Father’s Day 2022 in Bengali | Absolute Respect to All Fathers | পিতৃদিবস 2022

মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে আর বাবার ধারন? এক অসীম আকাশের মতো আচ্ছাদন। 20 শে জুন ফাদার্স ডে(Father’s Day 2022)। তাই মনে হল বাবাকে নিয়ে মনের মধ্যে যে কথাস্মৃতিগুলো আছে তা ভাষায় প্রকাশ করি। পিতৃদিবস 2022(Father’s Day 2022) দিনটা শুধু যে বাবার জন্য স্পেশাল তা নয়, প্রতিটি দিনই মা আর বাবা আমাদের কাছে খুবই স্পেশাল।

এমন দিন নেই যে বাবাকে মনে পরেনা।” বাবা” বাবা যে আমার জীবনে কতটা তা প্রতিদিন প্রতি ক্ষণে মনে হয় আজ 22 বছর হয়ে গেল বাবা নেই আমাদের কাছে চলে গেছেন নিজের আপন ঘরে যেখানে সবাইকে একদিন না একদিন যেতে হয়। এখনো তিল তিল করে কষ্ট পাই বাবার জন্য বাবা চলে যাওয়াটা 22 বছর পরেও দগ্ধ ঘায়ের মতো যখন কষ্ট দেয়। প্রতি মুহূর্তে মনে হয় ঈশ্বর বাবাকে কেন নিল? তার যে অনেক কিছু পাওয়ার ও দেবার ছিল এ সংসারে।

Why Father’s Day | পিতৃদিবস কেন?

পিতৃদিবস পিতাদের সম্মান করা এবং পিতৃত্ব, পিতৃত্বের বন্ধন এবং সমাজে পিতৃপুরুষদের শ্রদ্ধা উদযাপন দিবস। এটি সর্বপ্রথম 1909 সালে ওয়াশিংটনের স্পোকেন নামে এক শহরের Sonora Dodd প্রস্তাব করেছিলেন। এটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রবিবার উদযাপিত হয়।

তবে খুব সহজেই যে পিতৃদিবস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিল তা নয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহনের পর পিতৃদিবস আমেরিকা থেকে সারা বিশ্বে তার উদযাপন প্রসারিত করে। পিতৃদিবসের ইতিহাস নিয়ে যেকোনো সাইট থেকে জানতে পারবেন। আজ আমার পিতার উদ্দেশ্যে মনের কথা শেয়ার করবো।

Father’s day 2022 এ আমার পিতার কথা ও কিছু অভিজ্ঞতা-

যখন খুব ছোট ছিলাম চার কি পাঁচ বছর বয়স হবে। একটু একটু মনে পড়ে বাবা ডিউটি থেকে এসে হাত পা ধুয়ে একটা ধুতি পরত।  ঠাকুর প্রমাণ  করার পর আমাকে কোলে নিয়ে বুকে চাপ রে গান গেয়ে ঘুম পারাতো।

যত বড় হতে লাগলাম বাবার বাহ্যিক ভালোবাসা প্রকাশ করা কমতে থাকে। কিন্তু বাবা আমাকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো যেটা পরে অনুভব করি।

তখন সবার বাড়িতে টিভি ছিলনা। আর আমার একটু টিভি দেখার ঝোঁক ছিল। তাই পাশে যাদের বাড়িতে টিভি ছিল, লুকিয়ে দেখতে যেতাম। অবশ্য বাবা যখন অফিসে থাকতো। মা কিছু বলতোনা মা আমার বরাবরই চুপচাপ। একদিন বাবা জানতে পারে আমি টভি দেখতে যাই। তারপর কি বকাবকি। আমাকে কম কিন্তু মাকে বেশি। তার কিছুদিন পর বাবা বাড়িতে টিভি এনে হাজির।

সকালে বাবা আটটার সময় অফিসের জন্য রওনা দিতে আর রাত আটটায় বাড়ি আসত। নিজে সকাল 6 টায় ঘুম থেকে উঠতো। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে আর ভাইকে তুলে দিত। তারপর মুখ ধুয়ে পড়তে বসা। আমরা মাঝে মাঝে ঘড়ির দিকে তাকাতাম কখন আটটা বাজবে। যখনই বাবা অফিসের জন্য বাড়ি থেকে বের হতো অমনি আমাদের পড়ার পাঠ শিকেয় উঠতো। রাতে আটটার আগে ছুটোছুটি খেলা। আটটা বাজলে যে যেখানে থাকত মানে আমি, ভাই ,আমার জ্যাঠ তুতো দিদি সবাই আপন আপন জায়গায় বই নিয়ে বসে যেতাম।

আমি পড়াশোনাতে খুব ভালো ছিলাম না। আমাকে নিয়ে বাবার তাই খুব চিন্তা। ন বছর বয়স থেকে পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত বাবার থেকে বেশি বকা আমি খেয়েছি পড়াশোনা নিয়ে। আমি খুব চঞ্চল ছিলাম। মাধ্যমিকে যখন ফার্স্ট ডিভিশন পেলাম বেশি খুশি বাবা হয়েছিল। আমাকে পড়ানোর জন্য নিজেও পড়াশোনা করত।

বাবার জগত ছিল আমি, মা, ভাই। অফিস থেকে এসে বাইরে কোথাও যেত না। আমাকে আর ভাইকে নিয়ে পড়াতে বসানো। তারপর উঠে খেয়েদেয়ে ঘুমানো। আবার সকালে উঠে প্রতিদিনের কাজ।

 বাবা ঠাকুমাকে মানে নিজের মাকে খুব ভালোবাসতো, শ্রদ্ধা করত আর ভক্তিও। আমাদের সবসময় বলতো-‘মা ই হলো তোমার ঈশ্বর। তুমি  মাকে সবসময় ভালোবেসো এবং শ্রদ্ধা করো।’

আমাদের মেয়েবেলায় টিভিতে শনিবার আর রবিবার রাতে সিনেমা হতো। আর রাতে টিভি দেখা- সেটা তো অসম্ভব। বাবা মায়ের ঘরে টিভি। পাশেই আমার  জেঠুর বাড়ি। বড় বৌদির ঘরে টিভি। আগে থেকে বৌদিকে বলা থাকত এদিকে মাকে ও ।সাড়ে নয়টায় কিংবা দশটায় হিন্দি সিনেমা শুরু হতো। বড় বৌদির ঘর যেতে গেলে বাবা মায়ের ঘর পেরিয়ে যেতে হতো। তাই বাবা শোবার পর ঘুমিয়ে গেলে মা সিগন্যাল দিত। তখন আমি আর ভাই নিজের ঘর থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে বাবার ঘরের কাছটা হামাগুড়ি দিয়ে পার হতাম।

 বাবা আমাদের চোখের আড়াল করত না। অফিস থেকে ফিরে এসে আমাদের না দেখতে পেয়ে হাঁকডাক। তাই ওই সময় আমি ভাই বাড়িতেই থাকতাম। শনি-রবিবার বাবা ছুটি থাকত। ওই দুদিন তো সবসময় বাড়িতে। একবার চোখের আড়াল হলে ডাকাডাকি।

 তখন ক্লাস এইট কিংবা নাইন। আমার দুটি জ্যাঠতুতো দিদি আছে। মাকে বলেছি- দিদি বাড়ি যাচ্ছি। কোন দিদির বাড়ি বলে যায়নি। এবার বাবা অফিস থেকে এসে সন্ধ্যাবেলায় আমাকে ডাকছে। মা বলেছে দিদি বাড়ি গেছে। ব্যাস বাবার রাগ। মাকে বকাবকি। তখনতো আর ফোন ছিল না। যে ফোন করে জানবে। জ্যাঠতুতো দুই দাদাকে পাঠিয়ে দিল দিদি দের বাড়িতে। আমি ছিলাম ছোড়দির বাড়ি। ওখানে বড়দা গিয়েছিল। সব শুনে আমার তো অবস্থা খারাপ। জানি আজ আমার গেল। বরদা সঙ্গে করে নিয়ে এলো। তারপর যা বকুনি খেলাম আমিও কাঁদছি আর মাও।

 খুব রাগ হতো মনে মনে। প্রতি ছেলে বা মেয়ের ওই বয়সন্ধিকালে যা হয়। বাবা ভালোবাসে না। শুধু বকাবকি করে। বাঁচতে ইচ্ছা হয় না। কেন বকে? ভালবাসে না কেন? কোথাও যেতে দেয় না কেন ইত্যাদি। এখন বুঝি বাবার সেই শাসনই জীবনের প্রকৃত রাস্তা দেখাতে শিখেছে।

 আঠারো বছরে যখন পড়লাম বাবা আস্তে আস্তে যেন বন্ধু হতে শুরু করল। সেই শাসন আর ছিলনা। সব কথা আলোচনা ছোট ছোট বিষয়ে মতামত নেওয়া। কিংবা বন্ধু বা দিদির বাড়িতে রাত কাটানোর সব বাধা সরে গেল।

 বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা তৈরী হতে সেই মাত্র শুরু হয়েছিল। অফিস থেকে এসে চা খেতে বসে নানা বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হতো।

আমার তখন বি.এ প্রথম বর্ষ। সকালে বাড়িতে। প্রথমে যাব টিউশন পড়তে তারপর কলেজ করে বাড়ি। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দেখলাম বাবা ঘুম থেকে উঠে ঠাকুর  প্রণাম করছে বিছানাতে বসে।  

 সেদিন কলেজ হয়নি। তাই টিউশন পড়ে বাড়ি। ট্রেন থেকে যখন নেমে সাইকেল নিতে গ্যারেজে এলাম। দেখি পাশের বাড়ির এক দাদা দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে হতদন্ত হয়ে এসে বলল- ‘আমার সাথে চল। তোর দাদুর অবস্থা খুব খারাপ।’
আমি ওর সাথে সাইকেলে চড়ে বাড়ি এলাম। বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি দাদু দিদি বসে আছে। তার চারপাশে তিন চার জন লোক। আমি অবাক হলাম। ভাবলাম দাদুতো সুস্থই। তাহলে?
ঘরে ঢুকে দেখি এক ঘর লোক। আর আমার মা মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। কিছু বুঝতে পারছিনা। মা আমাকে দেখে আরো জোরে কাঁদতে লাগল। আমাকে বলল- ‘সব শেষ। সব শেষ।’
আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। বোকার মতো দাঁড়িয়ে। তারপর একজন বলল- ‘তোর বাবার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তিনি আর নেই। শুনে মনে হলো মাথার উপর একটা বড় বজ্রপাত ঘট্লোযেন।

 কোনদিনও ভাবিনি’ বাবা আমাদের এইভাবে হঠাৎ ছেড়ে চলে যাবে। যে মানুষটা একটা মুহূর্ত আমাদের তিনজনকে চোখের আড়াল করত না, সে চলে গেল আমাদের ছেড়ে। অনেক দূরে। চোখের আড়ালে। নিজেও হয়তো একটু জানতে পারেনি নিজের এইভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াটা।

আরো পড়ুন- মাতৃদিবসে মা না হওয়া নারী

বাড়ি থেকে এসে প্রতিদিনের মতো অফিসে রওনা হয়েছিল। বাড়ি থেকে কুড়ি মিনিটের রাস্তা স্টেশন। ওখান থেকে ট্রেনে হাওড়া। তারপর কলকাতায় বাবার অফিস। বাইকে যাবার সময় দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে। তখন কোন সাব ওয়ে বা অভেরব্রিজ ছিল না। হাই ওয়ে পার হবার সময় একটা বড় ট্রাক এসে বাবাকে ধাক্কা মারে। শুনেছি বাবার কোমরের উপর দিয়ে গিয়েছিল।

 বাবা নিজে বুঝতে পারেনি কি হলো। আমরা তো নই। বাবা চলে গেল। হাসপাতালে পর্যন্ত যাবার সুযোগ হয়নি। আজ 22 বছর পরেও প্রতি মুহূর্তে মনে হয়। বাবা চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারিনি । Father’s Day 2022 এর মুহূর্তে শুধু এটুকু বলব- ‘বাবা তুমি যে দেশে গেছো ভালো থেকো। আর সব সময় আমাদের সাথে থেকো।’ জানিনা শুনতে পাবে কিনা বা শোনা যায় কিনা। তুমি সব সময় আমাদের সাথে থেকো। আমর সব থেকে কষ্ট হয় মায়ের জন্য। মাথার ভালোবাসার মানুষটাকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলল।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *