The World food day 2021 and Society in Bengali | বিশ্ব খাদ্য দিবস 2021

মানুষের প্রাথমিক চাহিদার সর্বাগ্রে খাদ্যের অবস্থানকে কোনোকালে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আগামী 16 অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস 2021(the world food day 2021)। তারই প্রাক্কালে এই অতি প্রয়োজনীয় বস্তুটির অস্তিত্ব ও ধারাবাহিকতার উপস্থাপনকে অগ্রাহ্য করা অর্থে জীবনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানানো। সমস্ত জীবকুল উদ্ভিদসহ প্রাণীদের জঠর পূরণের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ খাদ্য নিশ্চিত করে। তেমনি অন্যান্য গ্রহ থেকে পৃথিবী যে ভিন্ন তারও অনেকাংশ খাদ্যই দায়ভার বহন করে। আগামী 16 অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস 2021(the world food day 2021)। প্রতিদিনের গুরুত্বের সাথে এদিনও বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। কখনো কখনো সারা পৃথিবীর মানুষ একসাথে, কখনো বা দেশভেদে কিছু জাতীয় দিবস পালিত হয়ে আসছে।

আন্তর্জাতিক/ বিশ্ব খাদ্য দিবসের(the international/the world food day 2021) উত্থাপনের প্রয়োজন হলো কেন?

জীবের জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। মানুষও জীব। সুতরাং তার জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্যান্য উদ্ভিদ, জীবদের খাদ্যের যোগানের ব্যাপারে অর্থপ্রদানের প্রয়োজন হয় না। অবশ্য গৃহপালিত পশুর জন্য খাদ্য, কৃষিকাজের স্যার ক্রয়ের জন্য মানুষকেই অর্থ জোগান দিতে হয়। আবার অন্যান্য কিছু জীব নিজে নিজেই খাদ্য অন্বেষণ করে থাকে। স্বাভাবিক উদ্ভিদ সহ, গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু সহ প্রাণীরা।

মানুষের সাথে অন্যান্য জীবের খাদ্য যোগানের আরেকটি প্রধান পার্থক্য- মানুষ কাঁচা সবজি, চাল ডাল খেতে পারো না। মানুষকে রান্না করে খেতে হয়। স্থানভেদে রান্নার ধরন ও খাদ্য খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন হলেও সকল মানুষেরই যোগানের প্রবণতা প্রায় এক।

কিন্তু যোগান সরবরাহ নিশ্চয়তার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা এবং প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয় স্বল্প বা অধিক যোগানের মধ্যে মিশে আছে দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষ এবং সংগ্রাম। একেই বলে জীবন যুদ্ধ। আর যুদ্ধ অর্থ জয়-পরাজয়ের ঘটনা‌,  জীবন-মরণ। কেউ থাকে দুধে-ভাতে, আবার কাউকে এঁটোকাটা অথবা না খেয়ে জীবনযুদ্ধে হার মানতে বাধ্য হয়।

জয় পরাজয়, হার মানা না মানা পৃথিবীর প্রতিটি দেশে কম বেশি বিদ্যমান। বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে। ন্যূনতম খাদ্য যোগানের জন্য কোটি কোটি মানুষকে রোজ সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়। তাদের সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয় বলে অন্যান্য মানুষজন কর্ম না করে খাদ্য হাতের মুঠোয় পেয়ে যায় তা নয়। বরং বলা ভালো কর্মক্ষেত্র এবং রোজগারের পরিধি স্বল্পতা।

সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি- অসম বন্টন। কর্মসংস্থান, রোজগার, অর্থ এবং খাদ্য অসম বন্টনের মধ্যে আসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বস্তু এবং প্রয়োজন না মেটার ন্যূনতম বস্তু। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য যেমন অপচয় হয়, ঠিক তেমনি প্রয়োজনে জীবন ধারণের খাদ্যের অভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে।

খাদ্য সমস্যা ও বিশ্ব খদ্য দিবস-এর উত্থান-

বর্তমান বিশ্ব খাদ্য যোগান ও সরবরাহে এক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন। কারন হিসাবে বলা যায়- উৎপাদন হ্রাস, কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস, চাষের প্রতি মানুষের অনীহা, পেশা পরিবর্তন এবং আরো অনেক কিছু। অন্যদিকে চাহিদা বেড়েই চলছে। অথচ যোগান নেই। এর মাঝে আছে দালাল চক্র। আর এসবের জন্য খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি।

এইসব সমস্যার মধ্য থেকে উঠে আসে খাদ্যের প্রতি গুরুত্ব প্রদানের প্রশ্ন। এ প্রশ্নের হাজার উত্তর আছে। তারই মধ্যে বছরের একটা দিন খাদ্য দিবস হিসাবে পালন করে সচেতন হওয়ার অঙ্গীকারকে অস্বীকার করা যায় না।

1945 সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম সময়। সারা পৃথিবী উত্তাল। মানুষ হাহাকার করছে। মৃত্যু মিছিল, স্বাস্থ হানি, খাদ্যাভাব। খাদ্য নিরাপত্তার অভাব। পুষ্টির অভাব। এরই মধ্যে UNO প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। UNO-র একটি নতুন বিভাগ- United Nations Food and Agriculture Organization এর তত্ত্বাবধানে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হল এবং পরবর্তিতে 1979 সালের 16 অক্টোব্র থেকে এই দিন্টি পালিত হতে লাগল। । সারা বিশ্ব ব্যাপী প্রচারিত হতে লাগল World Food Programme(WFP)। 2020 সালে WFP তদের কার্যের জন্য শান্তি নোবেল পুরষ্কারও পেল।

বিশ্ব খাদ্য দিবস ও খাদ্যের গুরুত্ব | The World Food Day and Importance of Food –

কোন বস্তুর অভাব সেই বস্তুর প্রতি গুরুত্ব প্রদানে বাধ্য করে। অর্থাৎ যাদের কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য যোগান আছে, তারা খাদ্যের প্রতি যত গুরুত্ব প্রদান করে, খাদ্যাভাবি লোকদের খাদ্যের প্রতি গুরুত্ব অনেক বেশি।

তবে একথাও ঠিক খাদ্য যেহেতু মানুষের প্রাথমিক চাহিদার প্রথম বস্তু, তাই সার্বজনীনভাবে খাদ্যের প্রতি গুরুত্ব সবারই থাকে। এইভাবে যে জীবনধারণের জন্য খাদ্য অবশ্যই প্রয়োজন।

যেমন অনুষ্ঠান বাড়ির অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় রান্না করা খাদ্য উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, তার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে। অন্যদিকে সেই খাদ্যের জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অনাহারী নিরন্ন মানুষজন সেই খাবারের দিকে গভীর প্রেম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

খাদ্যের সদ্ব্যবহার | Proper Utility-

শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। শরীর যতটুকু চাইবে জঠর সেভাবে পূরণ করা প্রয়োজন। দরকার হলে সামান্য কম খাওয়া ভালো প্রয়োজনের বেশি না। ‘কম খেলে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ’-:যদিও এই টিপ্পনীটি গরীব হীরের খনিতে কাজ করা অনাহারী অত্যাচারিত শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলা, তবুও বলবো এ বাক্য সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কম খাদ্য যেমন শারীরিক দুর্বলতা বা রোগ বয়ে আনে, তেমনি বেশি খাবার শরীরে রোগের বাসাও তৈরি করে।

খাদ্যের সদ্ব্যবহারে যে ঘটনাগুলি ঘটে তার বিবরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন- 

খাদ্য নষ্ট না হওয়া | No Food Wastage-

অতিরিক্ত খাবার ভক্ষণের সীমা অতিক্রম করলে উচ্ছিষ্ট সৃষ্টি হয়। উচ্ছিষ্ট খাবার মানুষের ব্যবহার উপযোগী নয়। অন্যদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে বাধ্য করা উচিত নয়। এতে মানুষের মনুষ্যত্ব, মানবিকতার মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে পেটে আগুন নেভানোর জন্য উচ্ছিষ্টভোগীর সংখ্যাও খুব একটা কম নয়।

তাই বলা যেতে পারে সামাজিক জীব হিসেবে প্রত্যেক সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের খাদ্য নষ্ট না করে প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব প্রদান করা।

খাদ্যের সঠিক বন্টন | Proper Distribution of Food-

সমবণ্টন বলতে এখানে সমস্ত দেশের খাদ্য সমানতার উপর নয়, ধনী-গরিবের প্রত্যেক বাড়ির প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের ওপর জোর দিতে বলা হচ্ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম উৎপাদনশীল ভূমিতে অধিক উৎপাদনশীল আশাবাদী দ্রব্য যেন কনুৎপাদনশীল এলাকায় পৌঁছে দেয়। এই অঙ্গীকারও প্রয়োজন। রাজস্থানের রুখাসুখা জমিতে কৃষি কাজ হয় না বলে তারা ভুখায় অথবা পাহাড়ি এলাকায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কম বলে তারাও অনাহারী থাকবে এ অসহনীয়। আবার দারিদ্রতা জন্মগত পাপ বলেও নিজের প্রতি আত্মগ্লানি অথবা ধনীর অহংকার ধ্বংসের নিশ্চয়তাকে ত্বরান্বিত করে।

খাদ্য নিশ্চয়তা | Assurance of Food-

খাদ্যের নিশ্চয়তা সার্বিক ভাবে প্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন। আর এ কাজে যেমন সরকারের প্রধান ভূমিকা আছে, তেমনি জনসাধারণকেও সরকারকে খাদ্য নিশ্চয়তা বাধ্য করানো জন্য চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন। যদিও এ ব্যাপারে ভারতের সমস্ত রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা চালু আছে, তবে কে কতটা সামগ্রি পাবে, কোন কোন সামগ্রি পাবে তার সঠিক নির্বাচন ও সরবরাহ হয় না। রোজগার ও পরিবারপিছু রেশন বন্টনের অসামঞ্জস্য চোখে পড়ার মতো।

এ ব্যাপারে পরিবারগুলিকে সরকার বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে রেশন কার্ড বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। রোজগারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রেশন কার্ড শ্রেণীর অসামঞ্জস্য সহ কার্ড না থাকা লোকের সংখ্যাও কম নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুয়ার সরকার প্রকল্পে অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মত রেশন কার্ড তৈরি ও বিতরণের কার্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মানুষ আশায় আছে এর সমাধান হবে।

খাদ্য নিরাপত্তা | Food Security-

রেশনিং পদ্ধতির মধ্যে জড়িয়ে আছে খাদ্য নিরাপত্তা। অর্থাৎ খাদ্য যোগানের নিশ্চয়তার সাথে তার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। তাকে অস্বীকার করা অসম্ভব। নাগরিক হিসেবে নাম আছে কিন্তু দীর্ঘদিন রেশন কার্ড হাতে পায়নি। তার নামে খাদ্য কেউ তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সন্ধান পাওয়া অসম্ভব না হলেও সকলের সে ব্যাপারে উৎসাহ থাকে না। ‘আপন আপন পাতে পড়লে ভোজ’- উক্তিটিকে অগ্রাহ্য করার মানসিকতা সকলের থাকেনা। কেননা কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা।

গুণগত খাদ্য সরবরাহ | Supply of Quality Food-

রেশনিং পদ্ধতিতে যে খাদ্য সরবরাহ তার গুণগতমান এর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। বর্তমানে যে চাল ডাল আটা রেশনে বিতরণ হয়, সকলের পক্ষে সমভাবে গ্রহণ করে না। কারণ হিসেবে গুণগতমানকে অগ্রাহ্য করা মুশকিল। তার স্বাদ এবং খাদ্যমূল্য কতখানি তাকে কে মাপবে? ঠিক এ কারণেই সচ্ছল পরিবারগুলি সরকারী রেশনের পরিবর্তে বাজার থেকে অধিক মূল্যে খাবার সংগ্রহ করে। পুনরায় সেই প্রাচীন ধারণাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় যে, সরকারী রেশন মানেই তা গরিব নাগরিকদের জন্য। সচ্ছল পরিবারের সরকারি রেশন থেকে তোলা অব্যবহৃত সামগ্রী খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে না তা কেউ বলতে পারে না। এক্ষেত্রে সকলের জন্য সাধারণ প্রকল্পের সদ্ব্যবহার হয় না।

আরো পড়ুন-

উপরিউক্ত সকল প্রয়োজনীয়তা একটি লক্ষ্যকে স্থির করে তা হল- সুস্বাস্থ্য ও রোগমুক্ত জীবন। খাদ্যের সঠিক সরবরাহ, সদ্ব্যবহার শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ, জীবনধারণকে নিশ্চিতই করে না, সেইসঙ্গে খাদ্যের প্রতি যথার্থ গুরুত্ব, তার মূল্য প্রদান এর দিকে নজর দেয়। এ কেবল অঞ্চলগত মানসিকতা নয়, সারা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তরের মানুষকেই এ ধারণা পোষণ করে চলতে হবে। তারই নিশ্চয়তা প্রদান করার জন্য বিশ্ব খাদ্য দিবস এর প্রচলন। এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবস 2021 পালিত হতে চলেছে আগামী 16 অক্টোবর 2021 এ। 

বিশ্ব খাদ্য দিবস 2021 এর থিম | Theme of the World Foo day 2021-

বিশ্ব খাদ্য দিবস 2021 এর থিম হল- Safe Food for a Healthy Tomorrow. এখানেই বোঝা যাচ্ছে আমাদের খাবার ার খাবার মতো নেই। বিষে ভরে গেছে। মানুষের ফাস্ট ফুডের দিকে ঝোঁক আর যেটুকু চাল ডাল তেল থেকে পাই তা সবই ভেজাল আর রাসায়নিকে ভরপুর। এখানে ধ্নী গরীব কেউ এর হাত থেকে নিস্তার পায় না। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি খাদ্যের মূল্যায়নের জন্যও বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং এবছরের বিশেষ থিম- আগামী সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য

Leave a Comment