Pan Masla Side Effects ও Surrogate Advertisement in India: দীর্ঘকাল যাবৎ চলচ্চিত্র ও ক্রিকেট তারকাদের প্রভাব অতি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন এবং সামাজিক জীবন পরিবর্তনে বেশ প্রকট। বিনোদন শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের রেখাটি নিম্নমুখী হলেই মোটিভেটররা আমাদের সামনে ওই দুই জগতের নক্ষত্রদের স্ট্রাগলিং জীবনের উদাহরণ তুলে ধরেন। তরুণ থেকে শুরু করে যুবক-যুবতী এবং পৌঢ়রাও উজ্জীবিত হন।
আবার কখনো কখনো কোন মোটিভেটর ছাড়াই সরাসরি সেই তারকাদের তরুণ তরুণী যুবক-যুবতীরা অনুকরণ করতে থাকে। স্বতঃস্ফূর্ততায় তারকাদের বাইরের প্রকাশটাই সাধারণ মানুষের কাছে আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। যেমন ধরুন তাদের কথাবার্তার ধরন, পোশাক, চুলের নক্সা, চলচ্চিত্র বা বিজ্ঞাপনের তাদের বক্তব্য ও আচরণ ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের আচরণগুলোকে আমরা বা নব প্রজন্ম সমাজ জীবনে প্রয়োগ করি।
বিষয়টা হলো সেই তারকারাও অবগত তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের পারদর্শিতা সহ জীবন দর্শন এমনকি সামাজ মাধ্যম, সাংবাদিকদের সম্মুখে একটি বার্তা অথবা তাদের দ্বারা বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত সামগ্রীর প্রতি অসংখ্য মানুষজন আকৃষ্ট হন। তাইতো বিভিন্ন কোম্পানি, এমনকি কোন সরকার জনসচেতনতামূলক প্রচারে ওই তারকাদের ব্র্যান্ড হিসেবে চুক্তি ও নিয়োগ করেন।।
মুখে মাখা থেকে শুরু করে টয়লেটের গায়ে মাখানো দ্রব্যাদি অথবা কোভিড, থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা বার্তা, যাই হোক না কেন উদ্দেশ্য তাদের মুখ দিয়ে দ্রব্যাদি গুনোগান দেওয়ানো বা প্রচার করানো। এতে ক্রেতাদের ও জনসাধারণ মনে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়।
এতে একদিকে পুঁজিবাদের নড়বড়ে ভিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো বাড়তি বোঝা চাপিয়ে তাকে আরও নড়বড়ে করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আবার অন্যদিকে নতুন দ্রব্যের পরিচয়ও পাওয়া যআয়। আবার অন্যদিকে সচেতনতার প্রচারকেও অস্বীকার করা যায় না।
মানুষ তারকাদের কথা শুনবে মানবে, অনুসরণ করবে- এই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে এক বিশেষ ধরনের বিজ্ঞাপন করানো হয়। ওই দ্রব্য ব্যবহারে ব্যবহারকারীর কোন ধরনের ন্যূনতম ভালো তো হয়ই না, উপরন্ত সেই ব্যক্তি সহ, সমাজে ব্যবহারকারী সমস্ত মানুষজন তথা দেশবাসীর বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনাকে সাংঘাতিকভাবে বৃদ্ধি করে।
Pan Masla Side Effects | Surrogate Advertising Examples in India
Pan Masla Side Effects বা পান মসলার ক্ষতিকারক প্রভাব বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে বলার কিছু নেই। এ বিষয়ে আপনার সকলেই অবগত। আমার এ নিবন্ধের অন্যতম বিষয় হল তারকদের, বিশেষ করে খেলার জগতের মানুষরা কিভাবে অবঙ্গ কেন এ ধরনের জঘন্যতম কাজে নিজেদের নিযুক্ত করেন।
সেটি হল নেশাদ্রব্য। যেমন মদ, সিগারেট, জর্দা, গুটখা ইত্যাদি। আপনারা বলবেন এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, দেখা তো যায় না। হ্যাঁ দেখা যায় না। ১৯৮৬, ১৯৯০ সালে হু(WHO) সারা পৃথিবীর দেশ গুলিকে একটি বিশেষ বার্তা দেয় যে, কোন ধরনের মাদকদ্রব্যের বিজ্ঞাপন সরাসরি টেলিভিশনে দেওয়া যাবে না। অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতও সেই চুক্তিপত্রের স্বাক্ষর করে। এবং ভারত সরকারও এ বিজ্ঞাপন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ এবং আইন চালু করে।
Surrogate Advertising Examples
সেন্ট্রাল কনজ্যুমার প্রোটেকশন অথরিটি(CCPA) ২০০৩ সালে জুন মাসে একটি বিশেষ নিয়ম চালু করে যে, এ ধরনের বিজ্ঞাপন হলে কোম্পানিকে ১০ লক্ষ টাকা এবং পরে যদি আবারও বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। এরপরও নানাভাবে বিজ্ঞাপন চলছে সারোগেট বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সি এন বি সি-র Surrogate Advertisement in India সম্পর্কে খবরটি পড়তে পারেন- CCPA Issues Notices.
কিন্তু কোম্পানিগুলি ফন্দিফিকির বের করে বিজ্ঞাপনের নতুন পন্থা আবিষ্কার করেছে। সরাসরি সেই বিজ্ঞাপন দেখায় না ঠিকই, কিন্তু যেটা দেখায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটার বাজারে কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায় না। অথবা পাওয়া গেলেও তার সঙ্গে যেটার বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না, সেই ধরনের দ্রব্য বাজারে বিক্রি হয়।
যেমন ধরুন ইম্পেরিয়াল ব্লু সিডি বা ইম্পেরিয়াল প্যাকেজ ড্রিংকিং ওয়াটার। অথবা অ্যারিস্টোকেট প্যাকেজ ড্রিংকিং ওয়াটার। এই দ্রব্যগুলো বাজারে কোন অস্তিত্বই নেই অথচ বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
আবার ধরুন রজনীগন্ধা, বিমল ইত্যাদি বিভিন্ন পান মশলার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়ে থাকে বিভিন্ন তারকাদের দ্বারা। এই দ্রব্যগুলি বাজারে কিনতে গেলে তার সঙ্গে অন্য একটি ছোট্ট মতো জর্দার প্যাকেট বা গুডকার প্যাকেট দেওয়া হয়। যে গুটকা প্যাকেটটি বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় না। পান মশলা হিসেবে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং সেটা কিন্তু সরকার এখনো পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেনি। এমনকি এফ এস এ আই(FSSAI) সেই পান মশলাকে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে সার্টিফাইড করে। আইনের ফাঁকফোকর গলে কোম্পানিগুলো গুটকা বিক্রি করছে বাজারে।
কারা দেন সারোগেট বিজ্ঞাপন?
আরো পড়তে পারেন– পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার হাল ফিরতে বাধ্য।
সি এম সি ভেলোরের চিকিৎসা।
Heroes are the Surrogate Advertising Examples
তরুণ তরুণী যুবক-যুবতীদের আদর্শ, অনুপ্রেরণায় সমৃদ্ধ সেই তারকারা। অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগন, শাহরুখ খান, সালমান খান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রণবীর সিং, আলিয়া ভাট, টাইগার স্রফ, মহেশ বাবু।
Pan Masla Side Effects সত্ত্বেও ক্রিকেট তারকারা-
খেলার জগতের মানুষ- ক্রিকেট তারকা ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী হিরো কপিল দেব, সুনীল গাবস্কার। 2011 বিশ্বকাপ জয়ী হিরো বীরেন্দ্র সহবাগ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আইন অনুযায়ী গুটকার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। এটা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে এফ এস এস এ আই(FSSAI) চিহ্নিত করেছে, মাদক নয়। চালাকিটা দেখুন- মাদককে আলাদা করে দিয়ে কেবল সুপারীটাকে সুগন্ধি দিয়ে প্যাকেটজাতক করে কিভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ানা হচ্ছে। কোম্পানিগুলো তো ফন্দিফিকির খুঁজবেই, কিন্তু মহাতারকারা তারা কি জানেন না পেছনের রহস্যটা কি?
Pan Masla Side Effects:
তাছাড়াও শুধু সুপারিও তো জীব এবং মুখের ক্যান্সারকে ত্বরান্বিত করে। আর এই পান মশলাগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য কিছু রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত করা থাকে। সেই রাসায়নিক দ্রব্যগুলি ক্যানসারের সলতেতে ঘি ঢালার মত অবস্থা সৃষ্টি করে।
পান মসলা ক্ষতিকারক কি’না জানার জন্য- ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ক্যান্সার এবং ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন – এই দুটি সাইট ভিজিট করতে পারেন।
প্রথমে বলেছি তারকারা তরুন তরুণী যুবক-যুবতীদের কাছে অনুপ্রেরণা, অনুসরণযোগ্য। তারা কি জানেন না ইতিবাচক প্রচার যত তাড়াতাড়ি মানুষজনকে আকৃষ্ট করে বা মানুষ গ্রহণ করে, তার তুলনায় নেতিবাচক ঘটনাগুলির পোটেনশিয়ালিটি সাংঘাতিক। খুব দ্রুত ছড়ায়। অন্যদিকে ভারতবর্ষের অতি নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, অসচেতন, অন্ধকারে জীবন যাপন করা গরিব শ্রমিকরা তারকাদের এই নেতিবাচক আচরনগুলিকে সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে।
যে সমস্ত তারকাদের নাম এখানে বললাম তার মধ্যে অক্ষয় কুমার, কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কার, বীরেন্দ্র সহবাগদের ভারতবাসী ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। ক্রিকেট তারকাদের সাথে অক্ষয় কুমারকে রাখলাম কারণ শুনেছি তিনি নাকি মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেন না। বলিউড স্বাস্থ্যমন্ত্রী নামে আখ্যায়িত। তিনি কি’না বিমল এলাচ পান মসলার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। সুনীল, কপিল, বীরেন্দ্র কমল পসন্দের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। ক্রিকেট তারকারা, খেলার জগতের মানুষ, কোন লজ্জায়, কোন আদর্শে, কোন নৈতিকতায় আপনারা পান মশলার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।
কেবলমাত্র সুপারি, পান মসলা ক্ষতিকর প্রভাব এবং ভারতে সারোগেট বিজ্ঞাপন সম্পর্কে তারকারা অবগত নন এটা মানতে হবে?
উদ্দেশ্য কী?
কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন থেকে রোজকার, অন্যদিকে হয়তো সেই টাকার কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ অংশই কোন এনজিওকে বা তাদের দ্বারা নির্মিত একাডেমিতে স্কুল কলেজ বা অন্য কোন সেবামূলক কাজে দান করেন। সমাজসেবা ও আত্মশুদ্ধির এই অদ্ভুত পন্থা দেখে অবাক হতে হয়। হয়তো সেই টাকা দিয়েই ক্যান্সার সচেতনতা শিবির তৈরি করা হবে অথবা ক্যান্সারের জন্যই কোন হাসপাতাল তৈরি করা হবে। আমরা তখন কতই না সাধুবাদ জানাবো, কতই না বাহবা দেব। ওনাদের এবং আমাদেরও চরিত্রটা এমনই।
অনেকে বলবেন ঐ সমস্ত দ্রব্যাদি বিক্রি করে কোম্পানিগুলো যে কোটি কোটি টাকা আয় করে, সেই লাভ থেকে সরকারের ট্যাক্স আদায় হয়। বিষয়টা সেরকমই দাঁড়ালো, সেই ট্যাক্সের টাকা দিয়েই হয়তো সচেতনতা প্রকল্প অথবা ক্যান্সারের ওষুধ নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হয়।
তবে এ বিষয়ে একটা তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইছি। যদি সরকার যদি ১০০ টাকা ওই সমস্ত দ্রব্যাদি থেকে ট্যাক্স পেয়ে থাকে, তাহলে টব্যাকো ক্যান্সার সচেতনতার শিবির বা প্রচারের জন্য সরকার ৮১৬ টাকা খরচা করে। দ্য হিন্দু পত্রিকায় ৩০/০১/২০২৩ তারিখে প্রকাশিত খবরটি থেকে বিষয়টির সত্যতা দেখতে পারেন- Tobacco Product Tax Treatment Revisit.
তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো সচেতনতা শিবির বা সচেতনতা প্রকল্পের জন্য যে খরচা হচ্ছে সেই খরচাটাও কিন্তু মাদক দ্রব্য বিক্রির ট্যাক্স থেকে আসছে না। সরকারকে অন্য কোন খাত থেকে খরচা করতে হচ্ছে। এবার বলুন সরকারের লাভ হচ্ছে, না লোকসান হচ্ছে।
আদর্শ নৈতিকতা মূল্যবোধ আইকন-
সাধারণ মানুষকে মনে রাখা দরকার চিত্র তারকা এবং ক্রিকেট তারকাদের জীবনযাপন বা তাদের চাকচিক্য দেখে, তাদের আচার ব্যবহার দেখে, তাদের চুলের স্টাইল, পোশাক পরিচ্ছদ দেখে, তাদের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করবেন না। তাদের কোন ভালো কাজ পর্যবেক্ষণ করুন, অন্তর দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে দেখার চেষ্টা করুন। বিশ্লেষণ করুন। যদি মনে হয় তিনি আদর্শবান, তিনি আইকন, তবেই অনুসরণ করে, তার সংগ্রাম স্ট্রাগলকে অনুসরণ করে নিজের জীবনের সঙ্গে বাঁধতে পারেন।
নতুবা এই বিপদজনক বিজ্ঞাপন প্রচার একেবারেই প্রভাবিত হবেন না। তারা নিজেদের টাকার জন্য, নিজেদের রোজকারের জন্য সমাজকে প্রলোভিত করছে। সেই প্রলোভনে পা দিলেই নিজের সহ পরিবার, পরিবেশ এবং দেশের সমূহ বিপদ।
কিভাবে সারোগেট বিজ্ঞাপন বন্ধ করা যায় | How Stop Surrogate Advertisement in India
এক্ষেত্রে চারটি পক্ষের কথা এখানে দেখা যাচ্ছে। প্রথম পক্ষ হচ্ছে কোম্পানিগুলো, দ্বিতীয় পক্ষ হচ্ছে কোম্পানি যাদেরকে দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়াচ্ছে, তৃতীয় পক্ষ হচ্ছে সরকার, সরকারি নীতি এবং চতুর্থ পক্ষ হচ্ছে যারা ব্যবহার করছেন অর্থাৎ জনসাধারণ।
কোম্পানিগুলো সব সময় ফাঁকফোকর খুঁজবে। তাদের লাভ কোন দিক দিয়ে আসবে সেটা বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবে এবং এর জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করবে। সেই পন্থায় তারকাদের টানার চেষ্টা করবে, আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে, প্রলোভন দেবে প্রচুর পরিমাণে টাকার অফার করবে। এবং সেই লোভেই চলচ্চিত্র এবং ক্রিকেট তারকারা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
লোভ সামলাতে পারছেন না। তারা যদি এই ফোনের ফাঁদে পা না দেন, এদের নিজের আদর্শকে, নৈতিকতাকে মূল্যবোধকে যদি বজায় রাখার চেষ্টা করেন তাহলে হয়তো বিজ্ঞাপন নিয়ে এত বাড় বাড়ন্ত হবে না। হয়তো অন্য কোন নন-সেলিব্রেটি মানুষজন সে বিজ্ঞাপন দেবেন। সেক্ষেত্রে সমাজে প্রভাবটা কিন্তু অনেকটাই কম পড়বে পারে। পড়বেই না তা নয়, তবে কম পড়বে।
এটাকেও বন্ধ করার একেবারে মোক্ষম পন্থা হলো সরকারি আইন এবং নীতি। সরকার যখন বুঝে গেছে সারোগেট এডভারটাইজ হচ্ছে, তাহলে তাদেরকেও একটু কঠোর হওয়া দরকার। ফাঁকফোকরের বিভিন্ন পন্থাগুলোকে নিমেষ বন্ধ করা দরকার। এই ধরনের কোন সারোগেট বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। সেটা টেলিভিশনই হোক অথবা কোন প্রিন্টেড সংবাদপত্রই হোক।
সরকার যদি মনে করে এখান থেকে ট্যাক্স আসছে তাহলে একটু আগে হিসাব দিলাম সেই ট্যাক্সের টাকায় কিন্তু সচেতনতা মূলক প্রকল্প বা প্রচার করার জন্য অথবা গুটকা খেয়ে যে থুতু ফেলা হচ্ছে, সেই থুতু পরিষ্কার করতেও প্রচুর খরচা হয়। যেমন ধরুন হাওড়া ব্রিজের উপর যে গুটকা থুতু পড়ে রয়েছে সেই গুটকা থুতুর জন্যেই ব্রিজে মরছে ধরছে। হাওড়া ব্রিজ ক্ষয় পেয়ে যাচ্ছে। এটাও Pan Masla Side Effects এর উদাহরণ।
অন্যদিকে রেলের বিভিন্ন অংশে, কামরা হতে পারে, স্টেশনের দেওয়ালে হতে পারে, সে গুটখার থুতু পরিষ্কার করতে রেলের প্রচুর পরিমাণে ব্যয় হচ্ছে। এটিও Pan Masla Side Effects আর এক উদাহরণ। ক্ষতি যদি হয়, তাহলে সেই ক্ষতি যে দ্রব্য থেকে আসছে, সে দ্রব্যকে নিষিদ্ধ করা তো দরকার। এবং সারোগেট বিজ্ঞাপন বন্ধ করে সমূলে উৎখাত করা প্রয়োজন।
জনগণের কী করা উচিত? জনগণের তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত। বিভিন্ন জায়গায় সারোগেট বিজ্ঞাপনের বিরোধিতা করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে, প্রিনটেড মিডিয়া, টেলিভিশন এবং ইউটিউবার যারা আছেন এবং আমি যেভাবে ব্লগ লিখছি সেভাবে, সরাসরি তাদেরকে টুইট করা দরকার, তারকাদের টুইট করা দরকার।
প্রকৃত আদর্শের উদাহরণ
এবার একটু অন্য কথা বলি। সত্যি সত্যিই আদর্শবান মানুষ, নৈতিক মানুষ মূল্যবোধযুক্ত মানুষের উদাহরণ এখানে দেওয়া যেতে পারে। এই মুহূর্তে আমার কাছে দুজনের উদাহরণ রয়েছে। যদি আপনাদের কাছে এরকম মানুষ থাকেন আপনারাও তুলে ধরতে পারেন।
১৯৯৬ সালে আইটিসি বিশ্বকাপ স্পন্সর করেছিল আইটিসি। তারা উইলস ওয়ার্ল্ড কাপ ব্র্যান্ডে বিশ্বকাপ স্পন্সর করেছিল। সেটা অন্য বিষয়। হয়তো অনেকেই বিশ্বকাপ উইলস এর নামে চাননি কিন্তু বি সি আই টাকার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে রাজি হতে বাধ্য হয়েছিল।
একজন মানুষ কিন্তু সরাসরি প্রতিবাদ না বললেও পরোক্ষে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি হলেন সচিন তেন্ডুলকার। আপনারা ১৯৯৬ সালের শচীনের যদি কোন খেলার ভিডিও ক্লিপিং দেখেন, তবে দেখবেন তিনি সেই বছর তার ব্যাটে কোনরকম স্পন্সর স্টিকার ছাড়াই সাদা ব্যাটে খেলেছিলেন। এটা কিন্তু তার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ তাকে খেলতে হবে। তিনি খেলতে বাধ্য। কিন্তু তিনি কোন স্পন্সসর গ্রহণ করেননি।
তাকে পান মশলার বিজ্ঞাপনের জন্য পরবর্তী ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা অফার করা হয়েছিল কিন্তু তিনি রাজি হননি। ২০১০ সালে ইউ বি গ্রুপ শচীনকে কুড়ি কোটি টাকার অফার করেছিল। সেই অফার তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
অন্যদিকে ইমরান হাশমি তার সিনেমা দেখতে হয়তো আমাদের একটু অস্বস্তি লাগে। কিন্তু মানুষটি সত্যিই আদর্শবান। ২০১৩ তে তিনি একটি চার কোটি টাকার বিনিময়ে একটি অ্যালকোহল ব্র্যান্ডের স্পন্সরশিপ পেয়েছিলেন বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য কিন্তু তিনি অ্যালকোহল এর জন্য কোন বিজ্ঞাপন দেননি।
উপসংহার
আমাদের সমাজ ভালো-মন্দের সংমিশ্রণে তৈরি। সাধারণ মানুষ যদি কিছু খারাপ কাজ করেন, তার প্রভাব তার আশেপাশের লোকের উপরেই হয়তো পড়বে। কিন্তু যারা নক্ষত্র, চলচ্চিত্র অথবা ক্রিকেট তারকা, তারা তো সেলিব্রিটি তাদের একটা বাইট সারাদেশ জুড়ে সাংঘাতিক প্রভাব ফেলতে পারে। সেটা ভালো হোক অথবা মন্দ হোক। ভালো যত তাড়াতাড়ি প্রচারিত হয়, মন্দের প্রভাবটা তার তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি মানুষ গ্রহণ করে নেয়।
বিশেষ করে কম বয়সি তরুন তরুণী, যারা অপরিণত মস্তিষ্কের। তারা ভাবতে থাকে আমাদের হিরোরা, আমাদের আইকনরা যদি এই জিনিসটা ব্যবহার করেন বা ব্যবহার করতে বলেন তাহলে কেন করব না। অবশ্যই তার মধ্যে ভালো কিছু জিনিস আছে। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণায় আমাদের দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে। আজই সচেষ্ট হোন। প্রতিবাদ করুন।