সিসিটিভি ক্যামেরার বিরোধিতা কেন(Arguments Against CCTV Cameras)? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক যুক্তি, অপযুক্তি যেমন রয়েছে, তেমনি আসছে মুক্তমনা বা স্বাধীনচেতা বিষয়টির সীমাবদ্ধতা নিয়ে। আসুন দেখা যাক ও বিশ্লেষণে এর উড়রত খোঁজার চেষ্টা করি।
কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পদ্ধতিগতভাবেই রেগিং বন্ধ হোক। এ ব্যাপারে অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসবে। একটা মৃত্যু অনেককেই মন্তব্য করতে, ভিডিও তৈরি করতে বাধ্য করল। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে রেগিং বন্ধের বিষয়ে এ নিবন্ধটিও তারই ফলাফল বলা যেতে পারে। আমাদের অবস্থা এমন যে সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য মানুষের জীবনকে মূল্য দিতে হয়। এর জন্য লজ্জার আর কি থাকতে পারে?
কেন সিসিটিভি ক্যামেরা? | Why CCTV Camera in Colleges and Universities
রেগিং অত্যাচার বন্ধ করা দরকার কঠোরভাবে। তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ কর প্রয়োজন। স্বপ্নদ্বীপ হত্যায় ধরা পড়েছে অনেকেই। বিচার হবে। প্রমাণ হলে সাজা হতেই হবে। কিন্তু আর কারো যেন প্রাণ না যায়। তার জন্য পদক্ষূপ নেওয়া দরকার নিরাপত্তার খাতিরে। তা অ্যান্টি-রেগিং স্কো্যাড তৈরীর মাধ্যমেই হোক বা সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর মাধ্যমেই হোক।
আবার এটাও ঠিক কেবলমাত্র একা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে এর সমাধান করতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নেই। প্রয়োজন ছাত্রছাত্রী এবং তার সাথে সরকার, ইউজিসি এবং পুলিশ প্রশাসনের। কোনো পদ্ধতি চালু হলে সর্বাগ্ৰে প্রয়োজন মনিটরিং। অর্থাৎ কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি’না সেটার দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীরা বলছে হোস্টেল ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবারিত দ্বার। এর জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ- তাদের আগমন বন্ধ করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ তাদের প্রয়োজন হলে ক্যাম্পাসে ঢুকবে কিন্তু সই করে প্রয়োজনীয় কারণ লিপিবদ্ধ করবে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছে থাকবে আই-কার্ড।
প্রাক্তনদের কাছেও থাকতে পারে আই কার্ড। অন্যদিকে হোস্টেল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। এতে বিপ্লবী ছাত্র-ছাত্রীরা বাধা দিচ্ছে, লাল চোখ আংকছে। কেউ বলছে এটা সেকেন্ড হোম। এখানে তাদের স্মোক করার, ড্রিংক করার অধিকার আছে। সাংবাদিকক কে পারমিশন দিয়েছেন জিজ্ঞেস করলে বলে- কেউ দেয়নি। এটা তাদের অধিকারের মধ্যএই আছে ইত্যাদি।
সিসিটিভি ক্যামেরার বিরোধিতা কেন | Why Arguments Against CCTV Cameras
মূল বিষয়টি হচ্ছে নিরাপত্তা। কার নিরাপত্তা? দু’পক্ষের নিরাপত্তা।
- এক- যারা রেগিংএ শিকার হচ্ছেন তাদের।
- দুই- সিসিটিভি বসলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে ভাবছে তারা, সেই ছাত্র-ছাত্রীদেরও।
যিনি রেগড হচ্ছেন, কে তাকে রেগিং করল চিহ্নিতকরণ সহছতর হবে। আইনি পদক্ষেপ নিতে ও চালাতে সুবিধা হবে।
দুই অন্যদিকে বিপ্লবী ছাত্র-ছাত্রীরা বলছে তাদের অ্যাক্টিভিটি রেকর্ডিং করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতে পারে। এটা তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে, মানবাধিকার এ আঘাত হবে।
Jadavpur Protest in Bengali
তাদের রেকর্ডের ভিডিও বলছে নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পারে কর্তৃপক্ষ। হ্যাঁ এটা অমূলক নয়। তার জন্য সার্ভার রুম কিংবা রেকর্ডিংর রুমে নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ সহ ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধি কমিটিতে যুক্ত হতে পারেন। সকলে মিলে তার মনিটরিং করতে পারেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে অসুবিধা কোথায়?
অন্যদিকে বিপ্লবী ছাত্রছাত্রীরা বলছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের হাত ধরাধরি ভিডিও ক্লিপিং অভিভাবকদের কাছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পাঠায়। এতে অভিভাবকদের কাছে হেয় হতে হয়। লজ্জা পেতে হয়। হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ানো বা অন্যান্য আরো কাজগুলো খারাপ কাজ বলা যেতে পারে না। কেন নয়? কারণ তারা তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলামেলা ভাবেই মুক্তমনে, স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। নিশ্চয়ই ভালো কাজ। প্রতিষ্ঠানের ভিতর যখন এই ভালো কাজগুলো হতে পারে।
ওদের কাছে সেগুলো ভালো কাজ। কিন্ত এতে বিপ্লবী ছাত্র-ছাত্রীদের আপত্তি। তার অর্থ হল ওই ভালো কাজগুলোর কোথাও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যে সীমাবদ্ধতা নেই, শিক্ষক বা অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও নেই। অন্য অভিভাবকদের কাছেও নেই। কিন্তু নিজের অভিভাবকের কাছে আছে। এতে প্রমাণ হয় অভিভাবকদের কাছে তা খারাপ কাজ বা তারা অনুমতি দেবেন না। আরো প্রমাণ হয় সব কাজ সব জায়গায় করা যায় না। সে ধূমপান হোক, মধ্যপান হোক, গাঁজা সেবনই হোক।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্ররাজনীতি | Students Politics at Jadavpur University
- ১. যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবীদের সিসিটিভি বসানোর বিরোধিতার কথাবার্তায় ও কুযুক্তির মধ্যে একটা বিষয়ে স্পষ্ট হল যে, মুক্তমনা-স্বাধীনচেতা ভাবনার একটা জায়গা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেটা কী? এ নিবন্ধের মধ্যে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
- ২. এস.এফ.আই তথাকথিত বামপন্থী(প্রকৃত বামপন্থী নয়) ছাত্রসংগঠনগুলি যাদের কাছ থেকে নতুন চিন্তাভাবনা ও তার প্রয়োগ এসেছে মনে করা হয় এতদিনে পর্যন্ত, তারা সার্বিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গটিকে তুচ্ছ করে নিজেদের প্রাইভেসি নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে।
- ৩. আর এখান থেকেই শুধু বামপন্থী নয় অন্যান্য চিন্তা ও মতাদর্শ অবসান হয়ে ছাত্র রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আর বামপন্থী রাজনীতি যদি বলতে হয় তাহলে তাদেরও মতাদর্শ নিশ্চিহ্ন হয়ে দক্ষিণপন্থী পুঁজিবাদী মতাদর্শকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেটা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলি করে থাকে।
- ৪. যার ফলস্বরূপ আগামী দিনে বামপন্থী রাজনীতির প্রতি মানুষের আশা, ভরসা, আস্থা সবই জলাঞ্জলি হবে এটা নিশ্চিত। কারণ এই যদি তাদের নিরাপত্তার জন্য বিরোধিতার যুক্তি হয়, যেখানে রেগিংয়ের জন্য মানসিক ও শারীরিক পঙ্গুত্ব এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে, সেখানে রাজ্য বা দেশকে এদের হাতে ছেড়ে দিলে নতুন কি পাওয়া যেতে পারে?
মানুষের প্রতিক্রিয়া
কোনো জায়গা থেকে দেখা গেল না, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে (বর্তমান বামপন্থী ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া) শোনা গেল না, এমনকি কোনো অভিভাবকদের কাছ থেকেও না, যিনি সিসিটিভি বা আই কার্ড এর ব্যাপারে বিরোধিতা করছে। প্রত্যেকেই সিসিটিভি ক্যামেরার পক্ষে, বসানো ভালো এবং দরকার। দুষ্কৃতি বা অত্যাচারী রেগিং বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে সিসিটিভি বসানো বা আই কার্ড ব্যবহার করা প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োগ করা যেতেই পারে।
ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান সমাজে গ্রহণযোগ্যতা
আর এখানেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান সমাজে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। সমাজ তাদের ভালো চোখে দেখছে না এটা নিশ্চিত। এ বিষয়টা বিপ্লবী ছাত্র-ছাত্রীরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল। আর যাদবপুর মানে ইন্টেলেকচুয়াল, আঁতেল, বাকি সবাই গোমুখ্য, গাধা- এই ধারণা কেবল বিপ্লবীদের না, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের পক্ষেও ভালো কিছু হচ্ছে না।
একজন বিপ্লবী ছাত্রী বলছেন ইউনিভার্সিটি বা হোস্টেল ক্যাম্পাসের মতো ডেমোক্রেটিক জায়গা আর কোথাও নেই। সেই ডেমোক্রেটিক জায়গায় তারা বন্ধু সহযোগে গান বাজনা যুক্তি তক্কো আলোচনা করে থাকেন। গান বাজনা যুক্তি আলোচনা সভা সব ঠিক আছে কিন্তু ডেমোক্রেটিক জায়গা কতটা শুনে আর যাই হোক বুদ্ধিমত্তার কোন পরিচয় নেই। হোস্টেলের আশেপাশে স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে এটাও শোনা যাচ্ছে তারা হোস্টেলবাসীদের কাছে অত্যন্ত পীড়িত, অত্যাচারিত। গালিগালাজ, কটু মন্তব্য, নবীন বরণ উৎসবে উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স বাজানো ইত্যাদি হচ্ছে সেই অত্যাচারের উদাহরণ।
যাদবপুর ইউনিভার্সিটি তথাকথিত বামপন্থী সংগঠনের নেতা পরবর্তীতে রাজ্য দেশ পরিচালনায় আসবেন। বোধ বুদ্ধি বলতে কিছু নেই। এ লজ্জা মানুষকে মেনে নিতে হচ্ছে। এ বামপন্থা ও পুঁজিবাদী কলঙ্কের কলুষিত। তারই প্রমাণ।
না জানি কত গার্জেন আছেন আজ আতঙ্কে রয়েছেন। এই বুঝি কোন খারাপ খবর এলো । আবার হয়তো অনেকই আছেন, ভাবছেন Jadavpurএ ভর্তি করে তার ছেলেটা বিগড়ে গেল। মানুষ হলো না। আবার এমনো অনেকে রয়েছেন, এই ঘটনার পরে যাদবপুরে ছেলে মেয়েকে ভর্তি করার জন্য দশবার ভাববেন।
আরো পড়ুন- কুড়মী আন্দোলনের পটভূমি ও ফলাফল।