জরুরি, শুধু বিশ্বাসযোগ্যতা নয়, বিশ্বাসের ও প্রাপ্ত শিক্ষার পরবর্তী ব্যবহার এবং গ্রহণযোগ্যতার খুঁটি শক্ত করা প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা না জন্মালে কিসের উপর ভিত্তি করে তাদের ছেলেমেয়েদের সেখানে ভর্তি করাবে?

দেখা যায় সরকারি কর্মচারীরা স্বচ্ছলতার কারণে তাদের ছেলেমেয়েদেরও বেসরকারি বিদ্যালয় ভর্তি করান। নেতা-মন্ত্রীদের কথা বাদই দিলাম। অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীদের সরকারি বিদ্যালয়ে প্রতি বিশ্বাস বা ভরসা রাখতে পারছেন না। সেখানে আপামর জনগণ কি দেখে সরকারি বিদ্যালয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাবে?

শুধু ভার্চুয়াল ভরসা বা বিশ্বাস নয়, ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন না হলে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে কোন রকম ভাবে ঝুঁকি নেবে না।

6. প্রাসঙ্গিক শিক্ষা(Relevant Institutional Education)-

সকল আর্থিক শ্রেণীর মানুষজনকে সরকারি শিক্ষার ওপর ভরসা বিশ্বাস করার জন্য যেটা প্রয়োজন, তা হল প্রাসঙ্গিক শিক্ষা(Relevant Education)। যে শিক্ষা আগামী দিনে অনিশ্চয়তার দিকে- সে অনিশ্চয়তা স্বাবলম্বন বা আচরণ পরিবর্তন যাই হোক না কেন, ঠেলে দেয় তার প্রতি স্ক্ল স্তরের মানুষ ভরসা করতে পারছে কি’না সংশয় আছে।

যে অভিভাবক ছেঁড়া প্যান্ট জামা পড়ে খালি পায়ে বা কখনো কখনো ছেঁড়া চপ্পল পড়েই বিদ্যালয় জীবন কাটিয়েছেন, সেও তার ছেলেমেয়েকে বেসরকারি বিদ্যালয়ের পাঠানোর চিন্তাভাবনা করেন না। তার মনেও প্রশ্ন বর্তমান সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রাসঙ্গিক কি’না। তিনি যেভাবে সরকারি বিদ্যালয় পড়েছেন সেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়ে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সেখানে বেসরকারি বিদ্যালয় বিশ্বের সাথে পাল্লাদিয়ে অন্তত প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করছে।

7. পরিকাঠামোর দায়িত্ব থেকে শিক্ষকদের মুক্তি।

যত প্রকার পরিকাঠামোগত কাজকর্ম আছে, সেই ধরনের সমস্ত কাজ থেকে(যেম্ন- বিল্ডিং নির্মাণ সংক্রান্ত) পরিচালনার দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর না দিয়ে কোন তৃতীয় পক্ষের উপর ন্যস্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষ্করা কেবল ঐ সমস্ত কাজের পর্যবেক্ষণে থাকুন।

8.শিক্ষা ব্যতীত অন্য কাজ থেকে মুক্তি।

সেন্সাস, বি এল বা ওই জাতীয় সমস্ত কাজকর্ম থেকে শিক্ষকদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। যদি সার্ভের প্রয়োজন হয় তা যেন প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সরকারি কাজকর্ম হয়।

9. অভিভাবকদের বিদ্যালয় সাথে সংযুক্তিকরণ একান্ত জরুরী।

a) বছরে অন্তত দুবার শিক্ষকদের সাথে অভিভাবকদের মিলন এবং b) অভিভাবকদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনের প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে অনুভব করি।

শিক্ষকরা অভিভাবকদের কাছ থেকে তাদের সমস্যা, সেই ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে থাকাকালীন সমস্যা সম্পর্কে জানুন। প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে বেশি সময় দিন। মঞ্চে তাদের বলার সুযোগ দিন। তাদের গুরুত্ব দিন।

অভিভাবকদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনের প্রয়োজনীয়তা:-

এ বিষয়ে বলি- প্রাথমিক বিদ্যালয় স্বল্প কিছু শিক্ষার্থী থাকবেই যারা দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বা তার পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থী। তাদের অভিবাবকরা অনেকেই শিক্ষক নন। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন। সে সমস্ত ব্যক্তিদের মাঝে মাঝে আমন্ত্রণ জানানো হোক ক্লাশ করানোর জন্য। তাদের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার জন্য। এতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি সেই অভিভাবক সম্মানীত বোধ করবেন। একটি সুশৃঙ্খল সুশীল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

10. শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মান ও সাম্মানিক।

এই বিষয়টি সামাজিক এবং রাজনৈতিক মহল থেকে একেবারে অবলুপ্ত। রাজনৈতিক উচ্চ মহল থেকে যে অবহেলা অসম্মান শিক্ষকের উপর নেমে এসেছে, তা সমাজের নিম্নস্তর পর্যন্ত অতি দ্রুত গতিতে নেমে আসে। তাই সমাজের আঙুল ওঠে শিক্ষকদের দিকে। এ এক অসামাজিক পরিস্থিতি যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের সন্মানিক দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। আর এখানে আসে যোগ্যতার প্রশ্ন। প্রয়োজনে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা সীমা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।

11. শিক্ষক প্রশিক্ষণ পরিমার্জন।

শুধুমাত্র এন.সি.টি.ই -এর নির্দেশ অনুসারে সার্টিফিকেটের জন্য পেশাগত শিক্ষক শিক্ষণ না করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা টিকে বাস্তবায়ন করা ও তার প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ পাঠক্রম সিলেবাস এর পাশাপাশি শিশু মনস্তত্ত্বর প্রতি জোর দিয়ে একটি ভিন্নধর্মী শিক্ষণ পরিবেশ প্রয়োজন।

12. আই.কিউ টেষ্ট।

প্রাথমিক শিশুর আইকিউ টেস্ট করে, তার মান অনুসারে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা কেমন হতে পারে বা কোন শিক্ষা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে তার সম্পর্কে সম্যক আগাম নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।

13. স্বচ্ছ ও সৎ পরিদর্শন।

শিক্ষকদের মাথার উপর পরিদর্শক যারা আছেন তাদের বলি- সব সময় শিক্ষকদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়াবেন না। আপনারা বিদ্যালয় যান। শিক্ষকদের সাথে মাসে অন্তত একটা করে ক্লাস নিন। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে শিক্ষকতার সামান্যতম গুণাবলী। তা তিনি উচ্চ মহলের অফিসারই হোন বা অভিভাবক বা অন্য কোন ব্যক্তি। বিদ্যালয় আপনাদের। আপনাদের তিল মাত্র অভিজ্ঞতা কাহিনী শোনালেও শিশু মন জোছনায় ঝলমল করে উঠবে।

এভাবে যদি একটি পরিকল্পনার হাত ধরে কাঠামো বানানো যায় সমস্ত স্তরের অভিভাবকদের, তাহলে-

  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতি আস্থা ফিরে আসবে,
  • ২- বিশ্বাস ফিরে আসবে।
  • ৩-বিদ্যালয়ে সমস্ত শ্রেণীর পরিবেশ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি হবেই।
  • ৪-শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে শিক্ষক নিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
  • ৫-শিক্ষক নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রতি শিক্ষার্থীদের অবহেলা করবেন না।
  • ৬-তিনি তার সন্তানটিকে হাত ধরে নিয়ে আসবেন, তিনি যে ধরনের বিদ্যালয় পড়াশোনা করেছিলেন, তার থেকে আরো উন্নত ধরনের সরকারি বিদ্যালয়।

সরকারের উদ্দেশ্যে Institutional Education of India

যে সরকার Institutional Education of Indiaকে সামনে রেখে এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করতে পারবে, তারাই মানুষের আস্থা বিশ্বাস নিয়ে বছরের পর বছর টিকে থাকবে সরকারি গদিতে। আর জোর করে অংকারি হয়ে যদি বলেন সব ঠিক আছে, সব করে দিয়েছি, আমাদের মত কেউ করেনি- তাহলে আর কিছু বলব না।

আর প্রাথমিক স্তর থেকে এভাবে পরিকল্পনা রূপায়ণ হলে এবং তা চলতে থাকলে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক বা উচ্চ শিক্ষার উন্নতি সম্ভব হবেই। উচ্চ গবেষণার জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে এদেশেই। আমাদের ছেলেমেয়েদের যেতে হবে না অন্য কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়। বরং দৃষ্টান্ত যদি হয়, অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা হয়তো আমাদের দেশেই আসবে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা(Relevant Institutional Education) কতটা প্রাসঙ্গিক- এনিয়ে আরো কিছু কথা-

উদ্দেশ্যে নিরিখে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রয়োগ বাঞ্ছনীয। নতুবা সেই শিক্ষাব্যবস্থা বৃথা পরিগণিত হতে বা ভস্মে পরিণত হতে বেশি সময় অতিবাহিত করবে না। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন তথা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা প্রচলন ও প্রয়োগ অবশ্যম্ভাবী। এগুলো আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু জানা বিষয়গুলো অবচেতনে ঢাকা থাকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে।

শিক্ষার প্রতি ক্ষেত্রেই আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা থাকে এক বিশেষ অনুভূতির দায়বদ্ধতা। সেটা হল মানবতা বা মানব ধর্ম। শিক্ষা ব্যবস্থার বা পঠনীয় বিষয়গুলোর সর্বাজ্ঞে রাখা কেবল বাঞ্ছনীয় নয়, বাধ্যতামূলক করা উচিত। প্রবীনদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায় প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী, সম্ভ্রমী করে। সম্ভ্রব মানে শ্রদ্ধা করতে শেখায় সম্মান দেওয়ার ও নেওয়ার পথকে সুগম করে। এখন সমস্যা হলো প্রকৃত শিক্ষা কি? কে দেবে সেই শিক্ষা? কোথা থেকে শুরু এই শিক্ষা? কে নেবে- তা সকলের জানা।

এখন আমারই হাসি পাচ্ছে এই ভেবে যে, যে প্রশ্নগুলো করলাম সেগুলো কি প্রকৃতই প্রশ্ন? না পাগলের প্রলাপ। আমরা জানি শিক্ষা নামক আচরণ পরিবর্তনের কর্মকাণ্ডটি কেবলমাত্র ব্যক্তিগত চাহিদার সাথে যুক্ত নয়। এর সঙ্গে যুক্ত আছে রাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ। তার সঙ্গে যুক্ত কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্র, যুক্ত আছে উৎপাদনশীল কোন প্রতিষ্ঠান এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ইত্যাদি। 

বর্তমানে শিক্ষার নানাবিধ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকলেও বাস্তবিক সর্ব প্রধান উদ্দেশ্য যে কর্মে নিযুক্ত হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করা। এটা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। অর্থাৎ বলতে পারি চাকরিতে নিযুক্ত হবার জন্যই যে শিক্ষা গ্রহণ- বুকে হাত দিয়ে কেউ না বলতে পারবে না। ব্রিটিশরা যে কেরানি তৈরীর বীজ ভারতে বপন করেছিল, স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনে শিক্ষা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কেরানি তৈরি করার বিষয়টাকে কখনোই এক নম্বরে রাখেনি।

অপেক্ষাকৃত তথাকথিত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই সুপারিশ করেছে বিভিন্ন বিষয়ে। আর তাতে সরকারি শীলমোহর পড়েছে। আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা আছে। কিন্তু হনুমান কখনোই পোয়াল চাপা থাকে না। বারবার মাথাচাড়া দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। আমি চাকরি পাওয়া বা কর্মে নিযুক্ত হওয়ার অভিলাষকেই প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে ধরতে চাইছি। যদি বলেন কেন? 

আপনারা গবেষণা করে দেখতে পারেন- পড়াশোনা সমাপ্ত করা অসংখ্য তরুণ নিয়ে গবেষণা করুন। সে মাধ্যমিক পাসই হোক বা এইচ এস বা গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স যাই হোক না কেন। প্রশ্নকর্তার দিক দিয়ে যদি বলি তাহলে প্রশ্নকর্তা তাকে কুশল বিনিময়ের পরই জিজ্ঞেস করেন- এখন কি করছিস? অর্থাৎ কোন কাজ করছিস? এই প্রশ্নটা 1000 জন প্রশ্নকর্তার মধ্যে 999 জনই করে থাকেন। উত্তরদাতা যদি বেকার হন, তিনি বিব্রত বোধ করেন।

আর যদি উত্তরদাতা কোন কর্মে নিযুক্ত থাকেন তাহলে প্রশ্নটা কিন্তু অর্থনীতিরই হলো। হয়তো সে বিব্রত হলো না এই যা। প্রশ্নকর্তা কিন্তু কখনোই তাকে এই প্রশ্ন করেন না যে, শিক্ষা তাকে কতটা সমৃদ্ধ করলো। সে কত সমৃদ্ধ হল। ভারতবর্ষের বা সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতটা ধনাত্মক ভাবনা রয়েছে বা কোন ধনাত্মক ভাবনায় আছে কি:না ইত্যাদি? এই প্রশ্নগুলো যদিও বা আসে, অনেক পরে উত্তর দাতার অর্থনৈতিক সাম্য বা পায়ের নিচের মাটি শক্ত আছে কি’না এইসব জানার পর। 

অস্বীকার করার উপায় নেই। কুশল বিনিময় শিক্ষার অঙ্গ। এর জন্য কোন প্রতিষ্ঠান যাবার প্রয়োজনও যেমন আছে, বিপরীতে যে ব্যক্তি নিরক্ষর, যে কখনোই কোনো বিদ্যালয়ে যাননি, তিনিও কুশল বিনিময় করেন। এই শিক্ষা বিদ্যালয় যেমন শেখায়, তেমনি সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করে। 

তাহলে বলা যেতে পারে বিনয়ী, কুশল বিনিময়, সম্ভ্রম, অন্যকে সম্মান প্রদর্শন, শ্রদ্ধা করা বিদ্যালয়ের পাশাপাশি এ শিক্ষা সমাজও দিয়ে থাকে। কিন্তু চাকরি বা কর্মে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি। এ সার্টিফিকেট না পেলে প্রাথমিকভাবে কেবল প্রতিষ্ঠানিক আর্থিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ হওয়ার প্রাথমিক স্তরটুকুই পার করা সম্ভব হবে না।

জাতীয় শিক্ষানীতি 2020-

তবে এর পরেও অনেক কথা আছে, যেমন জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাবে। যেখানে সমস্ত স্ট্রীমের ড্রগ্রীগুলিকে একই মান দেবার প্রসঙ্গ, ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয় চয়নের স্বাধীনতা, একটা কোর্স চলাকালীন অন্য কোন কোর্স করে আসার পর পূরোন কোর্সে পুনরায় যোগ দেবার স্বাধীনতা ইত্যাদির মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আশা করি ভারতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে এই নিবন্ধটি আপনাদের সামনে সামান্য হলেও কিছু তথ্য তুলে ধরতে পেরেছে। এ আমার আমার একান্ত অনুভবের কথা। মনে এসেছে ব্যক্ত করলাম। এবার মতামতের পালা আপনাদের। ধন্যবাদ।

Help Your Family and Friends:

Leave a Comment