পরিবার কি ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান: টমাস এডিসনের মা’য়ের ভূমিকা’ই প্রমাণ করে পরিবারের বাবা-মা-অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কোন অসীমতায় পৌঁছে দেয়। প্রথমেই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা চাইছি বানান ভুলের জন্য। ‘পরিবার কী ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান’ বাক্যটিতে ক-এ ঈ’কারের বদলে ই-কর দেবার জন্য। লেখা হয়েছে- পরিবার কি ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান? এটা ইচ্ছাকৃত ভুল। দেখুন এটা ইন্টারনেট অনলাইন মিডিয়া। আমাকে দেখতে হয় মেশিন কী চাইছে। কোন বাক্য আপনার সার্চ করছেন।
তাই প্রতি ক্ষেত্রে আপনারা পরিবার কি ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের বদলে, পরিবার কী ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান পড়বেন। এই বিষয়টিকে কী ওয়ার্ড রিসার্চ বলে। এটাও শিক্ষার বিষয়। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
পরিবার কাকে বলে?
পরিবার বলতে বা পরিবারের সংজ্ঞায় অনেকেই নানান সাম্য বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাবো না। কেননা সাধারণ মানুষ হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে খুবই সহজ সরল ভাষায় পরিবার কাকে বলে- ইয়ে বিষয়টি উত্থাপন করব। তবে পরিবার কাকে বলে এ বিষয়ে সকলেরই অল্পবিস্তর ধারণা আছে। কেননা আমরা সকলেই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত পারিবারিক জীব।
অন্যদিকে অন্যান্য প্রাণীদেরও প্রিয়বর আছে। তারাও পারিবারিক। তবে মনুষ্য পরিবার ও জন্তুদের পরিবারের পার্থক্য বিদ্যমান। এ নিবন্ধে সে প্রসঙ্গ আলোচনার বিষয় নয়।
পরিবার কাকে বলে- এ নিয়ে অনেকেই বলেন স্বামী-স্ত্রী পুত্র-কন্যা নিয়ে একটি বাড়িতে বসবাস করলে তা পরিবার হয়।
অনেকে বলেন এটা সংকীর্ণ অর্থ। স্বামী-স্ত্রী পুত্র-কন্যা ছাড়াও স্বামীর ক্ষেত্রে মা-বাবা, স্ত্রীর ক্ষেত্রে শ্বশুর শ্বাশুড়ী নিয়ে এক বাড়িতে বসবাস করলে তা হয় পরিবার। এখানেও এক সংকীর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা যায়, তা হল- স্ত্রীর মা- বাবা কোথায় থাকবেন? এর উত্তর স্ত্রীর দাদা বা ভাইয়ের কাছে। যদি স্ত্রী তার মা বাবার একক সন্তান হন তাহলে?
বর্তমান সময়ে এর উত্তর অতি সহজ- মা-বাবা তার মেয়ের কাছে থাকবেন। শুধু তাই নয় ব্যাপক ও প্রসারিত অর্থে পরিবার হল এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষ জন এবং তাদের সন্তান সন্ততি, তাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তি অথবা রক্তের সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিও, বৈবাহিক আত্মীয় সকল মানুষজন মিলিতভাবে, সুসম্পর্কের মাধ্যমে সহাবস্থান গড়ে তোলেন।
কিন্তু তা হবার নয়। বর্তমানে পরিসর বা পরিধি অনেক ছোট হয়ে গেছে। যদিও পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন যাবৎএই সংকীর্ণ ধারায় প্রচলিত হয়ে আসছে এবং আমাদের প্রাচ্য দেশগুলিতে এই ধরা ক্রমবর্ধমান। এবং পরিবার একেবারে অনু থেকে পরমাণু পরিণত হয়েছে। তাই পরিবার কাকে বলে- এর উত্তর ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকায় স্বাভাবিক।
পরিবারের শ্রেণীবিভাগ-
বর্তমানে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের পরিবার আমরা দেখতে পাই । এখানে সাধারণ কয়েকটি পরিবারের কথা উল্লেখ করা হলো :
নিউক্লিয়ার পরিবার-
এই পরিবারটি হলো খুবই ছোট পরিবা। এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে চারজনের বেশি হয় না বললেই চলে । বাবা মা ও তাদের এক বা দুই সন্তান নিয়েই এই পরিবার।
সম্পর্কিত পোস্ট- একান্নবর্তী পরিবার ও অনু পরিবার এবং সমাজ।
একক-পিতা-মাতা পরিবার-
এই ধরণের পরিবারে একজন পিতা(মাতা অনুপস্থিত) অথবা একজন মাতা(পিতা অনুপস্থিত) এবং তাদের একের অধিক সন্তানরা থাকে।
বর্ধিত পরিবার-
এই পরিবার বেশ বড় ধরনের হয়। এখানে একসাথে পরিবারের অনেক সদস্য একই ছাদের নিচে বসবাস করেন। এই পরিবারে দাদু ঠাকুমা জেঠু, বাবা, কাকা এবং তাদের সন্তান-সন্ততিরা একসাথে মিলেমিশে থাকে।
মিশ্র পরিবার-
এমন পরিবার গঠিত হয় যখন একজন ব্যক্তি দুবার বিয়ে করে এবং প্রথমবারে বিবাহ থেকে তাদের সন্তানদের একত্রিত করে একটি নতুন পরিবার গঠন করে।
দত্তক পরিবার-
এই ধরণের পরিবার গঠিত হয় যখন কোন বাবা-মা অন্য কোন স্থান থেকে শিশুকে দত্তক নিয়ে মানুষ করেন। তখন এই পরিবার গঠিত হয়।এখানে বাবা মার কোন ঔরসজাত সন্তান থাকে না ।
পালক পরিবার-
এই ধরণের পরিবারে বাবা-মা তাদের ঔরসজাত সন্তান নয়, তবে রাষ্ট্র বা অন্যান্য সংস্থাদ্বারা তাদের তত্ত্বাবধানে রাখা শিশুদের যত্ন নেন।
প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব শিক্ষা, শৃঙ্খলা দায়িত্ববোধ, নিয়ম-কানুন, আচার অনুষ্ঠান এবং কাঠামো রয়েছে।পরিবার তার নিজের মতো করে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া এবং মিলেমিশে বসবাস করে।
পরিবার কি ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান
পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা মানব সভ্যতার শুরু থেকেই বিদ্যমান। পরিবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ কিছু মানুষ ও তার সন্তান সন্ততিরা একই ছত্রছায়া অবস্থান করে। সাধারণত পরিবারকে কোন ব্যক্তি বেশিরভাগ সামাজিক ক্রিয়া-কলাপ এর কেন্দ্র হিসাবে মানা হয়। পরিবার প্রত্যেক সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমর্থনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
পরিবার শিক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠান-
পরিবার হলো শিশুদের প্রথম পাঠশাল। জীবনের প্রথম পাঠ শিশুরা পায় এই পরিবার থেকেই। পরিবার শিশুদের শিক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। শিশুরা শৈশবে পরিবার থেকে যে শিক্ষা অর্জন করে, তা সে সারা জীবন ধরে রাখে। পরিবার তার সদস্যদের মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং রীতিনীতি শেখানোর মাধ্যমে সামাজিক জীবনের উপযুক্ত করে তোলে ।
এটি মানসিক সমর্থন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও সরবরাহ করে। পরিবারের কোনও সদস্য অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী হলে কিংবা কোন সদস্য যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে সকল সদস্যরা একসাথে হয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে এমনকি তত্ত্বাবধায়ক হিসাবেও কাজ করতে পারে।
শিশুদের শিক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার এবং পরিবার শিশুদের শিক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। পরিবার তার সদস্যদের মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং রীতিনীতি শেখানোর মাধ্যমে সামাজিক জীবনের উপযুক্ত করে তোলে । পরিবার তার প্রত্যেক সদস্যদের মানসিক সমর্থন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও সরবরাহ করে। পরিবারের কোনও সদস্য অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী হলে কিংবা কোন সদস্য যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে সকল সদস্যরা একসাথে হয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে এমনকি তত্ত্বাবধায়ক হিসাবেও কাজ করতে পারে।
সুরক্ষা ও স্বকীয়তা প্রদানের শিক্ষা-
পারিবারিক প্রতিষ্ঠান একটি সার্বজনীন ধারণা যা প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান। প্রত্যেক ব্যক্তির একটি পরিবার থাকা আবশ্যক হলেও অনেক মানুষ এখন পরিবারহীন। একটি পরিবার তার ছত্রছায়ায় অবস্থিত প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করে। স্বকীয়তা, অনুভূতি, নিয়ন্ত্রিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণ করতে শেখায়।
মানবজাতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার শিক্ষা-
পরিবারের প্রধান কাজটি হল মানবজাতির ধারাবাহিকতা হিসাবে বিবেচনা করা, যা সন্তানের জন্ম এবং সঠিকভাবে লালন-পালন এবং যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে হয়। এর পাশাপাশি, একটি পরিবার যৌন চাহিদা পূরণে সহায়তা করে এবং প্রতিশ্রুতি এবং যৌন বিশ্বস্ততার অনুভূতিও সরবরাহ করে।
সাধারণত পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের কিছু সাধারণ এবং নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে, যা সমস্ত পরিবারের জন্য প্রযোজ্য হতেও পারে বা নাও হতে পারে। তবে কিছুটা অনুসরণ করা হয়। পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:
সার্বজনীনতার শিক্ষা-
পরিবার প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান, অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তি একটি পরিবারের অংশ বলা যেতে পারে ।
স্থায়ী বাসস্থান গড়ার শিক্ষা-
প্রত্যেকটি পরিবারের একটি নির্দিষ্ট বাসস্থান রয়েছে যেখানে পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য একই ছাদের নিচে একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকে এবং এটি পরিবারের সমস্ত সদস্যদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান।পরিবারের ছোট সদস্যরা বড়দের ছত্রছায়া লালিত পালিত হয়। পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যর কাছে এই বাড়িটা হল স্বর্গের মতো। এই বাসস্থান ওই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে সুশৃঙ্খলা বদ্ধ করতে সাহায্য কর।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বা আর্থিক নীতি শিক্ষা-
প্রতিটি পরিবারের কিছু না কিছু আর্থিক নীতি রয়েছে। পরিবারের বড় সদস্যরা বিশেষ করে কর্তা স্থানীয় ব্যক্তিরা আর্থিক উপার্জনে মনোননিবেশ করেন, যা পরিবারের সমস্ত সদস্যের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।
প্রত্যেকটি পরিবার কীভাবে তাদের নিজেদের শিশুদের বিকাশকে প্রভাবিত করে?
পরিবার হল একটি মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা শিশুদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজ আমাদের সমাজে নানা ধরণের পরিবার আমরা দেখতে পাই, এবং প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব গতিশীলতা এবং কাঠামো রয়েছে।
গবেষকদের পরামর্শ থেকে জানা যায় যে,কোন শিশু কী ধরণের পরিবারে বেড়ে ওঠে তা তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ,
- এক-পিতা-মাতা পরিবারের সন্তানদের আচরণগত সমস্যা অনেক বেশি হতে পারে।
- দুই-পিতা-মাতা পরিবারের সন্তানদের তুলনায় মিশ্রপরিবারের শিশুদের ও নতুন অন্য কোন পরিবারের নিয়মকানুন, পদ্ধতি ও আচার-আচরণের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে অসুবিধা হতে পারে।
যাইহোক, এটি বিশেষ করে লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশু বিকাশের উপর পরিবারের প্রভাব সর্বদা নেতিবাচক হয় না। উদাহরণস্বরূপ, বেশি সদস্য যুক্ত পরিবারের শিশুরা একসাথে অনেকগুলো মানুষের সান্নিধ্য, সমর্থন এবং জ্ঞানের ভান্ডার থেকে অনেক কিছু শেখার এবং জানার সুযোগ পায় আর তার থেকে উপকৃত হতে পারে।
উপসংহার
আশা করি পরিবার কাকে বলে ও পরিবার কি ধরনের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের ধারণায় এই লেখাটির সামঞ্জস্য ও সংগতি থাকল। তবে আরো বলা যায়- একটি শিশু কী ধরণের পরিবারে বেড়ে ওঠে তা নির্ভর করে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ওপর। যাইহোক, এটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি পরিবার অনন্য, এবং শিশু বিকাশের উপর পারিবারিক পদ্ধতি ও কাঠামোর প্রভাব বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা মানব সভ্যতার ও সমাজের শুরু থেকেই বিদ্যমান। পরিবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ কিছু মানুষ ও তার সন্তান সন্ততিরা একই ছত্রছায়া অবস্থান করে। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান একটি সার্বজনীন ধারণা যা প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান।
এবার আপনাদের কাছ থেকে মতামতের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ।