Cause and Affects of Rupankar Bagchi’s Speech on KK | রূপঙ্কর বাগচীর বক্তব্য- কারন-ফলাফল

KK প্রসঙ্গে রূপঙ্কর বাগচীর বক্তব্যের কারন কি থাকতে পারে? বলে দিলেন অথচ ভাবলেন না তার ফলাফল কী ঘটতে পারে। এ সম্পর্কে কিছু ধারণা হচ্ছে কী(Cause and Affects of Rupankar Bagchi’s Speech on KK)? কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে? আসুন এ সম্পর্কে এই ব্লগে সম্যক আলোকপাত করি।

বাংলা সংগীত, বাংলা শিল্পী ও সমসাময়িক চলচ্চিত্রে কোন সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? রূপঙ্কর বাগচীর বাংলা সংগীত বাংলা শিল্পী বলিউড সঙ্গীত চলচ্চিত্র এবং তার সঙ্গে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী KK সম্পর্কে মন্তব্য বাংলা তোলপাড় হল। বিশেষ করে KK-র মর্মান্তিক মৃত্যু সেই মন্তব্য এবং রূপঙ্কর বাগচীকে নিক্ষেপ করল অন্ধকার কুয়োর মধ্যে। বাংলা ও বাঙালির শিল্পকে বাঁচানোর পন্থা হিসেবে রূপঙ্কর বাগচীর পথকে বাঙালি মেনে নিলোনা। আগামীতে মেনে নেবে না এটা নিশ্চিত। বিরুদ্ধাচারণ যেমন আছে তেমনি রূপঙ্কর পন্থীদের সংখ্যাও কম হলেও আছে। যেমন নচিকেতা চক্রবর্তী।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কদিন থেকে ঝড় উঠলো। নানান জনের নানান রকম ভিডিও বা লেখার মাধ্যমে রূপঙ্কর বাগচীকে ধিক্কার জানান তারা। তাদের আবেগ থেকে মনে যে ভাবনা এসেছে ব্যক্ত করেছে। রূপঙ্কর বাগচী স্ত্রী’ও কবিতার মাধ্যমে তাদের বর্তমান অবস্থাটা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাও ব্যক্ত করেছেন। রূপঙ্কর বাগচী KK-র মৃত্যুতে শোকাহত মর্মাহত এটাও সংবাদমাধ্যমকে স্ক্রিপ্ট লিখে জানিয়েছেন প্রেস কনফারেন্স করে।

সে যাই হোক মনে হল এ নিয়ে একটা ভিডিও বানাই অথবা লিখি। ভেবে দেখলাম, লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় সকল ইউজার সেরকম নজর দেন না বা পড়েন না। উল্টোদিকে ভিডিও প্রতি আকর্ষণ রয়েছে এবং দর্শকদের সংখ্যা পাঠকের তুলনায় বেশি। এই প্রসঙ্গে মূলত একটি ভিডিও তৈরি করেছি আমার বন্ধুদের জন্য। তার অর্থ এই নয় যে অন্যদের জন্য দ্বার রূদ্ধ। বন্ধুরা অবশ্যই ভিডিওটি দেখুন ও লেখাটিও পড়ুন। ভালো লাগলে লাইক করবেন। যদি মনে হয় অন্যদের শেয়ার এর প্রয়োজন আছে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন। এবং বেশি ভালো লাগে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলফেইসবুক পেইজটি লাইক ও ফলো করুন। আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফলো করুন। আপনাদের সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে অন্য লেখা এবং ভিডিও তৈরীর জন্য অনুপ্রেরণা এবং ভরসা পাবো।

Cause and Affects of Rupankar Bagchi’s Speech on KK | KK প্রসঙ্গে রূপঙ্কর বাগচীর বক্তব্যের কারন ও ফলাফল

আজ বাংলা সংগীত সিনেমা শিল্প সংকট ও KK-র প্রতিমন্তব্যের কারণ কী কী হতে পারে এবং এর ফলে কি হতে পারে আমাদের ভাবনায় যেগুলি এসেছে সে সম্বন্ধে কয়েকটি পয়েন্ট আপনাদের সামনে রাখছি। সবগুলো যে আপনাদের সাথে মিলবে তা না’ও হতে পারে। মিলুফা না মিলুক মন্তব্য বক্সে অবশ্যই আসুন, মন্তব্য করুন।

কেন ওই ধরনের আগ্রেসিভ মন্তব্য উঠে এলো রূপঙ্কর বাবুর কথায়?

১. আঞ্চলিকতাবাদ-

আঞ্চলিকতাবাদই হলো এর প্রধান কারণ। আমরা জানি আঞ্চলিকতাবাদ এলাকাভিত্তিক পার্থক্য তৈরী করে, সেখান থেকে তৈরি হয় হিংসা, ঈর্ষা ইত্যাদি। একে-অপরের সাথে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা রেষারেষি। আরো গভীর থেকে গভীরতর পর্যায়ে গেলে তা মারামারি পর্যন্ত গড়ায়।

আমাদের মধ্যে আঞ্চলিকতাবাদ সর্বস্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। গ্রামে গঞ্জে শহরে জেলায় রাজ্যে এবং জাতীয় স্তর পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে বিরাজ করছে আঞ্চলিকতাবাদ। উদাহরণ- উত্তরপাড়া দক্ষিণপাড়া থেকে শুরু করে ভারত-পাকিস্তান পর্যন্ত শিল্প-সংস্কৃতির পার্থক্য, অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা আঞ্চলিকতাবাদকে দীর্ঘস্থায়ীস্থায়ী করছে।

পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ইত্যাদি রাজ্য থেকে রাজ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা কখনোই এক নয়। আঞ্চলিকতাবাদের জন্যই আমরা যে ভারতবরাসী সাময়িকভাবে ভুলে যাই‌। শুরু হয় কে ভালো, কে খারাপ, কে সুবিধা পাচ্ছে, কে পাচ্ছে না, কে বেশি টাকা পাচ্ছে বা কে পাচ্ছে না।

এক এক এলাকার বাসিন্দা সেই এলাকার জন্য সমর্থন আদায় করা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে অন্য এলাকার লোকদের সমর্থন না করা, প্রশংসা না করা, গুরুত্ব না দেওয়া ইত্যাদি। আঞ্চলিকতা সীমিত সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। ধীরে ধীরে তা উগ্ৰতার দিকে ধাবিত হয়। যেমন জাতীয়তাবোধ থেকে উগ্র জাতীয়তাবোধ। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ প্রসঙ্গে নানান দ্বন্দ্ব ও মতামত আপনারা জানেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতপার্থক্য মহাত্মা গান্ধীর জাতীয়তাবাদ ছাড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আন্তর্জাতিকতাবাদ বিশ্ব মানবতাবোধ, ভাতৃত্ববোধের দর্শন। এখন জাতীয়তাবাদী বলুন বা আঞ্চলিকতাবাদ’ই বলুন এবং তার সাথে আন্তর্জাতিকতা, ভাতৃত্ববোধ সীমিত পরিসরের ভাবনাকে বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতা ও ক্ষমতার না থাকলেই শুরু হবে রেষারেষি, দ্বন্দ্ব হিংসা। বাঙালি হিসেবে বাংলাকে না ভালবেসে, বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি গান-বাজনা সিনেমা-নাটককে ভালো না বেসে, আবেগে না বেসে তুমি মুম্বাই হিন্দিকে ভালবাসবে কোন অধিকারে? তুমি বাঙ্গালী আবেগকে পায়ে মাড়িয়ে হিন্দি আবেগের সাথে গলা জড়াজড়ি করবে?

আঞ্চলিকতার জন্য এক রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যে খুব একটা সুস্থভাবে থাকেনা। বিহারের মানুষ বাংলায় বিহারী হিসেবে গালি খায়। বাংলার মানুষ আসামি খুন হন। রেলের সমস্ত চাকরি বিহারীরা পায়। এসব ঘটনা সংবাদমাধ্যমে দেখেন নিশ্চয়ই। আমরা ভুলে যাই আমরা নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানে ভারতবাসী। সবই বইয়ের মধ্যে ঠিক আছে, বাস্তবিক ব্যবহারিক প্রয়োগের কখনো কখনো যেন উদাসীনতা চোখে পড়ে।

কিন্তু দুঃখ-কষ্ট আরো বেড়ে যায়, যারা সমাজের চোখে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সেলিব্রিটিরা এই ধরনের কথা বলেন। এরা তো সেলিব্রেটি। এদের মাধ্যমে মানুষ প্রভাবিত হয় এদের জামাকাপড় আদব-কায়দা চালচলন মন্তব্য সাধারণ মানুষেরা অনুসরণ থেকে অনুকরণ করে। জীবনধারণে বা জীবনযাপনে অভ্যাস করতে থাকে। যদিও রূপঙ্কর বাবুর KK-র প্রতি বিরূপ মন্তব্য বাঙালি মানুষ তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা একটা ভালো দিক বলা যেতে পারে। তবে আঞ্চলিকতাবাদ ইজি রূপঙ্কর বাগচী KK-র প্রতি এ ধরনের মন্তব্য করিয়েছে এটা নিশ্চিত।

২. নিরাপত্তাহীনতা-

আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সাথে আসে জীবন-যাপনের নিরাপত্তার বিষয়টি। আর্থিক সচ্ছলতা উত্তোরণ সামাজিক সচলতাকে নিশ্চয়তা দেওয়ার সাথে সাথে সোশ্যাল স্ট্যাটাসকেও দারুণভাবে পরিচর্যা করে। রুপঙ্কর বাবু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কাজ কি কমে যাচ্ছে? অথবা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিন দিন কমে আসছে। নিরাপত্তাহীনতার জন্য হয়তো রূপঙ্কর বাবু এ ধরণে্য মন্তব্য করে থাকতে পারেন

৩. প্রতিযোগিতা-

রুপঙ্কর বাবু নিজে হয়তো অথবা যারা তার বক্তব্য সমর্থন করছেন তাদের ক্ষেত্রে হতে পারে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন। নতুন প্রতিভারা বাংলা গানে স্থান করে নিচ্ছেন। আর পুরনোদের ছিটকে ফেলে দিচ্ছেন দূরে। প্রযোজক-পরিচালকরা নতুনদের তুলনায় কম খরচে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। 

৪. গানের মান-

বাংলা গানের গুণগতমান কি কমে যাচ্ছে? এ বিষয়ে আপনাদের মতামত আশা করছি। কেননা এ এক জটিল দ্বন্দ্বমূলক বিষয়। আসলে গুণগতমানের তো কোনো সঠিক একক বা মাপার কোন যন্ত্র নেই। সব নির্ভর করে দর্শক-শ্রোতা কিভাবে সেই শিল্পকে গ্রহণ করছে। কজন সেখানে প্রবেশ করছেন আর দেখছেন শুনছেন। এখানেও সেই আঞ্চলিক ও সর্বভারতীয় দর্শক পরিসরের প্রসঙ্গ এসে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখি এক প্রবীণ ভদ্রলোক রূপঙ্কর বাবুকে বলেছিলেন- এখনকার গান তাদের সেরকমভাবে হৃদয় স্পর্শ করে না। উত্তরে রূপঙ্কর বাবু তাকে গান না শুনে মরে যেতে বলেছিলেন। একজন মানুষের ঔদ্ধত্য কোন জায়গায় পৌঁছলে এ ধরনের অহংকারী কথাবার্তা বলতে পারেন?

৫. দর্শক শ্রোতাদের বিনোদন-

দর্শক-শ্রোতারা কোন শিল্পে কিভাবে আনন্দিত হবেন বা বিনোদিত হবেন তা সম্পূর্ন দর্শক-শ্রোতাদের মানসিক বিষয়। এ বিষয়ে তারা স্বাধীন। আপনি শিল্পী আপনার শিল্পকলা জোর করে কোন দর্শক-শ্রোতাকে চাপিয়ে দিতে পারেন না। আপনার শিল্পসৃষ্টি ভালো লাগলে অবশ্যই দর্শক-শ্রোতা সেটা শুনবে। সারা জীবন তাকে মনে রাখবে। আজীবন চর্চা করে যাবে।

এ বিষয়ে শিল্পসৃষ্টির তিনটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখা যেতে পারে। যথা-

  • ১. একটা হল নিজের সততার সাথে কোনরকম দমনমূলক নীতি না রেখে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত অদ্বিতীয় সৃষ্টির জন্ম দেওয়া। যেখানে আর্থিক লাভ লোকসানের বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। এখানে মানসিক পরিতৃপ্তি প্রাধান্যই প্রতীয়মান হবে। এতে দর্শক-শ্রোতা কম হবে, তাই ব্যবসা ভালো হবে না ধরে নিতে হয়।
  • ২. অন্যটি হলো দর্শক শ্রোতাদের মধ্যে থেকে বাজারমুখী সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। অর্থাৎ সম্পূর্ণটাই ব্যবসায়িক। যেখানে রোজগারটাই প্রধান। দর্শক-শ্রোতা অনেক বেশি থাকার দরুন আর্থিক লাভের দিকটি বেশ জোরালো হয়।
  • ৩. এটি হলো ব্যবসা ও নিজস্ব অদ্বিতীয় শৈলীর মিলনে সৃষ্টি শিল্প। এ ধরনের সৃষ্টিকর্তার সংখ্যা খুবই কম এবং এদের এক সৃষ্টির সঙ্গে অন্য সৃষ্টির মধ্যে সময়ের পার্থক্য থাকে বিস্তর।

বাংলায় এই তিন ধরনের সৃষ্টি চিরকালই রয়েছে। বাঙালি দর্শক শ্রোতার সংখ্যাও কম নয়। সব ধরনের শিল্পের  প্রতি বাঙ্গালীদের আকর্ষণও বিস্তর। প্রযোজক-পরিচালকদের এই বিষয়গুলোর নজর রেখে গান-বাজনা এবং সিনেমা সিনেমা তৈরীর প্রতি নজরও দেন। অর্থাৎ গুরুগম্ভীর জটিল সৃষ্টির উপর জোর দিলে বাজার বাণিজ্য সে রকম হবে না ধরে নিতে হবে। নতুবা দর্শকদের মনে কোঠায় বসে দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী সহজ-সরল লঘু সৃষ্টির উপর জোর দিতে হবে। যেখানে বাণিজ্যিক সফলতা নিশ্চয়তা দেবে।

রুপঙ্কর বাবুদের ক্ষেত্রে কি ঘটছে? এ বিষয়ে তাদের যথেষ্ট গবেষণা করা প্রয়োজন আছে। গবেষণায় মূল বিষয়টিকে বা সমস্যাটিকে শনাক্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে হয়।

তবে দর্শক সংখ্যাধিক্য, স্বল্পতার বিষয়টিকে নজর এড়িয়ে গেলে চলবে না। আপনি যদি বলেন যা খুশি সৃষ্টি করবো সকল দর্শককেই তা দেখতে হবে। হিন্দি ইংরেজি দেখা যাবেনা, শোনা যাবেনা, সকলকেই বাংলায় বাংলা শিল্প সৃষ্টি দেখতে হবে, গান শুনতে হবে, সিনেমা দেখতে হবে, তবেই বাঙালি হতে পারবে, তুমি বাংলা বাঁচবে। বাংলা গান শোনা, বাংলা সিনেমা দেখা, বাংলা নাটক দেখা যদি বাঙালিয়ানা ধরে রাখার ও বাংলা বাঁচানোর চাবিকাঠি হয়, তাহলে রুপঙ্করবাবুর কাছে একটি প্রশ্ন- আপনার বাড়ির ছেলে মেয়েরা কি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে? হ্যাঁ না এর উত্তরের উপর নির্ভর করছে আপনার বাঙালিয়ানার অস্তিত্ব। আপনি নিজেই বিচার করবেন তারপর আমাদের বলবেন।

আসলে রুপঙ্কর বাবু বাঙ্গালীদের আনন্দ দিতে পারছেন না। তাদের বিনোদনের মাতিয়ে রাখতে পারছেন না। রূপঙ্কর বাগচী নিজস্ব অপারগতা দুর্বলতার দায় বাঙালি দর্শকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাইছেন।

আঞ্চলিকতার বিরোধী হওয়াই বাঞ্ছনীয়- 

মূলত শিল্পীদের কোন নির্দিষ্ট সীমা পরিসীমা নেই। তাদের শিল্পী সত্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্শক-শ্রোতারা শিল্পীদের এই সত্তাকে ভালোবেসে এসেছে এবং শিল্পীরাও এ বিশ্বাসে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে সর্বসাধারণের সামনে প্রকাশ করেন। বাঙালি শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে বলিউড শিল্পকে যেভাবে অলংকৃত করেছেন তা তো আর বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের সকলেরই জানা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, আরতি মুখার্জী, কিশোর কুমার, শচীনদেব, আর.ডি, বাপ্পি লাহিড়ী থেকে বর্তমানে শান্তনু মৈত্র, প্রীতম চক্রবর্তী, কুমার শানু, অভিজিৎ, সান, শ্রেয়া ঘোষাল এরা কারা? রাজত্ব করছে মুম্বাই-এ। এরা কি তাদের বাঙালিয়ানাকে বর্জন করছেন বা করেছেন? না’কি বাঙালিরা কেবল এ সমস্ত শিল্পীদের হিন্দি গানই শুনে এসেছেন? বাংলা গান শোনেন নি?

৬. নিজের প্রতি বিশ্বাস হীনতা

নিজের প্রতি বিশ্বাস আস্থা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে না তো? তাই তো আশ্বাসও রাখতে পারছেন না। এ কারণে এ ধরনের বক্তব্য বেরিয়ে আসতে পারে।

এবার আসা যাক এর ফলাফল কি হতে পারে

রূপঙ্কর বাগচী KK প্রসঙ্গে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক মিশ্র ফলাফল দেখা যেতে পারে। একটা স্বল্পস্থায়ী ফলাফল। অন্যটি দীর্ঘস্থায়ী রূপে প্রতীয়মান হতে পারে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে ১. একটি ব্যক্তিগত প্রভাব পড়তে পারে এবং ২. অন্যটি সার্বিক সুদুর প্রসারী প্রভাব আমরা দেখতে পারি। 

প্রথমে আসা যাক ব্যক্তিগত ফলাফল-

ব্যক্তিগত ফলাফল বলতে সম্পূর্ণটাই রূপঙ্কর বাগচীর উপর প্রভাব পড়তে পারে। এই প্রভাব স্বল্পস্থায়ী হতে পারে অথবা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে।

রূপঙ্কর বাগচী বয়কট-

রূপঙ্কর বাগচীকে বাঙালি শ্রোতারা বয়কট করতে পারেন। হয়তো স্বল্পস্থায়ীভাবে। কালের স্রোতে বাঙালি মানুষ এই মন্তব্য ভুলে গিয়ে হয়তো ভবিষ্যতে আবারো তাকে গ্রহণ করতে পারেন। তবে সাময়িকভাবে যে রূপঙ্কর বাগচীকে দর্শক-শ্রোতারা বয়কট করছেন এবং এই বয়কট কিছুদিন পর্যন্ত চলবে এটা নিশ্চিত। এর ফলে কি হবে? এর ফলে রূপঙ্কর বাগচীকে দিয়ে কোন প্রযোজক-পরিচালক আর কোন কাজ করাবেন না, গান গাওয়া বেন না। যে সমস্ত কোম্পানির রূপঙ্কর বাগচীর সঙ্গে চুক্তি করেছেন, সে চুক্তিপত্র ভঙ্গ হতে পারে। রূপঙ্কর বাগচী ক্যারিয়ার নষ্ট হতে পারে। তার ভবিষ্যত অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে। এই ঘটনাগুলি ইতিমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে। আর এর ফলেই হয়তো তার অহংকারের পতন ঘটবে।

সার্বিক সামগ্রিক ফল-

অন্যদিকে সার্বিক যে ফলাফল সেই ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। যেমন এক- মুম্বাইয়ে বাঙালি বর্জন অভিযান শুরু হতে পারে। এই মুহুর্তে মুম্বাইয়ে যে সমস্ত বাঙালি শিল্পী রয়েছেন গানের সঙ্গে, চলচ্চিত্রের সঙ্গে, মুম্বাই ছাড়া ভারতের অন্য প্রান্তের বাসিন্দারাও তাদেরকে বর্জন করতে পারেন। বাঙালি গায়কের গান তারা শুনবেন না। বাঙালি অভিনেতা অভিনেত্রীর অভিনয় দেখবেন না। বাঙ্গালীরা সারা ভারতবর্ষের মধ্যে পতিত হতে পারে। আমাদের মনে মনে এই ভীতি আসছে। এই কারণে রূপঙ্কর বাগচী যদি বাঙালি হওয়ার জন্য অন্যান্যদের শিল্পীদের মনোভাব নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন, তাহলে ভারতবর্ষে অন্য প্রান্তের মানুষেরা বাঙ্গালীদের প্রতি এ ধরনের বক্তব্য রাখবেন না, রাখতে পারেন না এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।

শুধু তাই নয় আঞ্চলিকতাবাদ ছড়ানোর জন্য অন্যান্য নানা স্থানে সাধারণ বাঙ্গালী, যারা কোন সেলিব্রিটি বা শিল্পী নন, তাদের প্রতি ঘৃণা ও এই ঘৃণা থেকে দেশাত্মবোধের প্রতি প্রশ্ন উঠতে পারে। বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রশ্রয় পেতে পারে।

রূপঙ্করবাবু আপনি কি বুঝতে পারছেন, আপনি কোথায় ঢিল ছুড়ছেন?

আশার আলো-

তবে আশার আলো একটাই বেশিরভাগ বাঙালিই  রূপঙ্কর বাগচীর এই বক্তব্যকে একেবারেই প্রশ্রয় দেননি। তাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে তার বক্তব্যকে ধিক্কার জানিয়েছেন। তিনি যে ভুল বক্তব্য রেখেছেন, সেটা বারে বারে প্রমাণ করেছেন বাঙালি দর্শক-শ্রোতারা। এবং এই বার্তা আপামর ভারতবাসীর কাছে অনতিবিলম্বে পৌঁছে গেছে। তার অর্থ এই দাঁড়ায় একজন বাঙালি অবাঙালী ভারতবাসীকে অপমান করলেও অন্যান্য সমস্ত বাঙালিরা যে ভারতের যেকোনো প্রান্তের শ্রোতাদের শিল্পীদের সাদরে আমন্ত্রণ জানায়, নিজের অন্তরে স্থান করে নেয়, সেটার প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই। এই আশার আলো নিয়েই আমাদের আগামীর বাংলা, বাঙালিয়ানা, বাংলা শিল্পী স্রষ্টা সকলের সারা ভারতবাসীর কাছে সাদরে সমাদৃত যেমন হবেন, বাঙালিরাও সেভাবে ভারতবর্ষে অন্য প্রান্তের শিল্প, সৃষ্টি, স্রষ্টাকে তাদের অন্তরে স্থান দিয়ে যাবেন আজীবন। ভালো থাকবেন। জয়হিন্দ।

আরো পড়ুন

মহিলাদের প্রতি প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি
সমাজে টি ভি সিরিয়ালের প্রভাব
বয়স্ক মা-বাবাকে অবহেলা- ভয়ানক অপরাধ
একান্নবর্তী পরিবার ও অনু পরিবার এবং সমাজ
ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান
আঁতুড়ঘরে 1 মাস
বিধবা বিবাহ
ভারতের বিস্ময় কন্যা জাহ্নবী পানোয়ার

Leave a Comment